বিটকয়েন: কোটি টাকার স্বপ্ন নাকি নিঃশব্দ সর্বনাশ?

বিটকয়েনের নাম আপনি নিশ্চয়ই শুনেছেন। এই নামটা আজ শুধু কয়েন বা টাকার পরিচয় নয়, একেবারে রহস্যে মোড়ানো এক নতুন অর্থনীতির নাম। টাকার ইতিহাসে এমন ঘটনা খুব কমই আছে যেখানে স্রষ্টার পরিচয়ই অজানা। অথচ পৃথিবীর কোটি কোটি ডলার ঘুরছে সেই অদৃশ্য ব্যক্তির বানানো ডিজিটাল টাকার উপর। আপনি কি জানেন এই পুরো খেলাটা ঠিক কীভাবে চলছে? চলুন সহজভাবে বোঝাই।
বিটকয়েন এমন এক টাকা যেটার জন্য কোনো ব্যাংক নেই, সরকারের ছাপানো মুদ্রা নেই, এমনকি কোনো অফিসও নেই। পুরো ব্যবস্থা চলে এক বিশাল কম্পিউটার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে, যেটাকে বলে ব্লকচেইন। এটাকে সহজভাবে ধরুন, হাজার হাজার মানুষ একসাথে একটা হিসাবের খাতা চালাচ্ছে যেখানে কারো হাতুড়ি-ঘুষির ক্ষমতা নেই। কেউ চাইলে এটাকে বন্ধ করতে পারবে না, মুছে দিতে পারবে না।
এই পুরো খেলায় সবচেয়ে বড় চমক হলো যিনি বা যারা বিটকয়েন বানিয়েছেন, তারাই নিজেকে লুকিয়ে রেখেছে। Satoshi Nakamoto নামটা হয়তো শুনেছেন, কিন্তু সে কে, কোথায় থাকে, আসলে এক জন না অনেক জন সেটা আজ পর্যন্ত কেউ জানে না। শুধু জানা যায়, শুরুতেই প্রায় ১০ লাখ বিটকয়েন তিনি নিজের নামে রেখে গেছেন। কিন্তু অবাক করার মতো ব্যাপার হলো, এতদিনেও সেই বিটকয়েন একটিবারও নড়েনি। যেন কেউ কোটি কোটি ডলারের পাহাড়ে বসে থেকেও তাকিয়ে দেখছে, হাত দিচ্ছে না।
আপনি হয়তো ভাবতে পারেন, ইচ্ছা করলে সে তো পুরো বাজারই উল্টে দিতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা একটু অন্যরকম। বিটকয়েনের প্রোগ্রাম এমনভাবে বাঁধা আছে, এখানে মোট ২ কোটি ১০ লাখ বিটকয়েনের বেশি তৈরি হবে না। কেউ চাইলে নতুন করে বিটকয়েন বানিয়ে ফেলতে পারবে না। আবার হুট করে সব টাকা গায়েব করে দেওয়ারও কোনো রাস্তা নেই। কারণ একেকটা লেনদেন, একেকটা বিটকয়েনের অস্তিত্ব লক্ষ লক্ষ কম্পিউটারের মধ্যে ছড়িয়ে আছে। সব কম্পিউটার একসাথে থেমে না গেলে বিটকয়েন নিজে নিজে হারিয়ে যাওয়া একেবারে অসম্ভব।
তবে বিপদ কি একেবারেই নেই? থাকতেই পারে। কারণ এই বাজার পুরোপুরি মানুষের মনোভাব আর বাজার পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে চলে। একদিন দাম আকাশ ছোঁবে তো পরদিনই ঝুপ করে পড়ে যেতে পারে। নিয়ন্ত্রণের কেউ নেই বলেই এই দোলাচল সহজে থামে না। এর উপর বাংলাদেশে এর বৈধতা নিয়েও বড় প্রশ্ন আছে। বাংলাদেশ ব্যাংক পরিষ্কারভাবে বলেছে, বিটকয়েন বা যেকোনো ক্রিপ্টোকারেন্সি কেনাবেচা বা লেনদেন করা আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বাংলাদেশের আইনে বিটকয়েন কোনো স্বীকৃত টাকা নয়, বরং বেআইনি একটি মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত।
সবশেষে একটিই সত্য, বিটকয়েন রাতারাতি হাওয়া হবে না, কারণ প্রযুক্তির দিক থেকে এটি অসাধারণভাবে শক্তিশালী। কিন্তু বাজারের ঝুঁকি এবং দেশের আইন একসাথে মিশে বিটকয়েনকে বানিয়ে দিয়েছে এক জটিল খেলা। এই খেলায় লাভও আছে, আবার ভয়ও আছে। তাই অদৃশ্য মানুষের বানানো অদৃশ্য টাকার পিছনে দৌড়ানোর আগে নিজের পরিস্থিতি বুঝে, চোখ-কান খোলা রেখে পা ফেলাই হবে সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ।