• BadBox 2.0: ভয়ঙ্কর Android Malware – আপনার মোবাইল কি ইতিমধ্যেই আক্রান্ত?

    Badbox 2.0 হলো একধরনের ম্যালওয়্যার-ভিত্তিক বটনেট, যেটি মূলত সস্তা Android চালিত ডিভাইসগুলিতে (যেমন: টিভি বক্স, প্রোজেক্টর, ডিজিটাল ফটো ফ্রেম ইত্যাদি) প্রি-ইনস্টল করা অবস্থায় আসে এবং বিশ্বব্যাপী ১ কোটিরও বেশি ডিভাইস ইতিমধ্যে আক্রান্ত হয়েছে।

    কি করে Badbox 2.0?
    BadBox সংক্রামিত ডিভাইসকে বটনেটে পরিণত করে – অর্থাৎ হ্যাকারদের কমান্ডে চলে।
    এটি ব্যবহারকারীর অজান্তে অ্যাড ফ্রড, ডিভাইস ট্র্যাকিং, রেসিডেনশিয়াল প্রক্সি তৈরি ও অন্যান্য অসৎ কাজ করে।
    সংক্রামিত ডিভাইসগুলোতে দৃশ্যমান কিছুই হয় না, কিন্তু ব্যাকগ্রাউন্ডে সাইবার অপরাধে ব্যবহৃত হয়।

    কে তৈরি করেছে?
    মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের FBI এবং Google এর তদন্ত অনুযায়ী, Badbox 2.0 এর পিছনে রয়েছে চীনা সাইবার অপরাধী চক্র।
    এই অপরাধচক্রটি মূলত চীনের শেনজেন (Shenzhen) শহরের কিছু কোম্পানি দ্বারা পরিচালিত হয়েছে যারা সস্তা Android ডিভাইস তৈরি ও বিক্রি করে।

    কোন কোন ডিভাইস ঝুঁকিতে?
    অজানা কোম্পানির Android TV Box
    সস্তা স্মার্ট প্রোজেক্টর
    ডিজিটাল ফটো ফ্রেম
    অ্যান্ড্রয়েড ট্যাবলেট
    ফ্রি VPN বা ক্লোন অ্যাপ ইনস্টল করা ফোন

    এসব ডিভাইসে Malware প্রি-ইনস্টল করা থাকে, ব্যবহারকারী জানতেই পারে না।

    কেন ভয়ংকর?
    ব্যবহারকারীর বাসার IP ব্যবহার করে হ্যাকাররা অন্যকে হ্যাক করতে পারে!
    Google ও FBI বলেছে, এটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় Android botnet!
    ১ কোটি ডিভাইস এর মাধ্যমে Massive Ad Fraud এবং Proxy Network চালানো হচ্ছে!

    আপনি কী করবেন?

    অজানা বা ব্র্যান্ডহীন Android ডিভাইস ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন
    শুধুমাত্র বিশ্বাসযোগ্য ব্র্যান্ডের ফোন/টিভি বক্স কিনুন
    ফোনে অজানা অ্যাপ ইনস্টল করবেন না
    সেটিংসে গিয়ে ADB Debugging বন্ধ রাখুন
    নিজের WiFi ট্রাফিক মনিটর করুন
    Follow Blackbd
    #BlackBD #Badbox2 #CyberAwareness #AndroidMalware #CyberSecurity #EthicalHacking #বাংলা_সাইবার_নিউজ
    🛑 BadBox 2.0: ভয়ঙ্কর Android Malware – আপনার মোবাইল কি ইতিমধ্যেই আক্রান্ত? 🔍 Badbox 2.0 হলো একধরনের ম্যালওয়্যার-ভিত্তিক বটনেট, যেটি মূলত সস্তা Android চালিত ডিভাইসগুলিতে (যেমন: টিভি বক্স, প্রোজেক্টর, ডিজিটাল ফটো ফ্রেম ইত্যাদি) প্রি-ইনস্টল করা অবস্থায় আসে এবং বিশ্বব্যাপী ১ কোটিরও বেশি ডিভাইস ইতিমধ্যে আক্রান্ত হয়েছে। 📌 কি করে Badbox 2.0? BadBox সংক্রামিত ডিভাইসকে বটনেটে পরিণত করে – অর্থাৎ হ্যাকারদের কমান্ডে চলে। এটি ব্যবহারকারীর অজান্তে অ্যাড ফ্রড, ডিভাইস ট্র্যাকিং, রেসিডেনশিয়াল প্রক্সি তৈরি ও অন্যান্য অসৎ কাজ করে। সংক্রামিত ডিভাইসগুলোতে দৃশ্যমান কিছুই হয় না, কিন্তু ব্যাকগ্রাউন্ডে সাইবার অপরাধে ব্যবহৃত হয়। 🧠 কে তৈরি করেছে? 👉 মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের FBI এবং Google এর তদন্ত অনুযায়ী, Badbox 2.0 এর পিছনে রয়েছে চীনা সাইবার অপরাধী চক্র। এই অপরাধচক্রটি মূলত চীনের শেনজেন (Shenzhen) শহরের কিছু কোম্পানি দ্বারা পরিচালিত হয়েছে যারা সস্তা Android ডিভাইস তৈরি ও বিক্রি করে। 📱 কোন কোন ডিভাইস ঝুঁকিতে? অজানা কোম্পানির Android TV Box সস্তা স্মার্ট প্রোজেক্টর ডিজিটাল ফটো ফ্রেম অ্যান্ড্রয়েড ট্যাবলেট ফ্রি VPN বা ক্লোন অ্যাপ ইনস্টল করা ফোন 🧪 এসব ডিভাইসে Malware প্রি-ইনস্টল করা থাকে, ব্যবহারকারী জানতেই পারে না। ⚠️ কেন ভয়ংকর? ব্যবহারকারীর বাসার IP ব্যবহার করে হ্যাকাররা অন্যকে হ্যাক করতে পারে! Google ও FBI বলেছে, এটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় Android botnet! ১ কোটি ডিভাইস এর মাধ্যমে Massive Ad Fraud এবং Proxy Network চালানো হচ্ছে! 🔐 আপনি কী করবেন? ✅ অজানা বা ব্র্যান্ডহীন Android ডিভাইস ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন ✅ শুধুমাত্র বিশ্বাসযোগ্য ব্র্যান্ডের ফোন/টিভি বক্স কিনুন ✅ ফোনে অজানা অ্যাপ ইনস্টল করবেন না ✅ সেটিংসে গিয়ে ADB Debugging বন্ধ রাখুন ✅ নিজের WiFi ট্রাফিক মনিটর করুন Follow Blackbd #BlackBD #Badbox2 #CyberAwareness #AndroidMalware #CyberSecurity #EthicalHacking #বাংলা_সাইবার_নিউজ
    0 Комментарии 0 Поделились 42 Просмотры
  • সবুজ আগাছায় ছেয়ে থাকা লালচে এ ভবনের নাম জলঘর। রাজবাড়ীর পাংশায় কালের সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে ব্রিটিশদের তৈরি এ পানির ঘর। পাংশার ইতিহাস থেকে জানা গেছে, ব্রিটিশ আমলে ১৮৬২ সালে প্রথম ভারতের কলকাতা থেকে বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলার জগতি পর্যন্ত যোগাযোগের জন্য রেলপথ নির্মাণ করা হয়।

    ১৮৭১ সালের ১ জানুয়ারি দেশের বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলার জগতি থেকে বর্তমানে রাজবাড়ীর (তৎকালীন বৃহত্তর ফরিদপুর জেলা) গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া (পদ্মা নদীর) ঘাট পর্যন্ত প্রায় ৮০ কিলোমিটার এক লাইনের রেলপথ বানানো হয়।

    তখনকার সময়ে রেলগাড়ি টানার জন্য কয়লাচালিত ইঞ্জিন ব্যবহার করা হতো। কয়লাচালিত ইঞ্জিন প্রচণ্ড গরম হয়ে যেত। গরম ইঞ্জিন শীতল করার জন্য কুষ্টিয়ার জগতি ও দৌলতদিয়া ঘাট রেলস্টেশনের মাঝামাঝি পাংশা রেলওয়ে স্টেশনের পাশে নির্মাণ করা হয় এ জলঘর।

    ১৮৬৯ সালে ইট, খোয়া ও চুনের সংমিশ্রণে গোলাকার ও লম্বা এ ভবন নির্মাণ করা হয়। ৩৫-৪০ ফুট উঁচু এ জলঘর। ঘরের দরজা রাখা হয় রেললাইনের দিকে। জলঘরের ওপরের দিকে ওঠা ও নিচে নামার জন্য লোহার পাত দিয়ে সিঁড়ি বানানো হয়।

    ব্রিটিশ শাসনামলে এ জলঘর ব্যবহার করা হয়। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান শাসনামল শুরু হওয়ার পরপরই জলঘরটি থেকে রেলগাড়ির ইঞ্জিনে পানি দেওয়া বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত জলঘরের ব্যবহার বন্ধ রয়েছে।

    জলঘরটি কালের সাক্ষী হয়ে আছে পাংশার বুকে। এর লাল রং এখনো ঝকঝকে, দেয়ালের কোনো স্থান থেকেই এখন পর্যন্ত একটি ইট বা খোয়ার অংশবিশেষ খুলে পড়তে দেখা যায়নি।
    #itihaser_golpo #itihasergolpo #প্রত্নতত্ত্ব
    সবুজ আগাছায় ছেয়ে থাকা লালচে এ ভবনের নাম জলঘর। রাজবাড়ীর পাংশায় কালের সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে ব্রিটিশদের তৈরি এ পানির ঘর। পাংশার ইতিহাস থেকে জানা গেছে, ব্রিটিশ আমলে ১৮৬২ সালে প্রথম ভারতের কলকাতা থেকে বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলার জগতি পর্যন্ত যোগাযোগের জন্য রেলপথ নির্মাণ করা হয়। ১৮৭১ সালের ১ জানুয়ারি দেশের বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলার জগতি থেকে বর্তমানে রাজবাড়ীর (তৎকালীন বৃহত্তর ফরিদপুর জেলা) গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া (পদ্মা নদীর) ঘাট পর্যন্ত প্রায় ৮০ কিলোমিটার এক লাইনের রেলপথ বানানো হয়। তখনকার সময়ে রেলগাড়ি টানার জন্য কয়লাচালিত ইঞ্জিন ব্যবহার করা হতো। কয়লাচালিত ইঞ্জিন প্রচণ্ড গরম হয়ে যেত। গরম ইঞ্জিন শীতল করার জন্য কুষ্টিয়ার জগতি ও দৌলতদিয়া ঘাট রেলস্টেশনের মাঝামাঝি পাংশা রেলওয়ে স্টেশনের পাশে নির্মাণ করা হয় এ জলঘর। ১৮৬৯ সালে ইট, খোয়া ও চুনের সংমিশ্রণে গোলাকার ও লম্বা এ ভবন নির্মাণ করা হয়। ৩৫-৪০ ফুট উঁচু এ জলঘর। ঘরের দরজা রাখা হয় রেললাইনের দিকে। জলঘরের ওপরের দিকে ওঠা ও নিচে নামার জন্য লোহার পাত দিয়ে সিঁড়ি বানানো হয়। ব্রিটিশ শাসনামলে এ জলঘর ব্যবহার করা হয়। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান শাসনামল শুরু হওয়ার পরপরই জলঘরটি থেকে রেলগাড়ির ইঞ্জিনে পানি দেওয়া বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত জলঘরের ব্যবহার বন্ধ রয়েছে। জলঘরটি কালের সাক্ষী হয়ে আছে পাংশার বুকে। এর লাল রং এখনো ঝকঝকে, দেয়ালের কোনো স্থান থেকেই এখন পর্যন্ত একটি ইট বা খোয়ার অংশবিশেষ খুলে পড়তে দেখা যায়নি। #itihaser_golpo #itihasergolpo #প্রত্নতত্ত্ব
    0 Комментарии 0 Поделились 47 Просмотры
  • আলোরনা দুর্গ:
    গোয়ার উত্তরের অর্পোরা নদীর ধারে, সবুজ বনবিথিকার মাঝে নির্জনে দাঁড়িয়ে আছে এক প্রাচীন স্থাপনা—আলোরনা দুর্গ। স্থানীয়ভাবে একে বলা হয় 'Alorna Fort', যাকে ঘিরে ছড়িয়ে আছে পর্তুগিজ উপনিবেশ, মারাঠা সেনাদল, স্থানীয় রাজবংশ এবং প্রাকৃতিক প্রতিরোধের এক দীর্ঘ ইতিহাস। সময়ের প্রবাহে যেখানে গোয়ার সমুদ্রতীর ভরে উঠেছে পর্যটনের গর্জনে, সেখানে আলোরনা দুর্গ দাঁড়িয়ে আছে নিঃশব্দে, যেন কেবল ইতিহাসই যার সঙ্গী।

    দুর্গটির নির্মাণকাল আনুমানিক ষোড়শ শতাব্দীর মাঝামাঝি। তখন গোয়ায় ক্ষমতার পালা বদলের খেলা চলছে—কখনও মুসলিম শাসক, কখনও হিন্দু রাজা, আবার কখনও পর্তুগিজদের ছায়া বিস্তার করছে উপকূল থেকে অভ্যন্তরভাগে। আলোরনা দুর্গের নির্মাতা হিসেবে মূলত ভীম রাজবংশকে ধরা হয়—যারা নিজেদের প্রতিরক্ষার জন্যই এ দুর্গ নির্মাণ করেছিলেন। এটি ছিল একটি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ স্থান—কোনো বহির্শত্রু পশ্চিম উপকূল দিয়ে আসলে, উত্তর থেকে এই দুর্গের মধ্য দিয়েই প্রবেশ করতে হতো।

    কিন্তু সময় বদলাল। সপ্তদশ শতকে পর্তুগিজরা গোয়ায় তাদের শাসনব্যবস্থা শক্তিশালী করে তোলে। 1746 সালে তারা আলোরনা দুর্গ দখল করে নেয়, আর তখন থেকে এটি হয়ে ওঠে পর্তুগিজ সামরিক ঘাঁটি। দুর্গের ভিতরে নির্মিত হয় স্নানঘর, অস্ত্রাগার, খাদ্য মজুদের কুঠুরি, এমনকি একটি ছোট্ট উপাসনালয়ও—যার ভগ্নাংশ এখনও দেখা যায়। পর্তুগিজ স্থাপত্যের অনন্য ছাপ পাওয়া যায় দুর্গের দেওয়ালে—মসৃণ প্রস্তরখণ্ড, মোটা ইটের বাঁধাই, এবং কাঠের বিমযুক্ত ছাদ, যা আজ ধ্বংসস্তূপে রূপান্তরিত।

