• পৃথিবী প্রতি ২৬ সেকেন্ডে একবার করে কেঁপে উঠছে! এই কম্পন এতটাই মৃদু যে আমরা টের পাই না, কিন্তু সিসমোমিটার (ভূমিকম্প মাপার যন্ত্র) এটা বুঝতে পারে। এটি আবিস্কারের ৬৫ বছরের মধ্যে নানা গবেষণা হলেও এখনো পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারেননি পৃথিবী কেন এমনভাবে বারবার কেঁপে ওঠে।

    এই কম্পন প্রথম শনাক্ত করেন বিজ্ঞানী জ্যাক অলিভার। তিনি দেখেন, এটি আসছে আটলান্টিক মহাসাগর থেকে, বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে এর তীব্রতা বেড়ে যায়। পরে ১৯৮০ সালে ভূতত্ত্ববিদ গ্যারি হোলকম্ব আবিষ্কার করেন, ঝড়ের সময় এই কম্পন সবচেয়ে শক্তিশালী হয়।

    দীর্ঘদিন পর ২০০৫ সালে কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা আবারও এটি শনাক্ত করেন এবং উৎস নির্ধারণ করেন আফ্রিকার পশ্চিম উপকূলের গিনি উপসাগরে। ঠিক কী কারণে এটি হচ্ছে, তা নিশ্চিত হতে পারেননি তারা।

    ২০১১ সালে ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির গবেষক গ্যারেট ইউলার আরও নির্দিষ্টভাবে দেখান, এর উৎস গিনি উপসাগরের "বাইট অব বনি" এলাকা। তার মতে, সমুদ্রের ঢেউ যখন মহাদেশীয় প্রান্তে আঘাত করে, তখন সমুদ্রতল কেঁপে ওঠার কারণে এই কম্পন হয়। তবে চীনের কিছু বিজ্ঞানীর মতে, এর পেছনে কারণ হতে পারে কাছের সাও টোমে (Sao Tome) দ্বীপের সক্রিয় আগ্নেয়গিরি। জাপানের আসো (Aso) আগ্নেয়গিরি থেকেও একই ধরনের কম্পন পাওয়া গেছে।

    তবুও প্রশ্ন রয়েই গেছে, বিশ্বে আরও অনেক মহাদেশীয় প্রান্ত ও আগ্নেয়গিরি থাকলেও এমন স্পন্দন সেখান থেকে আসে না। শুধু এই বিশেষ জায়গাতেই কেনো? প্রায় ৬০ বছর পেরিয়ে গেলেও এর আসল কারণ অজানা, যা ভবিষ্যতের বিজ্ঞানীদের জন্য কৌতূহল ও অনুসন্ধানের বড় এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়িয়েছে।

    তাসিনুল সাকিফ
    লেখক, বিজ্ঞান্বেষী

    সূত্র : পপুলার মেকানিকস

    #EarthScience #Geology #SeismicMystery #26SecondPulse #ScienceUnsolved #গবেষণা
    পৃথিবী প্রতি ২৬ সেকেন্ডে একবার করে কেঁপে উঠছে! এই কম্পন এতটাই মৃদু যে আমরা টের পাই না, কিন্তু সিসমোমিটার (ভূমিকম্প মাপার যন্ত্র) এটা বুঝতে পারে। এটি আবিস্কারের ৬৫ বছরের মধ্যে নানা গবেষণা হলেও এখনো পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারেননি পৃথিবী কেন এমনভাবে বারবার কেঁপে ওঠে। এই কম্পন প্রথম শনাক্ত করেন বিজ্ঞানী জ্যাক অলিভার। তিনি দেখেন, এটি আসছে আটলান্টিক মহাসাগর থেকে, বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে এর তীব্রতা বেড়ে যায়। পরে ১৯৮০ সালে ভূতত্ত্ববিদ গ্যারি হোলকম্ব আবিষ্কার করেন, ঝড়ের সময় এই কম্পন সবচেয়ে শক্তিশালী হয়। দীর্ঘদিন পর ২০০৫ সালে কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা আবারও এটি শনাক্ত করেন এবং উৎস নির্ধারণ করেন আফ্রিকার পশ্চিম উপকূলের গিনি উপসাগরে। ঠিক কী কারণে এটি হচ্ছে, তা নিশ্চিত হতে পারেননি তারা। ২০১১ সালে ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির গবেষক গ্যারেট ইউলার আরও নির্দিষ্টভাবে দেখান, এর উৎস গিনি উপসাগরের "বাইট অব বনি" এলাকা। তার মতে, সমুদ্রের ঢেউ যখন মহাদেশীয় প্রান্তে আঘাত করে, তখন সমুদ্রতল কেঁপে ওঠার কারণে এই কম্পন হয়। তবে চীনের কিছু বিজ্ঞানীর মতে, এর পেছনে কারণ হতে পারে কাছের সাও টোমে (Sao Tome) দ্বীপের সক্রিয় আগ্নেয়গিরি। জাপানের আসো (Aso) আগ্নেয়গিরি থেকেও একই ধরনের কম্পন পাওয়া গেছে। তবুও প্রশ্ন রয়েই গেছে, বিশ্বে আরও অনেক মহাদেশীয় প্রান্ত ও আগ্নেয়গিরি থাকলেও এমন স্পন্দন সেখান থেকে আসে না। শুধু এই বিশেষ জায়গাতেই কেনো? প্রায় ৬০ বছর পেরিয়ে গেলেও এর আসল কারণ অজানা, যা ভবিষ্যতের বিজ্ঞানীদের জন্য কৌতূহল ও অনুসন্ধানের বড় এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়িয়েছে। তাসিনুল সাকিফ লেখক, বিজ্ঞান্বেষী সূত্র : পপুলার মেকানিকস #EarthScience #Geology #SeismicMystery #26SecondPulse #ScienceUnsolved #গবেষণা
    0 Comments 0 Shares 660 Views
  • সম্প্রতি গবেষকরা এমন এক কোয়ান্টাম ম্যাটেরিয়াল দ্বারা গঠিত সুইচ তৈরি করেছে যেটা শুধু আলো ও তাপমাত্রার নিয়ন্ত্রণে আপনার ডিভাইসকে হাজার হাজার গুন বেশি দ্রুত করে তুলতে পারে। হয়তো ভবিষ্যতে এই কোয়ান্টাম সুইচ হতে চলেছে সেন্ট্রাল প্রসেস যেখানে সিলিকনের আর প্রয়োজন পড়বেনা।

    নর্থ ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির পদার্থবিজ্ঞানী অ্যালবার্টো দে লা তোরে থার্মাল কোয়েঞ্চিং নামক একটি কৌশল এর মাধ্যমে একটি কোয়ান্টাম ম্যাটারিয়াল সুইচ তৈরি করতে পদার্থকে নিয়ন্ত্রিতভাবে উত্তপ্ত ও শীতল করে এমনভাবে প্রস্তুত করেছে যাতে সেটি একই মুহূর্তে সুপরিবাহী ও নিরোধক অবস্থার মধ্যে পরিবর্তিত হতে পারে।

    প্রযুক্তির বিপ্লবে সিলিকনের গতি ও শক্তি দিন দিন সীমিত সীমায় পৌঁছে যাচ্ছে বিধায় বিজ্ঞানীরা এমন এক বিকল্পের সন্ধানে ছিলেন যেটি হবে আকারে খুবই ছোট আরো শক্তিশালী এবং অবিশ্বাস্যরকম দ্রুত। এই কোয়ান্টাম সুইচই হল তার এক অনন্য উদাহরণ।

    গবেষকরা IT-TaS2 নামক এমন এক পদার্থ কাজে লাগিয়েছেন যেটি মুহূর্তের মধ্যে দারুণভাবে বিদ্যুৎ পরিবহন করতে পারে এবং তৎক্ষনাৎ তা একেবারে বন্ধ ও করে দিতে পারে ঠিক যেমনভাবে একটি সুইচ কাজ করে।

    এখানে আগে এমনটা সম্ভব হতো শুধুমাত্র কিছু সেকেন্ডের জন্য খুব ঠান্ডা ও কাজেনিক তাপমাত্রায় সে গানের তারা এটি সম্ভব করে দেখিয়েছেন শুধুমাত্র আলো ব্যবহার করে তাও আবার কক্ষ তাপমাত্রায়।শুধু তাই নয় এটির স্থায়িত্ব ও এখন মাসের পর মাস ধরে টিকিয়ে রাখা সম্ভব।

    যেখানে একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইসে বিদ্যুৎ চালানোর জন্য কন্ডাক্টর ও আটকানোর জন্য ইনসুলেটর নামক দুটি উপাদান জরুরী সেখানে এই নতুন প্রযুক্তিতে কেবল আলোর দ্বারা কোয়ান্টাম সুইচ একাই দুটি কাজ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। যার ফলে শক্তিশালী হওয়ার পাশাপাশি যন্ত্রটির আকার ও আরো ক্ষুদ্র হয়ে যায়।

    কম্পিউটার বা অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করতে গিয়ে আমরা সবাই এমন মূহুর্তে পড়েছি যখন আমরা ভাবি ইস! যদি এটা আরও একটু তাড়াতাড়ি লোড হতো! ঠিক এই সমস্যাটির সমাধান হিসেবেই নতুন পথ হলো এই আগাম সম্ভাবনাটি। পদার্থবিদ গ্রেগরি ফিয়েটের মতে আলোর চেয়ে দ্রুত কিছু নেই। আর সেই আলো দিয়েই পদার্থের বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণ করছে তারা তাও আবার পদার্থবিদ্যার সর্বোচ্চ গতি দিয়ে।

    বর্তমানে প্রচলিত প্রসেসর গুলি কাজ করে গিগাহার্জ গতিতে কিন্তু এই প্রযুক্তি তা নিয়ে যেতে পারে টেরাহার্জ পর্যায়ে অর্থাৎ আগের তুলনায় হাজার গুণ বেশি গতি। এই আবিষ্কার কেবল ইলেকট্রনিক্সের গতি বাড়াবে না বরং আমাদের সামনে খুলে দিচ্ছে এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার যা হয়তো অদূর ভবিষ্যতে পুরো শিল্পখাতের গতি নিয়মই পাল্টে দিতে পারে!

    সাদিয়া সুলতানা হিমু
    লেখক, বিজ্ঞান্বেষী

    #বিজ্ঞান্বেষী #KBKh #quantumphysics #silicone
    সম্প্রতি গবেষকরা এমন এক কোয়ান্টাম ম্যাটেরিয়াল দ্বারা গঠিত সুইচ তৈরি করেছে যেটা শুধু আলো ও তাপমাত্রার নিয়ন্ত্রণে আপনার ডিভাইসকে হাজার হাজার গুন বেশি দ্রুত করে তুলতে পারে। হয়তো ভবিষ্যতে এই কোয়ান্টাম সুইচ হতে চলেছে সেন্ট্রাল প্রসেস যেখানে সিলিকনের আর প্রয়োজন পড়বেনা। নর্থ ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির পদার্থবিজ্ঞানী অ্যালবার্টো দে লা তোরে থার্মাল কোয়েঞ্চিং নামক একটি কৌশল এর মাধ্যমে একটি কোয়ান্টাম ম্যাটারিয়াল সুইচ তৈরি করতে পদার্থকে নিয়ন্ত্রিতভাবে উত্তপ্ত ও শীতল করে এমনভাবে প্রস্তুত করেছে যাতে সেটি একই মুহূর্তে সুপরিবাহী ও নিরোধক অবস্থার মধ্যে পরিবর্তিত হতে পারে। প্রযুক্তির বিপ্লবে সিলিকনের গতি ও শক্তি দিন দিন সীমিত সীমায় পৌঁছে যাচ্ছে বিধায় বিজ্ঞানীরা এমন এক বিকল্পের সন্ধানে ছিলেন যেটি হবে আকারে খুবই ছোট আরো শক্তিশালী এবং অবিশ্বাস্যরকম দ্রুত। এই কোয়ান্টাম সুইচই হল তার এক অনন্য উদাহরণ। গবেষকরা IT-TaS2 নামক এমন এক পদার্থ কাজে লাগিয়েছেন যেটি মুহূর্তের মধ্যে দারুণভাবে বিদ্যুৎ পরিবহন করতে পারে এবং তৎক্ষনাৎ তা একেবারে বন্ধ ও করে দিতে পারে ঠিক যেমনভাবে একটি সুইচ কাজ করে। এখানে আগে এমনটা সম্ভব হতো শুধুমাত্র কিছু সেকেন্ডের জন্য খুব ঠান্ডা ও কাজেনিক তাপমাত্রায় সে গানের তারা এটি সম্ভব করে দেখিয়েছেন শুধুমাত্র আলো ব্যবহার করে তাও আবার কক্ষ তাপমাত্রায়।শুধু তাই নয় এটির স্থায়িত্ব ও এখন মাসের পর মাস ধরে টিকিয়ে রাখা সম্ভব। যেখানে একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইসে বিদ্যুৎ চালানোর জন্য কন্ডাক্টর ও আটকানোর জন্য ইনসুলেটর নামক দুটি উপাদান জরুরী সেখানে এই নতুন প্রযুক্তিতে কেবল আলোর দ্বারা কোয়ান্টাম সুইচ একাই দুটি কাজ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। যার ফলে শক্তিশালী হওয়ার পাশাপাশি যন্ত্রটির আকার ও আরো ক্ষুদ্র হয়ে যায়। কম্পিউটার বা অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করতে গিয়ে আমরা সবাই এমন মূহুর্তে পড়েছি যখন আমরা ভাবি ইস! যদি এটা আরও একটু তাড়াতাড়ি লোড হতো! ঠিক এই সমস্যাটির সমাধান হিসেবেই নতুন পথ হলো এই আগাম সম্ভাবনাটি। পদার্থবিদ গ্রেগরি ফিয়েটের মতে আলোর চেয়ে দ্রুত কিছু নেই। আর সেই আলো দিয়েই পদার্থের বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণ করছে তারা তাও আবার পদার্থবিদ্যার সর্বোচ্চ গতি দিয়ে। বর্তমানে প্রচলিত প্রসেসর গুলি কাজ করে গিগাহার্জ গতিতে কিন্তু এই প্রযুক্তি তা নিয়ে যেতে পারে টেরাহার্জ পর্যায়ে অর্থাৎ আগের তুলনায় হাজার গুণ বেশি গতি। এই আবিষ্কার কেবল ইলেকট্রনিক্সের গতি বাড়াবে না বরং আমাদের সামনে খুলে দিচ্ছে এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার যা হয়তো অদূর ভবিষ্যতে পুরো শিল্পখাতের গতি নিয়মই পাল্টে দিতে পারে! সাদিয়া সুলতানা হিমু লেখক, বিজ্ঞান্বেষী #বিজ্ঞান্বেষী #KBKh #quantumphysics #silicone
    0 Comments 0 Shares 680 Views
  • আমরা ঘুমকে প্রায়ই অবহেলা করি। ভাবি, একটু কম ঘুম হলে তেমন কিছু হবে না।
    কিন্তু বিজ্ঞান বলছে ভিন্ন কথা। ঘুম শুধু বিশ্রামের সময় নয়, এটি আমাদের মস্তিষ্কের পরিচ্ছন্নতা ও পুনর্গঠনের গুরুত্বপূর্ণ পর্ব। যখন আমরা ঘুমাই, তখন মস্তিষ্ক নিজেকে পরিষ্কার করে, ক্ষতিগ্রস্ত অংশগুলো মেরামত করে এবং স্মৃতিকে সংগঠিত করে। কিন্তু ঘুমের অভাবে এই প্রক্রিয়াগুলো ব্যাহত হয়, এমনকি ভয়ঙ্করভাবে উল্টেও যেতে পারে। গবেষণা বলছে, পর্যাপ্ত ঘুম না হলে মস্তিষ্কের কোষগুলো এতটাই সক্রিয় হয়ে ওঠে যে তারা নিজেদেরই ক্ষতি করতে শুরু করে, নিজের কাঠামো ধ্বংস করে ফেলে।

