শুধু গাছ লাগালেই গ্লোবাল ওয়ার্মিং কমে যাবে? 

0
193

একুশ শতকের এই দিনে শিল্প বিপ্লবের মহড়া যে হারে বাড়ছে, তাতে স্পষ্টত গ্লোবাল ওয়ার্মিং আর থেমে নেই। গ্লোবাল ওয়ার্মিং তার আপন মহিমায় উজ্বল হয়ে উঠছে দিন দিন। গ্রিন হাউস প্রভাব, ওজোনস্তর ক্ষয়, অরণ্য উচ্ছেদ প্রভৃতি কারণে গ্লোবাল ওয়ার্মিং ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি আমাদের এখনই থামানোর প্রয়োজন নয় কি? গ্লোবাল ওয়ার্মিং কি আরো বাড়তে দেওয়া উচিত? শৈল্পিকতার এই লেনা-দেনায় সত্যিই কি প্রকৃতি হারতে বসেছে? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করবো।

 

বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রার কারণে জলবায়ু বিজ্ঞানীরা সতর্কবার্তা দিয়ে বলেছেন, ‘এখনই কিছু করুন, নাহলে সংকটের ঝুঁকিতে থাকুন’। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিবেদন অনুযায়ী তাপমাত্রায় বিপজ্জনক বৃদ্ধি এড়াতে বিশ্বকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। জাতিসংঘের বৈশ্বিক উষ্ণতা বিষয়ক আন্তঃ সরকার প্যানেলের (আইপিসিসি) গবেষণায় দেখা যায়, আমাদের গ্রহটি আগামী ১০ বছরের মধ্যে তাপমাত্রা বৃদ্ধির চূড়ান্ত সীমা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করতে পারে। যেটা কিনা প্রাক-শিল্পযুগের মাত্রার থেকেও বেশি। এতে করে আবহাওয়া পরিস্থিতি অস্বাভাবিক রূপ নেবে বিশেষ করে চরম দুর্ভিক্ষ, দাবানল, বন্যা সেইসঙ্গে লাখ লাখ মানুষের খাদ্য সংকটের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেবে। গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর এই সীমা অতিক্রম এড়াতে বিশ্বের উচিত সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে দ্রুত, সুদূরপ্রসারী ও নজিরবিহীন পরিবর্তন আনা। কিন্তু এক্ষেত্রে আপনি কী ধরনের সাহায্য করতে পারেন? সত্যি অর্থে প্রত্যেকের একক প্রচেষ্টা বৈশ্বিক উষ্ণতা হ্রাসে বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে পারে।

 

সর্বসাধারণের এখনো অনেকে মনে করেন শুধু গাছ লাগালেই বুঝি আমাদের সব বিপর্যয় কেটে যাবে! কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে গাছ লাগানো পরিবেশের জন্য যতটুকু সহায়ক; ব্যক্তিসচেতনতা তার চাইতে শতগুণ সহায়ক ভূমিকা পালন করে। কিন্তু এক্ষেত্রে গাছ লাগানোকে কখনোই নিরুৎসাহিত করা যাবে না। আমাদের দেশের দিকে লক্ষ করলে দেখা যায়, যেখানে মোট বনভূমি ২৫ শতাংশ থাকা দরকার, সেখানে আমাদের দেশে এখনো মাত্র ১৭ শতাংশ। সেক্ষেত্রে বনভূমির এই অপর্যাপ্ততা আমাদের গাছ লাগানোর মাধ্যমে পুষিয়ে নিতে হবে। কিন্তু বৈশ্বিক উষ্ণতার এই উর্ধ্বগতির মাত্রা থেকে বাঁচতে এবং আগাম পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে তুলতে হলে শুধু গাছ লাগানোতে সীমাবদ্ধ থাকলে হবে না। আমাদের আরো কিছু নৈতিক করণীয় রয়েছে।

 

বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ার ফলে মেরু অঞ্চলের বরফ, হিমবাহ সবই গলে যাবে এবং সমুদ্র পৃষ্ঠে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে। সমুদ্র পৃষ্ঠে পানির উচ্চতা বাড়ার ফলে শুধু দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোই তলিয়ে যাবে না, এতে উপকূলীয় ও নিম্নাঞ্চলগুলোর জন্যও ঝুঁকি রয়েছে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বেড়ে যাওয়া ঠেকাতে বড় ধরনের পদক্ষেপ নিতে নাগরিক এবং ভোক্তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। ব্যক্তি সচেতনতা এবং ব্যক্তি পরিবর্তন এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিনের জীবন থেকে আপনিও চাইলে এই পরিবর্তন সাধিত করতে পারেন।

 

করণীয়গুলো হলো

 