    আলোরনা দুর্গের একটি অনন্য দিক হলো এর অবস্থান—পাহাড়ের ঢালে এবং নদীঘেঁষা উচ্চভূমিতে দাঁড়িয়ে থাকা এই দুর্গ থেকে চারপাশের বিস্তৃত এলাকা দেখা যেত। সৈনিকরা দূর থেকে শত্রুর আগমন দেখতে পেত এবং সেইমতো প্রস্তুতি নিতে পারত। এমনকি নদীপথে আগত জলযানেরও গতিপথ নজরে রাখা যেত।

    এখন, সেই প্রহরীদের নেই, নেই কোনো ঢাল-তলোয়ারের ঝংকার। রয়েছে কেবল শ্যাওলা ধরা দেয়াল, গাছগাছালির বিস্তার, আর বাতাসে ভেসে আসা নিস্তব্ধতার এক অপূর্ব সংগীত। ইতিহাসপ্রেমী ও অভিযাত্রীরা আজও মাঝে মাঝে এখানে এসে দাঁড়িয়ে পড়েন এই ধ্বংসাবশেষের পাশে—কখনও একাকী, কখনও কৌতূহলী চোখে। কেউ কেউ বলেন, সন্ধ্যায় নাকি দুর্গের ভিতরে বাতাস একটু অদ্ভুতভাবে বয়ে যায়—যেন প্রাচীন কোনো শ্বাস ফেলে গেছে তার গোপন বার্তা।

    আলোরনা দুর্গকে ঘিরে স্থানিক মানুষের মধ্যেও এক ধরণের মিথ বিরাজমান। কেউ বলেন এখানে গুপ্তধন লুকানো ছিল, কেউ বলেন এক যুদ্ধবন্দী রানীকে এখানেই বন্দি রাখা হয়েছিল। যদিও এসব কাহিনির ঐতিহাসিক সত্যতা প্রশ্নসাপেক্ষ, তবুও তারা স্থানীয় সংস্কৃতির অংশ হয়ে উঠেছে।

    সম্প্রতি গোয়া পর্যটন বিভাগ এই দুর্গটির সংরক্ষণ ও উন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। রাস্তাঘাট কিছুটা উন্নত হয়েছে, প্রাচীরের কিছু অংশ নতুন করে বাঁধাই করা হয়েছে, এবং একটি দর্শনার্থী করিডোর তৈরির পরিকল্পনাও গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু তবু, এখনো অধিকাংশ মানুষ এই দুর্গের নাম শোনেনি—গোয়ার কোলাহলময় সৈকত, ক্যাসিনো আর উৎসবের পেছনে যেন চাপা পড়ে গেছে ইতিহাসের এই নিঃশব্দ অভিমান।

    আলোরনা দুর্গ আসলে একটি প্রাচীন কাব্যের মতো—যার প্রতিটি ইটের গায়ে লেখা রয়েছে এক একটি যুদ্ধ, বিশ্বাসঘাতকতা, প্রেম, এবং প্রতিরোধের অদৃশ্য পঙক্তি। এই দুর্গ কেবল অতীতের সঙ্গেই নয়, গোয়ার ঐতিহ্যিক আত্মার সঙ্গেও গভীরভাবে জড়িত।

    আমরা যদি একটিবারও থেমে দাঁড়াই, কোলাহলের বাইরে গিয়ে এই দুর্ভিক্ষগ্রস্ত অথচ গর্বিত প্রাচীরগুলোর দিকে তাকাই, তাহলে বুঝতে পারব—ইতিহাস কেবল রাজাদের নয়, ইট-পাথরেরও হয়। আলোরনা দুর্গ সেই ইতিহাসেরই এক নীরব অথচ অমোঘ অনুচ্চারণ।
    #itihaser_golpo #প্রত্নতত্ত্ব #itihasergolpo
    আলোরনা দুর্গ: গোয়ার উত্তরের অর্পোরা নদীর ধারে, সবুজ বনবিথিকার মাঝে নির্জনে দাঁড়িয়ে আছে এক প্রাচীন স্থাপনা—আলোরনা দুর্গ। স্থানীয়ভাবে একে বলা হয় 'Alorna Fort', যাকে ঘিরে ছড়িয়ে আছে পর্তুগিজ উপনিবেশ, মারাঠা সেনাদল, স্থানীয় রাজবংশ এবং প্রাকৃতিক প্রতিরোধের এক দীর্ঘ ইতিহাস। সময়ের প্রবাহে যেখানে গোয়ার সমুদ্রতীর ভরে উঠেছে পর্যটনের গর্জনে, সেখানে আলোরনা দুর্গ দাঁড়িয়ে আছে নিঃশব্দে, যেন কেবল ইতিহাসই যার সঙ্গী। দুর্গটির নির্মাণকাল আনুমানিক ষোড়শ শতাব্দীর মাঝামাঝি। তখন গোয়ায় ক্ষমতার পালা বদলের খেলা চলছে—কখনও মুসলিম শাসক, কখনও হিন্দু রাজা, আবার কখনও পর্তুগিজদের ছায়া বিস্তার করছে উপকূল থেকে অভ্যন্তরভাগে। আলোরনা দুর্গের নির্মাতা হিসেবে মূলত ভীম রাজবংশকে ধরা হয়—যারা নিজেদের প্রতিরক্ষার জন্যই এ দুর্গ নির্মাণ করেছিলেন। এটি ছিল একটি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ স্থান—কোনো বহির্শত্রু পশ্চিম উপকূল দিয়ে আসলে, উত্তর থেকে এই দুর্গের মধ্য দিয়েই প্রবেশ করতে হতো। কিন্তু সময় বদলাল। সপ্তদশ শতকে পর্তুগিজরা গোয়ায় তাদের শাসনব্যবস্থা শক্তিশালী করে তোলে। 1746 সালে তারা আলোরনা দুর্গ দখল করে নেয়, আর তখন থেকে এটি হয়ে ওঠে পর্তুগিজ সামরিক ঘাঁটি। দুর্গের ভিতরে নির্মিত হয় স্নানঘর, অস্ত্রাগার, খাদ্য মজুদের কুঠুরি, এমনকি একটি ছোট্ট উপাসনালয়ও—যার ভগ্নাংশ এখনও দেখা যায়। পর্তুগিজ স্থাপত্যের অনন্য ছাপ পাওয়া যায় দুর্গের দেওয়ালে—মসৃণ প্রস্তরখণ্ড, মোটা ইটের বাঁধাই, এবং কাঠের বিমযুক্ত ছাদ, যা আজ ধ্বংসস্তূপে রূপান্তরিত। আলোরনা দুর্গের একটি অনন্য দিক হলো এর অবস্থান—পাহাড়ের ঢালে এবং নদীঘেঁষা উচ্চভূমিতে দাঁড়িয়ে থাকা এই দুর্গ থেকে চারপাশের বিস্তৃত এলাকা দেখা যেত। সৈনিকরা দূর থেকে শত্রুর আগমন দেখতে পেত এবং সেইমতো প্রস্তুতি নিতে পারত। এমনকি নদীপথে আগত জলযানেরও গতিপথ নজরে রাখা যেত। এখন, সেই প্রহরীদের নেই, নেই কোনো ঢাল-তলোয়ারের ঝংকার। রয়েছে কেবল শ্যাওলা ধরা দেয়াল, গাছগাছালির বিস্তার, আর বাতাসে ভেসে আসা নিস্তব্ধতার এক অপূর্ব সংগীত। ইতিহাসপ্রেমী ও অভিযাত্রীরা আজও মাঝে মাঝে এখানে এসে দাঁড়িয়ে পড়েন এই ধ্বংসাবশেষের পাশে—কখনও একাকী, কখনও কৌতূহলী চোখে। কেউ কেউ বলেন, সন্ধ্যায় নাকি দুর্গের ভিতরে বাতাস একটু অদ্ভুতভাবে বয়ে যায়—যেন প্রাচীন কোনো শ্বাস ফেলে গেছে তার গোপন বার্তা। আলোরনা দুর্গকে ঘিরে স্থানিক মানুষের মধ্যেও এক ধরণের মিথ বিরাজমান। কেউ বলেন এখানে গুপ্তধন লুকানো ছিল, কেউ বলেন এক যুদ্ধবন্দী রানীকে এখানেই বন্দি রাখা হয়েছিল। যদিও এসব কাহিনির ঐতিহাসিক সত্যতা প্রশ্নসাপেক্ষ, তবুও তারা স্থানীয় সংস্কৃতির অংশ হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি গোয়া পর্যটন বিভাগ এই দুর্গটির সংরক্ষণ ও উন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। রাস্তাঘাট কিছুটা উন্নত হয়েছে, প্রাচীরের কিছু অংশ নতুন করে বাঁধাই করা হয়েছে, এবং একটি দর্শনার্থী করিডোর তৈরির পরিকল্পনাও গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু তবু, এখনো অধিকাংশ মানুষ এই দুর্গের নাম শোনেনি—গোয়ার কোলাহলময় সৈকত, ক্যাসিনো আর উৎসবের পেছনে যেন চাপা পড়ে গেছে ইতিহাসের এই নিঃশব্দ অভিমান। আলোরনা দুর্গ আসলে একটি প্রাচীন কাব্যের মতো—যার প্রতিটি ইটের গায়ে লেখা রয়েছে এক একটি যুদ্ধ, বিশ্বাসঘাতকতা, প্রেম, এবং প্রতিরোধের অদৃশ্য পঙক্তি। এই দুর্গ কেবল অতীতের সঙ্গেই নয়, গোয়ার ঐতিহ্যিক আত্মার সঙ্গেও গভীরভাবে জড়িত। আমরা যদি একটিবারও থেমে দাঁড়াই, কোলাহলের বাইরে গিয়ে এই দুর্ভিক্ষগ্রস্ত অথচ গর্বিত প্রাচীরগুলোর দিকে তাকাই, তাহলে বুঝতে পারব—ইতিহাস কেবল রাজাদের নয়, ইট-পাথরেরও হয়। আলোরনা দুর্গ সেই ইতিহাসেরই এক নীরব অথচ অমোঘ অনুচ্চারণ। #itihaser_golpo #প্রত্নতত্ত্ব #itihasergolpo
    0 Комментарии 0 Поделились 48 Просмотры
  • টোলেন্স উপত্যকার নিঃশব্দ যুদ্ধ

    জার্মানির টোলেন্স উপত্যকা। আজ শান্ত আর সবুজে ঘেরা, কিন্তু প্রায় ৩২৫০ বছর আগে এই জায়গাটিই ছিল এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের ময়দান।

    ১৯৯৬ সালে স্থানীয় কয়েকজন নদীর পাড়ে হেঁটে যাওয়ার সময় হঠাৎ দেখতে পান একটি মানুষের হাড়। পরে সেখানে খনন শুরু হলে বেরিয়ে আসে এক চমকে দেওয়া ইতিহাস।

    পাওয়া যায় ১২,৫০০টি হাড়, ৩০০টিরও বেশি ব্রোঞ্জের অস্ত্র—তীর, তলোয়ার, ধনুক। আশ্চর্যের ব্যাপার, অনেক অস্ত্র এখনো কঙ্কালের মাথার খুলির মধ্যে আটকে আছে। স্পষ্ট বোঝা যায়, সেগুলোর আঘাতেই মৃত্যু হয়েছিল সেইসব যোদ্ধাদের।

    গবেষকদের ধারণা, খ্রিস্টপূর্ব ১২৫০ সালের দিকে এখানে বড় ধরনের একটি সংঘর্ষ হয়েছিল, সম্ভবত কোনো অঞ্চল বা নদী দখলের লড়াই।

    আজ টোলেন্স উপত্যকা নীরব। কিন্তু সেই নিঃশব্দতার নিচে লুকিয়ে আছে এক হারিয়ে যাওয়া যুদ্ধের অমোচনীয় ছাপ।

    Note এই ৩,০০০ বছরের পুরনো তীরগুলি 'ইউরোপের প্রাচীনতম যুদ্ধক্ষেত্রের' রহস্যের গুরুত্বপূর্ণ সূত্র। এ বিষয়ে যদিও কোনও লিখিত রেকর্ড নেই, তবে এই খুলি বা তীরগুলি নতুন গবেষণার জন্য খ্রিস্টপূর্ব ১৩ শতকে উত্তর জার্মানিতে সংঘটিত যুদ্ধের মূল পথনির্দেশক l
    https://www.smithsonianmag.com/smart-news/these-3000-year-old-arrowheads-are-pivotal-clues-in-the-mystery-of-europes-oldest-known-battlefield-180985142/
    Rabab Ahmed
    Stay Curious SIS
    টোলেন্স উপত্যকার নিঃশব্দ যুদ্ধ 🔷 জার্মানির টোলেন্স উপত্যকা। আজ শান্ত আর সবুজে ঘেরা, কিন্তু প্রায় ৩২৫০ বছর আগে এই জায়গাটিই ছিল এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের ময়দান। ১৯৯৬ সালে স্থানীয় কয়েকজন নদীর পাড়ে হেঁটে যাওয়ার সময় হঠাৎ দেখতে পান একটি মানুষের হাড়। পরে সেখানে খনন শুরু হলে বেরিয়ে আসে এক চমকে দেওয়া ইতিহাস। পাওয়া যায় ১২,৫০০টি হাড়, ৩০০টিরও বেশি ব্রোঞ্জের অস্ত্র—তীর, তলোয়ার, ধনুক। আশ্চর্যের ব্যাপার, অনেক অস্ত্র এখনো কঙ্কালের মাথার খুলির মধ্যে আটকে আছে। স্পষ্ট বোঝা যায়, সেগুলোর আঘাতেই মৃত্যু হয়েছিল সেইসব যোদ্ধাদের। গবেষকদের ধারণা, খ্রিস্টপূর্ব ১২৫০ সালের দিকে এখানে বড় ধরনের একটি সংঘর্ষ হয়েছিল, সম্ভবত কোনো অঞ্চল বা নদী দখলের লড়াই। আজ টোলেন্স উপত্যকা নীরব। কিন্তু সেই নিঃশব্দতার নিচে লুকিয়ে আছে এক হারিয়ে যাওয়া যুদ্ধের অমোচনীয় ছাপ। Note 🔷এই ৩,০০০ বছরের পুরনো তীরগুলি 'ইউরোপের প্রাচীনতম যুদ্ধক্ষেত্রের' রহস্যের গুরুত্বপূর্ণ সূত্র। এ বিষয়ে যদিও কোনও লিখিত রেকর্ড নেই, তবে এই খুলি বা তীরগুলি নতুন গবেষণার জন্য খ্রিস্টপূর্ব ১৩ শতকে উত্তর জার্মানিতে সংঘটিত যুদ্ধের মূল পথনির্দেশক l 🌷🟥 https://www.smithsonianmag.com/smart-news/these-3000-year-old-arrowheads-are-pivotal-clues-in-the-mystery-of-europes-oldest-known-battlefield-180985142/ Rabab Ahmed Stay Curious SIS
    0 Комментарии 0 Поделились 62 Просмотры
  • এবার স্টকহোমের রাস্তাঘাট কিংবা সুইডেনের বন্যা প্রতিরোধ ব্যারিয়ার সবখানেই এখন পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার হচ্ছে এক ধরনের অত্যাধুনিক কংক্রিট, যেটি কিনা নিজে থেকেই নিজের ফাটল সারিয়ে নিতে পারে। মানে কংক্রিটে কোথাও ফাটল হলে নিজে নিজেই বন্ধ হয়ে যায় সেই ফাটল ! ব্যাকটেরিয়া দিয়ে তৈরি এই ‘হিলিং কংক্রিট’ যেন ভবিষ্যতের অবকাঠামোগত বিপ্লবের এক জীবন্ত নমুনা।

