বিমান বাহিনীর অভ্যন্তরের ‘র’ নেটওয়ার্ক ফাঁস

0
372

ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট ২০২৪ দুপুরে কুর্মিটোলা বিমানবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যান। তার পালিয়ে যাওয়ার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। সেই ভিডিও দৃশ্যের সঙ্গে সবাই পরিচিত। হাসিনার পালানোর এই একটিমাত্র ছবি। কে তুলেছেন এই ছবি এবং কে ধারণ করেছেন এই ভিডিও? সঙ্গে সঙ্গে নেট দুনিয়ায় ভিডিওটি আবার ছড়িয়ে দিলোই বা কে?

 

এয়ার ইন্টেলিজেন্স এই ঘটনার অনুসন্ধান এবং ছবি ধারণকারী ব্যক্তিকে ধরতে গিয়ে উদঘাটন করল বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর অভ্যন্তরের ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর এক নেটওয়ার্ক। এই নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতায় গ্রেপ্তার বিমান বাহিনীর স্কোয়াড্রন লিডার আবদুল্লাহ ইবনে আলতাফকে ইতোমধ্যে কোর্ট মার্শাল করে ১০ বছরের সাজা দেওয়া হয়েছে। 

 

তিনি এখন কাশিমপুর কারাগারের হাই সিকিউরিটি সেলে বন্দি আছেন। ‘র’ সংশ্লিষ্টতায় বিমান বাহিনীর উচ্চপদস্থ ৬ কর্মকর্তা- এয়ার ভাইস মার্শাল এম এ আউয়াল হোসেন, এয়ার ভাইস মার্শাল জাহিদুল সাঈদ, এয়ার কমডোর মোহাম্মদ আমিনুল হক, গ্রুপ ক্যাপ্টেন আবদুল্লাহ আল ফারুক, গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ শামীম ও উইং কমান্ডার সাইয়েদ মোহাম্মদকে শনাক্ত করে তাদেরকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে।

 

বাংলাদেশ এয়ার ফোর্সের ভেতরে ‘র’-এর শ্যাডো রিক্রুটার হিসেবে কাজ করতেন স্কোয়াড্রন লিডার আবদুল্লাহ ইবনে আলতাফ। এয়ার ইন্টেলিজেন্স তাকে আইডেন্টিফাই করার পর ২০২৪ সালের ১৪ আগস্ট ডিজিএফআইর হাতে তিনি গ্রেপ্তার হন। 

 

তার ব্যক্তিগত গাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয় ভারতীয় প্যারা কমান্ডোর ব্যবহার করা দুটি এফএন-৯০ এবং সিগপি-২২৯ রাইফেল ও এক কোটি নগদ টাকাসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইস। ভারতীয় ‘র’-এর সক্রিয় এই এজেন্টকে শনাক্ত করা সম্ভব হয় শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার ছবি ধারণ করা বিমান বাহিনীর কর্মকর্তাকে ধরতে গিয়ে। 

 

বিমান বাহিনীর কুর্মিটোলা এয়ারবেইসের অফিসার্স মেসের জানালা থেকে ছবিটি তুলেছিলেন ফ্লাইট লে. রিফাত আশরাফী। আর ছবিটি নেটে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তাহসিফ সুরি। তাদের দুজনকেই বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। 

 

শেখ হাসিনার পলায়ন দৃশ্য কেবল এক অ্যাঙ্গেলের ভিডিও থেকেই দেখা যায়। এই ছবির সূত্র ধরে শুরু হয় এয়ার ইন্টেলিজেন্সের গোপন তদন্ত। এতে পরিষ্কার হয়ে যায়, এই ভিডিও করেছেন মাত্র একজন এবং সেটা বেশ দূর থেকে। 

 