    - ভালো ঘুমে মস্তিষ্কের কোষগুলো বিষাক্ত পদার্থ সরিয়ে ফেলে।

    - ঘুম কম হলে, এই কোষগুলো অতিরিক্ত সক্রিয় হয়ে নিজেদেরই ক্ষতি করে।

    - অ্যাস্ট্রোসাইট কোষ "স্নায়ু সংযোগ" খেয়ে ফেলতে পারে—মনে রাখার ক্ষমতা কমে।

    - মাইক্রোগ্লিয়াল কোষের অতিরিক্ত কাজ অ্যালঝাইমারের ঝুঁকি বাড়ায়।

    - পর্যাপ্ত ঘুম না হলে, মস্তিষ্ক ধীরে ধীরে নিজের কাঠামো নষ্ট করতে শুরু করে।
    আমরা ঘুমকে প্রায়ই অবহেলা করি। ভাবি, একটু কম ঘুম হলে তেমন কিছু হবে না। কিন্তু বিজ্ঞান বলছে ভিন্ন কথা। ঘুম শুধু বিশ্রামের সময় নয়, এটি আমাদের মস্তিষ্কের পরিচ্ছন্নতা ও পুনর্গঠনের গুরুত্বপূর্ণ পর্ব। যখন আমরা ঘুমাই, তখন মস্তিষ্ক নিজেকে পরিষ্কার করে, ক্ষতিগ্রস্ত অংশগুলো মেরামত করে এবং স্মৃতিকে সংগঠিত করে। কিন্তু ঘুমের অভাবে এই প্রক্রিয়াগুলো ব্যাহত হয়, এমনকি ভয়ঙ্করভাবে উল্টেও যেতে পারে। গবেষণা বলছে, পর্যাপ্ত ঘুম না হলে মস্তিষ্কের কোষগুলো এতটাই সক্রিয় হয়ে ওঠে যে তারা নিজেদেরই ক্ষতি করতে শুরু করে, নিজের কাঠামো ধ্বংস করে ফেলে। - ভালো ঘুমে মস্তিষ্কের কোষগুলো বিষাক্ত পদার্থ সরিয়ে ফেলে। - ঘুম কম হলে, এই কোষগুলো অতিরিক্ত সক্রিয় হয়ে নিজেদেরই ক্ষতি করে। - অ্যাস্ট্রোসাইট কোষ "স্নায়ু সংযোগ" খেয়ে ফেলতে পারে—মনে রাখার ক্ষমতা কমে। - মাইক্রোগ্লিয়াল কোষের অতিরিক্ত কাজ অ্যালঝাইমারের ঝুঁকি বাড়ায়। - পর্যাপ্ত ঘুম না হলে, মস্তিষ্ক ধীরে ধীরে নিজের কাঠামো নষ্ট করতে শুরু করে।
    0 Comments 0 Shares 590 Views
  • আধুনিক মনোবিজ্ঞান বলছে, অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহার মস্তিষ্কে ডোপামিন (dopamine) নামের রাসায়নিকের অতিরিক্ত নিঃসরণ ঘটায়। এটি অল্প সময়ের আনন্দ দেয়, কিন্তু ধীরে ধীরে মনোযোগ নষ্ট করে এবং পড়াশোনায় মন বসানো কঠিন হয়ে পড়ে। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা দিনে ৫–৬ ঘণ্টার বেশি ফোন ব্যবহার করে, তাদের স্মৃতিশক্তি, বিশ্লেষণ ক্ষমতা এবং সৃজনশীলতা কমে যায়।
    মোবাইলের স্ক্রিন থেকে নির্গত নীল আলো (blue light) ঘুমের হরমোন মেলাটোনিনের উৎপাদন কমিয়ে দেয়, ফলে রাতে ঘুম হয় দেরিতে—আর দিনে ক্লান্তি এসে ভর করে। এই ক্লান্তি একাডেমিক পারফরম্যান্সের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে।
    আধুনিক মনোবিজ্ঞান বলছে, অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহার মস্তিষ্কে ডোপামিন (dopamine) নামের রাসায়নিকের অতিরিক্ত নিঃসরণ ঘটায়। এটি অল্প সময়ের আনন্দ দেয়, কিন্তু ধীরে ধীরে মনোযোগ নষ্ট করে এবং পড়াশোনায় মন বসানো কঠিন হয়ে পড়ে। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা দিনে ৫–৬ ঘণ্টার বেশি ফোন ব্যবহার করে, তাদের স্মৃতিশক্তি, বিশ্লেষণ ক্ষমতা এবং সৃজনশীলতা কমে যায়। মোবাইলের স্ক্রিন থেকে নির্গত নীল আলো (blue light) ঘুমের হরমোন মেলাটোনিনের উৎপাদন কমিয়ে দেয়, ফলে রাতে ঘুম হয় দেরিতে—আর দিনে ক্লান্তি এসে ভর করে। এই ক্লান্তি একাডেমিক পারফরম্যান্সের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে।
    0 Comments 0 Shares 198 Views
  • আপনি যদি ভেবে থাকেন বিমান সংরক্ষণ মানেই স্রেফ এটিকে কোথাও পার্ক করে রাখা, তাহলে আপনি একদম ভুল করছেন না, আবার একদম ঠিকও করছেন না। কারণ, বিমান হলো এমন এক বস্তু, যাকে ঠিক গ্যারাজে ঢুকিয়ে তালা ঝুলিয়ে রাখা যায় না। এতে থাকে ৬০ ফুট লম্বা ডানা, একেকটি ইঞ্জিনের ওজন প্রায় ৪,০০০ কেজি, আর প্রতিটি ছোটখাট বিমানেরও ন্যূনতম ১০ লাখের ওপরে যন্ত্রাংশ থাকে।

    এখানে আসল চ্যালেঞ্জটা হলো—এই বিমানের শরীর যেন মরিচা না ধরে, ইঞ্জিন যেন উল্টাপাল্টা না করে, আর ককপিটের নেভিগেশনগুলো যাতে ঠিকঠাক থাকে।। এজন্য প্রয়োজন হয় প্রচুর গাণিতিক হিসাব।

    প্রথমত, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ। বিমানের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ যেন ঘামতে না শুরু করে, তার জন্য হ্যাঙ্গারে তাপমাত্রা রাখতে হয় ২১ থেকে ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। যদি এটি এক ডিগ্রি বাড়ে, তাহলে বিমানের অভ্যন্তরীণ যন্ত্রাংশের সম্প্রসারণ ঘটে ০.০০০১২ মিটার প্রতি মিটার দৈর্ঘ্যে। এটা শুনে মনে হতে পারে তেমন কিছু না, কিন্তু একটা বোয়িং ৭৭৭-এর ডানার দৈর্ঘ্য ৬০.৯ মিটার। কাজেই এক ডিগ্রিতে সেটি প্রায় ০.০০৭৩ মিটার বা ৭.৩ মিলিমিটার বাড়ে—মানে প্রায় একটা জামার বোতামের সমান। আর একটা জামার বোতামের সমান উল্টাপাল্টা ঘটনা মানেই মাঝ আকাশে বিশাল বিপদ।

    এবার আসি আর্দ্রতার কথায়। বিমানের ভেতর যদি বেশি আর্দ্রতা থাকে, তাহলে ইলেকট্রনিক সার্কিট বোর্ডে পানির কণা জমে গিয়ে শর্ট সার্কিট হয়ে যেতে পারে। আর বিমানে শর্ট সার্কিট মানে অনেক সময় ‘আউচ!’ নয়, বরং ‘আউট!’ বলা। তাই আর্দ্রতা রাখতে হয় ৪৫% থেকে ৫০% এর মধ্যে। যদি ৫৫% হয়, তাহলে ককপিটের কাচে পানি জমে এবং পাইলটকে তখন নিজ হাতে উইন্ডশিল্ড ওয়াইপার দিয়ে পরিষ্কার করতে হয়—যা সাধারণত তাদের জিএমএস (গ্লোবাল মেস সেন্স) স্কোরের সাথে যায় না।

    আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—টায়ারের সংরক্ষণ। বিমানের টায়ার দেখতে যতটা বড় এবং গম্ভীর, ততটাই সংবেদনশীল। একটি বিমানের টায়ার প্রতি স্কয়ার ইঞ্চিতে ২০০ PSI চাপ সহ্য করতে পারে, যা এক হাড়ভাঙা টেনিস বলের চাপের ১৪ গুণ বেশি। তাই দীর্ঘসময় দাঁড়িয়ে থাকলে টায়ার সমানভাবে চাপ না পেলে তা একপাশে বসে যেতে পারে। সমাধান? প্রতি ১৮ দিন অন্তর টায়ার ৯০ ডিগ্রি ঘুরিয়ে দিতে হয়, যেন সব অংশ সমানভাবে বসে। বিমানের টায়ার যেন “চেয়ার পটেটো” না হয়ে পড়ে!

    বিমানের ইঞ্জিন হলো এই গল্পের রাজা। ইঞ্জিন ঠিকভাবে সংরক্ষণ না করলে তা হয়ে উঠতে পারে একজন সর্দিলাগা রোগীর মত। আপনি জানেন কি, প্রতি ৬ দিন অন্তর ইঞ্জিন ঘোরানো না হলে তার টারবাইন ব্লেডে ধুলো জমে গিয়ে ৪.৫% কর্মক্ষমতা কমে যায়? এক গবেষণায় দেখা গেছে, যদি ৩০ দিন ইঞ্জিন বন্ধ থাকে, তাহলে তাতে খনিজ তেল জমে গিয়ে একধরনের “অ্যালগেব্রিক ক্লগিং” হয়, যেখানে তেলের ঘনত্বের মান চলে যায় ১.৩৮ cP থেকে ২.২৯ cP—মানে এটি ঘন হয়ে আঠার মতো হয়ে যায়। তেল দিয়ে বিমান চালানো যায়, আঠা দিয়ে নয়।

    অনেকেই ভাবেন, বিমানের পেইন্ট বা রং শুধু দেখতে ভালো লাগার জন্য। আসলে এটি হল একধরনের তাপ-নিয়ন্ত্রক শিল্ড। যদি আপনি একটি সাদা রঙের বিমানকে মরুভূমিতে ফেলে রাখেন, তাও সে অন্তত ৪.৮ ডিগ্রি কম গরম হবে কালো রঙের তুলনায়। আর এই গরমের পার্থক্য মানে বিমানের ফিউজেলাজে প্রতি বর্গমিটারে ১২.৬ নিউটন অতিরিক্ত বল পড়বে—যা একেকটা স্ক্রুর ওপর ১.৮ কেজির চাপ সৃষ্টি করতে পারে। আপনি যদি ভাবেন "বাহ! এটাও কি হিসাব করার জিনিস?"—তাহলে আপনি সম্ভবত বিমান প্রকৌশল নিয়ে পড়ালেখা করেননি, তাই আপনাকে দোষ দেওয়া যায় না।

    আর হ্যাঁ, পাখি! হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন—পাখি। আপনি যতই বিমানকে হ্যাঙ্গারে রাখুন না কেন, পাখিরা পছন্দ করে এর গা বেয়ে উঠে বসে থাকতে। প্রতি বছর শুধু এই পাখির বিষ্ঠার কারণে বিমানের বাহ্যিক অংশ পরিষ্কার করতে ব্যয় হয় প্রায় $১.৭ মিলিয়ন। আর বিমানে যদি পাখি বাসা বাঁধে, তবে সেটা হয় একেবারে জ্বালানি পাম্পের পাশে। একবার এক বিমানে ১৪টি চড়ুইয়ের বাসা পাওয়া গিয়েছিল—একটি ইঞ্জিনের মধ্যে। এতে শুধু পরিষ্কারের খরচই যায় $২৩,০০০।

    এবার আসি অদ্ভুত এক গবেষণায়। গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে মাটিতে থাকা বিমানগুলোর ইন্টারনাল সেন্সররা ‌মানসিকভাবে‌ হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। একে বলে “instrument lag depression syndrome”—একধরনের অবস্থান যেখানে Altimeter বা উচ্চতা মাপার যন্ত্র ভুল তথ্য দিতে শুরু করে। ৩০ দিন পর দেখা যায়, প্রকৃত উচ্চতা ৩০০০ ফুট হলেও সেন্সর দেখায় ২৫০০ বা ৩৫০০।

    এই অবস্থায় কিছু বিমান সংস্থা তাদের বিমানগুলিকে "ঘুরতে" বের করে—মানে, সপ্তাহে একবার অন্তত ৩০ মিনিটের জন্য আকাশে ওড়ানো হয়। যাতে বিমানের যন্ত্রপাতি মনে করে তারা এখনও জীবিত, এবং তাদের চাকরি এখনও আছে। একে বলে “maintenance flight,” কিন্তু অভ্যন্তরীণভাবে এটিকে ডাকা হয় “mental health flight.”

    মজার কথা হলো, বেশ কিছু সংস্থা আবার বিমানের মধ্যে “আনান্দ উৎসব” করে বিমান চালু রাখে—মানে ইঞ্জিন স্টার্ট করে, এয়ার কন্ডিশন চালায়, আলো জ্বালে, এমনকি কিছু ক্ষেত্রে ভুয়া বোর্ডিং করিয়ে ছবি তোলে। এসব কিছুই শুধুমাত্র যন্ত্রগুলোকে বোঝাতে যে, তারা অবহেলিত নয়। আপনি যদি ভাবেন, “বাহ, বিমানেরও অনুভূতি আছে?”—তাহলে আপনি একধাপ এগিয়ে আছেন মানবিক প্রযুক্তির দৃষ্টিভঙ্গিতে।

    এখন প্রশ্ন আসে—এই বিমানের সব কিছুর হিসাব রাখে কে? উত্তর—এয়ারক্রাফট মেইন্টেন্যান্স লগ। এটি হলো একধরনের বিমান ডায়েরি, যেখানে লেখা থাকে—“আজ ডানার নিচে ২.১ মিলিমিটার চিপ দেখা গেছে। সম্ভবত লেজ ঘষা লেগেছে।” এটি প্রতি দিন, প্রতি ঘণ্টা, এমনকি প্রতি মিনিটে আপডেট করতে হয়। গড়পড়তা একটি বোয়িং ৭৮৭-এর মেইন্টেন্যান্স রিপোর্ট বছরে প্রায় ২,৩০০ পৃষ্ঠার হয়ে থাকে। এতো বড় বই লেখার জন্য একজন সাহিত্যের লোকের চেয়ে একজন অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারের বেশি প্রয়োজন হয়।

    শেষমেশ, একটি বিষয় বলা দরকার—বিমান সংরক্ষণ মানেই শুধু যন্ত্রপাতির যত্ন নয়, বরং এটি একধরনের পোষ্য পালনের মতো। আপনি যেমন আপনার বিড়ালকে খাওয়ান, তার গায়ে হাত বুলান, মাঝে মাঝে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান—তেমনি বিমানকেও “খাওয়াতে” হয় (ফুয়েল দিয়ে), তার শরীর ঘষে পরিষ্কার করতে হয়, এবং মাঝে মাঝে ওড়াতে হয় যেন তার মন খারাপ না হয়।

    তাই পরিশেষে বলা যায়, বিমান সংরক্ষণ শুধু বিজ্ঞান নয়, এটি শিল্প। এটি এমন এক ললিতকলা যেখানে গণিতের সূত্র, পদার্থবিদ্যার নিয়ম এবং খানিকটা হৃদয়ের আবেগ মিশে তৈরি হয় এক সুপ্ত ও শক্তিশালী জীবনরক্ষা প্রক্রিয়া। যদি কখনো কোনো বিমানে উঠে বসেন, মনে রাখবেন—এই উড়ন্ত দৈত্যটা অনেক গুনতি, অনেক ঘাম এবং শ্রমের বিনিময়েই আপনাকে নিয়ে উড়াল দিতে যাচ্ছে।

    আপনি যখন জানালার বাইরে তাকিয়ে ভাববেন, “আহা! আকাশ কত নীল!”—ঠিক তখনই বিমানের সেন্সররা হিসাব কষছে, “আমি কি এখনও উচ্চতায় ৩২,০০০ ফুটে, নাকি পাইলট কফির সময় ভুলে গেছেন অটোপাইলট অন করতে?”