    এই কংক্রিটে সুপ্ত অবস্থায় মিশিয়ে রাখা হয় Bacillus pseudofirmus নামের এক প্রকার ব্যাকটেরিয়া, যেগুলো উচ্চ pH-এর পরিবেশে বেঁচে থাকতে পারে। যখন কংক্রিটে ফাটল ধরে এবং তার ভিতর পানি প্রবেশ করে, তখন ব্যাকটেরিয়াগুলো সক্রিয় হয়ে ওঠে। তারা কংক্রিটে থাকা ক্যালসিয়াম ল্যাকটেট খেয়ে উৎপন্ন করে চুনাপাথর (লিমেস্টোন), যা ফাটলের ভিতর জমা হয়ে অটোমেটিক্যালি ফাটল বন্ধ করে দেয়। এখন হয়তো আপনার মনে হতে পারে এই চুনাপাথর হয়তো অতটা মজবুত না । তবে আসলে এটি এতটাই মজবুত যে আমাদের বাংলাদেশের অধিকাংশ আপনার থেকে অনেক গুণ বেশি শক্তিশালী ও মজবুত ।

    পরীক্ষায় দেখা গেছে, এই জীবন্ত কংক্রিট মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যে ০.৮ মিলিমিটার পর্যন্ত ফাটল পুরোপুরি বন্ধ করতে সক্ষম তাও আবার পানিরোধকভাবে। সাধারণ কংক্রিট যেখানে বারবার রক্ষণাবেক্ষণ ও লেপন প্রয়োজন, সেখানে এই নতুন কংক্রিট প্রাকৃতিকভাবে নিজেই নিজেকে সারিয়ে তোলে।

    এই প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় লাভ হলো স্থায়িত্ব। প্রকৌশলীরা বলছেন, এই কংক্রিট ব্যবহার করে নির্মিত ভবনগুলো ২০০ বছর বা তারও বেশি স্থায়ী হতে পারে। যার অর্থ কম মেরামত, কম খরচ, কম বর্জ্য।

    ইতোমধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিভিন্ন দেশে এই প্রযুক্তির জন্য অর্থায়ন করছে এবং ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে ।
    এবার স্টকহোমের রাস্তাঘাট কিংবা সুইডেনের বন্যা প্রতিরোধ ব্যারিয়ার সবখানেই এখন পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার হচ্ছে এক ধরনের অত্যাধুনিক কংক্রিট, যেটি কিনা নিজে থেকেই নিজের ফাটল সারিয়ে নিতে পারে। মানে কংক্রিটে কোথাও ফাটল হলে নিজে নিজেই বন্ধ হয়ে যায় সেই ফাটল ! ব্যাকটেরিয়া দিয়ে তৈরি এই ‘হিলিং কংক্রিট’ যেন ভবিষ্যতের অবকাঠামোগত বিপ্লবের এক জীবন্ত নমুনা। এই কংক্রিটে সুপ্ত অবস্থায় মিশিয়ে রাখা হয় Bacillus pseudofirmus নামের এক প্রকার ব্যাকটেরিয়া, যেগুলো উচ্চ pH-এর পরিবেশে বেঁচে থাকতে পারে। যখন কংক্রিটে ফাটল ধরে এবং তার ভিতর পানি প্রবেশ করে, তখন ব্যাকটেরিয়াগুলো সক্রিয় হয়ে ওঠে। তারা কংক্রিটে থাকা ক্যালসিয়াম ল্যাকটেট খেয়ে উৎপন্ন করে চুনাপাথর (লিমেস্টোন), যা ফাটলের ভিতর জমা হয়ে অটোমেটিক্যালি ফাটল বন্ধ করে দেয়। এখন হয়তো আপনার মনে হতে পারে এই চুনাপাথর হয়তো অতটা মজবুত না । তবে আসলে এটি এতটাই মজবুত যে আমাদের বাংলাদেশের অধিকাংশ আপনার থেকে অনেক গুণ বেশি শক্তিশালী ও মজবুত । পরীক্ষায় দেখা গেছে, এই জীবন্ত কংক্রিট মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যে ০.৮ মিলিমিটার পর্যন্ত ফাটল পুরোপুরি বন্ধ করতে সক্ষম তাও আবার পানিরোধকভাবে। সাধারণ কংক্রিট যেখানে বারবার রক্ষণাবেক্ষণ ও লেপন প্রয়োজন, সেখানে এই নতুন কংক্রিট প্রাকৃতিকভাবে নিজেই নিজেকে সারিয়ে তোলে। এই প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় লাভ হলো স্থায়িত্ব। প্রকৌশলীরা বলছেন, এই কংক্রিট ব্যবহার করে নির্মিত ভবনগুলো ২০০ বছর বা তারও বেশি স্থায়ী হতে পারে। যার অর্থ কম মেরামত, কম খরচ, কম বর্জ্য। ইতোমধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিভিন্ন দেশে এই প্রযুক্তির জন্য অর্থায়ন করছে এবং ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে ।
    0 Комментарии 0 Поделились 51 Просмотры
  • অণুবীক্ষণ যন্ত্র আবিষ্কার করেন এক ঝাড়ুদার, কে জানেন?

    সপ্তদশ শতাব্দীর চল্লিশের দশক। নেদারল্যান্ডের ডেলফট শহরে এক চশমার দোকানে ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকে এক কিশোর। দোকানের কর্মচারিরা কাচ ঘসে চশমা তৈরি করে। সেটাই মন দিয়ে দেখে ছেলেটা। কী মজা পায়, কে জানে?

    ছেলেটার বাবা মারা গেছে কয়েক বছর আগে। আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ। তাই স্কুলের পাঠ শেষ না করেই চাকরি নেয় এক মুদির দোকানে। মাইনে সামান্যই। এরই মধ্যে পৌরসভার একটা চাকরি জুটে যায়। বড় চাকরি নয়, ঝাড়ুদারের কাজ। পেট চালাতে হলে এ ছাড়া উপায়ই বা কী?

    ছেলেটা চশমার দোকানে কাঁচ কাটা দেখে একটা ব্যাপার বুঝেছে। এক টুকরো কাচ ঘষে মাঝখানটা উঁচু করতে পারলে সেটা লেন্সে পরিণত হয়। তার ভেতর দিয়ে তাকালে ছোট জিনিস বড় দেখায়। সে ছেলেটা নিজেই এই জিনিস তৈরির কথা ভাবে এক সময়। বোঝে, কাচ আরও সুন্দর করে ঘষে, আর নিখুঁত করে তুলতে পারলে সেটা আরও ভালো লেন্সে পরিণত হবে।

    বাড়ি ফিরে সত্যি সত্যিই কাঁচ ঘষে লেন্স তৈরি করে ছেলেটা। চশমার দোকানের চেয়েও ভালো লেন্স। সেই লেন্সের ভেতর দিয়ে তাকালে যে জিনি দু-তিন শ গুণ বড় দেখায়। ছেলেটার উৎসাহ বাড়ে। আরও ভালো লেন্স তৈরি করে সে। তামার পাত দিয়ে তৈরি একটা ফাঁপা নলের মাথায় লাগিয়ে দেয় লেন্স। তৈরি হয় অণুবীক্ষণ যন্ত্র। আর ছেলেটার সামনে হাট করে খুলে যায় খুদে প্রাণীদের এক অবিশ্বাস্য জগৎ।

    প্রথম দিকে সামনে যা পেত, তা-ই অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নিচে রেখে দেখত।

    ছেলেটার বয়স বাড়তে থাকে। কিন্তু অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নেশা তাঁকে ছাড়ে না। তিনি কাচ ঘসে ঘসে লেন্স বানান। আর একে একে প্রায় চার শটির মতো অণুবীক্ষণ যন্ত্র বানিয়ে ফেলেন। একদিন কী মনে করে অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নিচে ফোটা পানি ফেলে পরীক্ষা শুরু করলেন। আর অমনি আরেকটা আশ্চর্য প্রাণীজগতের দুয়ার খুলে গেল। বিকট, ভয়ঙ্কর দর্শন সব জীব ঘুরে বেড়াচ্ছে ওই এক ফোঁটা জলের ভেতর। তাঁর অজান্তেই ঘটে গেল চিকিৎসাবিজ্ঞানের এক মহাবিপ্লব। পরে এডওয়ার্ড জেনার ও লুইপাস্তুরের হাতে সেই জগৎ আরও বড় হতে থাকে।

    লোকটা খুদে জিনিস-পত্র পর্যবেক্ষণ করেন, আর সেগুলো খাতায় টুকে রাখেন। ভবিষ্যতে কোনো কাজে লাগবে ভেবে এটা করেননি। হয়তো নিজের পর্যবেক্ষেণেরই সুবিধা হবে। তিনি তখনো ঝাড়ুদারি করেন। তাই এটা যে বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার, সেটাই হয়তো বোঝেননি।

    এর মধ্যে কেউ একজন জানায়, এই ব্যাপারটা যদি লন্ডনের রয়্যাল সোসাইটির লোকজনকে জানায়, তাহলে হয়তো তাঁরা এর মর্ম বুঝবেন। কিন্তু তিনি একজন ঝাড়ুদার। এক দেশ থেকে আরেক দেশে যাওয়ার মতো পয়সা তাঁর ছিল না। তাই রয়্যাল সোসাইটির ঠিকানা জোগাড় করে সেখানকার বিজ্ঞানীদের চিঠি লিখে জানালেন। রয়্যাল সোসাইটির বিজ্ঞানীরা এটাকে আমল দিতেই চাননি। কিন্তু সবাই তো একরকম নন। কেউ কেউ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। এরই মধ্যে লিউয়েনহুক ছাব্বিশটা অণুবীক্ষণ যন্ত্র পাঠিয়ে দিলেন রয়্যাল সোসাইটির বিজ্ঞানীদের ঠিকানায়।

    রয়্যাল সোসাইটি তখন বিজ্ঞান জগতের হর্তাকর্তা। তাঁদের থেকে কোনো আবিষ্কারের স্বীকৃতি না পেলে বিজ্ঞান জগতে সেটার টিকে থাকা মুশকিল। এবার অণুবীক্ষণ যন্ত্র হাতে পেয়েছেন র‌য়্যাল সোসাইটির বিজ্ঞানীরা। পরীক্ষা করে দেখতে তো দোষ নেই! কোনো কোনো বিজ্ঞানী সেই যন্ত্রের নলে চোখ লাগিয়ে দেখলেন, এতদিন ঝাড়ুদার লোকটা যা জানিয়েছেন তার সবই সত্যি।

    সুতরাং তাঁকে রয়্যাল সোসাইটির সদস্য করে নেওয়া হলো। বিশ্বের তাবড়-তাবড় বিজ্ঞানীরাই কেবল এই সোসাইটির সদস্য হতে পারেন। সুতরাং ঝাড়ুদারের সম্মান বাড়ল অনেকখানি। তাঁর সঙ্গে দেখা করার জন্য খোদ রাশিয়ার রাজা এবং ইংল্যান্ডের রানি পর্যন্ত ডেলটফ নামের সেই ছোট্ট শহরে গিয়েছিলেন। পা ফেলেছিলেন দিয়েছিলেন তার জীর্ণ কূটিরে।

