ব্যাকটেরিয়া দিয়ে ২৪ ক্যারেট খাঁটি সোনা তৈরির যুগান্তকারী আবিষ্কার

বিজ্ঞান কোথায় এসে দাঁড়িয়েছে?
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় বিজ্ঞানীরা এমন এক আশ্চর্যজনক ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান পেয়েছেন, যা বিষাক্ত ধাতব আয়নকে প্রক্রিয়াজাত করে খাঁটি ২৪ ক্যারেট সোনা তৈরি করতে সক্ষম! এই ব্যাকটেরিয়ার নাম Cupriavidus metallidurans। এটি স্বাভাবিকভাবেই মাটি ও খনিজ পরিবেশে বাস করে এবং ধাতব পরিবেশে টিকে থাকার অসাধারণ ক্ষমতা রাখে।
কীভাবে সোনা তৈরি করে এই ব্যাকটেরিয়া?
সাধারণ প্রক্রিয়া:
1. প্রাকৃতিক পরিবেশে সোনা সাধারণত gold chloride বা gold ions (Au³⁺) হিসেবে পাওয়া যায়, যা ব্যাকটেরিয়ার জন্য বিষাক্ত।
2. এই ব্যাকটেরিয়াটি বিশেষ ধরনের এনজাইম ব্যবহার করে সোনার আয়নকে খাঁটি ধাতুতে (Au⁰) রূপান্তর করে।
3. রূপান্তরের ফলে সোনার কণাগুলি ধীরে ধীরে জমা হয়ে সোনার স্ফটিক (crystals) তৈরি করে—যা খাঁটি ২৪ ক্যারেট সোনা।
এই আবিষ্কারের গুরুত্ব কী?
পরিবেশবান্ধব সোনা উৎপাদন: প্রচলিত সোনা উত্তোলনের প্রক্রিয়ায় সায়ানাইড ও পারদের মতো বিষাক্ত রাসায়নিক ব্যবহার হয়। ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে সোনা উৎপাদন হলে তা হবে নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব।
ই-ওয়েস্ট থেকে মূল্যবান ধাতু পুনরুদ্ধার: ব্যবহৃত ইলেকট্রনিক যন্ত্রে যে ক্ষুদ্র পরিমাণ সোনা থাকে, তা সহজে পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে এই প্রযুক্তির মাধ্যমে।
খনি ছাড়াই সোনা আহরণ: পরিবেশ ধ্বংস না করেই ব্যাকটেরিয়া দিয়ে সোনা তৈরি করা যাবে, যা খনিজ আহরণের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে।
ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা
চ্যালেঞ্জ:
• উৎপাদনের পরিমাণ এখনো সীমিত।
• প্রক্রিয়া ধীরগতির ও উচ্চ প্রযুক্তি নির্ভর।
সম্ভাবনা:
• জৈব প্রযুক্তির উন্নয়নের মাধ্যমে এই প্রক্রিয়া দ্রুততর ও বৃহৎ পরিসরে ব্যবহারযোগ্য হবে।
• গবেষণায় আরও ব্যাকটেরিয়া আবিষ্কৃত হতে পারে, যারা অন্য মূল্যবান ধাতুও তৈরি করতে সক্ষম।
আমরা এমন এক যুগে বাস করছি যেখানে প্রকৃতির এককোষী প্রাণী দিয়ে তৈরি হচ্ছে মহামূল্যবান ধাতু। এই গবেষণা শুধুমাত্র বিজ্ঞানের বিস্ময়ই নয়, বরং একটি পরিবেশবান্ধব শিল্প বিপ্লবের সম্ভাবনার দিকও উন্মোচন করছে।
