আহসান মঞ্জিলের ইতিহাস

0
504

বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা আহসান মঞ্জিল। দেশের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে একটিও। প্রতিদিন উল্লেখযোগ্য হারে মানুষ আহসান মঞ্জিল দর্শনে যায়। সেখানে দেখা মেলে ভিনদেশিদেরও। নবাববাড়ি তো বটেই একসময় সেখানে বসবাসরত নবাব এবং তার উজির, নাজির সেনাপতিদের ব্যবহৃত পোশাক, ঢাল, তলোয়ার, কামানসহ বিভিন্ন অস্ত্র, থালা-বাসন, আসবাবপত্রসহ নানা রকম চোখ ধাঁধানো জিনিস রয়েছে আহসান মঞ্জিলে।

কিন্তু দর্শনার্থীরা কতটুকু জানেন ঐতিহাসিক এই স্থাপনাটি সম্পর্কে?

আহসান মঞ্জিল পুরান ঢাকার ইসলামপুরের কুমারটুলী এলাকায় বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত। এটি পূর্বে ছিল ঢাকার নবাবদের আবাসিক প্রাসাদ ও জমিদারীর সদর কাচারি। বর্তমানে এটি জাদুঘর হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এর প্রতিষ্ঠাতা নওয়াব আবদুল গনি। তিনি তার পুত্র খাজা আহসানউল্লাহর নামানুসারে এর নামকরণ করেন।

১৮৫৯ খ্রিষ্টাব্দে আহসান মঞ্জিলের নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে ১৮৭২ খ্রিষ্টাব্দে সমাপ্ত হয়। ১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দে এখানে এক অনুষ্ঠিত বৈঠকে মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত হয়। আহসান মঞ্জিল কয়েকবার সংস্কার করা হয়েছে। সর্বশেষ সংস্কার করা হয়েছে অতি সম্প্রতি। এখন এটি বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর কর্তৃক পরিচালিত একটি জাদুঘর।

অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে জামালপুর পরগনার জমিদার শেখ ইনায়েতউল্লাহ আহসান মঞ্জিলের বর্তমান স্থান রংমহল নামে একটি প্রমোদভবন তৈরি করেন। পরবর্তীতে তার পুত্র শেখ মতিউল্লাহ রংমহলটি ফরাসি বণিকদের কাছে বিক্রি করে দেন। বাণিজ্য কুঠি হিসাবে এটি দীর্ঘদিন পরিচিত ছিল। এরপর ১৮৩০ সালে বেগমবাজারে বসবাসকারী নওয়াব আবদুল গনির পিতা খাজা আলীমুল্লাহ এটি কিনে বসবাস শুরু করেন।

এই বাসভবনকে কেন্দ্র করে খাজা আবদুল গনি মার্টিন অ্যান্ড কোম্পানি নামক একটি ইউরোপীয় নির্মাণ ও প্রকৌশল-প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে একটি মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করান, যার প্রধান ইমারত ছিল আহসান মঞ্জিল। ১৮৫৯ সালে নওয়াব আবদুল গনি প্রাসাদটি নির্মাণ শুরু করেন যা ১৮৭২ সালে সমাপ্ত হয়। তিনি তার প্রিয় পুত্র খাজা আহসানুল্লাহর নামানুসারে এর নামকরণ করেন ‘আহসান মঞ্জিল’। ওই যুগে নবনির্মিত প্রাসাদ ভবনটি রংমহল ও পুরাতন ভবনটি অন্দরমহল নামে পরিচিত ছিল।

