আমি কেন এমএমএ নিয়ে কাজ করি?

0
421

প্রশ্নটা অনেকেই করেন—এই এমএমএ (মিক্সড মার্শাল আর্টস) নিয়ে এত সময়, এত পরিশ্রম দিচ্ছেন কেন?

সত্যি বলতে, আমাদের সমাজে খেলাধুলা এখন এমনভাবে প্রমোট হচ্ছে, যেটা থেকে সন্তানদের দূরে রাখা কঠিন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে বেশিরভাগ খেলা এখন নিছক বিনোদনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে বা চলছে, কিন্তু গঠনমূলক কিছু দিচ্ছে না।

 

আর এখানেই এমএমএ আলাদা। কারণ এই খেলায় শুধু জিততে হয় না, নিজেকে তৈরি করতেও হয়। এর ট্রেইনিং অনেকটাই সোলজারদের মতো, যেখানে মেন্টালি ও ফিজিক্যালি উভয়ভাবে ফিট হতে হয়। শারীরিকভাবে, মানসিকভাবে—একজন খেলোয়াড়কে এমনভাবে গড়ে তুলতে হয়, যেটা আর কোনো খেলায় হয় না সাধারণত। প্রতিদিনের কঠিন ট্রেনিং, নিয়ম-শৃঙ্খলা, কষ্ট সহ্য করার মানসিকতা—এসব মিলেই একজন যোদ্ধা তৈরি হয়।

 

আমরা যদি চাই আমাদের যুবসমাজ সুস্থ, সবল, আত্মরক্ষায় সক্ষম হোক—তাহলে এমএমএর মতো খেলাই হওয়া উচিত সামনে।

 

একটা জায়গায় আমরা অনেকে হিমশিম খাই—

ইসলাম ও এমএমএ – সাংঘর্ষিক না সামঞ্জস্যপূর্ণ?

 

হ্যাঁ, এটা সত্যি। শুধু তাই নয়, বেশিরভাগ স্পোর্টসই ইসলামে হারাম এবং এর একাধিক কারণ আছে। ঠিক সেইভাবে এমএমএর নামেও অনেক কিছু চলে, যা ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে গ্রহণযোগ্য নয়। যেমন:

বেটিং (জুয়া), অশ্লীলতা, মিউজিক, অঙ্গ-প্রদর্শন ইত্যাদি।

 

কিন্তু এগুলো কোনোভাবেই এমএমএর মূল নীতি বা নিয়ম না। এসব তো পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাব বা বিজনেস মডেলের জন্য দাঁড়িয়েছে। আমরা চাইলে এইসব বাদ দিয়ে, ইসলাম সম্মত পরিবেশে এমএমএ শেখা এবং শেখানো—দুটোই সম্ভব।

যেমন:

হাটু বা নাভি না দেখিয়ে ইউনিফর্ম পরা যায়,

মিউজিক বাদ দিয়ে চেতনার ধ্বপ বা ইসলামিক আবহে দেশপ্রেমমূলক সাউন্ড ব্যবহার করা যায়,

স্টেজে ও গ্যালারিতে শালীনতা বজায় রাখা যায়।

তবে চেহারায় আঘাত করাটাও হারাম লড়ায়ের মধ্যে 

 

সেক্ষেত্রে চাইলে আপনি খেলাটাই বাদ দিতে পারেন—ট্রেইনিং করার ক্ষেত্রে ইসলামে কোনো বাধা নেই। বরং কিছু দিক থেকে আরও বেশি জরুরি।

 

দূরদর্শিতা ও খুব দরকার আমাদের!

একসময় আমাদের আলেম সমাজে ইংরেজি শিক্ষা নিয়ে ভয়ভীতি ছিল—“এটা দুনিয়াবি শিক্ষা, এটা শিখলে নাকি ধর্ম থেকে দূরে যাওয়া হয়।”

কিন্তু সময়ের সাথে বুঝেছি, ইসলামের জন্য কাজ করতেও আজকের যুগের জ্ঞান জানা জরুরি।

 

ফেসবুক একসময় ‘খারাপ’ ছিল বলে ধরা হতো। কিন্তু আজ যদি আলেমরা ফেসবুকে না থাকতেন, তাহলে কি দাওয়াত এতো মানুষের কাছে পৌঁছাতো? বরং এখন আমরা দেখছি—ভালো মানুষ ভালো জিনিস নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় না আসলে জাতি উপকৃত হতো না।

 

সুতরাং, এমএমএ’র মতো এত উন্নত ফিটনেস ট্রেইনিং থেকে আমরা পিছিয়ে থাকব?

আমরা হারামগুলো ছেড়ে দিই, কিন্তু ট্রেইনিংটা ধরে রাখি। তবে প্রোমোট হওয়া জরুরি, নাহলে এটা সর্বসাধারণ পর্যন্ত পৌঁছাবে না।

 

এবং একশ্রেণির জন্য খেলাও দরকার আছে।

কারণ আজকের তরুণ সমাজ: মোবাইলে আসক্ত, পর্নোগ্রাফির দাস, মানসিকভাবে দুর্বল, মেয়েলি আচরণে অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ভেঙে পড়বে।

 

আমাদের দরকার একটা "Reality Check"—একটা শক্ত, বাস্তব ভিত্তির উপর দাঁড়ানো খেলা।

 