    © Tubelight Media 2025

    আরও সুন্দর সুন্দর গল্প পড়তে চাইলে এখনই Taking Over BD পেজে যোগ দিন!

    আমাদের পোস্টে শেয়ার করুন, লাইক দিন, আর কমেন্ট করে যুক্ত হয়ে যান।
    আশা করি আমাদের প্রতিটি গল্প আপনাদের মন ছুঁয়ে যাবে।

    চলুন, গল্পের জগতে হারিয়ে যাই!
    আপনি যদি ভেবে থাকেন বিমান সংরক্ষণ মানেই স্রেফ এটিকে কোথাও পার্ক করে রাখা, তাহলে আপনি একদম ভুল করছেন না, আবার একদম ঠিকও করছেন না। কারণ, বিমান হলো এমন এক বস্তু, যাকে ঠিক গ্যারাজে ঢুকিয়ে তালা ঝুলিয়ে রাখা যায় না। এতে থাকে ৬০ ফুট লম্বা ডানা, একেকটি ইঞ্জিনের ওজন প্রায় ৪,০০০ কেজি, আর প্রতিটি ছোটখাট বিমানেরও ন্যূনতম ১০ লাখের ওপরে যন্ত্রাংশ থাকে। এখানে আসল চ্যালেঞ্জটা হলো—এই বিমানের শরীর যেন মরিচা না ধরে, ইঞ্জিন যেন উল্টাপাল্টা না করে, আর ককপিটের নেভিগেশনগুলো যাতে ঠিকঠাক থাকে।। এজন্য প্রয়োজন হয় প্রচুর গাণিতিক হিসাব। প্রথমত, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ। বিমানের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ যেন ঘামতে না শুরু করে, তার জন্য হ্যাঙ্গারে তাপমাত্রা রাখতে হয় ২১ থেকে ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। যদি এটি এক ডিগ্রি বাড়ে, তাহলে বিমানের অভ্যন্তরীণ যন্ত্রাংশের সম্প্রসারণ ঘটে ০.০০০১২ মিটার প্রতি মিটার দৈর্ঘ্যে। এটা শুনে মনে হতে পারে তেমন কিছু না, কিন্তু একটা বোয়িং ৭৭৭-এর ডানার দৈর্ঘ্য ৬০.৯ মিটার। কাজেই এক ডিগ্রিতে সেটি প্রায় ০.০০৭৩ মিটার বা ৭.৩ মিলিমিটার বাড়ে—মানে প্রায় একটা জামার বোতামের সমান। আর একটা জামার বোতামের সমান উল্টাপাল্টা ঘটনা মানেই মাঝ আকাশে বিশাল বিপদ। এবার আসি আর্দ্রতার কথায়। বিমানের ভেতর যদি বেশি আর্দ্রতা থাকে, তাহলে ইলেকট্রনিক সার্কিট বোর্ডে পানির কণা জমে গিয়ে শর্ট সার্কিট হয়ে যেতে পারে। আর বিমানে শর্ট সার্কিট মানে অনেক সময় ‘আউচ!’ নয়, বরং ‘আউট!’ বলা। তাই আর্দ্রতা রাখতে হয় ৪৫% থেকে ৫০% এর মধ্যে। যদি ৫৫% হয়, তাহলে ককপিটের কাচে পানি জমে এবং পাইলটকে তখন নিজ হাতে উইন্ডশিল্ড ওয়াইপার দিয়ে পরিষ্কার করতে হয়—যা সাধারণত তাদের জিএমএস (গ্লোবাল মেস সেন্স) স্কোরের সাথে যায় না। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—টায়ারের সংরক্ষণ। বিমানের টায়ার দেখতে যতটা বড় এবং গম্ভীর, ততটাই সংবেদনশীল। একটি বিমানের টায়ার প্রতি স্কয়ার ইঞ্চিতে ২০০ PSI চাপ সহ্য করতে পারে, যা এক হাড়ভাঙা টেনিস বলের চাপের ১৪ গুণ বেশি। তাই দীর্ঘসময় দাঁড়িয়ে থাকলে টায়ার সমানভাবে চাপ না পেলে তা একপাশে বসে যেতে পারে। সমাধান? প্রতি ১৮ দিন অন্তর টায়ার ৯০ ডিগ্রি ঘুরিয়ে দিতে হয়, যেন সব অংশ সমানভাবে বসে। বিমানের টায়ার যেন “চেয়ার পটেটো” না হয়ে পড়ে! বিমানের ইঞ্জিন হলো এই গল্পের রাজা। ইঞ্জিন ঠিকভাবে সংরক্ষণ না করলে তা হয়ে উঠতে পারে একজন সর্দিলাগা রোগীর মত। আপনি জানেন কি, প্রতি ৬ দিন অন্তর ইঞ্জিন ঘোরানো না হলে তার টারবাইন ব্লেডে ধুলো জমে গিয়ে ৪.৫% কর্মক্ষমতা কমে যায়? এক গবেষণায় দেখা গেছে, যদি ৩০ দিন ইঞ্জিন বন্ধ থাকে, তাহলে তাতে খনিজ তেল জমে গিয়ে একধরনের “অ্যালগেব্রিক ক্লগিং” হয়, যেখানে তেলের ঘনত্বের মান চলে যায় ১.৩৮ cP থেকে ২.২৯ cP—মানে এটি ঘন হয়ে আঠার মতো হয়ে যায়। তেল দিয়ে বিমান চালানো যায়, আঠা দিয়ে নয়। অনেকেই ভাবেন, বিমানের পেইন্ট বা রং শুধু দেখতে ভালো লাগার জন্য। আসলে এটি হল একধরনের তাপ-নিয়ন্ত্রক শিল্ড। যদি আপনি একটি সাদা রঙের বিমানকে মরুভূমিতে ফেলে রাখেন, তাও সে অন্তত ৪.৮ ডিগ্রি কম গরম হবে কালো রঙের তুলনায়। আর এই গরমের পার্থক্য মানে বিমানের ফিউজেলাজে প্রতি বর্গমিটারে ১২.৬ নিউটন অতিরিক্ত বল পড়বে—যা একেকটা স্ক্রুর ওপর ১.৮ কেজির চাপ সৃষ্টি করতে পারে। আপনি যদি ভাবেন "বাহ! এটাও কি হিসাব করার জিনিস?"—তাহলে আপনি সম্ভবত বিমান প্রকৌশল নিয়ে পড়ালেখা করেননি, তাই আপনাকে দোষ দেওয়া যায় না। আর হ্যাঁ, পাখি! হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন—পাখি। আপনি যতই বিমানকে হ্যাঙ্গারে রাখুন না কেন, পাখিরা পছন্দ করে এর গা বেয়ে উঠে বসে থাকতে। প্রতি বছর শুধু এই পাখির বিষ্ঠার কারণে বিমানের বাহ্যিক অংশ পরিষ্কার করতে ব্যয় হয় প্রায় $১.৭ মিলিয়ন। আর বিমানে যদি পাখি বাসা বাঁধে, তবে সেটা হয় একেবারে জ্বালানি পাম্পের পাশে। একবার এক বিমানে ১৪টি চড়ুইয়ের বাসা পাওয়া গিয়েছিল—একটি ইঞ্জিনের মধ্যে। এতে শুধু পরিষ্কারের খরচই যায় $২৩,০০০। এবার আসি অদ্ভুত এক গবেষণায়। গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে মাটিতে থাকা বিমানগুলোর ইন্টারনাল সেন্সররা ‌মানসিকভাবে‌ হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। একে বলে “instrument lag depression syndrome”—একধরনের অবস্থান যেখানে Altimeter বা উচ্চতা মাপার যন্ত্র ভুল তথ্য দিতে শুরু করে। ৩০ দিন পর দেখা যায়, প্রকৃত উচ্চতা ৩০০০ ফুট হলেও সেন্সর দেখায় ২৫০০ বা ৩৫০০। এই অবস্থায় কিছু বিমান সংস্থা তাদের বিমানগুলিকে "ঘুরতে" বের করে—মানে, সপ্তাহে একবার অন্তত ৩০ মিনিটের জন্য আকাশে ওড়ানো হয়। যাতে বিমানের যন্ত্রপাতি মনে করে তারা এখনও জীবিত, এবং তাদের চাকরি এখনও আছে। একে বলে “maintenance flight,” কিন্তু অভ্যন্তরীণভাবে এটিকে ডাকা হয় “mental health flight.” মজার কথা হলো, বেশ কিছু সংস্থা আবার বিমানের মধ্যে “আনান্দ উৎসব” করে বিমান চালু রাখে—মানে ইঞ্জিন স্টার্ট করে, এয়ার কন্ডিশন চালায়, আলো জ্বালে, এমনকি কিছু ক্ষেত্রে ভুয়া বোর্ডিং করিয়ে ছবি তোলে। এসব কিছুই শুধুমাত্র যন্ত্রগুলোকে বোঝাতে যে, তারা অবহেলিত নয়। আপনি যদি ভাবেন, “বাহ, বিমানেরও অনুভূতি আছে?”—তাহলে আপনি একধাপ এগিয়ে আছেন মানবিক প্রযুক্তির দৃষ্টিভঙ্গিতে। এখন প্রশ্ন আসে—এই বিমানের সব কিছুর হিসাব রাখে কে? উত্তর—এয়ারক্রাফট মেইন্টেন্যান্স লগ। এটি হলো একধরনের বিমান ডায়েরি, যেখানে লেখা থাকে—“আজ ডানার নিচে ২.১ মিলিমিটার চিপ দেখা গেছে। সম্ভবত লেজ ঘষা লেগেছে।” এটি প্রতি দিন, প্রতি ঘণ্টা, এমনকি প্রতি মিনিটে আপডেট করতে হয়। গড়পড়তা একটি বোয়িং ৭৮৭-এর মেইন্টেন্যান্স রিপোর্ট বছরে প্রায় ২,৩০০ পৃষ্ঠার হয়ে থাকে। এতো বড় বই লেখার জন্য একজন সাহিত্যের লোকের চেয়ে একজন অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারের বেশি প্রয়োজন হয়। শেষমেশ, একটি বিষয় বলা দরকার—বিমান সংরক্ষণ মানেই শুধু যন্ত্রপাতির যত্ন নয়, বরং এটি একধরনের পোষ্য পালনের মতো। আপনি যেমন আপনার বিড়ালকে খাওয়ান, তার গায়ে হাত বুলান, মাঝে মাঝে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান—তেমনি বিমানকেও “খাওয়াতে” হয় (ফুয়েল দিয়ে), তার শরীর ঘষে পরিষ্কার করতে হয়, এবং মাঝে মাঝে ওড়াতে হয় যেন তার মন খারাপ না হয়। তাই পরিশেষে বলা যায়, বিমান সংরক্ষণ শুধু বিজ্ঞান নয়, এটি শিল্প। এটি এমন এক ললিতকলা যেখানে গণিতের সূত্র, পদার্থবিদ্যার নিয়ম এবং খানিকটা হৃদয়ের আবেগ মিশে তৈরি হয় এক সুপ্ত ও শক্তিশালী জীবনরক্ষা প্রক্রিয়া। যদি কখনো কোনো বিমানে উঠে বসেন, মনে রাখবেন—এই উড়ন্ত দৈত্যটা অনেক গুনতি, অনেক ঘাম এবং শ্রমের বিনিময়েই আপনাকে নিয়ে উড়াল দিতে যাচ্ছে। আপনি যখন জানালার বাইরে তাকিয়ে ভাববেন, “আহা! আকাশ কত নীল!”—ঠিক তখনই বিমানের সেন্সররা হিসাব কষছে, “আমি কি এখনও উচ্চতায় ৩২,০০০ ফুটে, নাকি পাইলট কফির সময় ভুলে গেছেন অটোপাইলট অন করতে?” © Tubelight Media 2025 ✨ আরও সুন্দর সুন্দর গল্প পড়তে চাইলে এখনই 👉 Taking Over BD 👈 পেজে যোগ দিন! আমাদের পোস্টে 🎈 শেয়ার করুন, 👍 লাইক দিন, আর 🗣️ কমেন্ট করে যুক্ত হয়ে যান। আশা করি ❤️ আমাদের প্রতিটি গল্প 🌙 আপনাদের মন ছুঁয়ে যাবে। 🔥 চলুন, গল্পের জগতে হারিয়ে যাই! ❤️
    Love
    1
    0 Comments 0 Shares 299 Views
  • আওকিগাহারা বা সু ইসাইড ফরেস্ট
    জাপানের “সু ইসাইড ফরেস্ট” নামে পরিচিত অরণ্যটির প্রকৃত নাম আওকিগাহারা (Aokigahara)। এটি বিশ্বের অন্যতম রহস্যময় এবং মর্মান্তিক স্থান হিসেবে পরিচিত। নিচে আওকিগাহারা বন সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেওয়া হলো:

    নাম: আওকিগাহারা (Aokigahara), অর্থ "নীল গাছের সমুদ্র"

    অন্য নাম: "সুই সাইড ফরেস্ট" বা "জঙ্গলের আ ত্মহ ত্যা ক্ষেত্র"
    ফুজি পর্বতের পাদদেশে, জাপানের হনশু দ্বীপে।

    প্রায় ৩০ বর্গ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে অবস্থিত।

    আওকিগাহারা বনটি অত্যন্ত ঘন এবং নীরব। এখানকার গাছগুলো এত ঘন যে বাতাস এবং আলো ভেতরে খুব কম প্রবেশ করে।

    লাভা বেড়ে গঠিত হওয়ায় এখানে কম্পাস কাজ করে না—এটা অনেক অভিযাত্রী ও পর্যটকদের পথ হারানোর একটি কারণ।

    এটি একটি "Soundproof Forest", কারণ গাছের ঘনত্ব শব্দ শোষণ করে ফেলে।


    আ ত্মহ ত্যার ইতিহাস:
    এটি বিশ্বে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আ ত্মহ ত্যার স্থান (প্রথম: গোল্ডেন গেট ব্রিজ, USA)।

    প্রতি বছর অসংখ্য মানুষ এই বনে গিয়ে আ ত্মহ ত্যা করেন।

    স্থানীয় প্রশাসন নিয়মিতভাবে "দেহ উদ্ধার অভিযান" চালায়।

    বনের প্রবেশপথে সতর্কতামূলক বোর্ড ঝোলানো থাকে, যাতে লেখা থাকে:

    > “আপনার জীবন আপনার মূল্যবান। আপনার পরিবারের কথা ভাবুন। দয়া করে সাহায্য চাইতে দ্বিধা করবেন না।”

    সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক পটভূমি:

    কিছু গবেষক মনে করেন, এই বনের খা রাপ খ্যাতির উৎস হতে পারে "উবাসুতে" নামক একটি প্রাচীন প্রথা, যেখানে বৃদ্ধ বা অসুস্থ আত্মীয়দের পর্বতের জঙ্গলে ফেলে রাখা হতো।

    মিচিও সুই (Seicho Matsumoto) নামক এক জাপানি লেখক তাঁর উপন্যাস "Tower of Waves" (1959)-এ এই বনের কথা উল্লেখ করেন, যেখানে এক দম্পতি এখানে আ ত্মহ ত্যা করে।

    আধুনিক যুগে অনেক ইউটিউবার ও পর্যটক বনের ভিতরে ভিডিও করে, যার কারণে এটিকে আরও রহস্যময় ও বিতর্কিত করে তোলে।

    চলচ্চিত্র ও মিডিয়া:

    "The Forest" (2016) নামক একটি হলিউড হরর সিনেমা এই জঙ্গলকে কেন্দ্র করে নির্মিত।

    অনেক ডকুমেন্টারি ও ইউটিউব চ্যানেল আওকিগাহারার আতঙ্ক এবং সত্য ঘটনা তুলে ধরেছে।

    জাপান সরকার কী করে?

    প্রশাসন আ ত্মহ ত্যা নিরুৎসাহিত করতে প্রতিনিয়ত প্রচারণা চালায়।

    বনের কিছু এলাকায় সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।

    স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরা বনে টহল দেন এবং সন্দেহভাজনদের সহায়তা করেন।

    (Collected from various websites)

    So Ny
    Paranormal Society BD

    NOTE : THIS POST IS COPYRIGHT PROTECTED
    ©

    Don't try to copy without permission...
    Otherwise Facebook community can take actions .
    আওকিগাহারা বা সু ইসাইড ফরেস্ট ☠️ জাপানের “সু ইসাইড ফরেস্ট” নামে পরিচিত অরণ্যটির প্রকৃত নাম আওকিগাহারা (Aokigahara)। এটি বিশ্বের অন্যতম রহস্যময় এবং মর্মান্তিক স্থান হিসেবে পরিচিত। নিচে আওকিগাহারা বন সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেওয়া হলো: নাম: আওকিগাহারা (Aokigahara), অর্থ "নীল গাছের সমুদ্র" অন্য নাম: "সুই সাইড ফরেস্ট" বা "জঙ্গলের আ ত্মহ ত্যা ক্ষেত্র" ফুজি পর্বতের পাদদেশে, জাপানের হনশু দ্বীপে। প্রায় ৩০ বর্গ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে অবস্থিত। আওকিগাহারা বনটি অত্যন্ত ঘন এবং নীরব। এখানকার গাছগুলো এত ঘন যে বাতাস এবং আলো ভেতরে খুব কম প্রবেশ করে। লাভা বেড়ে গঠিত হওয়ায় এখানে কম্পাস কাজ করে না—এটা অনেক অভিযাত্রী ও পর্যটকদের পথ হারানোর একটি কারণ। এটি একটি "Soundproof Forest", কারণ গাছের ঘনত্ব শব্দ শোষণ করে ফেলে। আ ত্মহ ত্যার ইতিহাস: এটি বিশ্বে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আ ত্মহ ত্যার স্থান (প্রথম: গোল্ডেন গেট ব্রিজ, USA)। প্রতি বছর অসংখ্য মানুষ এই বনে গিয়ে আ ত্মহ ত্যা করেন। স্থানীয় প্রশাসন নিয়মিতভাবে "দেহ উদ্ধার অভিযান" চালায়। বনের প্রবেশপথে সতর্কতামূলক বোর্ড ঝোলানো থাকে, যাতে লেখা থাকে: > “আপনার জীবন আপনার মূল্যবান। আপনার পরিবারের কথা ভাবুন। দয়া করে সাহায্য চাইতে দ্বিধা করবেন না।” সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক পটভূমি: কিছু গবেষক মনে করেন, এই বনের খা রাপ খ্যাতির উৎস হতে পারে "উবাসুতে" নামক একটি প্রাচীন প্রথা, যেখানে বৃদ্ধ বা অসুস্থ আত্মীয়দের পর্বতের জঙ্গলে ফেলে রাখা হতো। মিচিও সুই (Seicho Matsumoto) নামক এক জাপানি লেখক তাঁর উপন্যাস "Tower of Waves" (1959)-এ এই বনের কথা উল্লেখ করেন, যেখানে এক দম্পতি এখানে আ ত্মহ ত্যা করে। আধুনিক যুগে অনেক ইউটিউবার ও পর্যটক বনের ভিতরে ভিডিও করে, যার কারণে এটিকে আরও রহস্যময় ও বিতর্কিত করে তোলে। 🎥 চলচ্চিত্র ও মিডিয়া: "The Forest" (2016) নামক একটি হলিউড হরর সিনেমা এই জঙ্গলকে কেন্দ্র করে নির্মিত। অনেক ডকুমেন্টারি ও ইউটিউব চ্যানেল আওকিগাহারার আতঙ্ক এবং সত্য ঘটনা তুলে ধরেছে। 🛑 জাপান সরকার কী করে? প্রশাসন আ ত্মহ ত্যা নিরুৎসাহিত করতে প্রতিনিয়ত প্রচারণা চালায়। বনের কিছু এলাকায় সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরা বনে টহল দেন এবং সন্দেহভাজনদের সহায়তা করেন। (Collected from various websites) So Ny Paranormal Society BD NOTE : THIS POST IS COPYRIGHT PROTECTED © Don't try to copy without permission... Otherwise Facebook community can take actions .
    0 Comments 0 Shares 289 Views
  • কাজী নজরুল সম্পর্কে যে ২০টি তথ্য আপনি না-ও জেনে থাকতে পারেন।

    কাজী নজরুল ইসলামের জীবন ছিল বিচিত্র আর বহুবর্ণিল। তাঁর সেই জীবনের কতটুকুই-বা আমরা জানি? আজ নজরুলজয়ন্তীতে নজরুল-গবেষকদের লেখা বিভিন্ন বই ও পত্রিকা ঘেঁটে এখানে বিদ্রোহী কবি-সম্পর্কিত এমন ২০টি তথ্য তুলে ধরা হলো, যেগুলো আপনি না-ও জেনে থাকতে পারেন!

    ১. নজরুলের জীবন কোনো নিয়মের জালে আটকা ছিল না। যখন যা ভালো লাগত, তিনি তা-ই করতেন। দিন নেই, রাত নেই হই হই রব তুলে উঠে পড়তেন কোনো বন্ধুর বাড়িতে। তারপর চলত অবিরাম আড্ডা আর গান!

    ২. নজরুলের লেখার জন্য কোনো বিশেষ পরিবেশ লাগত না। গাছতলায় বসে যেমন তিনি লিখতে পারতেন, তেমনি ঘরোয়া বৈঠকেও তাঁর ভেতর থেকে লেখা বের হয়ে আসত।

    ৩. নজরুল ইসলাম কোনো অনুষ্ঠানে গেলে ঝলমলে রঙিন পোশাক পরতেন। কেউ তাঁকে রঙিন পোশাক পরার কারণ জিজ্ঞাসা করলে বলতেন, রঙিন পোশাক পরি অনেক মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য। অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত তথ্য দিয়েছেন, নজরুল তাঁর ঝলমলে পোশাকের ব্যাপারে বলতেন, ‘আমার সম্ভ্রান্ত হওয়ার দরকার নেই। আমার তো মানুষকে বিভ্রান্ত করবার কথা!’

    ৪. নজরুলের পাঠাভ্যাস ছিল বহুমুখী। তিনি পবিত্র কোরআন, গীতা, বাইবেল, বেদ, ত্রিপিটক, মহাভারত, রামায়ণ যেমন পড়তেন, তেমন পড়তেন শেলি, কিটস, কার্ল মার্ক্স, ম্যাক্সিম গোর্কিসহ বিশ্বখ্যাত লেখকদের লেখা। রবীন্দ্রনাথের ‘গীতবিতান’-এর সব কটি গান মুখস্থ করে ফেলেছিলেন তিনি!

    ৫. বাংলা গানে নজরুলই একমাত্র ব‌্যক্তি, যিনি সব ধরনের বিষয় নিয়ে গান লিখেছেন। তাঁর গানের সংখ্যা অনেকে চার হাজার বললেও আসলে তিনি গান লিখেছিলেন প্রায় আট হাজারের মতো, যার অধিকাংশই সংরক্ষণ করা যায়নি।

    ৬. বাঙালি কবিদের মধ্যে নজরুলই ছিলেন সবচেয়ে বেশি রসিক। তাঁর কথায় হাসির ঢেউ উঠত। হিরণ্ময় ভট্টাচার্য ‘রসিক নজরুল’ নামে একটি বই লিখেছেন। যাঁরা বইটি পড়েননি, তাঁদের পক্ষে বোঝা কষ্টকর নজরুল কী পরিমাণ রসিক ছিলেন! একটা উদাহরণ দেওয়া যাক, একবার এক ভদ্রমহিলা নজরুলকে খুব স্মার্টলি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আপনি কি পানাসক্ত?’ নজরুল বললেন, ‘না, বেশ্যাসক্ত!’ কবির কথায় ভদ্রমহিলার মুখ কালো হয়ে গেল। আর তক্ষুনি ব্যাখ্যা করলেন নজরুল, ‘পান একটু বেশি খাই। তাই বেশ্যাসক্ত, অর্থাৎ বেশি+আসক্ত = বেশ্যাসক্ত!’

    ৭. নজরুলের প্রেমে পড়েননি, এমন পুরুষ কিংবা নারী খুঁজে পাওয়া ভার। তাঁর চরম শত্রুরাও তাঁর ভালোবাসার শক্তির কাছে হার মেনেছেন। কবি বুদ্ধদেব বসু নজরুলকে প্রথম দেখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে। তিনি লিখেছেন, ‘সেই প্রথম আমি দেখলাম নজরুলকে। এবং অন্য অনেকের মতো যথারীতি তাঁর প্রেমে পড়ে গেলাম!’ শুধু বুদ্ধদেব বসু নন, তাঁর স্ত্রী প্রতিভা বসুও নজরুলের প্রেমে পড়েছিলেন। সেই কাহিনি নিয়ে তিনি লিখেছেন ‘আয়না’ নামে একটি গল্প। কী অবাক কাণ্ড! স্বামী-স্ত্রী দুজনেই একই লেখকের প্রেমে হাবুডুবু খেয়েছেন!

    ৮. কাজী নজরুল ইসলাম প্রচুর পান ও চা খেতেন। লিখতে বসার আগে পর্যাপ্ত পরিমাণ চা আর এক থালা পান নিয়ে বসতেন তিনি। পান শেষ করে চা, এরপর আবার চা শেষ করে পান খেতেন। তিনি বলতেন, ‘লেখক যদি হতে চান/ লাখ পেয়ালা চা খান!’

    ৯. নজরুল ছিলেন সত্যিকারের হস্তরেখা বিশারদ। তিনি অনেকের হাত দেখে যা বলতেন, তা-ই ঘটতে দেখা গেছে। একবার এক লোককে বললেন, আপনার বিদেশযাত্রা আছে, লোকটি সত্যিই কয়েক দিনের মধ‌্যে বিদেশ চলে গেল! আরেকজনকে বললেন, ‘আপনি পৃথিবীর বাইরে চলে যেতে পারেন।’ পরে ওই লোকটির মৃত্যু ঘটেছিল!

    ১০. মাঝেমধ্যে রাগান্বিত হলে নজরুল তাঁর সামনে যদি কোনো বই-খাতা পেতেন বা কাগজ পেতেন, তা ছিঁড়ে কুচি কুচি করে ফেলতেন।

    ১১. অর্থের ব্যাপারে নজরুল ছিলেন ভয়াবহ বেহিসাবি। হাতে টাকা এলেই তা বন্ধুবান্ধব নিয়ে আমোদ-ফুর্তি করে শেষ করে দিতেন। আর বলতেন, ‘আমি আমার হাতের টাকা বন্ধুদের জন্য খরচ করছি। আর যখন ওদের টাকা হবে ওরাও আমার জন্য খরচ করবে, চিন্তার কোনো কারণ নেই।’

    ১২. নজরুল তাঁর দুই পুত্রের ডাকনাম সানি (কাজী সব্যসাচী) আর নিনি (কাজী অনিরুদ্ধ) রেখেছিলেন তাঁর দুই প্রিয় মানুষ সান ইয়াত-সেন ও লেনিনের নামানুসারে।

    ১৩. নজরুল তাঁর সন্তানদের খুবই ভালোবাসতেন। এমনকি তিনি তাঁদের নিজ হাতে খাওয়াতেন আর ছড়া কাটতেন, ‘সানি-নিনি দুই ভাই/ ব্যাঙ মারে ঠুই ঠাই।’ কিংবা ‘তোমার সানি যুদ্ধে যাবে মুখটি করে চাঁদপানা/ কোল-ন্যাওটা তোমার নিনি বোমার ভয়ে আধখানা।’

    ১৪. নজরুল ছিলেন সত্যিকারের জনদরদি মানুষ। একটি ঘটনা দিয়ে তার প্রমাণ দেওয়া যেতে পারে। দক্ষিণ কলকাতার এক দরিদ্র হিন্দু মেয়ের বিবাহ। কোনোরকমে কন্যা বিদায়ের আয়োজন চলছে। নজরুল খবরটি পেলেন। তিনি দ্রুত বাজারে গেলেন। এক হিন্দু বন্ধুকে নিয়ে বিয়ের বাজার করলেন। তারপর ধুমধাম করে মেয়েটির বিয়ে হলো। মেয়ের বাবা নজরুলকে প্রণাম করে কাঁদতে কাঁদতে বললেন, ‘আমরা আপনাকে ভুলব না কোনো দিন।’ এমনই ছিলেন কবি। তাঁর বাড়িতে সাঁওতাল, গারো, কোল—সবাই দল বেঁধে আসতেন। আপ্যায়িত হতেন উৎসবসহকারে।

    ১৫. নজরুল কবিতা ও গানের স্বত্ব বিক্রি করে উন্নত মানের একটি ক্রাইসলার গাড়ি কিনতে পেরেছিলেন। এই গাড়ি ছিল সেই সময়ের সবচেয়ে বিলাসবহুল ও দামি।

    ১৬. নজরুল ট্রেনের প্রথম শ্রেণির কামরা ভাড়া করে মাঝেমধ্যে প্রমোদভ্রমণে যেতেন।

    ১৭. নজরুলের দৃষ্টিশক্তি ছিল অসামান্য। তিনি গভীর অন্ধকারেও বহুদূরের কোনো জিনিস স্পষ্ট দেখতে পেতেন।