    সেই ঝাড়ুদার লোকটার নাম হলো অ্যান্থনি ফিলিপ ভন লিউয়েন হুক। যিনি অনুবীক্ষণ যন্ত্রের আবিষ্কারক হিসেবে ইতিহাসে ঠাঁই করে নিয়েছেনে।
    অণুবীক্ষণ যন্ত্র আবিষ্কার করেন এক ঝাড়ুদার, কে জানেন? সপ্তদশ শতাব্দীর চল্লিশের দশক। নেদারল্যান্ডের ডেলফট শহরে এক চশমার দোকানে ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকে এক কিশোর। দোকানের কর্মচারিরা কাচ ঘসে চশমা তৈরি করে। সেটাই মন দিয়ে দেখে ছেলেটা। কী মজা পায়, কে জানে? ছেলেটার বাবা মারা গেছে কয়েক বছর আগে। আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ। তাই স্কুলের পাঠ শেষ না করেই চাকরি নেয় এক মুদির দোকানে। মাইনে সামান্যই। এরই মধ্যে পৌরসভার একটা চাকরি জুটে যায়। বড় চাকরি নয়, ঝাড়ুদারের কাজ। পেট চালাতে হলে এ ছাড়া উপায়ই বা কী? ছেলেটা চশমার দোকানে কাঁচ কাটা দেখে একটা ব্যাপার বুঝেছে। এক টুকরো কাচ ঘষে মাঝখানটা উঁচু করতে পারলে সেটা লেন্সে পরিণত হয়। তার ভেতর দিয়ে তাকালে ছোট জিনিস বড় দেখায়। সে ছেলেটা নিজেই এই জিনিস তৈরির কথা ভাবে এক সময়। বোঝে, কাচ আরও সুন্দর করে ঘষে, আর নিখুঁত করে তুলতে পারলে সেটা আরও ভালো লেন্সে পরিণত হবে। বাড়ি ফিরে সত্যি সত্যিই কাঁচ ঘষে লেন্স তৈরি করে ছেলেটা। চশমার দোকানের চেয়েও ভালো লেন্স। সেই লেন্সের ভেতর দিয়ে তাকালে যে জিনি দু-তিন শ গুণ বড় দেখায়। ছেলেটার উৎসাহ বাড়ে। আরও ভালো লেন্স তৈরি করে সে। তামার পাত দিয়ে তৈরি একটা ফাঁপা নলের মাথায় লাগিয়ে দেয় লেন্স। তৈরি হয় অণুবীক্ষণ যন্ত্র। আর ছেলেটার সামনে হাট করে খুলে যায় খুদে প্রাণীদের এক অবিশ্বাস্য জগৎ। প্রথম দিকে সামনে যা পেত, তা-ই অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নিচে রেখে দেখত। ছেলেটার বয়স বাড়তে থাকে। কিন্তু অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নেশা তাঁকে ছাড়ে না। তিনি কাচ ঘসে ঘসে লেন্স বানান। আর একে একে প্রায় চার শটির মতো অণুবীক্ষণ যন্ত্র বানিয়ে ফেলেন। একদিন কী মনে করে অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নিচে ফোটা পানি ফেলে পরীক্ষা শুরু করলেন। আর অমনি আরেকটা আশ্চর্য প্রাণীজগতের দুয়ার খুলে গেল। বিকট, ভয়ঙ্কর দর্শন সব জীব ঘুরে বেড়াচ্ছে ওই এক ফোঁটা জলের ভেতর। তাঁর অজান্তেই ঘটে গেল চিকিৎসাবিজ্ঞানের এক মহাবিপ্লব। পরে এডওয়ার্ড জেনার ও লুইপাস্তুরের হাতে সেই জগৎ আরও বড় হতে থাকে। লোকটা খুদে জিনিস-পত্র পর্যবেক্ষণ করেন, আর সেগুলো খাতায় টুকে রাখেন। ভবিষ্যতে কোনো কাজে লাগবে ভেবে এটা করেননি। হয়তো নিজের পর্যবেক্ষেণেরই সুবিধা হবে। তিনি তখনো ঝাড়ুদারি করেন। তাই এটা যে বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার, সেটাই হয়তো বোঝেননি। এর মধ্যে কেউ একজন জানায়, এই ব্যাপারটা যদি লন্ডনের রয়্যাল সোসাইটির লোকজনকে জানায়, তাহলে হয়তো তাঁরা এর মর্ম বুঝবেন। কিন্তু তিনি একজন ঝাড়ুদার। এক দেশ থেকে আরেক দেশে যাওয়ার মতো পয়সা তাঁর ছিল না। তাই রয়্যাল সোসাইটির ঠিকানা জোগাড় করে সেখানকার বিজ্ঞানীদের চিঠি লিখে জানালেন। রয়্যাল সোসাইটির বিজ্ঞানীরা এটাকে আমল দিতেই চাননি। কিন্তু সবাই তো একরকম নন। কেউ কেউ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। এরই মধ্যে লিউয়েনহুক ছাব্বিশটা অণুবীক্ষণ যন্ত্র পাঠিয়ে দিলেন রয়্যাল সোসাইটির বিজ্ঞানীদের ঠিকানায়। রয়্যাল সোসাইটি তখন বিজ্ঞান জগতের হর্তাকর্তা। তাঁদের থেকে কোনো আবিষ্কারের স্বীকৃতি না পেলে বিজ্ঞান জগতে সেটার টিকে থাকা মুশকিল। এবার অণুবীক্ষণ যন্ত্র হাতে পেয়েছেন র‌য়্যাল সোসাইটির বিজ্ঞানীরা। পরীক্ষা করে দেখতে তো দোষ নেই! কোনো কোনো বিজ্ঞানী সেই যন্ত্রের নলে চোখ লাগিয়ে দেখলেন, এতদিন ঝাড়ুদার লোকটা যা জানিয়েছেন তার সবই সত্যি। সুতরাং তাঁকে রয়্যাল সোসাইটির সদস্য করে নেওয়া হলো। বিশ্বের তাবড়-তাবড় বিজ্ঞানীরাই কেবল এই সোসাইটির সদস্য হতে পারেন। সুতরাং ঝাড়ুদারের সম্মান বাড়ল অনেকখানি। তাঁর সঙ্গে দেখা করার জন্য খোদ রাশিয়ার রাজা এবং ইংল্যান্ডের রানি পর্যন্ত ডেলটফ নামের সেই ছোট্ট শহরে গিয়েছিলেন। পা ফেলেছিলেন দিয়েছিলেন তার জীর্ণ কূটিরে। সেই ঝাড়ুদার লোকটার নাম হলো অ্যান্থনি ফিলিপ ভন লিউয়েন হুক। যিনি অনুবীক্ষণ যন্ত্রের আবিষ্কারক হিসেবে ইতিহাসে ঠাঁই করে নিয়েছেনে।
    0 Комментарии 0 Поделились 20 Просмотры
  • বর্তমানে স্মার্টওয়াচ ও ফিটনেস ট্র্যাকার ব্যান্ড আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে। কিন্তু এই ব্যান্ডে ব্যবহৃত কিছু মেটেরিয়ালে রয়েছে PFAS অর্থাৎ Per- and Polyfluoroalkyl Substances ।

    এটি এক ধরনের বিষাক্ত চিরস্থায়ী রাসায়নিক, যা ত্বক থেকে শোষিত হয়ে শরীরে ক্যানসার, লিভার ও কিডনির রোগের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে, এমনটাই বলছে যুক্তরাষ্ট্রের নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা।

    এই রাসায়নিক সাধারণত ব্যান্ড, কেসিং বা স্ক্রিন কোটিংয়ে ব্যবহৃত হয়, কারণ এটি পানি, তেল ও ঘাম প্রতিরোধ করে এবং পণ্যকে টেকসই ও মসৃণ রাখে। তবে PFAS খুবই স্থিতিশীল, সহজে ভাঙে না—বরং শরীরে ও পরিবেশে দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় থাকে। ঘাম এর শোষণ ক্ষমতা আরও বাড়িয়ে তোলে।

    গবেষণায় Nike, Apple, Fitbit, Google সহ ২২টি জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের ব্যান্ড পরীক্ষা করে ১৫ টিতেই PFAS শনাক্ত হয়েছে, অনেক ক্ষেত্রেই মাত্রা ছিল বিপজ্জনকভাবে বেশি। যদিও কোন ব্যান্ডগুলোতে পাওয়া যায় সেটা উল্লেখ করা হয়নি।

    তাছাড়া গবেষণায় PFHxA-এর মতো কিছু রাসায়নিকও পাওয়া গেছে, যা সাধারণত কীটনাশক বা কার্পেটে ব্যবহৃত হয় এবং সরাসরি লিভার ক্ষতির সঙ্গে জড়িত। যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ সংস্থা (EPA) বলেছে, এসব রাসায়নিকের কোনো মাত্রাই শরীরের জন্য নিরাপদ নয়। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইতোমধ্যেই নিষেধাজ্ঞার পথে হাঁটছে।

    তাই স্মার্টওয়াচ বা ব্যান্ড কেনার সময় সচেতন হোন। PFAS-মুক্ত কি না, দেখে নিন। নিরাপদ বিকল্প হিসেবে সিলিকন ব্যান্ড বেছে নেওয়াই উত্তম।

    Compiled by: বিজ্ঞান্বেষী
    Source: American Chemical Society (ACS)
    #Bigganneshi
    বর্তমানে স্মার্টওয়াচ ও ফিটনেস ট্র্যাকার ব্যান্ড আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে। কিন্তু এই ব্যান্ডে ব্যবহৃত কিছু মেটেরিয়ালে রয়েছে PFAS অর্থাৎ Per- and Polyfluoroalkyl Substances । এটি এক ধরনের বিষাক্ত চিরস্থায়ী রাসায়নিক, যা ত্বক থেকে শোষিত হয়ে শরীরে ক্যানসার, লিভার ও কিডনির রোগের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে, এমনটাই বলছে যুক্তরাষ্ট্রের নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা। এই রাসায়নিক সাধারণত ব্যান্ড, কেসিং বা স্ক্রিন কোটিংয়ে ব্যবহৃত হয়, কারণ এটি পানি, তেল ও ঘাম প্রতিরোধ করে এবং পণ্যকে টেকসই ও মসৃণ রাখে। তবে PFAS খুবই স্থিতিশীল, সহজে ভাঙে না—বরং শরীরে ও পরিবেশে দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় থাকে। ঘাম এর শোষণ ক্ষমতা আরও বাড়িয়ে তোলে। গবেষণায় Nike, Apple, Fitbit, Google সহ ২২টি জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের ব্যান্ড পরীক্ষা করে ১৫ টিতেই PFAS শনাক্ত হয়েছে, অনেক ক্ষেত্রেই মাত্রা ছিল বিপজ্জনকভাবে বেশি। যদিও কোন ব্যান্ডগুলোতে পাওয়া যায় সেটা উল্লেখ করা হয়নি। তাছাড়া গবেষণায় PFHxA-এর মতো কিছু রাসায়নিকও পাওয়া গেছে, যা সাধারণত কীটনাশক বা কার্পেটে ব্যবহৃত হয় এবং সরাসরি লিভার ক্ষতির সঙ্গে জড়িত। যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ সংস্থা (EPA) বলেছে, এসব রাসায়নিকের কোনো মাত্রাই শরীরের জন্য নিরাপদ নয়। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইতোমধ্যেই নিষেধাজ্ঞার পথে হাঁটছে। তাই স্মার্টওয়াচ বা ব্যান্ড কেনার সময় সচেতন হোন। PFAS-মুক্ত কি না, দেখে নিন। নিরাপদ বিকল্প হিসেবে সিলিকন ব্যান্ড বেছে নেওয়াই উত্তম। Compiled by: বিজ্ঞান্বেষী Source: American Chemical Society (ACS) #Bigganneshi
    Love
    1
    0 Комментарии 0 Поделились 40 Просмотры
  • নিজের শেকড় ভুলে যাওয়া অধম!
    মানুষ যত দূরই এগিয়ে যাক না কেন, যত বড় নাম বা সাফল্যই অর্জন করুক না কেন, তার ভিতরে এক অদৃশ্য শক্তি থাকে—সেটি হলো তার শেকড়। জন্মস্থান, পরিবার, পূর্বপুরুষদের জীবনসংগ্রাম, ভাষা, সংস্কৃতি, বিশ্বাস—এসব মিলেই তৈরি হয় একেকটি মানুষের পরিচয় ও আত্মা।

    শুধু প্রবাসী নয়, শেকড়ে যুক্ত থাকা দরকার সবার!
    শুধু প্রবাসী নয়, দেশে থাকা মানুষও যখন নিজের শেকড়কে অবহেলা করে, তখন সে ধীরে ধীরে আত্মবিস্মৃত হয়। এমন অনেকে আছেন, যারা নিজের আদি নিবাস, পারিবারিক ইতিহাস, স্থানীয় সংস্কৃতি বা মাটির গন্ধকে তুচ্ছ ভাবে; নিজেদের অতীতকে “অপ্রয়োজনীয়” মনে করে সামনে এগিয়ে যেতে চায়। কিন্তু প্রশ্ন হলো—যে নিজের পেছনের ইতিহাস জানে না, সে সামনের পথ ঠিক কীভাবে চিনবে?

    শেকড়হীন মানুষ, গাছ থেকে ছেঁড়া পাতার মতো!
    একটি গাছ মাটি ছেড়ে বাঁচতে পারে না। শেকড় ছাড়া গাছ যেমন শুকিয়ে যায়, মানুষও তেমনি ভিতর থেকে শূন্য হয়ে পড়ে যদি সে নিজের শেকড় ভুলে যায়। আত্মপরিচয় শুধু বর্তমানের নয়—তা গঠিত হয় অতীতের ভাঙাগড়ার ভেতর দিয়ে।
    আধুনিকতা মানেই শেকড়বিচ্ছিন্নতা নয়
    বিশ্বায়ন, আধুনিকতা, নাগরিক জীবন—এসবের ভিড়ে অনেকেই ভাবে নিজের পুরোনো গল্প, ঐতিহ্য বা স্থানীয় সংস্কৃতির চর্চা "পিছিয়ে পড়া"র লক্ষণ। অথচ সত্যটা হলো, যারা শেকড় জানে না, তারা ভবিষ্যৎ গড়ার মাটি পায় না। যারা নিজেদের ছোটবেলার স্কুল, গ্রামীণ রীতি, পরিবারের গল্প ভুলে যায়, তারাই জীবনের গভীর সম্পর্কগুলো হারিয়ে ফেলে।
    শেকড় মানে কেবল জন্মস্থান নয়, আত্মার সংযোগ!
    নিজ শেকড় মানে শুধু কোথায় জন্মেছি তা নয়—মানে আমি কার ইতিহাস বহন করছি, কার ভাষায় প্রথম হাসতে শিখেছি, কোন গন্ধে মন নরম হয়েছে, কোন মায়ার মধ্যে বেড়ে উঠেছি। এই শেকড় জানলে মানুষ আত্মবিশ্বাসী হয়, মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শেখে।
    মধুসূদনের পথ ভুলে, শেষতক শেকড়েই ফেরা!
    এই প্রসঙ্গে মাইকেল মধুসূদন দত্তের কথা না বললেই নয়।
    যিনি ইংরেজি সাহিত্যকে হৃদয়ে ধারণ করেছিলেন, ইউরোপীয় সংস্কৃতিতে মগ্ন ছিলেন, এবং ভাবতেন—"এ দেশ, এই ভাষা, এই সংস্কৃতি আমার নয়।" তিনি বিদেশে গিয়ে বুঝেছিলেন, নিজের মাতৃভাষা, মাটি আর মা—এদের ছাড়া মানুষ কেবল দেহ বয়ে বেড়ায়, আত্মা নয়। তাই তিনি ফিরে এলেন, বাংলায় লিখলেন, আর সেই শেকড়েই গেঁথে গেলেন চিরতরে।
    শেষজীবনে অভাব, অপমান, হতাশা সব সয়েও বলেছিলেন—"আহা, বাংলায় যদি লিখতে পারতাম আরও আগে!"