১৮৮৮ সালের ৭ এপ্রিল প্রবল ভূমিকম্পে পুরো আহসান মঞ্জিলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ক্ষতিগ্রস্ত আহসান মঞ্জিল পুনর্নির্মাণের সময় বর্তমান উঁচু গম্বুজটি সংযোজন করা হয়। পুনর্নির্মাণ ও মেরামতের জন্য রাণীগঞ্জ থেকে উন্নতমানের ইট আনা হয়। মেরামতকর্ম পরিচালনা করেন প্রকৌশলী গোবিন্দ চন্দ্র রায়। সে আমলে ঢাকা শহরে আহসান মঞ্জিলের মতো এতো জাঁকালো ভবন আর ছিল না। এর প্রাসাদোপরি গম্বুজটি শহরের অন্যতম উঁচু চূড়া হওয়ায় তা বহুদূর থেকেও সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করত।

১৮৯৭ সালে ১২ জুন ঢাকায় ভূমিকম্প আঘাত হানলে আহসান মঞ্জিলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। আহসান মঞ্জিলের দক্ষিণের বারান্দাসহ ইসলামপুর রোড সংলগ্ন নহবত খানাটি সম্পূর্ণ ভেঙ্গে পড়ে। পরবর্তীকালে নবাব আহসানউল্লাহ তা পুনর্নির্মাণ করেন। ১৯৫২ সালে জমিদারী উচ্ছেদ আইনের আওতায় ঢাকা নওয়াব এস্টেট সরকার অধিগ্রহণ করে। কিন্তু নওয়াবদের আবাসিক ভবন আহসান মঞ্জিল এবং বাগানবাড়িসমূহ অধিগ্রহণের বাইরে থাকে। কালক্রমে অর্থাভাব ও নওয়াব পরিবারের প্রভাব প্রতিপত্তি ক্ষয়িষ্ণু হওয়ার ফলে আহসান মঞ্জিলের রক্ষণাবেক্ষণ দুরূহ হয়ে পড়ে। ১৯৬০’র দশকে এখানে থাকা মূল্যবান দ্রব্যাদি নওয়াব পরিবারের সদস্যরা নিলামে কিনে নেয়।

Rechercher
Catégories
Lire la suite
Autre
The Water You Drink Is Older Than the Sun A Cosmic Story Hidden in Every Drop
It may sound like something out of science fiction, but it’s stunningly true: the water on...
Par Mirshad Sharif 2025-07-30 19:25:24 0 257
Health
মুখে হাসি ফুটলে ডিম্পল বা ছোট্ট খাঁজ হওয়ার রহস্য কী?
মুখে হাসি ফুটলে ডিম্পল বা ছোট্ট খাঁজ হওয়ার রহস্য কী? ডিম্পল বা গালের ছোট খাঁজটা অনেকের কাছেই...
Par Sharif Uddin 2025-07-26 15:29:48 0 307
Autre
THE DISCOVEREY OF DARK OXYGEN
A game-changing discovery has just emerged from the depths of the Pacific Ocean. Scientists have...
Par Mirshad Sharif 2025-08-06 07:33:42 0 447
Health
এটা একটা ক্যান্সার কোষ⚠️
ছবিটি কোনো CGI বা ডিজিটাল আর্ট নয়। এটা আসল ক্যা'ন্সা'র কোষের ছবি। ছবিটি তোলা হয়েছে ইলেকট্রন...
Par Phoenix (Striker) 2025-07-14 14:18:35 0 661
Autre
পৃথিবীর দ্রুততম পোকা: ড্রাগনফ্লাই  ড্রাগনফ্লাই বা 'ওডোনাটা' (Odonata) — দেখতে যতটা শীতল, বাস্তবে ঠিক ততটাই ভয়ঙ্কর দক্ষ শিকারি। ঘন্টায় প্রায় ৫৬ কিমি (৩৫ মাইল) গতিতে উড়তে পারে বলে একে বিশ্বের দ্রুততম পোকা হিসেবে ধরা হয়!
 শুধু গতিই নয়, এরা একটানা প্রায় ১৭,৭০০ কিমি (১১,০০০ মাইল) অভিবাসনও করতে পারে — যা...
Par Yeara Meherish 2025-08-05 18:53:24 0 327
BlackBird Ai
https://bbai.shop