-
-
Explore Our Features
-
-
-
-
-
-
-
-
-
Ai and Tools
-
-
-
-
-
বাংলাদেশের 'আলোর ফেরিওয়ালা' পলান সরকার বেঁচেছিলেন ৯৮ বছর, আলোকিত করে গেছেন অসংখ্য মানুষ ও জনপদকে।

ষষ্ঠ শ্রেণির বেশি পড়া হয়নি তার।
কিন্তু লেখাপড়ার প্রতি ছিল গভীর ভালোবাসা।
যখন যে বই পেয়েছেন পড়েছেন।
বইয়ের প্রতি ভালোবাসা থেকেই নিজে বই কিনে মেধাবী শিক্ষার্থীদের দিতেন তিনি।
একটি-দু’টি করে বই পড়তে দিতেন পাড়ার লোকজনদের।
সেখান থেকেই ক্রমে আশেপাশের গ্রামে বই পড়তে উদ্বুদ্ধ করেন।
নিজে বই নিয়ে ফেরিওয়ালার মতো গ্রাম থেকে গ্রামে খুঁজে বেড়াতেন।
১৯২১ সালের ১ আগস্ট নাটোর জেলার বাগাতিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন পলান সরকার।
বাবা-মা নাম রেখেছিলেন হারেজ উদ্দিন সরকার। মা পলান নামে ডাকতেন।
পাঁচ বছর বয়সে বাবা হায়াত উল্লাহ সরকারকে হারান পলান।
পরে নানা ময়েন উদ্দিন সরকার তাদের নিয়ে আসেন রাজশাহীর বাউসায়।
সেখানকার স্কুলে ভর্তি করে দেন। কিন্তু ষষ্ঠ শ্রেণির পর ইতি টানেন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার।
তবে থেকে যায় বই পড়ার অভ্যাস। প্রথমে এর-ওর কাছ থেকে বই ধার করে এনে পড়তেন।
নিজের অভ্যাস আশোপাশের মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।
ব্রিটিশ আমলেই তিনি যাত্রাদলে যোগ দিয়েছিলেন।
অভিনয় করতেন ভাঁড়ের চরিত্রে।
আবার যাত্রার পাণ্ডুলিপি হাতে লিখে কপি করতেন।
মঞ্চের পেছন থেকে অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সংলাপও বলে দিতেন।
এভাবেই বই পড়ার নেশা জেগে ওঠে তার।
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না পেলেও কখনোই বই পড়া ছাড়েননি তিনি।
বরং নিজের টাকায় বই কিনে পাঠকের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিতেন।
এভাবে পড়ার আন্দোলন গড়ে তোলেন তিনি।
২০০৬ সালের ২৯ ডিসেম্বর বিটিভিতে প্রচারিত ইত্যাদিতে তাকে তুলে আনা হয় আলোকিত মানুষ হিসেবে।
২০০৭ সালে রাজশাহী জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে তাঁর বাড়ির আঙিনায় একটি পাঠাগার করে দেওয়া হয়।
সমাজসেবায় এই অসামান্য অবদানের জন্য তিনি ২০১১ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন।
২০১৪ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ‘ইমপ্যাক্ট জার্নালিজম ডে’ উপলক্ষে প্যারিসভিত্তিক একটি সংগঠন ‘স্পার্ক নিউজ’ ইতিবাচক উদ্যোগের ওপরে লেখা আহ্বান করে।
২০ সেপ্টেম্বর পলান সরকারকে নিয়ে বাংলাদেশ থেকে পাঠানো লেখাটি সারা পৃথিবীর ৪০টি প্রধান দৈনিকে ছাপা হয়।
এর মধ্যে ১০টি পত্রিকার প্রধান শিরোনাম হয় আলোর ফেরিওয়ালা।
পলান সরকার নিজ এলাকায় আগে থেকেই ‘বইওয়ালা দাদুভাই’, ‘আলোর ফেরিওয়ালা’ নামে পরিচিত ছিলেন।
এ ঘটনার পর তার খ্যাতি ছড়িয়ে যায় বিশ্বব্যাপী।
এরপর তার ওপর নির্মিত হয় নাটক ও বিজ্ঞাপন চিত্র।
শিক্ষা বিস্তারের অনন্য আন্দোলন গড়ে তোলায় ইউনিলিভার বাংলাদেশ পলান সরকারকে ‘সাদা মনের মানুষ’ খেতাবে ভূষিত করে।
পলান সরকার খুব গুছিয়ে কথা বলতে পারতেন।
কথা বলে মানুষকে হাসাতে পারতেন। কাঁদাতেও পারতেন।
তার বই পড়ার আন্দোলন সম্পর্কে ২০১৬ সালের নভেম্বরে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে পলান সরকার বলেছিলেন, ‘আমি হাঁটতে হাঁটতে এই সমাজটাকে বদলানোর আন্দোলনে নেমেছি।
যত দিন আমি হাঁটতে পারি, তত দিন আমার আন্দোলন চলবেই।
আমি হাঁটতে হাঁটতে মানুষের বাড়িতে বই পৌঁছে দেবই। যারা পাঠাগারে আসবেন, তারা ইচ্ছেমতো বই পড়বেন।
তবে আমার বয়স হয়েছে। জানি না আর কত দিন হাঁটতে পারবো।’
২০১৯ সালের ১লা মার্চ পলান সরকার ইন্তেকাল করেন।