    শেকড় ভুলে যাওয়া মানে আত্মা হারিয়ে ফেলা!
    যে নিজের শেকড় ভুলে যায়, তার চেয়ে অধম আর কেউ নেই। নিজেকে জানতে হলে, ভালোবাসতে হলে, আগে জানতে হয়—আমি কে, কোথা থেকে এসেছি। শুধু ব্যক্তিগত নয়, জাতিগতভাবে, সাংস্কৃতিকভাবেও এই চেতনা মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে।
    🌱 নিজের শেকড় ভুলে যাওয়া অধম! মানুষ যত দূরই এগিয়ে যাক না কেন, যত বড় নাম বা সাফল্যই অর্জন করুক না কেন, তার ভিতরে এক অদৃশ্য শক্তি থাকে—সেটি হলো তার শেকড়। জন্মস্থান, পরিবার, পূর্বপুরুষদের জীবনসংগ্রাম, ভাষা, সংস্কৃতি, বিশ্বাস—এসব মিলেই তৈরি হয় একেকটি মানুষের পরিচয় ও আত্মা। 🏠 শুধু প্রবাসী নয়, শেকড়ে যুক্ত থাকা দরকার সবার! শুধু প্রবাসী নয়, দেশে থাকা মানুষও যখন নিজের শেকড়কে অবহেলা করে, তখন সে ধীরে ধীরে আত্মবিস্মৃত হয়। এমন অনেকে আছেন, যারা নিজের আদি নিবাস, পারিবারিক ইতিহাস, স্থানীয় সংস্কৃতি বা মাটির গন্ধকে তুচ্ছ ভাবে; নিজেদের অতীতকে “অপ্রয়োজনীয়” মনে করে সামনে এগিয়ে যেতে চায়। কিন্তু প্রশ্ন হলো—যে নিজের পেছনের ইতিহাস জানে না, সে সামনের পথ ঠিক কীভাবে চিনবে? 🌳 শেকড়হীন মানুষ, গাছ থেকে ছেঁড়া পাতার মতো! একটি গাছ মাটি ছেড়ে বাঁচতে পারে না। শেকড় ছাড়া গাছ যেমন শুকিয়ে যায়, মানুষও তেমনি ভিতর থেকে শূন্য হয়ে পড়ে যদি সে নিজের শেকড় ভুলে যায়। আত্মপরিচয় শুধু বর্তমানের নয়—তা গঠিত হয় অতীতের ভাঙাগড়ার ভেতর দিয়ে। 🌍 আধুনিকতা মানেই শেকড়বিচ্ছিন্নতা নয় বিশ্বায়ন, আধুনিকতা, নাগরিক জীবন—এসবের ভিড়ে অনেকেই ভাবে নিজের পুরোনো গল্প, ঐতিহ্য বা স্থানীয় সংস্কৃতির চর্চা "পিছিয়ে পড়া"র লক্ষণ। অথচ সত্যটা হলো, যারা শেকড় জানে না, তারা ভবিষ্যৎ গড়ার মাটি পায় না। যারা নিজেদের ছোটবেলার স্কুল, গ্রামীণ রীতি, পরিবারের গল্প ভুলে যায়, তারাই জীবনের গভীর সম্পর্কগুলো হারিয়ে ফেলে। 🧬 শেকড় মানে কেবল জন্মস্থান নয়, আত্মার সংযোগ! নিজ শেকড় মানে শুধু কোথায় জন্মেছি তা নয়—মানে আমি কার ইতিহাস বহন করছি, কার ভাষায় প্রথম হাসতে শিখেছি, কোন গন্ধে মন নরম হয়েছে, কোন মায়ার মধ্যে বেড়ে উঠেছি। এই শেকড় জানলে মানুষ আত্মবিশ্বাসী হয়, মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শেখে। 📖 মধুসূদনের পথ ভুলে, শেষতক শেকড়েই ফেরা! এই প্রসঙ্গে মাইকেল মধুসূদন দত্তের কথা না বললেই নয়। যিনি ইংরেজি সাহিত্যকে হৃদয়ে ধারণ করেছিলেন, ইউরোপীয় সংস্কৃতিতে মগ্ন ছিলেন, এবং ভাবতেন—"এ দেশ, এই ভাষা, এই সংস্কৃতি আমার নয়।" তিনি বিদেশে গিয়ে বুঝেছিলেন, নিজের মাতৃভাষা, মাটি আর মা—এদের ছাড়া মানুষ কেবল দেহ বয়ে বেড়ায়, আত্মা নয়। তাই তিনি ফিরে এলেন, বাংলায় লিখলেন, আর সেই শেকড়েই গেঁথে গেলেন চিরতরে। শেষজীবনে অভাব, অপমান, হতাশা সব সয়েও বলেছিলেন—"আহা, বাংলায় যদি লিখতে পারতাম আরও আগে!" 🕯️ শেকড় ভুলে যাওয়া মানে আত্মা হারিয়ে ফেলা! যে নিজের শেকড় ভুলে যায়, তার চেয়ে অধম আর কেউ নেই। নিজেকে জানতে হলে, ভালোবাসতে হলে, আগে জানতে হয়—আমি কে, কোথা থেকে এসেছি। শুধু ব্যক্তিগত নয়, জাতিগতভাবে, সাংস্কৃতিকভাবেও এই চেতনা মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে। ❤️✍️
    Sad
    1
    0 Комментарии 0 Поделились 21 Просмотры
  • পুরান ঢাকার অলিগলি, শুধু ইতিহাস আর হালুয়া-রুটি নয়—এখানে বাস করে বহু প্রজন্ম ধরে বয়ে আসা কাহিনি, লোকবিশ্বাস আর গা ছমছমে মিথ। এর মধ্যে অন্যতম হলো—‘অন্ধকারে আসা মিষ্টির ক্রেতা’র গল্প।

    বলা হয়, পুরান ঢাকার কিছু নির্দিষ্ট মিষ্টির দোকানে প্রতি কয়েকদিন পরপর রাত ৮টার দিকে হাজির হন একদল অদ্ভুত মানুষ।
    তারা ঢোকার আগে দোকানের মালিককে বলেন—

    “লাইট নিভিয়ে দিন।”
    আর তারপর?
    দোকান অন্ধকার হয়ে যায়।
    আর সেই অন্ধকারেই তারা নিয়ে যান ১০–১২ কেজি মিষ্টি।
    নগদ টাকাও দেন, কিন্তু কেউ সে টাকা ভালো করে দেখতে পায় না।
    সবকিছু হয় যেন নিঃশব্দ, নিঃছায়া, নিখুঁত।

    এদের গড়ন খুব লম্বা, চলাফেরা নিরব ও অস্বাভাবিক।
    তারা মাথা নিচু করে হাঁটে, কারো সঙ্গে কথা বলে না, কারো চোখে চোখ রাখে না।
    দোকানদারেরা বলে—

    “এদের মুখ আজ পর্যন্ত কেউ ভালো করে দেখে নাই।”
    কিছু দোকানদার স্বীকার করেন—

    “হ্যাঁ, তারা আসে। কিন্তু আমরা কিছু জিজ্ঞেস করি না। সবকিছু ঠিকঠাক করে চলে যায়।”
    আবার কেউ কেউ সরাসরি অস্বীকার করেন—

    “এসব কিছুই না। মিষ্টির বিক্রির গল্প বানিয়ে গুজব ছড়ানো হচ্ছে।”
    তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো, প্রায় সব পুরান ঢাকার মিষ্টির দোকানে এই গল্প কোনো না কোনোভাবে ঘুরে ফিরে আসে।
    পুরান ঢাকার অলিগলি, শুধু ইতিহাস আর হালুয়া-রুটি নয়—এখানে বাস করে বহু প্রজন্ম ধরে বয়ে আসা কাহিনি, লোকবিশ্বাস আর গা ছমছমে মিথ। এর মধ্যে অন্যতম হলো—‘অন্ধকারে আসা মিষ্টির ক্রেতা’র গল্প। বলা হয়, পুরান ঢাকার কিছু নির্দিষ্ট মিষ্টির দোকানে প্রতি কয়েকদিন পরপর রাত ৮টার দিকে হাজির হন একদল অদ্ভুত মানুষ। তারা ঢোকার আগে দোকানের মালিককে বলেন— “লাইট নিভিয়ে দিন।” আর তারপর? দোকান অন্ধকার হয়ে যায়। আর সেই অন্ধকারেই তারা নিয়ে যান ১০–১২ কেজি মিষ্টি। নগদ টাকাও দেন, কিন্তু কেউ সে টাকা ভালো করে দেখতে পায় না। সবকিছু হয় যেন নিঃশব্দ, নিঃছায়া, নিখুঁত। এদের গড়ন খুব লম্বা, চলাফেরা নিরব ও অস্বাভাবিক। তারা মাথা নিচু করে হাঁটে, কারো সঙ্গে কথা বলে না, কারো চোখে চোখ রাখে না। দোকানদারেরা বলে— “এদের মুখ আজ পর্যন্ত কেউ ভালো করে দেখে নাই।” কিছু দোকানদার স্বীকার করেন— “হ্যাঁ, তারা আসে। কিন্তু আমরা কিছু জিজ্ঞেস করি না। সবকিছু ঠিকঠাক করে চলে যায়।” আবার কেউ কেউ সরাসরি অস্বীকার করেন— “এসব কিছুই না। মিষ্টির বিক্রির গল্প বানিয়ে গুজব ছড়ানো হচ্ছে।” তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো, প্রায় সব পুরান ঢাকার মিষ্টির দোকানে এই গল্প কোনো না কোনোভাবে ঘুরে ফিরে আসে।
    Wow
    1
    0 Комментарии 0 Поделились 24 Просмотры
  • দক্ষিণ ভারতের লাল বালির মরুভূমি: থেরি কাড়ু....

    যখন আমরা ভারতের মরুভূমির কথা ভাবি, তখন চোখে ভেসে ওঠে রাজস্থানের সোনালি বালিয়াড়ি। কিন্তু ভারতের দক্ষিণ প্রান্তে তামিলনাড়ুর বুকেও রয়েছে এক আশ্চর্যজনক প্রাকৃতিক বিস্ময়—থেরি কাড়ু, এক লাল বালুর মরুভূমি, যা তার অনন্য রঙ, ভূতাত্ত্বিক ইতিহাস এবং চলমান গঠনের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত।

    অবস্থান ও বিস্তৃতি:-

    থেরি কাড়ু অবস্থিত তামিলনাড়ুর তুতিকোরিন এবং তিরুনেলভেলি জেলায়। এটি প্রায় ৫০০ বর্গকিলোমিটার জায়গা জুড়ে বিস্তৃত এক বিস্ময়কর লাল বালির মরুভূমি, যা সাধারণ মরুভূমির তুলনায় সম্পূর্ণ আলাদা।

    বালুর রঙের রহস্য:-

    থেরি কাড়ুর বালু যে গভীর লাল রঙের, তার পেছনে রয়েছে ভূতাত্ত্বিক কারণ। এই বালিতে রয়েছে উচ্চমাত্রায় লৌহ অক্সাইড, যা সূর্যালোকে প্রতিফলিত হয়ে এক গাঢ় লাল আভা সৃষ্টি করে। এই রঙই একে ভারতের অন্যান্য মরুভূমি থেকে আলাদা করে তুলেছে।

    গঠনের ইতিহাস:-

    থেরি কাড়ুর উৎপত্তি হাজার হাজার বছর আগে, Quaternary যুগে, যখন পৃথিবীতে চলছিল শেষ বরফ যুগ বা Last Glacial Maximum। সে সময় সমুদ্রের জলস্তর ছিল অনেক নিচে, এবং উপকূল অঞ্চলের অনেকটাই ছিল উন্মুক্ত। এই উন্মুক্ত সমুদ্রপৃষ্ঠ এবং পশ্চিমঘাটের লৌহসমৃদ্ধ শিলা থেকে বাতাসের মাধ্যমে বালুকণাগুলি এখানে এসে জমা হতে থাকে। এই দীর্ঘমেয়াদি বায়ুপ্রবাহজনিত (aeolian) প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই গড়ে ওঠে থেরি কাড়ুর বর্তমান ভূচিত্র।

    ভূবিজ্ঞানীদের মতে, এই অঞ্চল একসময় সমুদ্রের নিচে ছিল। সময়ের প্রবাহে বালির স্তর জমে জমে এখানে সৃষ্টি হয়েছে এক অনন্য ভূমিরূপ, যা শুধু প্রাকৃতিক নয়, ভূতাত্ত্বিকভাবেও অমূল্য।

    চলমান বালির বিস্ময়:-

    থেরি কাড়ুর সবচেয়ে আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হল এর চলমান বালিয়াড়ি। এখানে বালু এক জায়গায় স্থির থাকে না, বরং প্রতিনিয়ত বাতাসের প্রভাবে স্থান পরিবর্তন করে। এই গুণ একে পরিণত করেছে এক জীবন্ত ভূপ্রাকৃতিক গবেষণাগারে, যা এখনও সম্পূর্ণরূপে ক্ষয়প্রাপ্ত নয়।

    ড. ক্রিস্টি নির্মলা মেরি, মাদুরাইয়ের কৃষি কলেজের মাটির ও পরিবেশ বিভাগের প্রধান বলেন, “থেরি কাড়ু কোনো ঐতিহ্যবাহী মরুভূমি নয়, বরং এটি একটি নতুন গঠিত, চলমান লাল বালুর ভূমি, যা আমাদের ভূগোল ও পরিবেশচর্চায় অমূল্য অবদান রাখছে।”

    প্রকৃতির লুকানো রত্ন:-

    যদিও তামিলনাড়ু মূলত পরিচিত সবুজ ধানক্ষেত, প্রাচীন মন্দির এবং উপকূলীয় সৌন্দর্যের জন্য, থেরি কাড়ু এই রাজ্যের এক ব্যতিক্রমী ও রহস্যময় ভূমি। এটি পর্যটক, গবেষক, ভূবিজ্ঞানী ও প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এক অনন্য গন্তব্য।

    রাজস্থানের মরুভূমির রূপ আপনাকে মুগ্ধ করলেও, থেরি কাড়ুর লাল বালুর মরুভূমি আপনাকে ভাবাবে, বিস্মিত করবে এবং প্রকৃতির অসাধারণ ক্ষমতা সম্পর্কে নতুন করে জানাবে।

    এটি শুধুই একটি প্রাকৃতিক দৃশ্য নয়—এ এক প্রাকৃতিক ঐতিহ্য, ভূতাত্ত্বিক ইতিহাসের জীবন্ত দলিল। তাই দক্ষিণ ভারতে ভ্রমণের সময় এই লুকিয়ে থাকা লাল মরুভূমিকে বাদ দেবেন না—কারণ প্রকৃতি এখানে নিজেই লিখেছে এক অনন্য কবিতা, লাল বালুর অক্ষরে।

