মনুষ্যত্ব শুধু একটা শব্দ মাত্র, যার অস্তিত্ব বিলীন 🥺⚠️

0
541

সার্বিয়ার এক সুন্দরী তরুণী, নাম মারিয়া আব্রামোভিচ, ১৯৭৪ সালে এক ভয়াবহ সত্যের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছিল পৃথিবীকে, একটি এক্সপেরিমেন্টের মাধ্যমে। ওই এক্সপেরিমেন্টের নাম ছিল রিদম জিরো। লোকজনে ভর্তি একটি রুমের ভিতর মারিয়া স্ট্যাচুর মতোন দাঁড়িয়ে ছিল। সামনে টেবিলে রাখা অপ্রাসঙ্গিক, অগুরুত্বপূর্ণ, একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কহীন বাহাত্তরটি জিনিস — লিপস্টিক, কেক, ছুরি, কাঁচি, গোলাপ, পিস্তল সহ আরো অনেক কিছু। বলা হয়েছিল, রাত আটটা থেকে দুইটা পর্যন্ত ছয় ঘণ্টা মানুষ যা ইচ্ছা তাই করতে পারবে মারিয়ার সঙ্গে। অনুমতিপত্রে স্বাক্ষর ছিল মারিয়ার। প্রথম আড়াই ঘণ্টা মারিয়াকে ফুল দিয়েছিল মানুষ। চুল আঁচড়ে দিয়েছিল, ভালোবেসেছিল।

সময় যতই গড়াল, লোকজন ততই হিংস্র হয়ে উঠল। শেষ দুই ঘণ্টায় মারিয়াকে থাপ্পড় মারা হয়, পরনের জামাকাপড় ছিঁড়ে নগ্ন করে ফেলা হয়, ছুরি দিয়ে শরীরে আঘাত করা হয়, এমনকি শেষদিকে একজন পিস্তল নিয়ে মারিয়ার গলা চেপে ধরে ট্রিগার টানতে যাচ্ছিল প্রায়!

মারিয়া কি ওদের কোনো ক্ষতি করেছিল? ওদের কারোর জায়গা জমি নিজের বলে দাবি করেছিল? ওদের কাউকে মারধর করেছিল? কারো সাথে প্রতারণা করেছিল? সে তো কাউকে চিনতও না। কিন্তু ওরা মারিয়াকে থাপ্পড় মেরেছিল, গায়ে থুথু ছিটিয়েছিল, পরনের পোশাক ছিঁড়ে ফেলেছিল, একের পর এক আঘাতে করেছিল ক্ষতবিক্ষত! এক্সপেরিমেন্ট শেষে মারিয়া যখন হেঁটে চলে যাচ্ছিল, তখন তাকে অপমান করা একটি লোকও চোখের দিকে তাকাতে পারছিল না তার, লজ্জায়।

১৯৯৮ সালে জার্মানিতেও প্রায় একই রকম একটি ঘটনা ঘটে। চৌদ্দজন লোককে স্বেচ্ছায় টাকার বিনিময়ে একটি সাইকোলজিক্যাল পরীক্ষার জন্য নির্বাচন করা হয় যার নাম ছিল দাস এক্সপেরিমেন্ট। এরপর ওই লোকগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। ওদের কাছে সময় পনের দিন। এই পনের দিন ওদের একভাগ কারাগারের কয়েদি হিসেবে অভিনয় করবে, বাকিরা থাকবে কারাগারের গার্ড। সবার অজান্তে সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে পরিস্থিতি মনিটর করা হবে। শর্ত ছিল, কোনো গার্ড কোনো কয়েদিকে শারীরিকভাবে আঘাত করতে পারবে না। অর্থাৎ কোনরকম ভায়োলেন্স অ্যালাউড না।

প্রথম প্রথম সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও ২ দিন পার হওয়ার আগেই গার্ডরা কয়েদিদের ওপর ক্ষমতা প্রয়োগ করা শুরু করে। শেষদিকে তো পুরো এক্সপেরিমেন্টেরই বারোটা বেজে যায়।

লক্ষ্য করুন, ওরা জানে ওরা কেউই আসল গার্ড নয়। যারা কারাগারে বন্দি, তারাও সত্যিকারের কয়েদি নয়। ওদের শুধু অভিনয় করতে বলা হয়েছে কয়েকটা দিনের জন্য। অথচ বাহাত্তর ঘন্টা পার হওয়ার আগেই শুধুমাত্র বন্দিদের ওপর নিজেদের ক্ষমতা জাহির করার জন্য ওরা কারাগারের লাইট অফ করে, গ্যাস ছেড়ে, কয়েদিদের জামাকাপড় খুলে উলঙ্গ করে শোয়ার একমাত্র বিছানাটাও বের করে নেয় যাতে কেউ ঘুমাতে না পারে। শুধু তাই নয়, সময় গড়ানোর সাথে সাথে গার্ডের দল কয়েদিদের হাত পা বেঁধে নির্যাতন করে, তাদের মুখের ওপর প্রস্রাব করে, এক নারী কয়েদিকে ধর্ষণের চেষ্টা করে এবং এমনকি একজনকে মেরে ফেলেছিল প্রায়!

