স্কুল থেকে ফিরলেই সন্তানের দিকে তাকিয়ে বেশিরভাগ বাবা-মার প্রথম প্রশ্ন—“আজ দিনটা কেমন কাটল?

” প্রশ্নটির পেছনে মা-বাবার যত্ন ও কৌতূহল থাকলেও, ক্লান্ত ও বিরক্ত বাচ্চার কাছে এটা একঘেয়ে ও বিরক্তিকর ঠেকতে পারে। একসময় এই প্রশ্নের উত্তর সীমাবদ্ধ হয়ে দাঁড়ায়—“ভালো”, “ঠিকঠাক”, “যেমন হয়”। ফলে, আপনার জানা হয় না আসলে তার দিনটা কেমন গেল, সে কী ভাবছে বা কেমন অনুভব করছে।
আসলে স্কুলফেরার সময়টুকু শিশুর সঙ্গে সংযোগ গড়ার এক দারুণ সুযোগ। এই সময় ওর মন অনেক কিছু বলতে চায়, শুধু দরকার একটু বন্ধুসুলভ পরিবেশ এবং সৃজনশীল কিছু প্রশ্ন, যা ওকে গল্প করতে উৎসাহিত করবে।
🔹 কেন একঘেয়ে প্রশ্ন এড়ানো উচিত?
প্রতিদিন একই ধরনের প্রশ্নে শিশুর আগ্রহ হারিয়ে যায়। ও ভাবতে শুরু করে, উত্তর দিলেও কিছু যাবে আসবে না। ফলে সংলাপের জায়গায় তৈরি হয় নীরবতা। এই একঘেয়ে প্রশ্ন ধীরে ধীরে সম্পর্কেও প্রভাব ফেলে—বিশ্বাস, স্বাচ্ছন্দ্য ও বন্ধুত্বের জায়গাটা নষ্ট হয়ে যায়। তাই অভিভাবকদের উচিৎ শিশুর অনুভবকে গুরুত্ব দিয়ে এমনভাবে প্রশ্ন করা যাতে সে নিজের মন খুলে বলার সাহস পায়।
🔹 তাহলে কীভাবে জিজ্ঞেস করব?
এখানে এমন ১০টি সহজ অথচ কার্যকর প্রশ্ন দেওয়া হলো যা আপনার সন্তানকে খোলামেলা কথোপকথনে উৎসাহিত করবে:
🧩 1. আজকে স্কুলে মজার কিছু ঘটেছিল?
এই প্রশ্ন শুনেই বাচ্চা ভাববে, “আচ্ছা, আজ সবচেয়ে মজার ঘটনা কী ছিল?” গল্প আসবে নিজের থেকেই।
📚 2. নতুন কিছু শিখেছ আজ?
পাঠ্যপুস্তকের বাইরেও শেখার অনেক কিছু থাকে—এই প্রশ্নে সে নিজের শেখা নিয়ে গর্ববোধ করে।
🚻 3. স্কুলের টয়লেটটা কেমন? পরিষ্কার থাকে তো?
স্বাস্থ্য শিক্ষা শুরু হোক এই সহজ প্রশ্ন থেকে।
🪑 4. তোমার পাশে কে বসে এখন? ওর সঙ্গে বন্ধুত্ব কেমন?
সামাজিকতা আর বন্ধুত্ব গড়ার সূচনা এখান থেকেই।
⚽ 5. আজ টিফিন টাইমে খেলাধুলো করেছ? কী খেললে?
তার দৈহিক ও মানসিক সক্রিয়তার খবর পাবেন অনায়াসেই।
🍱 6. আজকের টিফিনটা ভালো লেগেছে?
খাবার নিয়ে খোলামেলা আলোচনা স্বাস্থ্যের দিকেও নজর রাখে।
🤝 7. নতুন বন্ধু হয়েছে কি? ওর নাম কী?
বন্ধুত্বের শুরু থেকে আপনি অংশীদার হতে পারেন।
👩🏫 8. তোমার ক্লাস টিচার তোমায় পছন্দ করেন তো?
শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক বোঝার চাবিকাঠি।
📐 9. কোন ক্লাসটা একেবারেই ভালো লাগে না? কেন?
এই প্রশ্নে আপনি তার দুর্বলতা বুঝতে পারবেন—সহজেই সমাধান খুঁজে বের করা সম্ভব হবে।
🎶 10. তোমরা ইদানীং কী গান করো, কোনটা তোমার প্রিয়?
এই প্রশ্নে তার সাংস্কৃতিক অংশগ্রহণ আর আনন্দ খুঁজে পাবেন।
🔹 এই প্রশ্নগুলোর আসল উদ্দেশ্য কী?
এই প্রশ্নগুলো কেবল তথ্য জানার জন্য নয়, বরং অনুভবের গভীরে পৌঁছানোর এক মাধ্যম। আপনি জানতে চাচ্ছেন না শুধু “কি হয়েছে”, আপনি জানতে চাইছেন “তুমি কেমন আছো, কী ভাবছো?”—এই জায়গাটায় পৌঁছালেই শিশু বুঝবে আপনি তার অনুভূতির মূল্য দেন। এটা সম্পর্ককে আরও গভীর, মজবুত ও সুন্দর করে তোলে।
একজন মা-বাবা হিসেবে আমাদের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত শিশুর মনের দরজাটা খুলে দেওয়া, জোর করে টেনে আনার নয়। কথোপকথনের ধরণে একটু পরিবর্তন এনে আমরা তার প্রতি আমাদের ভালোবাসা, কেয়ার ও বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিতে পারি। এই চেষ্টাই গড়ে তোলে ভবিষ্যতের আত্মবিশ্বাসী, সংবেদনশীল ও মুক্তমনা মানুষ।
আজ থেকেই শুরু করুন একঘেয়ে প্রশ্ন বাদ দিয়ে বন্ধুসুলভ গল্পের পথে হাঁটা। কারণ, কথা মানেই শুধু প্রশ্ন নয়, তা হোক ভালোবাসার ভাষা।