    এই ধরনের নতুন নতুন তথ্যপূর্ণ পোস্ট পেতে হলে আমাদের পেজটিকে ফলো করবেন।।।

    Geography zone- ভূগোল বলয় #everyonefollowers #everyoneシ#india #facts #follower #like #unknown #geography #ad #desert #Tamilnadu
    🏞️ দক্ষিণ ভারতের লাল বালির মরুভূমি: থেরি কাড়ু....😲😲😲 🔸যখন আমরা ভারতের মরুভূমির কথা ভাবি, তখন চোখে ভেসে ওঠে রাজস্থানের সোনালি বালিয়াড়ি। কিন্তু ভারতের দক্ষিণ প্রান্তে তামিলনাড়ুর বুকেও রয়েছে এক আশ্চর্যজনক প্রাকৃতিক বিস্ময়—থেরি কাড়ু, এক লাল বালুর মরুভূমি, যা তার অনন্য রঙ, ভূতাত্ত্বিক ইতিহাস এবং চলমান গঠনের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। 📍 অবস্থান ও বিস্তৃতি:- ▪️ থেরি কাড়ু অবস্থিত তামিলনাড়ুর তুতিকোরিন এবং তিরুনেলভেলি জেলায়। এটি প্রায় ৫০০ বর্গকিলোমিটার জায়গা জুড়ে বিস্তৃত এক বিস্ময়কর লাল বালির মরুভূমি, যা সাধারণ মরুভূমির তুলনায় সম্পূর্ণ আলাদা। 🔴 বালুর রঙের রহস্য:- ▪️ থেরি কাড়ুর বালু যে গভীর লাল রঙের, তার পেছনে রয়েছে ভূতাত্ত্বিক কারণ। এই বালিতে রয়েছে উচ্চমাত্রায় লৌহ অক্সাইড, যা সূর্যালোকে প্রতিফলিত হয়ে এক গাঢ় লাল আভা সৃষ্টি করে। এই রঙই একে ভারতের অন্যান্য মরুভূমি থেকে আলাদা করে তুলেছে। 🌍 গঠনের ইতিহাস:- ▪️ থেরি কাড়ুর উৎপত্তি হাজার হাজার বছর আগে, Quaternary যুগে, যখন পৃথিবীতে চলছিল শেষ বরফ যুগ বা Last Glacial Maximum। সে সময় সমুদ্রের জলস্তর ছিল অনেক নিচে, এবং উপকূল অঞ্চলের অনেকটাই ছিল উন্মুক্ত। এই উন্মুক্ত সমুদ্রপৃষ্ঠ এবং পশ্চিমঘাটের লৌহসমৃদ্ধ শিলা থেকে বাতাসের মাধ্যমে বালুকণাগুলি এখানে এসে জমা হতে থাকে। এই দীর্ঘমেয়াদি বায়ুপ্রবাহজনিত (aeolian) প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই গড়ে ওঠে থেরি কাড়ুর বর্তমান ভূচিত্র। ▪️ ভূবিজ্ঞানীদের মতে, এই অঞ্চল একসময় সমুদ্রের নিচে ছিল। সময়ের প্রবাহে বালির স্তর জমে জমে এখানে সৃষ্টি হয়েছে এক অনন্য ভূমিরূপ, যা শুধু প্রাকৃতিক নয়, ভূতাত্ত্বিকভাবেও অমূল্য। 🌬️ চলমান বালির বিস্ময়:- ▪️ থেরি কাড়ুর সবচেয়ে আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হল এর চলমান বালিয়াড়ি। এখানে বালু এক জায়গায় স্থির থাকে না, বরং প্রতিনিয়ত বাতাসের প্রভাবে স্থান পরিবর্তন করে। এই গুণ একে পরিণত করেছে এক জীবন্ত ভূপ্রাকৃতিক গবেষণাগারে, যা এখনও সম্পূর্ণরূপে ক্ষয়প্রাপ্ত নয়। ▪️ ড. ক্রিস্টি নির্মলা মেরি, মাদুরাইয়ের কৃষি কলেজের মাটির ও পরিবেশ বিভাগের প্রধান বলেন, “থেরি কাড়ু কোনো ঐতিহ্যবাহী মরুভূমি নয়, বরং এটি একটি নতুন গঠিত, চলমান লাল বালুর ভূমি, যা আমাদের ভূগোল ও পরিবেশচর্চায় অমূল্য অবদান রাখছে।” 🌿 প্রকৃতির লুকানো রত্ন:- ▪️ যদিও তামিলনাড়ু মূলত পরিচিত সবুজ ধানক্ষেত, প্রাচীন মন্দির এবং উপকূলীয় সৌন্দর্যের জন্য, থেরি কাড়ু এই রাজ্যের এক ব্যতিক্রমী ও রহস্যময় ভূমি। এটি পর্যটক, গবেষক, ভূবিজ্ঞানী ও প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এক অনন্য গন্তব্য। 🔸 রাজস্থানের মরুভূমির রূপ আপনাকে মুগ্ধ করলেও, থেরি কাড়ুর লাল বালুর মরুভূমি আপনাকে ভাবাবে, বিস্মিত করবে এবং প্রকৃতির অসাধারণ ক্ষমতা সম্পর্কে নতুন করে জানাবে। 🔸 এটি শুধুই একটি প্রাকৃতিক দৃশ্য নয়—এ এক প্রাকৃতিক ঐতিহ্য, ভূতাত্ত্বিক ইতিহাসের জীবন্ত দলিল। তাই দক্ষিণ ভারতে ভ্রমণের সময় এই লুকিয়ে থাকা লাল মরুভূমিকে বাদ দেবেন না—কারণ প্রকৃতি এখানে নিজেই লিখেছে এক অনন্য কবিতা, লাল বালুর অক্ষরে। 💠 এই ধরনের নতুন নতুন তথ্যপূর্ণ পোস্ট পেতে হলে আমাদের পেজটিকে ফলো করবেন।।। Geography zone- ভূগোল বলয় #everyonefollowers #everyoneシ゚ #india #facts #follower #like #unknown #geography #ad #desert #Tamilnadu
    0 Комментарии 0 Поделились 41 Просмотры
  • দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ তখন তুঙ্গে। বার্মার ঘন জঙ্গলে চলাফেরার জন্য ভারতীয় সেনাদের ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছে মধ্য ভারতের মাউয়ের সামরিক ছাউনিতে। সেই সেনাবিভাগে এক ভারতীয় রাজ্যের যুবরাজ ছিলেন। ছাউনির সবাই তাঁকে ‘প্রিন্স’ বলে ডাকত। প্রিন্স নিজে শিকারি, আর তা নিয়ে প্রায়ই মহা আস্ফালন করতেন। কিছু পেটোয়া চ্যালাচামুণ্ডা ছিল তাঁর। সবাইকে নিয়ে বিকেলে ক্লাবঘরে বসে নরক গুলজার হতো। বক্তা মূলত প্রিন্স, বাকিরা মুগ্ধ শ্রোতা। একদিন প্রসঙ্গ উঠল শিকারে অব্যর্থ হতে হলে কী দরকার? নিমেষে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা, তীক্ষ্ণ দৃষ্টি, নাকি অব্যর্থ নিশানা? এক একজন এক একরকম মত দিলেন। কেউ বললেন তিনটি অথবা দু’টির যোগফল। প্রিন্স নিজে বললেন, ‘ওসব বাজে গল্প। অব্যর্থ নিশানাই শেষ কথা নয়।’ ঠিক তখনই ছাউনির ভারপ্রাপ্ত ব্রিটিশ অফিসার বলে উঠলেন, ‘আরে! আজ দেখি আমাদের মধ্যে এক এক্সপার্ট রয়েছেন। শোনাই যাক না উনি কী বলেন?’

    সবাই তাকিয়ে দেখল এককোণে চুপচাপ বসে এতক্ষণ নির্বাক রোদে-পোড়া, শক্ত চেহারার বলিষ্ঠ এক প্রৌঢ় তাঁদের তর্ক শুনে মিটিমিটি হাসছেন। তাঁর উদ্দেশ্যেই প্রশ্ন করায় এককথায় উত্তর দিলেন, ‘অব্যর্থ নিশানা। আর কিচ্ছু না!’ এই প্রথম প্রিন্সের কথাকে কেউ চ্যালেঞ্জ করলেন। যথারীতি তিনি ভয়ানক রেগে গেলেন। কে এই বৃদ্ধ! এত সাহসই বা তাঁর হয় কী করে? কোনওমতে রাগ চেপে প্রিন্স বললেন ‘আপনি প্রমাণ করতে পারবেন?’

    প্রৌঢ় আঙুল তুলে দেখালেন, ‘আচ্ছা, ওই দূরের গাছটা দেখ। একটা ওয়াই Y আকারের সরু ডালের মাঝের খাঁজে ছোট্ট একখানা পাখি বসে আছে। ডাল ভাঙবে না, কিন্তু পাখিটাকে মারতে হবে। পারবে?’ বিকেলের আলো পড়ে আসছে। চারিদিক ধোঁয়াটে ধূসর। প্রিন্স বললেন, ‘অসম্ভব! এই আলোতে নজরই চলে না, পাখি মারব কি করে?’

    উত্তরে প্রৌঢ় হাত বাড়িয়ে গাড়োয়ালী অনুচরের কাছ থেকে হেলায় একটা রাইফেল নিলেন, তুললেন, গুলি ছুঁড়লেন, বললেন, ‘কেন, এমনি করে?’ সবাই ছুটে গেলেন সেখানে। গিয়ে দেখা গেল ডালটি অভগ্ন, পাখিটি মৃত। কারও মুখে কথাটি সরে না। শেষে প্রিন্স কোনমতে তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘এ কেমন করে সম্ভব?’ প্রৌঢ় মুচকি হেসে উত্তর দিলেন ‘শোন তবে, যখন রুদ্রপ্রয়াগের চিতাটাকে মারি..’ এইটুকু শুনেই প্রিন্স যা বোঝার বুঝে গিয়েছেন ‘বলেন কী!! আপনিই তবে...’

    ‘হ্যাঁ, এই অধমের নামই এডোয়ার্ড জেমস করবেট। সবাই ভালবেসে জিম নামে ডাকে।’

    জিম করবেট জন্মেছিলেন পাহাড়ঘেরা নৈনিতালে। আজ থেকে দেড়শো বছর আগে। এই জুলাই মাসেরই ২৫ তারিখ। বাবা নৈনিতালের পোস্টমাস্টার। হ্রদ, নৈনিদেবীর মন্দির আর তার চারপাশের বন জঙ্গলে ঘুরে ঘুরেই করবেটের প্রথম প্রকৃতি প্রেম। তিনি লিখছেন, ‘দেবীর মন্দিরের চার মাইল ব্যাসার্ধের মধ্যে অন্যান্য জীবজন্তু ছাড়াও আমি বাঘ, চিতা, ভালুক আর সম্বর হরিণ দেখেছি, এবং একশো আটাশ জাতের পাখি চিনতে পেরেছি।’ করবেট জাতে সাহেব হলেও ছিলেন নিম্নবিত্ত ঘরের। পড়া স্কুলেই শেষ। আর বাল্যকাল কেটেছে নৈনিতালের তরাই অঞ্চলের সাধারণ, দরিদ্র কুমায়ুনীদের সঙ্গে—যাদের জন্য শেষজীবন পর্যন্ত অন্তরের টান বজায় ছিল তাঁর ।

    ১৮৯৫ সালে মাত্র কুড়ি বছর বয়সে করবেট বেঙ্গল অ্যান্ড নর্থ ওয়েস্টার্ন রেলওয়েতে শর্তাধীন কাজে ঢুকে পড়েন। এই করবেট লাজুক, স্বল্পভাষী আর কঠোর পরিশ্রমী। সঙ্গে শিকারের অদম্য নেশা। যাকে বলে ইন্ট্রোভার্ট, তার আদর্শ উদাহরণ। ভবিষ্যতের যে করবেট শত শত মাইল হেঁটে রুদ্রপ্রয়াগের চিতাকে একটি গুলিতে মারেন, অথবা অরণ্য ও অরণ্যপ্রাণী বাঁচাতে প্রাণ দিয়ে চেষ্টা করেন, কিংবা গ্রামের বাংলোর বারান্দায় বসে গ্রামীণ মানুষদের ওষুধ-পথ্য-সুশ্রুষার ব্যবস্থা করেন কিন্তু বিন্দুমাত্র যশপ্রার্থী হন না, তাঁর শুরু কিন্তু এখান থেকেই।
    বিশ শতকের শুরুর দিকে চম্পাবতের এক বাঘিনি গোটা উত্তরাঞ্চলে ভয়ানক ত্রাসের সৃষ্টি করল। প্রায় এক দশক ধরে পুলিস, গুপ্ত শিকারি, এমনকী নেপালি গোর্খা রেজিমেন্ট পর্যন্ত সেটিকে ধাওয়া করেও ধরতে পারেনি। অনেকে বিশ্বাস করত এ কোন পশু নয়, কোন অতৃপ্ত আত্মা। ওই বাঘিনির আক্রমণে শুধুমাত্র নথিভূক্ত মৃতের সংখ্যা ৪৩৬। গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ড অনুযায়ী আজ অবধি সর্বোচ্চ। যখন সবাই হাল ছেড়ে দিয়েছেন তখন একেবারে নবিশ শিকারী তরুণ জিম করবেট চ্যালেঞ্জটা নিয়েই নিলেন। তাঁর হাতেই খতম হল চম্পাবতের মানুষখাকী। ‘কুমায়ুনের মানুষখেকো’ (ম্যান-ইটার্স অব কুমায়ুন) বইতে একেবারে ছবির মত বর্ণনা আছে সেই হাড়হিম করা ঘটনার।

    ‘নদীর কাছে এগলাম যখন, ঝোপ ছেড়ে বাঘিনীনিটি সেই উঁচানে পাথরের উপর, আমি যে দিকে আছি সে দিকে বেরিয়ে এল। যখন ও বিশ ফুটের মধ্যে, বন্দুকটি তুললাম এবং আতঙ্কে দেখলাম যে নল দু’টি এবং ব্রিচ-ব্লকের মাঝখানে এক ইঞ্চির আট-তৃতীয়াংশ এক ফাঁক আছে। যখন দু’টি নলে ফায়ার করা হয় তখন বন্দুক ফাটেনি, সম্ভবত এখনও ফাটবে না, কিন্তু পিছু ধাক্কা খেয়ে কানা হয়ে যাবার বিপদ আছে। যাই হক, সে ঝুঁকি নিতেই হচ্ছে এবং যে পেল্লায় পুঁতিটি সাইটের কাজ করছিল, সেটি বাঘিনির হাঁ-করা মুখের দিকে নিশানা করে বসিয়ে আমি গুলি ছুঁড়লাম। হয়তো আমি উপর-নীচে নড়ে গিয়েছিলাম কিংবা হয়তো বেলনাকার বুলেটটি বিশ ফুট নির্ভুল পাঠাবার ক্ষমতা বন্দুকটির ছিল না। যাই হোক গুলিটি বাঘিনির মুখ ফসকাল এবং বিঁধল ওর ডান থাবায়, সেখান থেকে পরে আমি আঙুলের নখ দিয়ে সেটি সরিয়েছিলাম। সৌভাগ্যক্রমে ও তখন শেষ অবস্থায় পৌঁছেছিল এবং পায়ের উপর আঘাতটি ওঁকে সমুখপানে টলিয়ে ফেলে দেবার কাজ যথেষ্টই করল। পাথরটার এক ধার দিয়ে মাথাটি ঝুঁকিয়ে ও মৃত্যুতে শান্ত হল।’

    রাতারাতি জিম করবেট এক কিংবদন্তিতে পরিণত হলেন। সেই শুরু। তারপর যেখানেই মানুষখেকো বাঘের অত্যাচার শুরু হতো, জিমকে ডেকে পাঠাতেন সেখানকার শাসক। কিংবা জিম নিজেই চলে যেতেন। ১৯০৭ থেকে ১৯৩৮’এর মধ্যে তিনি মোট ৩৩টি মানুষখেকোর শিকার করেন, যারা সব মিলিয়ে প্রায় ১২০০ মানুষ মেরেছিল। এদের মধ্যে দু’খানি মানুষখেকো চিতাবাঘ। রুদ্রপ্রয়াগের মানুষখেকো চিতাবাঘ ভারতের ইতিহাসে প্রায় অমর হয়ে গেছে।