এমএমএ একটা ভিন্নমাত্রার খেলা, এটা একটা প্রতিরোধ, এক ধরনের আত্ম-উন্নয়নের পথ।

এখানে একজন তরুণ শিখে কীভাবে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়, কীভাবে কষ্ট সহ্য করে এগোতে হয়, কীভাবে নিজের শরীর, মন, নীতি ও জাতির জন্য একজন সৈনিক হয়ে উঠতে হয়।

 

মোট কথা বলতে চাচ্ছি 

সবকিছু বাদ দিয়ে দেওয়া নয়—দূরদর্শিতা নিয়ে ভালোটা নিজের মতো গড়ে তোলা দরকার।

এই খেলাই হতে পারে এমন এক মাধ্যম, যেটা আমাদের সন্তানদের ডিভাইস থেকে সরিয়ে বাস্তব জীবন শেখাবে, আত্মরক্ষা শেখাবে, চরিত্র গড়তে শেখাবে এবং একজন ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে।

 

আজকাল আমাদের সামনে এমন সব খেলা প্রমোট করা হচ্ছে—যেগুলোর কোনো লক্ষ্য নেই, উদ্দেশ্য নেই, কেবল বিনোদন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হচ্ছে। বিশ্বের মোড়লরা ভালো করেই জানে, কিভাবে স্পোর্টসকে ব্যবহার করে একটি জাতিকে দুর্বল করা যায়—তাদের মনকে বন্দি করে রাখা যায় আনন্দের আড়ালে, বিনোদনের নামে।

তাই আজকাল অনেক খেলাই এমনভাবে সাজানো যে, মানুষ খেলায় আছে কিন্তু জীবনে নেই।

তাদের হাত-পা চলে, কিন্তু মন-বুদ্ধি ঘুমায়।

জাতিকে বোথা করে ফেলা হচ্ছে, যেন তরুণরা কোনোদিন প্রশ্ন না করে, প্রতিরোধ না গড়ে তোলে, শুধু বুঁদ হয়ে থাকে অকারণ উত্তেজনায়, স্কোরবোর্ডে, স্পন্সরশিপে, সেলফি আর সোশ্যাল মিডিয়ায়। তবে চাইলেই এমএমএ নিয়ে কাজ করা যায় এই ফাঁদ বাদ দিয়ে ।শুধু পশ্চিমা কালচার বাদ দিতে হবে।

 

কারন এমএমএ একটক খেলা যেটা ভাঙার খেলা, গড়ার খেলা। এটা বাস্তবতা শেখায়—দাঁত কামড়ে টিকে থাকার শিক্ষা দেয়।

প্রতিটি ট্রেনিং, প্রতিটি ঘাম, প্রতিটি ঘুষি—তরুণদের ভিতরে একজন যোদ্ধার জন্ম দেয়।

 

বিঃদ্রঃ

 

সব মার্শাল আর্ট শরীর ও মন গঠনে উপকারী, তবে এমএমএ সবচেয়ে বাস্তবঘনিষ্ঠ ও বাস্তবধর্মী।

কারণ এখানে একসাথে কয়েকটি আর্টস মিশে থাকে, এবং প্রতিটি মুহূর্তে খেলোয়াড়কে সিদ্ধান্ত নিতে হয়, প্রতিক্রিয়া জানাতে হয়, লড়াই করতে হয়।

Love
1
Suche
Kategorien
Mehr lesen
Andere
Kerið: Iceland’s Volcanic “Eye of the World” That Captivates All Who Visit
Nestled in the rugged heart of Iceland’s volcanic landscapes lies Kerið, a crater lake...
Von Sharif Uddin 2025-08-01 03:38:55 0 298
Andere
এক ঘোড়ার ক্ষমতা আসলে ১ হর্সপাওয়ারের চেয়ে ও বেশি।একটি সুস্থ ঘোড়ার শক্তি ২৪ হর্সপাওয়ার পর্যন্ত হতে পারে।
আমরা সাধারণত এক হর্সপাওয়ারকে (HP) ঘোরার স্বাভাবিক ক্ষমতায় হিসেবে জানি। শুনতে লজিক্যাল মনে হলেও...
Von Sharif Uddin 2025-08-05 12:53:57 0 347
Andere
NIST) তৈরি করেছে এমন এক ঘড়ি, যা এটি বিশ্বের সবচেয়ে নির্ভুল অ্যাটমিক ক্লক, যা প্রতি সেকেন্ডের ১৯তম দশমিক স্থান পর্যন্ত সময় ধরতে সক্ষম। এত নিখুঁত যে, ৩০ বিলিয়ন বছরেও এর সময় গড়মিল হবে না এক সেকেন্ডও!
যুক্তরাষ্ট্রের National Institute of Standards and Technology (NIST) তৈরি করেছে এমন এক ঘড়ি, যা...
Von Sharif Uddin 2025-08-03 14:13:34 0 321
Health
Caffeine isn’t always good....
Scientists found that higher caffeine levels in the blood are linked to lower body fat and a...
Von Zihadur Rahman 2025-07-15 12:32:01 0 577
Health
থাইরয়েডকে অবহেলা নয়—জেনে রাখুন, যত্ন নিন!
থাইরয়েড কী? থাইরয়েড হলো গলার সামনের দিকে অবস্থিত একটি প্রজাপতির মতো দেখতে হরমোন উৎপাদনকারী...
Von Mirshad Sharif 2025-08-03 18:08:15 0 282
BlackBird Ai
https://bbai.shop