    ১৮. নজরুল ছিলেন অসম্ভব রকমের ক্রীড়াপ্রেমী। সময় পেলেই তিনি ফুটবল খেলা দেখতে স্টেডিয়ামে ছুটতেন বন্ধুবান্ধব নিয়ে। যেদিন বাড়ি থেকে সোজা খেলা দেখতে যেতেন, সেদিন দুই পুত্র সানি আর নিনিকে সঙ্গে নিতেন। একবার খেলা দেখতে গেছেন। স্টেডিয়ামে পাশে বসে আছেন হুমায়ূন কবির। খেলা ভাঙার পর ভিড়ের মধ্যে দুই পুত্র খানিকটা আড়ালে চলে গেল। হঠাৎ পেছন থেকে নজরুলের হাঁকডাক শোনা গেল, ‘সানি কোথায়? নিনি কোথায়?’ মাঠসুদ্ধ লোক হাঁ হয়ে নজরুলকে দেখছে। এরই মধ্যে দুই পুত্রকে ঠেসে ধরে ট্যাক্সি করে বাড়ি নিয়ে এসে তিনি স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেন।

    ১৯. নজরুল বেশ দক্ষ দাবাড়ু ছিলেন। যেদিন বিশেষ কোনো কাজ থাকত না, সেদিন তিনি দাবা খেলতেন। খেলায় এমন মগ্ন হতেন যে খাওয়া-নাওয়ার খেয়ালও থাকত না। মাঝেমধ্যে নজরুলের বাড়িতে দাবার আসর বসাতে আসতেন কাজী মোহাতার হোসেন ও হেম সোম।

    ২০. কলকাতায় নজরুলের তিনতলা বাড়ির সামনে ছিল একটা ন্যাড়া মাঠ। খেলা নিয়ে বহু কাণ্ড ঘটেছে ওই মাঠে। একবার জোর ক্রিকেট খেলা চলছে। নজরুল গ্যালারি অর্থাৎ বারান্দায় দাঁড়িয়ে খেলারত তাঁর দুই পুত্রকে জোর উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন। এর মধ্যে বড় পুত্র সানি এল ব্যাট করতে। প্রথম বলেই ছয়! নজরুলের সে কি দাপাদাপি! ঠিক পরের বল আসার আগে তিনি চিৎকার করে বলে উঠলেন, ‘সানি, ওই রকম আরেকটা মার।’ ব্যস বাবার কথায় উত্তেজিত হয়ে দিগ্‌বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে ব্যাট চালাল পুত্র। ব্যাট অবশ্য বলে লাগল না। লাগল উইকেটকিপারের চোয়ালে! বেশ রক্তারক্তি অবস্থা! অবশেষে খেলা বন্ধ করা হলো।

    এমনই নানা রঙের মানুষ ছিলেন নজরুল। যাঁর জীবনে দুঃখ-কষ্টের অভাব ছিল না, আবার রং-রূপেরও অভাব ছিল না। পৃথিবীর খুব কম মানুষই বোধ হয় এমন মহাজীবনের অধিকারী হন। বুদ্ধদেব বসু যথার্থই বলেছিলেন, ‘কণ্ঠে তাঁর হাসি, কণ্ঠে তাঁর গান, প্রাণে তাঁর অফুরান আনন্দ—সব মিলিয়ে মনোলুণ্ঠনকারী এক মানুষ।’

    সংগৃহীত
    #nonflowers
    #everyonehighlightsfollowers
    #Bmw #foryou #karimascreation
    কাজী নজরুল সম্পর্কে যে ২০টি তথ্য আপনি না-ও জেনে থাকতে পারেন। কাজী নজরুল ইসলামের জীবন ছিল বিচিত্র আর বহুবর্ণিল। তাঁর সেই জীবনের কতটুকুই-বা আমরা জানি? আজ নজরুলজয়ন্তীতে নজরুল-গবেষকদের লেখা বিভিন্ন বই ও পত্রিকা ঘেঁটে এখানে বিদ্রোহী কবি-সম্পর্কিত এমন ২০টি তথ্য তুলে ধরা হলো, যেগুলো আপনি না-ও জেনে থাকতে পারেন! 🌹১. নজরুলের জীবন কোনো নিয়মের জালে আটকা ছিল না। যখন যা ভালো লাগত, তিনি তা-ই করতেন। দিন নেই, রাত নেই হই হই রব তুলে উঠে পড়তেন কোনো বন্ধুর বাড়িতে। তারপর চলত অবিরাম আড্ডা আর গান! 🌹২. নজরুলের লেখার জন্য কোনো বিশেষ পরিবেশ লাগত না। গাছতলায় বসে যেমন তিনি লিখতে পারতেন, তেমনি ঘরোয়া বৈঠকেও তাঁর ভেতর থেকে লেখা বের হয়ে আসত। 🌹৩. নজরুল ইসলাম কোনো অনুষ্ঠানে গেলে ঝলমলে রঙিন পোশাক পরতেন। কেউ তাঁকে রঙিন পোশাক পরার কারণ জিজ্ঞাসা করলে বলতেন, রঙিন পোশাক পরি অনেক মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য। অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত তথ্য দিয়েছেন, নজরুল তাঁর ঝলমলে পোশাকের ব্যাপারে বলতেন, ‘আমার সম্ভ্রান্ত হওয়ার দরকার নেই। আমার তো মানুষকে বিভ্রান্ত করবার কথা!’ 🌹৪. নজরুলের পাঠাভ্যাস ছিল বহুমুখী। তিনি পবিত্র কোরআন, গীতা, বাইবেল, বেদ, ত্রিপিটক, মহাভারত, রামায়ণ যেমন পড়তেন, তেমন পড়তেন শেলি, কিটস, কার্ল মার্ক্স, ম্যাক্সিম গোর্কিসহ বিশ্বখ্যাত লেখকদের লেখা। রবীন্দ্রনাথের ‘গীতবিতান’-এর সব কটি গান মুখস্থ করে ফেলেছিলেন তিনি! 🌹৫. বাংলা গানে নজরুলই একমাত্র ব‌্যক্তি, যিনি সব ধরনের বিষয় নিয়ে গান লিখেছেন। তাঁর গানের সংখ্যা অনেকে চার হাজার বললেও আসলে তিনি গান লিখেছিলেন প্রায় আট হাজারের মতো, যার অধিকাংশই সংরক্ষণ করা যায়নি। 🌹৬. বাঙালি কবিদের মধ্যে নজরুলই ছিলেন সবচেয়ে বেশি রসিক। তাঁর কথায় হাসির ঢেউ উঠত। হিরণ্ময় ভট্টাচার্য ‘রসিক নজরুল’ নামে একটি বই লিখেছেন। যাঁরা বইটি পড়েননি, তাঁদের পক্ষে বোঝা কষ্টকর নজরুল কী পরিমাণ রসিক ছিলেন! একটা উদাহরণ দেওয়া যাক, একবার এক ভদ্রমহিলা নজরুলকে খুব স্মার্টলি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আপনি কি পানাসক্ত?’ নজরুল বললেন, ‘না, বেশ্যাসক্ত!’ কবির কথায় ভদ্রমহিলার মুখ কালো হয়ে গেল। আর তক্ষুনি ব্যাখ্যা করলেন নজরুল, ‘পান একটু বেশি খাই। তাই বেশ্যাসক্ত, অর্থাৎ বেশি+আসক্ত = বেশ্যাসক্ত!’ 🌹৭. নজরুলের প্রেমে পড়েননি, এমন পুরুষ কিংবা নারী খুঁজে পাওয়া ভার। তাঁর চরম শত্রুরাও তাঁর ভালোবাসার শক্তির কাছে হার মেনেছেন। কবি বুদ্ধদেব বসু নজরুলকে প্রথম দেখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে। তিনি লিখেছেন, ‘সেই প্রথম আমি দেখলাম নজরুলকে। এবং অন্য অনেকের মতো যথারীতি তাঁর প্রেমে পড়ে গেলাম!’ শুধু বুদ্ধদেব বসু নন, তাঁর স্ত্রী প্রতিভা বসুও নজরুলের প্রেমে পড়েছিলেন। সেই কাহিনি নিয়ে তিনি লিখেছেন ‘আয়না’ নামে একটি গল্প। কী অবাক কাণ্ড! স্বামী-স্ত্রী দুজনেই একই লেখকের প্রেমে হাবুডুবু খেয়েছেন! 🌹৮. কাজী নজরুল ইসলাম প্রচুর পান ও চা খেতেন। লিখতে বসার আগে পর্যাপ্ত পরিমাণ চা আর এক থালা পান নিয়ে বসতেন তিনি। পান শেষ করে চা, এরপর আবার চা শেষ করে পান খেতেন। তিনি বলতেন, ‘লেখক যদি হতে চান/ লাখ পেয়ালা চা খান!’ 🌹৯. নজরুল ছিলেন সত্যিকারের হস্তরেখা বিশারদ। তিনি অনেকের হাত দেখে যা বলতেন, তা-ই ঘটতে দেখা গেছে। একবার এক লোককে বললেন, আপনার বিদেশযাত্রা আছে, লোকটি সত্যিই কয়েক দিনের মধ‌্যে বিদেশ চলে গেল! আরেকজনকে বললেন, ‘আপনি পৃথিবীর বাইরে চলে যেতে পারেন।’ পরে ওই লোকটির মৃত্যু ঘটেছিল! 🌹১০. মাঝেমধ্যে রাগান্বিত হলে নজরুল তাঁর সামনে যদি কোনো বই-খাতা পেতেন বা কাগজ পেতেন, তা ছিঁড়ে কুচি কুচি করে ফেলতেন। 🌹১১. অর্থের ব্যাপারে নজরুল ছিলেন ভয়াবহ বেহিসাবি। হাতে টাকা এলেই তা বন্ধুবান্ধব নিয়ে আমোদ-ফুর্তি করে শেষ করে দিতেন। আর বলতেন, ‘আমি আমার হাতের টাকা বন্ধুদের জন্য খরচ করছি। আর যখন ওদের টাকা হবে ওরাও আমার জন্য খরচ করবে, চিন্তার কোনো কারণ নেই।’ 🌹১২. নজরুল তাঁর দুই পুত্রের ডাকনাম সানি (কাজী সব্যসাচী) আর নিনি (কাজী অনিরুদ্ধ) রেখেছিলেন তাঁর দুই প্রিয় মানুষ সান ইয়াত-সেন ও লেনিনের নামানুসারে। 🌹১৩. নজরুল তাঁর সন্তানদের খুবই ভালোবাসতেন। এমনকি তিনি তাঁদের নিজ হাতে খাওয়াতেন আর ছড়া কাটতেন, ‘সানি-নিনি দুই ভাই/ ব্যাঙ মারে ঠুই ঠাই।’ কিংবা ‘তোমার সানি যুদ্ধে যাবে মুখটি করে চাঁদপানা/ কোল-ন্যাওটা তোমার নিনি বোমার ভয়ে আধখানা।’ 🌹১৪. নজরুল ছিলেন সত্যিকারের জনদরদি মানুষ। একটি ঘটনা দিয়ে তার প্রমাণ দেওয়া যেতে পারে। দক্ষিণ কলকাতার এক দরিদ্র হিন্দু মেয়ের বিবাহ। কোনোরকমে কন্যা বিদায়ের আয়োজন চলছে। নজরুল খবরটি পেলেন। তিনি দ্রুত বাজারে গেলেন। এক হিন্দু বন্ধুকে নিয়ে বিয়ের বাজার করলেন। তারপর ধুমধাম করে মেয়েটির বিয়ে হলো। মেয়ের বাবা নজরুলকে প্রণাম করে কাঁদতে কাঁদতে বললেন, ‘আমরা আপনাকে ভুলব না কোনো দিন।’ এমনই ছিলেন কবি। তাঁর বাড়িতে সাঁওতাল, গারো, কোল—সবাই দল বেঁধে আসতেন। আপ্যায়িত হতেন উৎসবসহকারে। 🌹১৫. নজরুল কবিতা ও গানের স্বত্ব বিক্রি করে উন্নত মানের একটি ক্রাইসলার গাড়ি কিনতে পেরেছিলেন। এই গাড়ি ছিল সেই সময়ের সবচেয়ে বিলাসবহুল ও দামি। 🌹১৬. নজরুল ট্রেনের প্রথম শ্রেণির কামরা ভাড়া করে মাঝেমধ্যে প্রমোদভ্রমণে যেতেন। 🌹১৭. নজরুলের দৃষ্টিশক্তি ছিল অসামান্য। তিনি গভীর অন্ধকারেও বহুদূরের কোনো জিনিস স্পষ্ট দেখতে পেতেন। 🌹১৮. নজরুল ছিলেন অসম্ভব রকমের ক্রীড়াপ্রেমী। সময় পেলেই তিনি ফুটবল খেলা দেখতে স্টেডিয়ামে ছুটতেন বন্ধুবান্ধব নিয়ে। যেদিন বাড়ি থেকে সোজা খেলা দেখতে যেতেন, সেদিন দুই পুত্র সানি আর নিনিকে সঙ্গে নিতেন। একবার খেলা দেখতে গেছেন। স্টেডিয়ামে পাশে বসে আছেন হুমায়ূন কবির। খেলা ভাঙার পর ভিড়ের মধ্যে দুই পুত্র খানিকটা আড়ালে চলে গেল। হঠাৎ পেছন থেকে নজরুলের হাঁকডাক শোনা গেল, ‘সানি কোথায়? নিনি কোথায়?’ মাঠসুদ্ধ লোক হাঁ হয়ে নজরুলকে দেখছে। এরই মধ্যে দুই পুত্রকে ঠেসে ধরে ট্যাক্সি করে বাড়ি নিয়ে এসে তিনি স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেন। 🌹১৯. নজরুল বেশ দক্ষ দাবাড়ু ছিলেন। যেদিন বিশেষ কোনো কাজ থাকত না, সেদিন তিনি দাবা খেলতেন। খেলায় এমন মগ্ন হতেন যে খাওয়া-নাওয়ার খেয়ালও থাকত না। মাঝেমধ্যে নজরুলের বাড়িতে দাবার আসর বসাতে আসতেন কাজী মোহাতার হোসেন ও হেম সোম। 🌹২০. কলকাতায় নজরুলের তিনতলা বাড়ির সামনে ছিল একটা ন্যাড়া মাঠ। খেলা নিয়ে বহু কাণ্ড ঘটেছে ওই মাঠে। একবার জোর ক্রিকেট খেলা চলছে। নজরুল গ্যালারি অর্থাৎ বারান্দায় দাঁড়িয়ে খেলারত তাঁর দুই পুত্রকে জোর উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন। এর মধ্যে বড় পুত্র সানি এল ব্যাট করতে। প্রথম বলেই ছয়! নজরুলের সে কি দাপাদাপি! ঠিক পরের বল আসার আগে তিনি চিৎকার করে বলে উঠলেন, ‘সানি, ওই রকম আরেকটা মার।’ ব্যস বাবার কথায় উত্তেজিত হয়ে দিগ্‌বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে ব্যাট চালাল পুত্র। ব্যাট অবশ্য বলে লাগল না। লাগল উইকেটকিপারের চোয়ালে! বেশ রক্তারক্তি অবস্থা! অবশেষে খেলা বন্ধ করা হলো। এমনই নানা রঙের মানুষ ছিলেন নজরুল। যাঁর জীবনে দুঃখ-কষ্টের অভাব ছিল না, আবার রং-রূপেরও অভাব ছিল না। পৃথিবীর খুব কম মানুষই বোধ হয় এমন মহাজীবনের অধিকারী হন। বুদ্ধদেব বসু যথার্থই বলেছিলেন, ‘কণ্ঠে তাঁর হাসি, কণ্ঠে তাঁর গান, প্রাণে তাঁর অফুরান আনন্দ—সব মিলিয়ে মনোলুণ্ঠনকারী এক মানুষ।’ সংগৃহীত #nonflowers #everyonehighlightsfollowers #Bmw #foryou #karimascreation
    0 Comments 0 Shares 467 Views
  • বহুদিন ধরে মনে করা হতো, প্রাইমেট সমাজে ‘আলফা মেল’ বা শক্তিশালী পুরুষ সদস্যরাই কর্তৃত্ব রাখে। তবে সাম্প্রতিক এক গবেষণা এই ধারণাকে ভুল প্রমাণ করেছে। Proceedings of the National Academy of Sciences–এ প্রকাশিত গবেষণায় বিজ্ঞানীরা ১২১ প্রজাতির ২৫৩টি প্রাইমেট গোষ্ঠীর সামাজিক কাঠামো বিশ্লেষণ করেন।