    ১২৬ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করা চিতাটিকে নিয়ে করবেট নিজে লিখেছেন, ‘বাঘেরা যে-কারণে নরখাদক হয়, চিতারা সে-কারণে হয় না। আমাদের জঙ্গলের সকল জন্তুর মধ্যে চিতা সবচেয়ে সুন্দর, সাবলীল। জখম হলে, বা কোণঠাসা হলে সাহসে সে কারও চেয়ে কম যায় না। তবে এরা এমন মড়াখেকো, যে খিদের জ্বালায় জঙ্গলে যে মড়া পায়, তা-ই খায়। ঠিক আফ্রিকার জঙ্গলের সিংহদের মতো... ১৯১৮ সালে দেশ জুড়ে ইনফ্লুয়েঞ্জার মড়ক দেখা দেয়। ভারতে দশ লক্ষেরও বেশি মানুষ মারা পড়ে। এ মড়কের কঠিন মূল্য দিতে হয় গাড়োয়ালকে। মহামারীর শেষে গাড়োয়ালের নরখাদক আত্মপ্রকাশ করে। ১৯১৮ সালের ৯ই জুন, বৈঁজি গ্রামে রুদ্রপ্রয়াগের নরখাদক চিতা প্রথম মানুষ মারে, নথিতে লেখা আছে। সর্বশেষ যে মৃত্যুর জন্য নরখাদকটি দায়ী, তা ১৯২৬ সালের ১৪ই এপ্রিল ভৈঁসোয়ারা গ্রামে ঘটে। সরকারি নথিতে লেখা আছে। এই দু’টি তারিখের মধ্যে ১২৫ জন মানুষ মারা পড়ে।’

    মাইলের পর মাইল হেঁটে প্রায় হতাশ হয়ে যখন ভাবছেন শিকারই ছেড়ে দেবেন, প্রায় দৈবক্রমে তিনি চিতাটিকে শিকার করলেন। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার, ঠিক তারপরেই যা লিখলেন তা কোন দক্ষ শিকারীর দম্ভের আস্ফালন না, বরং পড়লে আজও মন ভিজে ওঠে।

    ‘এখানে পড়ে আছে একটি বুড়ো চিতা, অন্য চিতাদের সঙ্গে ওর এইমাত্র তফাত, যে ওর মুখটা ধূসর, ঠোঁটের উপর গোঁফ নেই। ভারতবর্ষে সবার চেয়ে ঘৃণ্য এবং সন্ত্রাসকারী জন্তু, যার একমাত্র অপরাধ—প্রকৃতির নিয়মের বিরুদ্ধে নয়, কিন্তু মানুষের নিয়মের বিরুদ্ধে—সে মানুষের রক্তপাত করেছে। মানুষকে আতঙ্কিত করার জন্য নয়, শুধু নিজের প্রাণ রক্ষার জন্য। সে এখন গর্তের ধারে থুতনি রেখে শুয়ে আছে, চোখদু’টি আধবোজা, তার শেষ ঘুমে শান্তি মগ্ন।’ অন্য আর দশটা শিকারীর থেকে এক মূহূর্তে জিম করবেট আলাদা হয়ে যান এখানেই। তাঁর শিকার নিতান্ত অভিযান, অ্যাডভেঞ্চার কিংবা স্পোর্টের জন্য নয়। মনেপ্রাণে তিনি বিশ্বাস করতেন, ‘বাঘ উদারহৃদয় ভদ্রলোক। সীমাহীন তার সাহস। যে দিন বাঘকে বিলোপ করে দেওয়া হবে, যদি বাঘের সপক্ষে জনমত গড়ে না ওঠে বাঘ লোপ পাবেই, তা হলে ভারতের শ্রেষ্ঠতম প্রাণীর বিলোপে ভারত দরিদ্রতরই হবে।’ একমাত্র যখনই কোন বাঘ সাধারণ, নিরপরাধ মানুষের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে, একমাত্র তখনই ঝলসে উঠেছে তাঁর রাইফেল। ১৯৩৮ সালের ৩০ নভেম্বর থাক-এর মানুষখেকো বাঘিনিকে হত্যার পর অফিসিয়ালি শিকার ত্যাগ করলেন। তারপর মেতে উঠলেন বাঘেদের অভয়াশ্রম তৈরির কাজে। বহু ভারতীয়কে নিঃস্বার্থ ভাবে সাহায্য করেছেন শুধু এই বিশ্বাসে, ‘ভারতীয়রা বেইমানি করে না।’

    ১৯৪৪ সালে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে প্রকাশ পায় রেমন্ড শেপার্ডের ছবিতে সাজানো তাঁর লেখা বই ‘Man-Eaters of Kumaon’। প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই বেস্ট সেলার। এক বছরের মধ্যে হু-হু করে বিক্রি হয়ে যায় প্রায় লাখ পাঁচেক বই। এই বইয়েরই বাংলা অনুবাদের অদ্ভুত সুন্দর এক মলাট করেছিলেন সত্যজিৎ রায়। ১৯৫৩-এ প্রকাশিত প্রচ্ছদে দু’-মলাট জোড়া কালো আর হলদে বাঘের ছাল যেন ছড়িয়ে রাখা হয়েছে। নীচের দিকে গুলির গর্ত যা পিছনের দিকে ফুঁড়ে চলে গেছে। গুলি ঢোকার সময় ফুটো ছোটো হয়। ফুঁড়ে বেরোবার সময় চ্যাপ্টা ও বড়ো হয়। সেটাও প্রচ্ছদ তৈরির সময় মাথায় রেখেছেন সত্যজিৎ। লেখক হলেও বেস্ট সেলার হতেন জিম। কিন্তু বই লিখলেন মাত্র ছ’টি।

    ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হল। নভেম্বরে বোন ম্যাগিকে সঙ্গে নিয়ে এস. এস. অ্যারোন্দা জাহাজে মোম্বাসা আর সেখান থেকে নাইরোবি হয়ে নায়েরি শহরে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করলেন জিম। ১৯৫৫ সালে আচমকা না ফেরার দেশে চলে যাওয়ার আগে পর্যন্ত ওখানেই ছিলেন। আসলে জিমের ভয় ছিল স্বাধীন ভারতে হয়তো তাঁর উপরে অত্যাচার নেমে আসবে । জন্মসূত্রে ইংরেজ হওয়ায় তিনি হয়তো সুবিচার পাবেন না। তাঁর প্রিয় ভারতভূমি ছেড়ে যাবার আগে নৈনিতালের বাড়ি বিক্রি করে বহুদিনের বিশ্বস্ত সঙ্গী রাইফেল ও বন্দুকগুলো গভীর জঙ্গলে ‘সমাধিস্থ’ করে এসেছিলেন ভারতের সেরা শিকারী, যিনি মনেপ্রাণে চিরকাল এক ভারতীয় হয়েই থেকে গিয়েছেন। তা না হলে কে এমন করে লিখতে পারে-
    ‘আমার ভারত, যে ভারতকে আমি জানি, সেই ভারতে যে চল্লিশ কোটি মানুষের বাস, তার মধ্যে শতকরা নব্বই জনই সরল, সৎ, সাহসী, আর কঠোর পরিশ্রমী। ... সত্যিই এরা বড় গরিব। এদের প্রায়শই ‘ভারতের বুভুক্ষু কোটি-কোটি মানুষ’ বলে বর্ণনা করা হয়ে থাকে। এদের মধ্যেই আমি বাস করেছি এবং এদের আমি ভালোবাসি। এই নরনারীদের কথাই এই বইয়ের পাতায় বলার চেষ্টা করেছি। আমার বন্ধু, ভারতের সেই গরিবদের উদ্দেশে আমি আমার এই বইখানি শ্রদ্ধাভরে উৎসর্গ করলাম।’