মানুষের মনস্তত্ত্ব সম্পর্কে একটু পড়াশোনা করলে আপনি জানতে পারবেন, মানুষ অন্যকে ঘৃণা করে, অপছন্দ করে, হত্যা করে নানা কারণে। ওর বুদ্ধি বেশি, আমার কম কেন? ওর টাকা বেশি, আমার কম কেন? ওর সম্মান বেশি, আমার কম কেন?

রিদম জিরো এবং দাস এক্সপেরিমেন্ট আপনাকে শেখাবে, একটা মানুষের কাউকে ঘৃণা, অপছন্দ বা অত্যাচার করতে আসলে কোনো কারণ লাগে না। একজন মানুষ কোনোরকম কারণ ছাড়াই আরেকজনকে হিংসা করে, ক্ষতি করে, তার বদনাম রটায়, কেননা মানুষের স্বভাবই অমন। মানুষ কোনোদিনই শান্তিকামী ছিল না, নয় এবং থাকবেও না। সে সবসময়ই হিংস্র, লোভী, বর্বর এবং ভণ্ড। তাহলে প্রশ্ন জাগে, এই দুনিয়ায় কি সত্যিকারের ভালো মানুষ বলে কেউ নেই? হ্যাঁ, আছে, হাতেগোনা অল্পকিছু। বাকিরা — যাদের আপনি ভালো মনে করেন — হয় তারা সুযোগের অভাবে ভালো, নয়তো ভেতরের খারাপ প্রবৃত্তি জোর করে দমিয়ে রেখে ভালো। কাজেই সাবধান, ওই প্রবৃত্তিগুলো কিন্তু বের হয়ে আসতে পারে যেকোনো মুহূর্তে!

Sad
2
Buscar
Categorías
Read More
Other
এ সময় রফিক আজাদের একটি কবিতা নিয়ে হইচই পড়ে যায়। 'ভাত দে হারামজাদা'
চুয়াত্তরের আগস্ট-সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের বেশ কিছু অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়।  এর সঙ্গে...
By Yeara Meherish 2025-07-29 06:09:00 0 134
Tech
একটি নিউক্লিয়ার বিষ্ফোরণ ।ছবিটি তোলা হয়েছে বিষ্ফোরণের ১ মিলিসেকেন্ডের কম সময়ে।
'ভয়ংকর সুন্দর' কথার বাস্তব উদাহরণ এই ছবি! সাল ১৯৫২। MIT এর বিজ্ঞানীরা নেভাডায় একটি পারমাণবিক...
By Mehrish yeara 2025-08-01 19:34:00 0 210
Tech
শুধু গাছ লাগালেই গ্লোবাল ওয়ার্মিং কমে যাবে? 
একুশ শতকের এই দিনে শিল্প বিপ্লবের মহড়া যে হারে বাড়ছে, তাতে স্পষ্টত গ্লোবাল ওয়ার্মিং আর থেমে...
By Sharif Uddin 2025-07-27 11:20:28 0 193
Other
গঙ্গা, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, গড়াই আর হালদার মতো বাংলাদেশের প্রধান নদীগুলো এখন তাদের পরিবেশগত ভারসাম্য হারাতে বসেছে।এভাবে চলতে থাকলে আগামী ২০–২৫ বছরের মধ্যে এই অঞ্চলের খাদ্য নিরাপত্তা, পানীয় জল ও বাসযোগ্য পরিবেশ—সবকিছু হুমকির মুখে পড়বে।
বাংলাদেশ মানেই নদীঘেরা জীবন। কিন্তু আজ সেই নদীগুলোই নীরবে সংকটে পড়েছে। সাম্প্রতিক এক আন্তর্জাতিক...
By Mirshad Sharif 2025-08-06 07:15:05 0 289
Other
প্রকৃতির গোপন স্থপতি, কাঠবিড়ালিরা যেভাবে গড়ে তোলে নতুন বনভূমি তা আমাদের ধারণারও বাহিরে।
হয়তো কোনো এক শীতের সকালে আপনি একটি কাঠবিড়ালিকে দেখলেন ব্যস্ত হাতে একটি বাদাম মাটিতে পুঁততে। আপনি...
By Yeara Meherish 2025-08-09 06:15:29 0 217
BlackBird Ai
https://bbai.shop