    ফলাফলে দেখা যায়, মাত্র ১৭% গোষ্ঠীতে পুরুষ আধিপত্য বিদ্যমান, যেখানে ১৩% ক্ষেত্রে আধিপত্য ছিল নারীর। বাকি প্রায় ৭০% গোষ্ঠীতেই সামাজিক ক্ষমতা সমভাগ ছিল অথবা নির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা যায়নি এমন। পুরুষ আধিপত্য মূলত দেখা যায় যেসব প্রজাতিতে পুরুষরা শারীরিকভাবে বড় এবং নারীদের তুলনায় সংখ্যায় কম—যেমন গরিলা বা চিম্পাঞ্জি। অন্যদিকে, বোনোবোর মতো প্রজাতিতে নারীরাই প্রভাবশালী। এদের সমাজে নারীরা একে অপরকে সহযোগিতা করে এবং যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে সংঘাত নিয়ন্ত্রণ করে।

    এই গবেষণায় মানুষের সমাজ নিয়েও গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত রয়েছে। আধুনিক সমাজে ‘আলফা মেল’ ধারণাটি অনেকটাই সাংস্কৃতিক নির্মাণ, যার সঙ্গে প্রকৃতিবিজ্ঞানগত ভিত্তি মেলে না। এই গবেষণা প্রমাণ করে যে, নেতৃত্ব ও আধিপত্য কেবল শক্তির উপর নির্ভর করে না—সামাজিক সহযোগিতা ও পরিবেশও বড় ভূমিকা রাখে।
    বহুদিন ধরে মনে করা হতো, প্রাইমেট সমাজে ‘আলফা মেল’ বা শক্তিশালী পুরুষ সদস্যরাই কর্তৃত্ব রাখে। তবে সাম্প্রতিক এক গবেষণা এই ধারণাকে ভুল প্রমাণ করেছে। Proceedings of the National Academy of Sciences–এ প্রকাশিত গবেষণায় বিজ্ঞানীরা ১২১ প্রজাতির ২৫৩টি প্রাইমেট গোষ্ঠীর সামাজিক কাঠামো বিশ্লেষণ করেন। ফলাফলে দেখা যায়, মাত্র ১৭% গোষ্ঠীতে পুরুষ আধিপত্য বিদ্যমান, যেখানে ১৩% ক্ষেত্রে আধিপত্য ছিল নারীর। বাকি প্রায় ৭০% গোষ্ঠীতেই সামাজিক ক্ষমতা সমভাগ ছিল অথবা নির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা যায়নি এমন। পুরুষ আধিপত্য মূলত দেখা যায় যেসব প্রজাতিতে পুরুষরা শারীরিকভাবে বড় এবং নারীদের তুলনায় সংখ্যায় কম—যেমন গরিলা বা চিম্পাঞ্জি। অন্যদিকে, বোনোবোর মতো প্রজাতিতে নারীরাই প্রভাবশালী। এদের সমাজে নারীরা একে অপরকে সহযোগিতা করে এবং যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে সংঘাত নিয়ন্ত্রণ করে। এই গবেষণায় মানুষের সমাজ নিয়েও গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত রয়েছে। আধুনিক সমাজে ‘আলফা মেল’ ধারণাটি অনেকটাই সাংস্কৃতিক নির্মাণ, যার সঙ্গে প্রকৃতিবিজ্ঞানগত ভিত্তি মেলে না। এই গবেষণা প্রমাণ করে যে, নেতৃত্ব ও আধিপত্য কেবল শক্তির উপর নির্ভর করে না—সামাজিক সহযোগিতা ও পরিবেশও বড় ভূমিকা রাখে।
    0 Comments 0 Shares 134 Views
  • সম্প্রতি প্রকাশিত একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রথমবারের মতো জানা গেছে, হাসপাতাল-সম্পর্কিত মারাত্মক সংক্রমণের জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়া 'Pseudomonas aeruginosa' মেডিকেল প্লাস্টিক খেয়ে বেঁচে থাকতে পারে। গবেষণাটি ৭ মে,২০২৫ ‘Cell Reports’ নামক জার্নালে প্রকাশিত হয়।

    Pseudomonas aeruginosa প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে প্রায় ৫.৬ লক্ষ মৃত্যুর জন্য দায়ী। এটি ফুসফুস, মূত্রনালী ও রক্তে সংক্রমণ ঘটাতে পারে এবং সাধারণত হাসপাতালের মতো জীবাণুমুক্ত পরিবেশেই বেশি দেখা যায়। এই জীবাণুটি খুব সহজে বিভিন্ন ওষুধের প্রতিরোধ গড়ে তোলে, ফলে একে সুপারবাগ বলা হয়।গবেষকরা এক রোগীর ক্ষত থেকে সংগৃহীত এই ব্যাকটেরিয়ার একটি স্ট্রেইন বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, এটি জৈবভাবে ভেঙে পড়া প্লাস্টিক (biodegradable plastic) যেমন স্যুচার (সেলাইয়ের সুতা), স্টেন্ট ও ইমপ্ল্যান্টস-এর মতো মেডিকেল সামগ্রী খেয়ে বেঁচে থাকতে সক্ষম। এটি শুধুমাত্র এর টিকে থাকার ক্ষমতা বাড়ায় না, বরং রোগীর শরীরে বা অস্ত্রোপচারের পর বসানো ডিভাইসের উপর দীর্ঘসময় সক্রিয় থেকে মারাত্মক সংক্রমণ ঘটাতে পারে।

    এই আবিষ্কার চিকিৎসা বিজ্ঞানে নতুন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে – আমরা যেসব মেডিকেল উপকরণকে নিরাপদ মনে করি, সেগুলোর উপরে ব্যাকটেরিয়া বেঁচে থাকতে পারলে সংক্রমণের ঝুঁকি বহুগুণে বেড়ে যেতে পারে। ফলে ভবিষ্যতে মেডিকেল ডিভাইস নির্মাতাদের আরও নিরাপদ ও ব্যাকটেরিয়ারোধী উপকরণ ব্যবহারের চিন্তা করতে হতে পারে।এই গবেষণা আমাদের ভীত করে দেয় যে জীবাণুর অভিযোজন ক্ষমতা কতটা আশ্চর্যজনক এবং বিপজ্জনক হতে পারে। হাসপাতালের সংক্রমণ রোধে এখন আরও সতর্ক পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
    সম্প্রতি প্রকাশিত একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রথমবারের মতো জানা গেছে, হাসপাতাল-সম্পর্কিত মারাত্মক সংক্রমণের জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়া 'Pseudomonas aeruginosa' মেডিকেল প্লাস্টিক খেয়ে বেঁচে থাকতে পারে। গবেষণাটি ৭ মে,২০২৫ ‘Cell Reports’ নামক জার্নালে প্রকাশিত হয়। Pseudomonas aeruginosa প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে প্রায় ৫.৬ লক্ষ মৃত্যুর জন্য দায়ী। এটি ফুসফুস, মূত্রনালী ও রক্তে সংক্রমণ ঘটাতে পারে এবং সাধারণত হাসপাতালের মতো জীবাণুমুক্ত পরিবেশেই বেশি দেখা যায়। এই জীবাণুটি খুব সহজে বিভিন্ন ওষুধের প্রতিরোধ গড়ে তোলে, ফলে একে সুপারবাগ বলা হয়।গবেষকরা এক রোগীর ক্ষত থেকে সংগৃহীত এই ব্যাকটেরিয়ার একটি স্ট্রেইন বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, এটি জৈবভাবে ভেঙে পড়া প্লাস্টিক (biodegradable plastic) যেমন স্যুচার (সেলাইয়ের সুতা), স্টেন্ট ও ইমপ্ল্যান্টস-এর মতো মেডিকেল সামগ্রী খেয়ে বেঁচে থাকতে সক্ষম। এটি শুধুমাত্র এর টিকে থাকার ক্ষমতা বাড়ায় না, বরং রোগীর শরীরে বা অস্ত্রোপচারের পর বসানো ডিভাইসের উপর দীর্ঘসময় সক্রিয় থেকে মারাত্মক সংক্রমণ ঘটাতে পারে। এই আবিষ্কার চিকিৎসা বিজ্ঞানে নতুন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে – আমরা যেসব মেডিকেল উপকরণকে নিরাপদ মনে করি, সেগুলোর উপরে ব্যাকটেরিয়া বেঁচে থাকতে পারলে সংক্রমণের ঝুঁকি বহুগুণে বেড়ে যেতে পারে। ফলে ভবিষ্যতে মেডিকেল ডিভাইস নির্মাতাদের আরও নিরাপদ ও ব্যাকটেরিয়ারোধী উপকরণ ব্যবহারের চিন্তা করতে হতে পারে।এই গবেষণা আমাদের ভীত করে দেয় যে জীবাণুর অভিযোজন ক্ষমতা কতটা আশ্চর্যজনক এবং বিপজ্জনক হতে পারে। হাসপাতালের সংক্রমণ রোধে এখন আরও সতর্ক পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
    0 Comments 0 Shares 131 Views
  • চীনের এক শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি প্রোগ্রামে সুযোগ পেয়েছে মানুষের মতো দেখতে একটি রোবট। সাংহাই থিয়েটার অ্যাকাডেমি (STA)-তে নাটক ও চলচ্চিত্র বিষয়ে ডক্টরেট করছে 'সুয়েবা ০১' নামের এই মানবাকৃতির রোবট।

    এর বিশেষত্ব হলো, সিলিকন ত্বকে মানুষের মতো আবেগ ও অভিব্যক্তি ফুটিয়ে তোলা যায়। এটি শুধু হাঁটতে নয়, মানুষের সঙ্গে ম্যান্ডারিন ভাষায় কথাও বলতে পারে। আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে এটি অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সাথে ক্যাম্পাসে ক্লাস শুরু করবে। চীনের ঐতিহ্যবাহী অপেরার ওপর গবেষণা করবে রোবটটি।
    চীনের এক শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি প্রোগ্রামে সুযোগ পেয়েছে মানুষের মতো দেখতে একটি রোবট। সাংহাই থিয়েটার অ্যাকাডেমি (STA)-তে নাটক ও চলচ্চিত্র বিষয়ে ডক্টরেট করছে 'সুয়েবা ০১' নামের এই মানবাকৃতির রোবট। এর বিশেষত্ব হলো, সিলিকন ত্বকে মানুষের মতো আবেগ ও অভিব্যক্তি ফুটিয়ে তোলা যায়। এটি শুধু হাঁটতে নয়, মানুষের সঙ্গে ম্যান্ডারিন ভাষায় কথাও বলতে পারে। আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে এটি অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সাথে ক্যাম্পাসে ক্লাস শুরু করবে। চীনের ঐতিহ্যবাহী অপেরার ওপর গবেষণা করবে রোবটটি।
    0 Comments 0 Shares 103 Views
  • রাগ শুধু মনকে নয়, শরীরকেও কষ্ট দেয়। আবেগের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের শরীরের ভেতর নানা জৈবিক পরিবর্তন ঘটে। আপনি যদি মাত্র এক মিনিটও প্রচণ্ড রাগ করে থাকেন তাহলে তখনই আপনার শরীরে স্ট্রেস হরমোন যেমন কর্টিসল হঠাৎ বেড়ে যায়। হার্টবিট দ্রুত হয়ে যায়, শরীরের ভেতরে প্রদাহের প্রক্রিয়া বাড়তে শুরু করে। এর ফলে আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউন সিস্টেম কয়েক ঘণ্টার জন্য দুর্বল হয়ে পড়ে। তখন আপনার শরীর ভাইরাস বা জীবাণুর আক্রমণের জন্য আরও অসহায় হয়ে যায়।

    সমস্যা এখানেই শেষ হয় না। যদি আপনি প্রায়ই রেগে যান বা দীর্ঘদিন ধরে চাপ আর রাগ নিজের ভেতরে জমিয়ে রাখেন, সেটা আপনার জন্য আরও বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, দীর্ঘমেয়াদি রাগ আর মানসিক চাপ হার্টের অসুখ, হজমের সমস্যা, উদ্বেগ এমনকি ক্যানসারের ঝুঁকি পর্যন্ত বাড়াতে পারে। কিন্তু সুখবর হলো—রাগ নিয়ন্ত্রণ করা শিখলে শরীরও সুস্থ থাকবে। গবেষণায় বলা হয়েছে, কিছু সহজ অভ্যাস যেমন প্রতিদিন কিছুক্ষণ মননশীলতা বা mindfulness অনুশীলন, গভীর শ্বাস নেওয়া বা নিয়মিত ব্যায়াম আপনার মনকে শান্ত করবে এবং শরীরের ভেতর থেকে ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করবে।

    তাই রেগে গিয়ে কিছু ভাঙচুর করার আগে বা চিৎকার করার আগে মনে রাখুন এই রাগ শুধু আপনার মেজাজ নষ্ট করছে না, আপনার শরীরের সুরক্ষা ব্যবস্থাকেও দুর্বল করে দিচ্ছে।
    রাগ শুধু মনকে নয়, শরীরকেও কষ্ট দেয়। আবেগের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের শরীরের ভেতর নানা জৈবিক পরিবর্তন ঘটে। আপনি যদি মাত্র এক মিনিটও প্রচণ্ড রাগ করে থাকেন তাহলে তখনই আপনার শরীরে স্ট্রেস হরমোন যেমন কর্টিসল হঠাৎ বেড়ে যায়। হার্টবিট দ্রুত হয়ে যায়, শরীরের ভেতরে প্রদাহের প্রক্রিয়া বাড়তে শুরু করে। এর ফলে আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউন সিস্টেম কয়েক ঘণ্টার জন্য দুর্বল হয়ে পড়ে। তখন আপনার শরীর ভাইরাস বা জীবাণুর আক্রমণের জন্য আরও অসহায় হয়ে যায়। সমস্যা এখানেই শেষ হয় না। যদি আপনি প্রায়ই রেগে যান বা দীর্ঘদিন ধরে চাপ আর রাগ নিজের ভেতরে জমিয়ে রাখেন, সেটা আপনার জন্য আরও বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, দীর্ঘমেয়াদি রাগ আর মানসিক চাপ হার্টের অসুখ, হজমের সমস্যা, উদ্বেগ এমনকি ক্যানসারের ঝুঁকি পর্যন্ত বাড়াতে পারে। কিন্তু সুখবর হলো—রাগ নিয়ন্ত্রণ করা শিখলে শরীরও সুস্থ থাকবে। গবেষণায় বলা হয়েছে, কিছু সহজ অভ্যাস যেমন প্রতিদিন কিছুক্ষণ মননশীলতা বা mindfulness অনুশীলন, গভীর শ্বাস নেওয়া বা নিয়মিত ব্যায়াম আপনার মনকে শান্ত করবে এবং শরীরের ভেতর থেকে ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করবে। তাই রেগে গিয়ে কিছু ভাঙচুর করার আগে বা চিৎকার করার আগে মনে রাখুন এই রাগ শুধু আপনার মেজাজ নষ্ট করছে না, আপনার শরীরের সুরক্ষা ব্যবস্থাকেও দুর্বল করে দিচ্ছে।
    Love
    Wow
    2
    0 Comments 0 Shares 208 Views
  • আপনার গবেষণা পদ্ধতির সাতকাহন: লিনিয়ার রিগ্রেশন
    (Linear Regression in Research methodology)

    ধরুন, আপনি অনেকগুলো কাঁচামাল জোগাড় করেছেন। এখন সেই কাঁচামাল দিয়ে কী বানাবেন, কীভাবে বানাবেন, সেটাই হলো বিশ্লেষণের কাজ। আর এই বিশ্লেষণের দুনিয়ায় একটা দারুণ 'ম্যাজিক টুল' আছে, যার নাম লিনিয়ার রিগ্রেশন। এর নামটা একটু জটিল শোনালেও, এর কাজটা কিন্তু খুবই সহজ আর কাজের। চলুন, আজ আমরা এই লিনিয়ার রিগ্রেশনের আদ্যোপান্ত জেনে নিই, একদম A2Z!

