কি ভাবে নিউক্লিয়ার ফিউশনের শক্তি আমাদের ভবিষ্যত বদলে দিতে পারে

0
1K

 শক্তির ভবিষ্যৎ: নিউক্লিয়ার ফিউশন নিয়ে একটু কথা

আসলে, নিউক্লিয়ার ফিউশনকে অনেকেই শক্তি উৎপাদনের “হলি গ্রেল” বলে ডাকে, এবং এর কারণও আছে। ভাবুন তো, এমন একটা শক্তি যেখানে জ্বালানি প্রায় অশেষ, পরিবেশে কোনো দূষণ নেই, আর নিরাপত্তার দিক থেকেও ঝুঁকি খুব কম। ফিউশন ঠিক তেমনই – এটা হালকা পরমাণু, যেমন হাইড্রোজেনের আইসোটোপগুলোকে একসাথে মিশিয়ে বিশাল শক্তি তৈরি করে, যা আমাদের সূর্যের ভিতরে ঘটে। এখন যখন পৃথিবীতে শক্তির চাহিদা বাড়ছে আর জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি বাড়ছে, তখন এই ফিউশন নিয়ে গবেষণা অনেক গতি পেয়েছে। আর তাই আমরা অনেক কাছাকাছি চলে এসেছি এই শক্তিকে বাস্তবে আনার।

 

✔নিউক্লিয়ার ফিউশন আসলে কী?  

সোজা ভাষায় বললে, এটা হলো দুইটা হালকা পরমাণুকে একসাথে মিশিয়ে একটা ভারী পরমাণু বানানো আর সেই সময় প্রচুর শক্তি বের হওয়া। সবচেয়ে বেশি যে ফিউশন নিয়ে কাজ হচ্ছে, সেটা হাইড্রোজেনের ডিউটেরিয়াম আর ট্রিটিয়াম আইসোটোপ নিয়ে। এই ফিউশন থেকে পাওয়া শক্তি রাসায়নিক জ্বালানির তুলনায় অনেক বেশি, আর সবচেয়ে বড় কথা, এতে কোনো গ্রীনহাউস গ্যাস বের হয় না।

★কেন ফিউশন এত গুরুত্বপূর্ণ?  

☞পরিষ্কার শক্তি: কার্বন ডাইঅক্সাইড বা অন্য কোনো দূষণ ছাড়াই শক্তি পাওয়া যায়।  

☞জ্বালানির অভাব নেই: ডিউটেরিয়াম তো সমুদ্রের পানিতে প্রচুর, আর লিথিয়ামও আছে অনেক, যা ট্রিটিয়াম তৈরিতে লাগে।  

☞নিরাপদ: ফিউশন প্রক্রিয়া চালাতে অনেক নির্দিষ্ট শর্ত লাগে, আর কোনো সমস্যা হলে তা নিজে থেকেই বন্ধ হয়ে যায়, তাই মেল্টডাউনের চিন্তা নেই।  

☞কম বর্জ্য: ফিশনের তুলনায় ফিউশনে বর্জ্য অনেক কম এবং তাও দ্রুত নির্জীব হয়ে যায়।

 

### সাম্প্রতিক কিছু ভালো খবর  

ফিউশন পাওয়ার নিয়ে অনেক চ্যালেঞ্জ থাকলেও, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেশ কিছু বড় অগ্রগতি হয়েছে:  

☞ITER প্রকল্প: ফ্রান্সে চলছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ফিউশন পরীক্ষা, যা ২০২০-এর দশকের শেষে শক্তি উৎপাদনে সফল হতে চায়।  

☞NIF: আমেরিকায় লেজার ব্যবহার করে ফিউশন শুরু করার চেষ্টা চলছে, যা বেশ ভালো ফল দিচ্ছে।  

☞বেসরকারি উদ্যোগ: Commonwealth Fusion Systems, Tokamak Energy এর মতো কোম্পানি ছোট আকারের উন্নত রিয়েক্টর বানানোর চেষ্টা করছে।  

☞AI এর ব্যবহার:কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্লাজমা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করছে, যাতে রিয়েক্টর আরও ভালো কাজ করে।

 

### এখনও কিছু বাধা আছে  

- প্লাজমাকে অনেক বেশি তাপমাত্রায় ধরে রাখা কঠিন।  

- রিয়েক্টরের যন্ত্রাংশগুলোকে তীব্র নিউট্রন আর তাপ সহ্য করতে হবে।  

- খরচ অনেক বেশি, তাই বিনিয়োগ আর আন্তর্জাতিক সহযোগিতা দরকার।

 

### বাণিজ্যিক ফিউশনের দিকে পথ  

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০৪০ বা ২০৫০ সালের মধ্যে বাণিজ্যিক ফিউশন পাওয়ার প্ল্যান্ট চালু হতে পারে। এর জন্য গবেষণা, উদ্ভাবন আর অর্থায়ন চালিয়ে যেতে হবে। সরকার আর প্রাইভেট সেক্টর দুটোই এখন ফিউশনের গুরুত্ব বুঝছে।

 

### শেষ কথা  

নিউক্লিয়ার ফিউশন আমাদের জন্য একটা পরিষ্কার, নিরাপদ আর টেকসই শক্তির ভবিষ্যত নিয়ে আসতে পারে। বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে, সূর্যের শক্তি আমাদের পৃথিবীতে আনতে পারা আর দূরের কথা নয়। তাই ফিউশন নিয়ে আপডেট থাকা আর এই গবেষণাকে সমর্থন করা আমাদের সবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ, যাতে আমরা দ্রুতই একটা সবুজ ও উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে এগোতে পারি।

Love
2
Search
Categories
Read More
Other
🔥 পৃথিবীর বুকে অন্য গ্রহের ছাপ!
  🌋 আইসল্যান্ডের ভলক্যানিক রহস্য – ব্লা শ্লুয়ার ও গ্রেয়শ্লুয়ার হ্রদ   দেখে মনে...
By Jarin Akter 2025-07-17 10:29:01 0 542
Ai
কেন চ্যাট জিপিটি সবার কাছে এতো জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে
চ্যাটজিপিটি হল একটি অত্যাধুনিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence) ভিত্তিক চ্যাটবট। সহজ...
By Nurul Hasan 2025-07-17 20:43:30 0 528
Health
জিমে হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক – বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা
ব্যায়ামের সময় হঠাৎ হৃদ্‌রোগজনিত মৃত্যু (Sudden Cardiac Death) ঘটে যখন হৃদ্‌যন্ত্রের...
By Sharif Uddin 2025-07-28 04:20:20 0 306
Tech
Stanford Creates Solar panels that generate Power at night using Earth radiated Heat
In a groundbreaking innovation, researchers at Stanford University, USA, have developed solar...
By Sharif Uddin 2025-08-04 19:08:17 0 414
Tech
চ্যাটজিপিটি নিয়ে এলো 'স্টাডি মোড', সরাসরি উত্তর না দিয়ে শেখাতে সাহায্য করবে শিক্ষার্থীদের
  ওপেনএআই চ্যাটজিপিটি-র জন্য একটি নতুন 'স্টাডি মোড' চালু করেছে, যার উদ্দেশ্য শিক্ষার্থীদের...
By Yeara Meherish 2025-07-31 18:02:08 0 339
BlackBird Ai
https://bbai.shop