ডিঙো ডিফেন্স

ডিঙ্গো ফেন্স (Dingo Fence) হলো অস্ট্রেলিয়ার একটি বিশাল লম্বা বেড়া, যা মূলত ডিঙ্গো (এক ধরনের বন্য কুকুর) থেকে ভেড়ার পালকে রক্ষা করার জন্য তৈরি করা হয়েছিল। এটি বিশ্বের দীর্ঘতম মানবসৃষ্ট কাঠামো গুলোর মধ্যে অন্যতম, যার দৈর্ঘ্য প্রায় ৫,৬১৪ কিলোমিটার (৩,৪৮৮ মাইল)।
ডিঙ্গো ফেন্সের উদ্দেশ্য
অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ-পূর্ব অংশে প্রচুর পরিমাণে ভেড়ার চাষ হয়। ডিঙ্গোরা এই ভেড়ার পালের জন্য একটি বড় হুমকি ছিল, কারণ তারা ভেড়া শিকার করে কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতি করত। তাই ডিঙ্গোদের ভেড়ার চারণভূমি থেকে দূরে রাখার জন্য ১৮৮০-এর দশকে এই বেড়া তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল এবং ১৯৫০-এর দশকে এটি সম্পূর্ণ হয়।
বেড়ার বৈশিষ্ট্য
* দৈর্ঘ্য: এটি কুইন্সল্যান্ডের জিম্বুর থেকে শুরু হয়ে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার নুলারবর সমভূমি পর্যন্ত বিস্তৃত। এটি কুইন্সল্যান্ড, নিউ সাউথ ওয়েলস এবং দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার মধ্য দিয়ে গেছে।
* গঠন: বেড়ার বেশিরভাগ অংশ প্রায় ১.৮ মিটার (৬ ফুট) উঁচু তারের জাল দিয়ে তৈরি। দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার কিছু অংশে বহু-তারের বৈদ্যুতিক বেড়াও ব্যবহার করা হয়েছে।
* রক্ষণাবেক্ষণ: বেড়ার উভয় পাশে প্রায় ৫ মিটার (১৬ ফুট) চওড়া জায়গা পরিষ্কার রাখা হয় যাতে ডিঙ্গোরা গাছপালা ব্যবহার করে বেড়া অতিক্রম করতে না পারে। কিছু অংশে রাতে আলো জ্বালানোর ব্যবস্থাও আছে।
* ক্রসিং পয়েন্ট: যেখানে মহাসড়ক বা প্রধান রাস্তাগুলি বেড়া অতিক্রম করেছে, সেখানে ক্যাটল গ্রিড (Cattle Grid) ব্যবহার করা হয়, যাতে যানবাহন চলাচল করতে পারে কিন্তু প্রাণীরা সহজে পার হতে না পারে।
পরিবেশগত প্রভাব:
ডিঙ্গো ফেন্স ভেড়ার পালকে রক্ষা করতে সফল হলেও, এর পরিবেশগত কিছু প্রভাব রয়েছে। এটি ভূখণ্ডের ইকো সিস্টেমকে দু'ভাগে ভাগ করেছে, যা বন্যপ্রাণীদের চলাচল এবং জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করেছে।
ডিঙ্গোদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের ফলে বেড়ার ভেতরের দিকে ক্যাঙ্গারু এবং অন্যান্য প্রাণীর সংখ্যা বেড়ে গেছে, যা পরিবেশের ভারসাম্যকে বদলে দিয়েছে।
সংক্ষেপে, ডিঙ্গো ফেন্স অস্ট্রেলিয়ার কৃষি অর্থনীতির সুরক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে, কিন্তু এর দীর্ঘমেয়াদী পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।