    লিনিয়ার রিগ্রেশন আসলে কী? (What is Linear Regression?)
    আচ্ছা, আপনি কি কখনো ভেবে দেখেছেন, একজন শিক্ষার্থী যত বেশি সময় পড়াশোনা করে, তার পরীক্ষার নম্বর তত বাড়ে কেন? অথবা, একটি পণ্যের দাম বাড়লে তার বিক্রি কমে যায় কেন? এই 'কেন' আর 'কীভাবে'র সম্পর্কটা খুঁজে বের করার জন্যই লিনিয়ার রিগ্রেশনকে আমরা ব্যবহার করি।

    সহজ করে বললে, লিনিয়ার রিগ্রেশন হলো এমন একটি পরিসংখ্যানগত কৌশল, যা দুটি বা তার বেশি বিষয়ের মধ্যে একটা সরলরেখার মতো সম্পর্ক খুঁজে বের করতে সাহায্য করে। এটি অনেকটা একটা অদৃশ্য সুতো খুঁজে বের করার মতো, যা দুটি জিনিসকে একসঙ্গে বেঁধে রাখে। যেমন, পড়াশোনার সময় আর পরীক্ষার নম্বরের মধ্যে একটা সম্পর্ক আছে, তাই না? লিনিয়ার রিগ্রেশন সেই সম্পর্কটাকে একটা সরলরেখা দিয়ে প্রকাশ করে।

    এখানে দুটো গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় আছে, যাদেরকে আমরা 'চলক' (Variables) বলি:

    ১। স্বাধীন চলক (Independent Variable): এই হলো সেই 'কারণ' বা 'ইনপুট'। একে আপনি পরিবর্তন করতে পারেন, বা এটি নিজে নিজেই পরিবর্তিত হয় এবং অন্য কোনো কিছুকে প্রভাবিত করে। যেমন, পড়াশোনার সময়, বিজ্ঞাপনের খরচ, বা একটি বাড়ির আকার। ভাবুন তো, পড়াশোনার সময় বাড়লে বা কমলে পরীক্ষার নম্বরের ওপর একটা প্রভাব পড়ে, তাই না?

    ২। নির্ভরশীল চলক (Dependent Variable): আর এই হলো সেই 'ফলাফল' বা 'আউটপুট', যা স্বাধীন চলকের পরিবর্তনের কারণে প্রভাবিত হয়। যেমন, পরীক্ষার নম্বর, পণ্যের বিক্রি, বা বাড়ির দাম। এই চলকটি স্বাধীন চলকের উপর 'নির্ভর' করে।

    লিনিয়ার রিগ্রেশনের মূল লক্ষ্য হলো এই স্বাধীন ও নির্ভরশীল চলকের মধ্যে একটা গাণিতিক সম্পর্ক খুঁজে বের করা, যা দেখতে একটা সরলরেখার মতো। এই রেখার একটা সমীকরণ থাকে: Y=a+bX

    এখানে: Y হলো নির্ভরশীল চলক (ফলাফল): অর্থাৎ, আপনি যে জিনিসটা অনুমান করতে চান বা যার পরিবর্তন মাপতে চান।

    X হলো স্বাধীন চলক (কারণ): অর্থাৎ, যে জিনিসটা পরিবর্তনের কারণ হিসেবে কাজ করছে।

    a হলো ইন্টারসেপ্ট (Intercept): এটি অনেকটা গ্রাফের Y-অক্ষকে রেখাটি যেখানে ছেদ করে সেই বিন্দু। সহজ ভাষায়, যখন স্বাধীন চলক (X) এর মান শূন্য হয়, তখন নির্ভরশীল চলক (Y) এর আনুমানিক মান কত হবে, সেটাই a। যেমন, যদি আপনি একদমই পড়াশোনা না করেন (X=0), তাহলে আপনার পরীক্ষার নম্বর কত হতে পারে, তার একটা আনুমানিক ধারণা।

    b হলো স্লপ (Slope): এটি রেখার ঢাল বা খাড়া হওয়ার পরিমাণ নির্দেশ করে। এটি দেখায়, স্বাধীন চলক (X) এর মান যখন এক ইউনিট বাড়ে, তখন নির্ভরশীল চলক (Y) এর মান কতটুকু পরিবর্তন হয়। যেমন, যদি b এর মান ২ হয়, তার মানে পড়াশোনার সময় এক ঘণ্টা বাড়ালে পরীক্ষার নম্বর আনুমানিক ২ বাড়বে।

    কেন আমরা লিনিয়ার রিগ্রেশন ব্যবহার করি? (Why Use It?)

    এর প্রধান কাজ দুটো, যা গবেষণায় দারুণ কাজে আসে:
    A) সম্পর্ক বোঝা (Understanding Relationships): এটি আপনাকে বলে দেবে, আপনার চলকগুলোর মধ্যে আদৌ কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এবং সেই সম্পর্কটা কতটা শক্তিশালী। ধরুন, আপনি জানতে চান, বিজ্ঞাপনে খরচ বাড়ালে পণ্যের বিক্রি কি সত্যিই বাড়ে? যদি বাড়ে, তাহলে কতটা বাড়ে? লিনিয়ার রিগ্রেশন আপনাকে এই 'কতটা'র একটা সংখ্যাগত পরিমাপ দেবে।

    B) ভবিষ্যৎ অনুমান করা (Making Predictions): একবার সম্পর্কটা বুঝে গেলে, আমরা ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কিছু অনুমান করতে পারি। ধরুন, আপনি দেখলেন যে, তাপমাত্রা বাড়লে আইসক্রিমের বিক্রি বাড়ে। লিনিয়ার রিগ্রেশন আপনাকে একটি মডেল দেবে, যার মাধ্যমে আপনি হয়তো বলতে পারবেন, আগামী সপ্তাহে তাপমাত্রা যদি আরও বাড়ে, তাহলে আইসক্রিমের বিক্রি কেমন হতে পারে। এটি অনেকটা আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়ার মতো, যেখানে আমরা অতীতের ডেটা ব্যবহার করে ভবিষ্যতের একটা ধারণা পাই।

    লিনিয়ার রিগ্রেশন কীভাবে কাজ করে? (How Does It Work?)
    লিনিয়ার রিগ্রেশন কাজ করে একটা সরলরেখা ব্যবহার করে। ভাবুন, আপনার কাছে কিছু ডেটা পয়েন্ট আছে, যেমন গ্রাফ পেপারে ছড়ানো কিছু বিন্দু। লিনিয়ার রিগ্রেশনের কাজ হলো এই বিন্দুগুলোর মাঝখান দিয়ে এমন একটা সরলরেখা আঁকা, যা সব বিন্দু থেকে 'গড়ে' সবচেয়ে কম দূরত্বে থাকে। এই 'সবচেয়ে কম দূরত্ব' খুঁজে বের করার জন্য কিছু গাণিতিক হিসাব-নিকাশ করা হয়, যাকে আমরা 'এরর মিনিমাইজেশন' বা 'অবশিষ্ট কমানো' বলি। অর্থাৎ, ডেটা পয়েন্টগুলো থেকে রেখার যে দূরত্ব, সেই দূরত্বগুলোকে যতটা সম্ভব ছোট করা হয়, যাতে রেখাটি ডেটার 'প্রবণতা' বা 'ট্রেন্ড'কে সবচেয়ে ভালোভাবে দেখাতে পারে। এই রেখাটিই হলো আপনার রিগ্রেশন লাইন, যা আপনার ডেটার গল্পটা বলে।

    লিনিয়ার রিগ্রেশনের প্রকারভেদ (Types of Linear Regression)
    লিনিয়ার রিগ্রেশন মূলত দুটি প্রধান ধরনে বিভক্ত, নির্ভর করে আপনি কতগুলো স্বাধীন চলক ব্যবহার করছেন তার উপর:

    সাধারণ লিনিয়ার রিগ্রেশন (Simple Linear Regression): এখানে শুধু একটি স্বাধীন চলক এবং একটি নির্ভরশীল চলক থাকে।

    উদাহরণ: একজন ছাত্রের পড়াশোনার সময়ের (স্বাধীন চলক) সাথে তার পরীক্ষার নম্বরের (নির্ভরশীল চলক) সম্পর্ক। এখানে আপনি শুধু একটি কারণ (পড়াশোনার সময়) দিয়ে একটি ফলাফল (পরীক্ষার নম্বর) বোঝার চেষ্টা করছেন।

    মাল্টিপল লিনিয়ার রিগ্রেশন (Multiple Linear Regression): এখানে একাধিক স্বাধীন চলক এবং একটি নির্ভরশীল চলক থাকে।

    উদাহরণ: একটি বাড়ির দাম (নির্ভরশীল চলক) শুধু তার আকারের উপর নির্ভর করে না, বরং এলাকার অবস্থান, বাড়ির বয়স, রুমের সংখ্যা, বাথরুমের সংখ্যা – এই সবকিছুর উপর নির্ভর করে। মাল্টিপল রিগ্রেশন এই সব কারণ একসঙ্গে বিশ্লেষণ করে দেখায় যে, কোন কারণটি বাড়ির দামের উপর কতটা প্রভাব ফেলছে। এটি অনেকটা অনেকগুলো কারণ একসঙ্গে একটি ফলাফলের উপর কীভাবে প্রভাব ফেলে, তা দেখার মতো।

    কিছু জরুরি কথা (Key Concepts): অবশিষ্ট (Residuals): রিগ্রেশন রেখাটি সব ডেটা পয়েন্টের উপর দিয়ে যায় না, কিছু পয়েন্ট রেখার উপরে বা নিচে থাকে। এই ডেটা পয়েন্ট এবং রেখার মধ্যে যে দূরত্ব, সেটিই হলো অবশিষ্ট বা এরর (error)। এটি দেখায়, আমাদের মডেল কতটা নিখুঁতভাবে অনুমান করতে পারছে। যত কম অবশিষ্ট, মডেল তত ভালো।

    সহসম্পর্ক (Correlation): এটি লিনিয়ার রিগ্রেশনের সাথে জড়িত একটি ধারণা। সহসম্পর্ক (যেমন পিয়ারসন কোরিলেশন কোএফিশিয়েন্ট) দুটি চলকের মধ্যে সম্পর্কের শক্তি এবং দিক (ইতিবাচক বা নেতিবাচক) পরিমাপ করে। লিনিয়ার রিগ্রেশন এই সম্পর্ককে একটি মডেলের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করে। সহসম্পর্ক আপনাকে বলবে সম্পর্ক আছে কিনা, আর রিগ্রেশন আপনাকে বলবে সেই সম্পর্কটা কেমন এবং কীভাবে কাজ করে।

    অনুমান (Assumptions): লিনিয়ার রিগ্রেশন কিছু নির্দিষ্ট শর্তের উপর ভিত্তি করে কাজ করে। যেমন, চলকগুলোর মধ্যে সম্পর্কটা যেন সত্যিই সরলরৈখিক হয়, ডেটা পয়েন্টগুলো যেন খুব বেশি ছড়ানো-ছিটানো না থাকে (আউটলায়ার না থাকে), এবং এররগুলো যেন এলোমেলোভাবে ছড়ানো থাকে। এই শর্তগুলো পূরণ হলে মডেলের ফলাফল আরও নির্ভরযোগ্য হয়।

    কখন ব্যবহার করবেন, কখন করবেন না? (When to Use, When Not to Use?)

    কখন ব্যবহার করবেন?: যখন আপনি দুটি বা তার বেশি চলকের মধ্যে একটি সরলরৈখিক সম্পর্ক আছে বলে মনে করেন এবং সেই সম্পর্কটা বুঝতে চান। যখন আপনি একটি চলকের মান ব্যবহার করে অন্য একটি চলকের মান অনুমান করতে চান।

    যখন আপনি জানতে চান, কোন কারণগুলো (স্বাধীন চলক) একটি নির্দিষ্ট ফলাফলের (নির্ভরশীল চলক) উপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলছে। যখন আপনি কোনো ধারাবাহিক ফলাফল (continuous outcome) যেমন, তাপমাত্রা, বিক্রি, নম্বর ইত্যাদি অনুমান করতে চান।

    কখন করবেন না?
    যদি চলকগুলোর মধ্যে কোনো সরলরৈখিক সম্পর্ক না থাকে (যেমন, সম্পর্কটি বক্ররেখার মতো বা এলোমেলো)। এক্ষেত্রে অন্য ধরনের রিগ্রেশন মডেল ব্যবহার করতে হতে পারে। যদি আপনার ডেটায় অনেক বেশি অস্বাভাবিক বা ভুল ডেটা (outliers) থাকে, যা রেখাটিকে ভুলভাবে প্রভাবিত করতে পারে। এই 'আউটলায়ার'গুলো ফলাফলকে ভুল পথে চালিত করতে পারে।

    যদি আপনার স্বাধীন চলকগুলো একে অপরের সাথে খুব বেশি সম্পর্কিত হয় (multicollinearity), তাহলে মাল্টিপল রিগ্রেশন ব্যবহার করা কঠিন হতে পারে। এটি অনেকটা এমন যে, দুটি কারণ একই রকম প্রভাব ফেলছে, তখন বোঝা কঠিন হয়ে যায় কোনটি আসল প্রভাবক।

    লিনিয়ার রিগ্রেশন হলো ডেটা বিশ্লেষণের এক দারুণ হাতিয়ার, যা আপনাকে ডেটার ভেতরের লুকানো গল্পগুলো খুঁজে বের করতে সাহায্য করবে। এটি শুধু সংখ্যা নয়, বরং সংখ্যার পেছনের কারণ ও প্রভাবকে বুঝতে শেখায়। আশা করি, এই বিস্তারিত আলোচনা আপনার লিনিয়ার রিগ্রেশন সম্পর্কে ধারণা আরও পরিষ্কার করেছে। আপনার যদি আরও কিছু জানার থাকে, তাহলে আমাকে জানাতে পারেন!