    জন্মের সার্ধশতবর্ষে এই মনীষীকে প্রণাম।

    জিম করবেট ১৫০। বর্তমান পত্রিকায় গত ২০ জুলাই প্রকাশিত।

    লেখক - কৌশিক মজুমদার
    দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ তখন তুঙ্গে। বার্মার ঘন জঙ্গলে চলাফেরার জন্য ভারতীয় সেনাদের ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছে মধ্য ভারতের মাউয়ের সামরিক ছাউনিতে। সেই সেনাবিভাগে এক ভারতীয় রাজ্যের যুবরাজ ছিলেন। ছাউনির সবাই তাঁকে ‘প্রিন্স’ বলে ডাকত। প্রিন্স নিজে শিকারি, আর তা নিয়ে প্রায়ই মহা আস্ফালন করতেন। কিছু পেটোয়া চ্যালাচামুণ্ডা ছিল তাঁর। সবাইকে নিয়ে বিকেলে ক্লাবঘরে বসে নরক গুলজার হতো। বক্তা মূলত প্রিন্স, বাকিরা মুগ্ধ শ্রোতা। একদিন প্রসঙ্গ উঠল শিকারে অব্যর্থ হতে হলে কী দরকার? নিমেষে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা, তীক্ষ্ণ দৃষ্টি, নাকি অব্যর্থ নিশানা? এক একজন এক একরকম মত দিলেন। কেউ বললেন তিনটি অথবা দু’টির যোগফল। প্রিন্স নিজে বললেন, ‘ওসব বাজে গল্প। অব্যর্থ নিশানাই শেষ কথা নয়।’ ঠিক তখনই ছাউনির ভারপ্রাপ্ত ব্রিটিশ অফিসার বলে উঠলেন, ‘আরে! আজ দেখি আমাদের মধ্যে এক এক্সপার্ট রয়েছেন। শোনাই যাক না উনি কী বলেন?’ সবাই তাকিয়ে দেখল এককোণে চুপচাপ বসে এতক্ষণ নির্বাক রোদে-পোড়া, শক্ত চেহারার বলিষ্ঠ এক প্রৌঢ় তাঁদের তর্ক শুনে মিটিমিটি হাসছেন। তাঁর উদ্দেশ্যেই প্রশ্ন করায় এককথায় উত্তর দিলেন, ‘অব্যর্থ নিশানা। আর কিচ্ছু না!’ এই প্রথম প্রিন্সের কথাকে কেউ চ্যালেঞ্জ করলেন। যথারীতি তিনি ভয়ানক রেগে গেলেন। কে এই বৃদ্ধ! এত সাহসই বা তাঁর হয় কী করে? কোনওমতে রাগ চেপে প্রিন্স বললেন ‘আপনি প্রমাণ করতে পারবেন?’ প্রৌঢ় আঙুল তুলে দেখালেন, ‘আচ্ছা, ওই দূরের গাছটা দেখ। একটা ওয়াই Y আকারের সরু ডালের মাঝের খাঁজে ছোট্ট একখানা পাখি বসে আছে। ডাল ভাঙবে না, কিন্তু পাখিটাকে মারতে হবে। পারবে?’ বিকেলের আলো পড়ে আসছে। চারিদিক ধোঁয়াটে ধূসর। প্রিন্স বললেন, ‘অসম্ভব! এই আলোতে নজরই চলে না, পাখি মারব কি করে?’ উত্তরে প্রৌঢ় হাত বাড়িয়ে গাড়োয়ালী অনুচরের কাছ থেকে হেলায় একটা রাইফেল নিলেন, তুললেন, গুলি ছুঁড়লেন, বললেন, ‘কেন, এমনি করে?’ সবাই ছুটে গেলেন সেখানে। গিয়ে দেখা গেল ডালটি অভগ্ন, পাখিটি মৃত। কারও মুখে কথাটি সরে না। শেষে প্রিন্স কোনমতে তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘এ কেমন করে সম্ভব?’ প্রৌঢ় মুচকি হেসে উত্তর দিলেন ‘শোন তবে, যখন রুদ্রপ্রয়াগের চিতাটাকে মারি..’ এইটুকু শুনেই প্রিন্স যা বোঝার বুঝে গিয়েছেন ‘বলেন কী!! আপনিই তবে...’ ‘হ্যাঁ, এই অধমের নামই এডোয়ার্ড জেমস করবেট। সবাই ভালবেসে জিম নামে ডাকে।’ জিম করবেট জন্মেছিলেন পাহাড়ঘেরা নৈনিতালে। আজ থেকে দেড়শো বছর আগে। এই জুলাই মাসেরই ২৫ তারিখ। বাবা নৈনিতালের পোস্টমাস্টার। হ্রদ, নৈনিদেবীর মন্দির আর তার চারপাশের বন জঙ্গলে ঘুরে ঘুরেই করবেটের প্রথম প্রকৃতি প্রেম। তিনি লিখছেন, ‘দেবীর মন্দিরের চার মাইল ব্যাসার্ধের মধ্যে অন্যান্য জীবজন্তু ছাড়াও আমি বাঘ, চিতা, ভালুক আর সম্বর হরিণ দেখেছি, এবং একশো আটাশ জাতের পাখি চিনতে পেরেছি।’ করবেট জাতে সাহেব হলেও ছিলেন নিম্নবিত্ত ঘরের। পড়া স্কুলেই শেষ। আর বাল্যকাল কেটেছে নৈনিতালের তরাই অঞ্চলের সাধারণ, দরিদ্র কুমায়ুনীদের সঙ্গে—যাদের জন্য শেষজীবন পর্যন্ত অন্তরের টান বজায় ছিল তাঁর । ১৮৯৫ সালে মাত্র কুড়ি বছর বয়সে করবেট বেঙ্গল অ্যান্ড নর্থ ওয়েস্টার্ন রেলওয়েতে শর্তাধীন কাজে ঢুকে পড়েন। এই করবেট লাজুক, স্বল্পভাষী আর কঠোর পরিশ্রমী। সঙ্গে শিকারের অদম্য নেশা। যাকে বলে ইন্ট্রোভার্ট, তার আদর্শ উদাহরণ। ভবিষ্যতের যে করবেট শত শত মাইল হেঁটে রুদ্রপ্রয়াগের চিতাকে একটি গুলিতে মারেন, অথবা অরণ্য ও অরণ্যপ্রাণী বাঁচাতে প্রাণ দিয়ে চেষ্টা করেন, কিংবা গ্রামের বাংলোর বারান্দায় বসে গ্রামীণ মানুষদের ওষুধ-পথ্য-সুশ্রুষার ব্যবস্থা করেন কিন্তু বিন্দুমাত্র যশপ্রার্থী হন না, তাঁর শুরু কিন্তু এখান থেকেই। বিশ শতকের শুরুর দিকে চম্পাবতের এক বাঘিনি গোটা উত্তরাঞ্চলে ভয়ানক ত্রাসের সৃষ্টি করল। প্রায় এক দশক ধরে পুলিস, গুপ্ত শিকারি, এমনকী নেপালি গোর্খা রেজিমেন্ট পর্যন্ত সেটিকে ধাওয়া করেও ধরতে পারেনি। অনেকে বিশ্বাস করত এ কোন পশু নয়, কোন অতৃপ্ত আত্মা। ওই বাঘিনির আক্রমণে শুধুমাত্র নথিভূক্ত মৃতের সংখ্যা ৪৩৬। গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ড অনুযায়ী আজ অবধি সর্বোচ্চ। যখন সবাই হাল ছেড়ে দিয়েছেন তখন একেবারে নবিশ শিকারী তরুণ জিম করবেট চ্যালেঞ্জটা নিয়েই নিলেন। তাঁর হাতেই খতম হল চম্পাবতের মানুষখাকী। ‘কুমায়ুনের মানুষখেকো’ (ম্যান-ইটার্স অব কুমায়ুন) বইতে একেবারে ছবির মত বর্ণনা আছে সেই হাড়হিম করা ঘটনার। ‘নদীর কাছে এগলাম যখন, ঝোপ ছেড়ে বাঘিনীনিটি সেই উঁচানে পাথরের উপর, আমি যে দিকে আছি সে দিকে বেরিয়ে এল। যখন ও বিশ ফুটের মধ্যে, বন্দুকটি তুললাম এবং আতঙ্কে দেখলাম যে নল দু’টি এবং ব্রিচ-ব্লকের মাঝখানে এক ইঞ্চির আট-তৃতীয়াংশ এক ফাঁক আছে। যখন দু’টি নলে ফায়ার করা হয় তখন বন্দুক ফাটেনি, সম্ভবত এখনও ফাটবে না, কিন্তু পিছু ধাক্কা খেয়ে কানা হয়ে যাবার বিপদ আছে। যাই হক, সে ঝুঁকি নিতেই হচ্ছে এবং যে পেল্লায় পুঁতিটি সাইটের কাজ করছিল, সেটি বাঘিনির হাঁ-করা মুখের দিকে নিশানা করে বসিয়ে আমি গুলি ছুঁড়লাম। হয়তো আমি উপর-নীচে নড়ে গিয়েছিলাম কিংবা হয়তো বেলনাকার বুলেটটি বিশ ফুট নির্ভুল পাঠাবার ক্ষমতা বন্দুকটির ছিল না। যাই হোক গুলিটি বাঘিনির মুখ ফসকাল এবং বিঁধল ওর ডান থাবায়, সেখান থেকে পরে আমি আঙুলের নখ দিয়ে সেটি সরিয়েছিলাম। সৌভাগ্যক্রমে ও তখন শেষ অবস্থায় পৌঁছেছিল এবং পায়ের উপর আঘাতটি ওঁকে সমুখপানে টলিয়ে ফেলে দেবার কাজ যথেষ্টই করল। পাথরটার এক ধার দিয়ে মাথাটি ঝুঁকিয়ে ও মৃত্যুতে শান্ত হল।’ রাতারাতি জিম করবেট এক কিংবদন্তিতে পরিণত হলেন। সেই শুরু। তারপর যেখানেই মানুষখেকো বাঘের অত্যাচার শুরু হতো, জিমকে ডেকে পাঠাতেন সেখানকার শাসক। কিংবা জিম নিজেই চলে যেতেন। ১৯০৭ থেকে ১৯৩৮’এর মধ্যে তিনি মোট ৩৩টি মানুষখেকোর শিকার করেন, যারা সব মিলিয়ে প্রায় ১২০০ মানুষ মেরেছিল। এদের মধ্যে দু’খানি মানুষখেকো চিতাবাঘ। রুদ্রপ্রয়াগের মানুষখেকো চিতাবাঘ ভারতের ইতিহাসে প্রায় অমর হয়ে গেছে। ১২৬ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করা চিতাটিকে নিয়ে করবেট নিজে লিখেছেন, ‘বাঘেরা যে-কারণে নরখাদক হয়, চিতারা সে-কারণে হয় না। আমাদের জঙ্গলের সকল জন্তুর মধ্যে চিতা সবচেয়ে সুন্দর, সাবলীল। জখম হলে, বা কোণঠাসা হলে সাহসে সে কারও চেয়ে কম যায় না। তবে এরা এমন মড়াখেকো, যে খিদের জ্বালায় জঙ্গলে যে মড়া পায়, তা-ই খায়। ঠিক আফ্রিকার জঙ্গলের সিংহদের মতো... ১৯১৮ সালে দেশ জুড়ে ইনফ্লুয়েঞ্জার মড়ক দেখা দেয়। ভারতে দশ লক্ষেরও বেশি মানুষ মারা পড়ে। এ মড়কের কঠিন মূল্য দিতে হয় গাড়োয়ালকে। মহামারীর শেষে গাড়োয়ালের নরখাদক আত্মপ্রকাশ করে। ১৯১৮ সালের ৯ই জুন, বৈঁজি গ্রামে রুদ্রপ্রয়াগের নরখাদক চিতা প্রথম মানুষ মারে, নথিতে লেখা আছে। সর্বশেষ যে মৃত্যুর জন্য নরখাদকটি দায়ী, তা ১৯২৬ সালের ১৪ই এপ্রিল ভৈঁসোয়ারা গ্রামে ঘটে। সরকারি নথিতে লেখা আছে। এই দু’টি তারিখের মধ্যে ১২৫ জন মানুষ মারা পড়ে।’ মাইলের পর মাইল হেঁটে প্রায় হতাশ হয়ে যখন ভাবছেন শিকারই ছেড়ে দেবেন, প্রায় দৈবক্রমে তিনি চিতাটিকে শিকার করলেন। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার, ঠিক তারপরেই যা লিখলেন তা কোন দক্ষ শিকারীর দম্ভের আস্ফালন না, বরং পড়লে আজও মন ভিজে ওঠে। ‘এখানে পড়ে আছে একটি বুড়ো চিতা, অন্য চিতাদের সঙ্গে ওর এইমাত্র তফাত, যে ওর মুখটা ধূসর, ঠোঁটের উপর গোঁফ নেই। ভারতবর্ষে সবার চেয়ে ঘৃণ্য এবং সন্ত্রাসকারী জন্তু, যার একমাত্র অপরাধ—প্রকৃতির নিয়মের বিরুদ্ধে নয়, কিন্তু মানুষের নিয়মের বিরুদ্ধে—সে মানুষের রক্তপাত করেছে। মানুষকে আতঙ্কিত করার জন্য নয়, শুধু নিজের প্রাণ রক্ষার জন্য। সে এখন গর্তের ধারে থুতনি রেখে শুয়ে আছে, চোখদু’টি আধবোজা, তার শেষ ঘুমে শান্তি মগ্ন।’ অন্য আর দশটা শিকারীর থেকে এক মূহূর্তে জিম করবেট আলাদা হয়ে যান এখানেই। তাঁর শিকার নিতান্ত অভিযান, অ্যাডভেঞ্চার কিংবা স্পোর্টের জন্য নয়। মনেপ্রাণে তিনি বিশ্বাস করতেন, ‘বাঘ উদারহৃদয় ভদ্রলোক। সীমাহীন তার সাহস। যে দিন বাঘকে বিলোপ করে দেওয়া হবে, যদি বাঘের সপক্ষে জনমত গড়ে না ওঠে বাঘ লোপ পাবেই, তা হলে ভারতের শ্রেষ্ঠতম প্রাণীর বিলোপে ভারত দরিদ্রতরই হবে।’ একমাত্র যখনই কোন বাঘ সাধারণ, নিরপরাধ মানুষের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে, একমাত্র তখনই ঝলসে উঠেছে তাঁর রাইফেল। ১৯৩৮ সালের ৩০ নভেম্বর থাক-এর মানুষখেকো বাঘিনিকে হত্যার পর অফিসিয়ালি শিকার ত্যাগ করলেন। তারপর মেতে উঠলেন বাঘেদের অভয়াশ্রম তৈরির কাজে। বহু ভারতীয়কে নিঃস্বার্থ ভাবে সাহায্য করেছেন শুধু এই বিশ্বাসে, ‘ভারতীয়রা বেইমানি করে না।’ ১৯৪৪ সালে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে প্রকাশ পায় রেমন্ড শেপার্ডের ছবিতে সাজানো তাঁর লেখা বই ‘Man-Eaters of Kumaon’। প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই বেস্ট সেলার। এক বছরের মধ্যে হু-হু করে বিক্রি হয়ে যায় প্রায় লাখ পাঁচেক বই। এই বইয়েরই বাংলা অনুবাদের অদ্ভুত সুন্দর এক মলাট করেছিলেন সত্যজিৎ রায়। ১৯৫৩-এ প্রকাশিত প্রচ্ছদে দু’-মলাট জোড়া কালো আর হলদে বাঘের ছাল যেন ছড়িয়ে রাখা হয়েছে। নীচের দিকে গুলির গর্ত যা পিছনের দিকে ফুঁড়ে চলে গেছে। গুলি ঢোকার সময় ফুটো ছোটো হয়। ফুঁড়ে বেরোবার সময় চ্যাপ্টা ও বড়ো হয়। সেটাও প্রচ্ছদ তৈরির সময় মাথায় রেখেছেন সত্যজিৎ। লেখক হলেও বেস্ট সেলার হতেন জিম। কিন্তু বই লিখলেন মাত্র ছ’টি। ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হল। নভেম্বরে বোন ম্যাগিকে সঙ্গে নিয়ে এস. এস. অ্যারোন্দা জাহাজে মোম্বাসা আর সেখান থেকে নাইরোবি হয়ে নায়েরি শহরে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করলেন জিম। ১৯৫৫ সালে আচমকা না ফেরার দেশে চলে যাওয়ার আগে পর্যন্ত ওখানেই ছিলেন। আসলে জিমের ভয় ছিল স্বাধীন ভারতে হয়তো তাঁর উপরে অত্যাচার নেমে আসবে । জন্মসূত্রে ইংরেজ হওয়ায় তিনি হয়তো সুবিচার পাবেন না। তাঁর প্রিয় ভারতভূমি ছেড়ে যাবার আগে নৈনিতালের বাড়ি বিক্রি করে বহুদিনের বিশ্বস্ত সঙ্গী রাইফেল ও বন্দুকগুলো গভীর জঙ্গলে ‘সমাধিস্থ’ করে এসেছিলেন ভারতের সেরা শিকারী, যিনি মনেপ্রাণে চিরকাল এক ভারতীয় হয়েই থেকে গিয়েছেন। তা না হলে কে এমন করে লিখতে পারে- ‘আমার ভারত, যে ভারতকে আমি জানি, সেই ভারতে যে চল্লিশ কোটি মানুষের বাস, তার মধ্যে শতকরা নব্বই জনই সরল, সৎ, সাহসী, আর কঠোর পরিশ্রমী। ... সত্যিই এরা বড় গরিব। এদের প্রায়শই ‘ভারতের বুভুক্ষু কোটি-কোটি মানুষ’ বলে বর্ণনা করা হয়ে থাকে। এদের মধ্যেই আমি বাস করেছি এবং এদের আমি ভালোবাসি। এই নরনারীদের কথাই এই বইয়ের পাতায় বলার চেষ্টা করেছি। আমার বন্ধু, ভারতের সেই গরিবদের উদ্দেশে আমি আমার এই বইখানি শ্রদ্ধাভরে উৎসর্গ করলাম।’ জন্মের সার্ধশতবর্ষে এই মনীষীকে প্রণাম। জিম করবেট ১৫০। বর্তমান পত্রিকায় গত ২০ জুলাই প্রকাশিত। লেখক - কৌশিক মজুমদার
    0 Комментарии 0 Поделились 27 Просмотры
  • মাইলস্টোন স্কুলের যে ক্লাসরুম গুলো পু!ড়ে গিয়েছে সেগুলো ঠিকঠাক করার জন্যে মিস্ত্রী আনা হয়েছে, কিছু কিছু রুম ঘষেমেজে পরিষ্কার করা হচ্ছে।
    র! ক্তের দাগ, মেঝেতে লেগে থাকা পো**ড়া শরীরের ঝল*সানো মাং-স, হা-ড়গোড় সবকিছুই পরিষ্কার করে সরানো হচ্ছে।
    রবিবার থেকে স্কুল খোলার নির্দেশও দেয়া হয়েছে।
    বাচ্চারা আবারও সেই চিরচেনা ক্লাসরুমে যাবে।
    স্কাই সেকশন, ক্লাউড সেকশনের বাচ্চারা দেখবে তাদের পরিচিত অনেক বন্ধুরাই নেই, শুধু বেঞ্চে লেগে থাকা ঝল*সানো মাংস আর স্মৃতিগুলো আছে।
    এই ক্লাসরুমে বসেই তো একসাথে ক্লাস করতো, খেলতো, গান গাইতো ওরা। অথচ অনেকেই আর ক্লাসে আসবে না।
    স্কুলের মাঠ দেখে বাকি স্টুডেন্টদেরও মনে পড়বে সেদিনের কথা।
    কিন্তু বছর ঘুরলেই বাচ্চারাও হয়তো চিরায়ত নিয়ম মেনে আবারও ক্লাস করবে, গান গাইবে, খেলবে, ভু*লে যাবে অনেককিছু।
    পৃথিবী কারো জন্যেই থেমে থাকে না। ঝলসানো শরীরে মা**রা যাওয়া নিষ্পাপ বাচ্চাদের জন্যেও হয়তো থেমে থাকবে না।
    এক টপিকের পর আরেক টপিক আসবে, নতুন কনটেক্সটের ভিড়ে আমরাও হয়তো ভু**লে যাব সবকিছু।
    কিন্তু যেই মা তার সন্তানের পোড়া লা**শ ছুঁয়েছে সে-ই মা কি আর কোনদিনও ভুলতে পারবে.?
    মাইলস্টোন স্কুলের যে ক্লাসরুম গুলো পু!ড়ে গিয়েছে সেগুলো ঠিকঠাক করার জন্যে মিস্ত্রী আনা হয়েছে, কিছু কিছু রুম ঘষেমেজে পরিষ্কার করা হচ্ছে। র! ক্তের দাগ, মেঝেতে লেগে থাকা পো**ড়া শরীরের ঝল*সানো মাং-স, হা-ড়গোড় সবকিছুই পরিষ্কার করে সরানো হচ্ছে। রবিবার থেকে স্কুল খোলার নির্দেশও দেয়া হয়েছে। বাচ্চারা আবারও সেই চিরচেনা ক্লাসরুমে যাবে। স্কাই সেকশন, ক্লাউড সেকশনের বাচ্চারা দেখবে তাদের পরিচিত অনেক বন্ধুরাই নেই, শুধু বেঞ্চে লেগে থাকা ঝল*সানো মাংস আর স্মৃতিগুলো আছে। এই ক্লাসরুমে বসেই তো একসাথে ক্লাস করতো, খেলতো, গান গাইতো ওরা। অথচ অনেকেই আর ক্লাসে আসবে না। স্কুলের মাঠ দেখে বাকি স্টুডেন্টদেরও মনে পড়বে সেদিনের কথা। কিন্তু বছর ঘুরলেই বাচ্চারাও হয়তো চিরায়ত নিয়ম মেনে আবারও ক্লাস করবে, গান গাইবে, খেলবে, ভু*লে যাবে অনেককিছু। পৃথিবী কারো জন্যেই থেমে থাকে না। ঝলসানো শরীরে মা**রা যাওয়া নিষ্পাপ বাচ্চাদের জন্যেও হয়তো থেমে থাকবে না। এক টপিকের পর আরেক টপিক আসবে, নতুন কনটেক্সটের ভিড়ে আমরাও হয়তো ভু**লে যাব সবকিছু। কিন্তু যেই মা তার সন্তানের পোড়া লা**শ ছুঁয়েছে সে-ই মা কি আর কোনদিনও ভুলতে পারবে.?
    0 Комментарии 0 Поделились 27 Просмотры
Расширенные страницы
BlackBird Ai
https://bbai.shop