১. গণপরিবহন এড়িয়ে চলুন: আজকের জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী করা হয় গণপরিবহন বৃদ্ধি এবং এই গণপরিবহন থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া। কার্বন নির্গমন কমিয়ে আনার জন্য আমরা গণপরিবহন যতটুকু পারি এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে পারি। এক্ষেত্রে আমরা হাঁটা বা সাইক্লিংয়ের অভ্যাস চর্চা করতে পারি, যা আমাদের শরীর-স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। একুশ শতকে গ্লোবাল ওয়ার্মিং বাড়ার বড় কারণ হিসেবে দেখা হয় পরিবহন থেকে নির্গত কালো ধোঁয়াকে।

 

২. প্রতিটি জিনিস পুনঃব্যবহারের চেষ্টা করুন: পুনঃব্যবহারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো পানি। বৃষ্টির পানিকে অপচয় না করে আমরা এটাকে ব্যবহারিক কাজে লাগাতে পারি অথবা অবহেলার কারণে পানির কল বন্ধ না করা এজাতীয় কাজে সচেতন হতে পারি। নিত্যনৈমত্তিক ব্যবহারিক পানি ফেলে না দিয়ে তা আমরা গাছের নিচে দিতে পারি। এতে গাছের সতেজতা আরো বৃদ্ধি পাবে। পানির মতো অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো আমরা পুনঃব্যবহার করতে পারি।

 

৩. শক্তি অপচয় রোধ করুন: বিদ্যুতের অপব্যবহার কমিয়ে আনতে হবে। যেখানে যতটুকু বিদ্যুৎ প্রয়োজন ততটুকুই বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে হবে। বিকল্প হিসেবে আমরা সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন ও ব্যবহার করতে পারি। ওয়াশিং মেশিনের টাম্বলার ড্রায়ারে কাপড় না শুঁকিয়ে তা বাইরের রোদে বা বাতাসে এলিয়ে দিতে পারি এতে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে।

 

৪. আমিষের পরিমাণ কমিয়ে নিরামিষভোজী হোন: শাকসবজি বা শস্যের উৎপাদনের চেয়ে মাংসের উৎপাদন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন ঘটায়। আর অতিরিক্ত মাংস ভোজনে শরীরের রক্তচাপ বৃদ্ধি, স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা থাকে। খাদ্যভ্যাসে মাংসের পরিবর্তে সবজি এবং ফলের ওপর নির্ভরতা বাড়ানো উচিত, যা শরীর-স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী হবে এবং গ্লোবাল ওয়ার্মিং রোধে ভূমিকা রাখবে।

 

সর্বোপরি বলতে হয়, ব্যক্তি সচেতনতাই পারে আমাদের বৈশ্বিক উষ্ণায়ন কমাতে। গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রোধে আপনার ছোট পদক্ষেপ বড় প্রভাব ফেলতে পারে। গাছ আমাদের পরম বন্ধু; কিন্তু গাছের সঙ্গে বন্ধুত্বের সফলতা তখনই পূর্ণতা পাবে, যখন আমরা গাছের উপর চাপ কমিয়ে ব্যক্তি সচেতনতার মাধ্যমে গ্লোবাল ওয়ার্মিং কমিয়ে আনতে পারবো

Search
Categories
Read More
Other
মৃ*ত্যু ছাড়া মানুষের একান্ত নিজের কিছু নেই,
জীবন অন্যরা ভাগ করে নেয় খুব প্রকাশ্যেই।" জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটির একটা ছেলের মা*রা যাওয়ার খবর...
By Yeara Meherish 2025-08-12 19:28:23 0 240
Health
থাইরয়েডকে অবহেলা নয়—জেনে রাখুন, যত্ন নিন!
থাইরয়েড কী? থাইরয়েড হলো গলার সামনের দিকে অবস্থিত একটি প্রজাপতির মতো দেখতে হরমোন উৎপাদনকারী...
By Mirshad Sharif 2025-08-03 18:08:15 0 175
Networking
Unbelievable Step to save life at feni in flood
In the heart of flood-hit Feni, where knee-deep water filled homes, a powerful story of courage...
By Phoenix (Striker) 2025-07-11 11:40:56 0 565
Other
পকেটে গলে যাওয়া চকলেট বার থেকে আবিষ্কৃত রান্নাঘরের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ — মাইক্রোওয়েভ ওভেন
পকেটে গলে যাওয়া চকলেট বার থেকে আবিষ্কৃত রান্নাঘরের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ — মাইক্রোওয়েভ ওভেন...
By Sharif Uddin 2025-07-27 10:16:06 0 187
Health
Study Shows Even nicotine free vipe fluids pose serious risks durning pregnancy
🚨 Common Vape Ingredients Found to Deform Fetal Skulls in Mice — Even Without Nicotine A...
By Sharif Uddin 2025-08-05 18:41:59 0 184
BlackBird Ai
https://bbai.shop