    Md. Rony Masud
    BBA, MBA (DU), MS (Japan)
    আপনার গবেষণা পদ্ধতির সাতকাহন: লিনিয়ার রিগ্রেশন (Linear Regression in Research methodology) ধরুন, আপনি অনেকগুলো কাঁচামাল জোগাড় করেছেন। এখন সেই কাঁচামাল দিয়ে কী বানাবেন, কীভাবে বানাবেন, সেটাই হলো বিশ্লেষণের কাজ। আর এই বিশ্লেষণের দুনিয়ায় একটা দারুণ 'ম্যাজিক টুল' আছে, যার নাম লিনিয়ার রিগ্রেশন। এর নামটা একটু জটিল শোনালেও, এর কাজটা কিন্তু খুবই সহজ আর কাজের। চলুন, আজ আমরা এই লিনিয়ার রিগ্রেশনের আদ্যোপান্ত জেনে নিই, একদম A2Z! লিনিয়ার রিগ্রেশন আসলে কী? (What is Linear Regression?) আচ্ছা, আপনি কি কখনো ভেবে দেখেছেন, একজন শিক্ষার্থী যত বেশি সময় পড়াশোনা করে, তার পরীক্ষার নম্বর তত বাড়ে কেন? অথবা, একটি পণ্যের দাম বাড়লে তার বিক্রি কমে যায় কেন? এই 'কেন' আর 'কীভাবে'র সম্পর্কটা খুঁজে বের করার জন্যই লিনিয়ার রিগ্রেশনকে আমরা ব্যবহার করি। সহজ করে বললে, লিনিয়ার রিগ্রেশন হলো এমন একটি পরিসংখ্যানগত কৌশল, যা দুটি বা তার বেশি বিষয়ের মধ্যে একটা সরলরেখার মতো সম্পর্ক খুঁজে বের করতে সাহায্য করে। এটি অনেকটা একটা অদৃশ্য সুতো খুঁজে বের করার মতো, যা দুটি জিনিসকে একসঙ্গে বেঁধে রাখে। যেমন, পড়াশোনার সময় আর পরীক্ষার নম্বরের মধ্যে একটা সম্পর্ক আছে, তাই না? লিনিয়ার রিগ্রেশন সেই সম্পর্কটাকে একটা সরলরেখা দিয়ে প্রকাশ করে। এখানে দুটো গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় আছে, যাদেরকে আমরা 'চলক' (Variables) বলি: ১। স্বাধীন চলক (Independent Variable): এই হলো সেই 'কারণ' বা 'ইনপুট'। একে আপনি পরিবর্তন করতে পারেন, বা এটি নিজে নিজেই পরিবর্তিত হয় এবং অন্য কোনো কিছুকে প্রভাবিত করে। যেমন, পড়াশোনার সময়, বিজ্ঞাপনের খরচ, বা একটি বাড়ির আকার। ভাবুন তো, পড়াশোনার সময় বাড়লে বা কমলে পরীক্ষার নম্বরের ওপর একটা প্রভাব পড়ে, তাই না? ২। নির্ভরশীল চলক (Dependent Variable): আর এই হলো সেই 'ফলাফল' বা 'আউটপুট', যা স্বাধীন চলকের পরিবর্তনের কারণে প্রভাবিত হয়। যেমন, পরীক্ষার নম্বর, পণ্যের বিক্রি, বা বাড়ির দাম। এই চলকটি স্বাধীন চলকের উপর 'নির্ভর' করে। লিনিয়ার রিগ্রেশনের মূল লক্ষ্য হলো এই স্বাধীন ও নির্ভরশীল চলকের মধ্যে একটা গাণিতিক সম্পর্ক খুঁজে বের করা, যা দেখতে একটা সরলরেখার মতো। এই রেখার একটা সমীকরণ থাকে: Y=a+bX এখানে: Y হলো নির্ভরশীল চলক (ফলাফল): অর্থাৎ, আপনি যে জিনিসটা অনুমান করতে চান বা যার পরিবর্তন মাপতে চান। X হলো স্বাধীন চলক (কারণ): অর্থাৎ, যে জিনিসটা পরিবর্তনের কারণ হিসেবে কাজ করছে। a হলো ইন্টারসেপ্ট (Intercept): এটি অনেকটা গ্রাফের Y-অক্ষকে রেখাটি যেখানে ছেদ করে সেই বিন্দু। সহজ ভাষায়, যখন স্বাধীন চলক (X) এর মান শূন্য হয়, তখন নির্ভরশীল চলক (Y) এর আনুমানিক মান কত হবে, সেটাই a। যেমন, যদি আপনি একদমই পড়াশোনা না করেন (X=0), তাহলে আপনার পরীক্ষার নম্বর কত হতে পারে, তার একটা আনুমানিক ধারণা। b হলো স্লপ (Slope): এটি রেখার ঢাল বা খাড়া হওয়ার পরিমাণ নির্দেশ করে। এটি দেখায়, স্বাধীন চলক (X) এর মান যখন এক ইউনিট বাড়ে, তখন নির্ভরশীল চলক (Y) এর মান কতটুকু পরিবর্তন হয়। যেমন, যদি b এর মান ২ হয়, তার মানে পড়াশোনার সময় এক ঘণ্টা বাড়ালে পরীক্ষার নম্বর আনুমানিক ২ বাড়বে। কেন আমরা লিনিয়ার রিগ্রেশন ব্যবহার করি? (Why Use It?) এর প্রধান কাজ দুটো, যা গবেষণায় দারুণ কাজে আসে: A) সম্পর্ক বোঝা (Understanding Relationships): এটি আপনাকে বলে দেবে, আপনার চলকগুলোর মধ্যে আদৌ কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এবং সেই সম্পর্কটা কতটা শক্তিশালী। ধরুন, আপনি জানতে চান, বিজ্ঞাপনে খরচ বাড়ালে পণ্যের বিক্রি কি সত্যিই বাড়ে? যদি বাড়ে, তাহলে কতটা বাড়ে? লিনিয়ার রিগ্রেশন আপনাকে এই 'কতটা'র একটা সংখ্যাগত পরিমাপ দেবে। B) ভবিষ্যৎ অনুমান করা (Making Predictions): একবার সম্পর্কটা বুঝে গেলে, আমরা ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কিছু অনুমান করতে পারি। ধরুন, আপনি দেখলেন যে, তাপমাত্রা বাড়লে আইসক্রিমের বিক্রি বাড়ে। লিনিয়ার রিগ্রেশন আপনাকে একটি মডেল দেবে, যার মাধ্যমে আপনি হয়তো বলতে পারবেন, আগামী সপ্তাহে তাপমাত্রা যদি আরও বাড়ে, তাহলে আইসক্রিমের বিক্রি কেমন হতে পারে। এটি অনেকটা আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়ার মতো, যেখানে আমরা অতীতের ডেটা ব্যবহার করে ভবিষ্যতের একটা ধারণা পাই। লিনিয়ার রিগ্রেশন কীভাবে কাজ করে? (How Does It Work?) লিনিয়ার রিগ্রেশন কাজ করে একটা সরলরেখা ব্যবহার করে। ভাবুন, আপনার কাছে কিছু ডেটা পয়েন্ট আছে, যেমন গ্রাফ পেপারে ছড়ানো কিছু বিন্দু। লিনিয়ার রিগ্রেশনের কাজ হলো এই বিন্দুগুলোর মাঝখান দিয়ে এমন একটা সরলরেখা আঁকা, যা সব বিন্দু থেকে 'গড়ে' সবচেয়ে কম দূরত্বে থাকে। এই 'সবচেয়ে কম দূরত্ব' খুঁজে বের করার জন্য কিছু গাণিতিক হিসাব-নিকাশ করা হয়, যাকে আমরা 'এরর মিনিমাইজেশন' বা 'অবশিষ্ট কমানো' বলি। অর্থাৎ, ডেটা পয়েন্টগুলো থেকে রেখার যে দূরত্ব, সেই দূরত্বগুলোকে যতটা সম্ভব ছোট করা হয়, যাতে রেখাটি ডেটার 'প্রবণতা' বা 'ট্রেন্ড'কে সবচেয়ে ভালোভাবে দেখাতে পারে। এই রেখাটিই হলো আপনার রিগ্রেশন লাইন, যা আপনার ডেটার গল্পটা বলে। লিনিয়ার রিগ্রেশনের প্রকারভেদ (Types of Linear Regression) লিনিয়ার রিগ্রেশন মূলত দুটি প্রধান ধরনে বিভক্ত, নির্ভর করে আপনি কতগুলো স্বাধীন চলক ব্যবহার করছেন তার উপর: সাধারণ লিনিয়ার রিগ্রেশন (Simple Linear Regression): এখানে শুধু একটি স্বাধীন চলক এবং একটি নির্ভরশীল চলক থাকে। উদাহরণ: একজন ছাত্রের পড়াশোনার সময়ের (স্বাধীন চলক) সাথে তার পরীক্ষার নম্বরের (নির্ভরশীল চলক) সম্পর্ক। এখানে আপনি শুধু একটি কারণ (পড়াশোনার সময়) দিয়ে একটি ফলাফল (পরীক্ষার নম্বর) বোঝার চেষ্টা করছেন। মাল্টিপল লিনিয়ার রিগ্রেশন (Multiple Linear Regression): এখানে একাধিক স্বাধীন চলক এবং একটি নির্ভরশীল চলক থাকে। উদাহরণ: একটি বাড়ির দাম (নির্ভরশীল চলক) শুধু তার আকারের উপর নির্ভর করে না, বরং এলাকার অবস্থান, বাড়ির বয়স, রুমের সংখ্যা, বাথরুমের সংখ্যা – এই সবকিছুর উপর নির্ভর করে। মাল্টিপল রিগ্রেশন এই সব কারণ একসঙ্গে বিশ্লেষণ করে দেখায় যে, কোন কারণটি বাড়ির দামের উপর কতটা প্রভাব ফেলছে। এটি অনেকটা অনেকগুলো কারণ একসঙ্গে একটি ফলাফলের উপর কীভাবে প্রভাব ফেলে, তা দেখার মতো। কিছু জরুরি কথা (Key Concepts): অবশিষ্ট (Residuals): রিগ্রেশন রেখাটি সব ডেটা পয়েন্টের উপর দিয়ে যায় না, কিছু পয়েন্ট রেখার উপরে বা নিচে থাকে। এই ডেটা পয়েন্ট এবং রেখার মধ্যে যে দূরত্ব, সেটিই হলো অবশিষ্ট বা এরর (error)। এটি দেখায়, আমাদের মডেল কতটা নিখুঁতভাবে অনুমান করতে পারছে। যত কম অবশিষ্ট, মডেল তত ভালো। সহসম্পর্ক (Correlation): এটি লিনিয়ার রিগ্রেশনের সাথে জড়িত একটি ধারণা। সহসম্পর্ক (যেমন পিয়ারসন কোরিলেশন কোএফিশিয়েন্ট) দুটি চলকের মধ্যে সম্পর্কের শক্তি এবং দিক (ইতিবাচক বা নেতিবাচক) পরিমাপ করে। লিনিয়ার রিগ্রেশন এই সম্পর্ককে একটি মডেলের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করে। সহসম্পর্ক আপনাকে বলবে সম্পর্ক আছে কিনা, আর রিগ্রেশন আপনাকে বলবে সেই সম্পর্কটা কেমন এবং কীভাবে কাজ করে। অনুমান (Assumptions): লিনিয়ার রিগ্রেশন কিছু নির্দিষ্ট শর্তের উপর ভিত্তি করে কাজ করে। যেমন, চলকগুলোর মধ্যে সম্পর্কটা যেন সত্যিই সরলরৈখিক হয়, ডেটা পয়েন্টগুলো যেন খুব বেশি ছড়ানো-ছিটানো না থাকে (আউটলায়ার না থাকে), এবং এররগুলো যেন এলোমেলোভাবে ছড়ানো থাকে। এই শর্তগুলো পূরণ হলে মডেলের ফলাফল আরও নির্ভরযোগ্য হয়। কখন ব্যবহার করবেন, কখন করবেন না? (When to Use, When Not to Use?) কখন ব্যবহার করবেন?: যখন আপনি দুটি বা তার বেশি চলকের মধ্যে একটি সরলরৈখিক সম্পর্ক আছে বলে মনে করেন এবং সেই সম্পর্কটা বুঝতে চান। যখন আপনি একটি চলকের মান ব্যবহার করে অন্য একটি চলকের মান অনুমান করতে চান। যখন আপনি জানতে চান, কোন কারণগুলো (স্বাধীন চলক) একটি নির্দিষ্ট ফলাফলের (নির্ভরশীল চলক) উপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলছে। যখন আপনি কোনো ধারাবাহিক ফলাফল (continuous outcome) যেমন, তাপমাত্রা, বিক্রি, নম্বর ইত্যাদি অনুমান করতে চান। কখন করবেন না? যদি চলকগুলোর মধ্যে কোনো সরলরৈখিক সম্পর্ক না থাকে (যেমন, সম্পর্কটি বক্ররেখার মতো বা এলোমেলো)। এক্ষেত্রে অন্য ধরনের রিগ্রেশন মডেল ব্যবহার করতে হতে পারে। যদি আপনার ডেটায় অনেক বেশি অস্বাভাবিক বা ভুল ডেটা (outliers) থাকে, যা রেখাটিকে ভুলভাবে প্রভাবিত করতে পারে। এই 'আউটলায়ার'গুলো ফলাফলকে ভুল পথে চালিত করতে পারে। যদি আপনার স্বাধীন চলকগুলো একে অপরের সাথে খুব বেশি সম্পর্কিত হয় (multicollinearity), তাহলে মাল্টিপল রিগ্রেশন ব্যবহার করা কঠিন হতে পারে। এটি অনেকটা এমন যে, দুটি কারণ একই রকম প্রভাব ফেলছে, তখন বোঝা কঠিন হয়ে যায় কোনটি আসল প্রভাবক। লিনিয়ার রিগ্রেশন হলো ডেটা বিশ্লেষণের এক দারুণ হাতিয়ার, যা আপনাকে ডেটার ভেতরের লুকানো গল্পগুলো খুঁজে বের করতে সাহায্য করবে। এটি শুধু সংখ্যা নয়, বরং সংখ্যার পেছনের কারণ ও প্রভাবকে বুঝতে শেখায়। আশা করি, এই বিস্তারিত আলোচনা আপনার লিনিয়ার রিগ্রেশন সম্পর্কে ধারণা আরও পরিষ্কার করেছে। আপনার যদি আরও কিছু জানার থাকে, তাহলে আমাকে জানাতে পারেন! Md. Rony Masud BBA, MBA (DU), MS (Japan)
    0 Comments 0 Shares 248 Views
More Results
BlackBird Ai
https://bbai.shop