এই রণক্ষেত্রের সবচেয়ে তীক্ষ্ণ অ-স্ত্র-টা কোথায়? না, সেটি কোনো বন্দুক বা ট্যাঙ্ক নয়। সেটি বসে আছে নিঃশব্দ কোনো ঘরে, হাতে কাগজ আর ক্যালকুলেটর! 

0
245

ভাবুন তো, একটি যু-দ্ধ চলছে। সামনে সৈন্য, পেছনে কামান, আকাশে বিমান। কিন্তু এই রণক্ষেত্রের সবচেয়ে তীক্ষ্ণ অ-স্ত্র-টা কোথায়? না, সেটি কোনো বন্দুক বা ট্যাঙ্ক নয়। সেটি বসে আছে নিঃশব্দ কোনো ঘরে, হাতে কাগজ আর ক্যালকুলেটর! 

হ্যাঁ, আপনি ঠিকই শুনেছেন। তিনি একজন গণিতবিদ। গণিতই একসময় যু-দ্ধে-র মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে, গুপ্তচরের মুখোশ খুলে দিয়েছে, এমনকি লাখো প্রাণ বাঁচিয়েছে শুধুমাত্র কোড ভেঙে দিয়ে।

আপনি নিশ্চয়ই জানেন, গুপ্তচরেরা সাধারণ ভাষায় বার্তা পাঠালে শত্রুর হাতে পড়লে বিপদ। তাই তারা ব্যবহার করতো সাইফার বা সাংকেতিক ভাষা। আর এই সাংকেতিক ভাষা মানেই এক ধরনের গাণিতিক ধাঁধা।

 

প্রাচীন গ্রিসে সিজার সাইফার ছিল খুব জনপ্রিয়। ধরুন, আপনি “HELLO” লিখতে চান। আপনি প্রতিটি অক্ষর 3 ঘর এগিয়ে লেখেন, তখন H হয়ে যায় K, E হয় H, L হয় O… এভাবে “HELLO” হয়ে যায় “KHOOR”। বাইরে থেকে দেখলে এটা অর্থহীন, কিন্তু কোড জানলে সহজেই বুঝে ফেলা যায়। তবে যু-দ্ধ-কালের সাইফার এত সরল ছিল না।

দ্বিতীয় বিশ্ব-যু-দ্ধের সময়, জার্মান সেনারা ব্যবহার করতো Enigma Machine নামের একটি যন্ত্র। এই যন্ত্র প্রতিদিন তার কোড বদলাতো, এবং একেকটি বার্তার ভেতরে ১৫০ কোটির বেশি সম্ভাব্য ভিন্নতা থাকত! একে বলা হতো ভাঙা অসম্ভব!

তবুও, একদল গাণিতিক মস্তিষ্ক এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছিল। অ্যালান ট্যুরিং নামের একজন ব্রিটিশ গণিতবিদ তার দল নিয়ে এমন একটি যন্ত্র বানান, যা এই ভয়ঙ্কর এনিগমা কোড ভাঙতে সক্ষম হয়।

এই একটিমাত্র সাফল্য দ্বিতীয় বি-শ্ব-যুদ্ধ প্রায় দুই বছর আগেই শেষ করে দেয়, এবং লাখো মানুষের প্রাণ বাঁচে। ভাবুন একবার, কাগজ-কলমে বসে গণনা করে একদল লোক ইতিহাস বদলে দিয়েছে!

আজ আপনি যখন ফোনে কারো সঙ্গে কথা বলেন; মোবাইল অ্যাপে টাকা পাঠান; এমনকি মেসেঞ্জারে কাউকে "Hi" বলেন; সেখানেও কোড কাজ করছে। এটিকে বলে এনক্রিপশন। অর্থাৎ আপনার বার্তাটি এমনভাবে রূপান্তরিত হয় যেন হ্যাকার সেটি ধরতে না পারে।

এই এনক্রিপশনও একধরনের গাণিতিক সাইফার। এখানে ব্যবহৃত হয় প্রাইম নাম্বার, মডুলার অ্যারিথমেটিক, এবং এমনকি এলিপটিক কার্ভ থিয়োরি পর্যন্ত! শুনতে কঠিন লাগলেও, এর মূল ভিত্তি খুবই সাধারণ। আপনি একটি তালা দেন কিন্তু সেটার চাবিটা শুধু নির্দিষ্ট ব্যক্তির কাছে থাকে।

এখনকার যুগে তথ্যই সবচেয়ে বড় সম্পদ। কে কোথায় আছে, কার ব্যাঙ্কে কত টাকা, কার ব্যক্তিগত ছবি কোথায় আছে এই সবকিছুই তথ্য। আর এই তথ্যের পাহারাদার হচ্ছে গণিত।

এজন্যই আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থা, ব্যাংক, বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানি সবাই গণিতবিদদের নিয়োগ দেয়, যেন তারা নতুন ধরনের কোড তৈরি করতে পারে। হ্যাকারদের ঠেকাতে পারে!

Love
1
Buscar
Categorías
Read More
Other
বন্ধুত্ব শুধু মানুষে সীমাবদ্ধ নয়
অস্ট্রেলিয়ার মৎস্য শিকারী আর্নল্ড পয়েন্টার ২০২৩ সালে তাসমান সাগরে একটি সাদা মাদি হাঙরকে শিকারীর...
By Zihadur Rahman 2025-07-11 18:01:25 1 620
Tech
Top 10 Cybersecurity Tips: How to Stay Safe from Hackers in 2025
Top 10 Cybersecurity Tips: How to Stay Safe from Hackers in 2025   In our increasingly...
By Phoenix (Striker) 2025-07-06 14:58:54 0 946
Tech
Milestone in Speed of transportation!!
China has successfully tested the world’s fastest maglev train, reaching a groundbreaking...
By Sharif Uddin 2025-07-08 16:39:30 0 714
Other
Giant 'Eagle-Shaped' Cloud spotted over Sydney, Australia 🦅 🌥
Sydney, Australia – July 28, 2025 A stunning and unexpected cloud formation resembling a...
By Sharif Uddin 2025-08-03 18:12:53 0 315
Health
Low iron during pregnancy might change a baby’s gender, Study finds.
Most of us think gender is set by genes—if a baby has XY chromosomes, they’ll be a...
By tarin taru 2025-07-18 18:18:45 0 594
BlackBird Ai
https://bbai.shop