ভিডিও করার অ্যাঙ্গেল, অবস্থান ও ক্যামেরা প্যান করার পর্যবেক্ষণ করে এয়ার ইন্টেলিজেন্স কোন কক্ষ থেকে এবং কে এই ভিডিও দৃশ্য ধারণ করেন তা আইডেন্টিফাই করতে সক্ষম হয়। ফ্লাইট লে. রিফাত আশরাফীকে ধরা হলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, তার অফিসের রুমের জানালা থেকে তিনি ছবিটি তুলেছেন। 

 

শেখ হাসিনা বিমান বাহিনীর সি-১৩০-জে বিমানে করে সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে কলকাতা হয়ে দিল্লি যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তার পলায়নের এই রুট এবং বিমানে করে যাচ্ছেন সে কথা যাতে জানাজানি না হয়ে যায় সেজন্য ছবিটি তোলা ও ভাইরাল করা হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল শেখ হাসিনা হেলিকপ্টারে করে ত্রিপুরা পালিয়ে যাচ্ছেন-আগেই এই ন্যারেটিভকে এস্টাবলিশড করা।

 

ছবি ধারণকারী রিফাতের মোবাইল ফরেনসিক করার সময় তদন্তকারী এয়ার ইন্টেলিজেন্স আবদুল্লাহ ইবনে আলতাফের যোগসূত্রতা আবিষ্কার করা হয়। জানা যায়, তিনি ‘র’-এর সক্রিয় এজেন্ট।

 

এয়ার ইন্টেলিজেন্স প্রথমে আবদুল্লাহ ইবনে আলতাফকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তাদের তদন্তে কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে পড়ে। বড় ঘটনা বুঝতে পেরে এয়ার ইন্টেলিজেন্স বিষয়টি ডিজিএফআইর নজরে আনে। 

 

ডিজিএফআই ১৪ আগস্ট ২০২৪ তাকে আটক করে বিষয়টি সম্পর্কে অধিকতর তদন্ত শুরু করে। তদন্তে ‘র’-এর সঙ্গে আবদুল্লাহ ইবনে আলতাফের জড়িত থাকা প্রমাণিত হয়। কোর্ট মার্শালে তার ১০ বছরের জেল হয়। বর্তমানে তিনি কাশিমপুর কারাগারে রয়েছেন। 

 

আবদুল্লাহ ইবনে আলতাফের দেওয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে ‘র’-এর সঙ্গে জড়িত রয়েছেন বিমান বাহিনীর এমন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের শনাক্ত করা হয়। ইতোমধ্যে ৬ কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে।

 

এ ঘটনার তদন্তে শুধু এয়ার ফোর্সের ৬ জন অফিসারই নন, আরো ‘পারমানেন্টলি সাসপেন্ড’ দেখানো হয়েছে ৪ জন পুলিশ কর্মকর্তাকে। এরা হলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিরপুর ডিভিশনের তৎকালীন ডেপুটি কমিশনার জসিম উদ্দিন মোল্লাহ, গুলশান ডিভিশনের অ্যাডিশনাল ডেপুটি কমিশনার রফিকুল ইসলাম, যাত্রাবাড়ী জোনের ট্রাফিক অ্যাসিসট্যান্ট কমিশনার তানজিল আহমেদ ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অ্যাসিসট্যান্ট সুপারিন্টেডেন্ট মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম। 

 

এরা সবাই ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালিয়ে মানুষ হত্যা ও ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করেছেন। এদের স্টেশন মাস্টার ছিলেন গুলশান জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার ইফতেখার মাহমুদ (ডিবি)। 

 

এই পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন বিমান বাহিনীতে ‘র’-এর সক্রিয় এজেন্ট স্কোয়াড্রন লিডার আবদুল্লাহ ইবনে আলতাফের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আর এদের মূল কমান্ডার ছিলেন বাংলাদেশে ‘র’ নেটওয়ার্কের অন্যতম প্রধান ব্যক্তি সেনা কর্মকর্তা লে. জেনারেল মুজিবুর রহমান, যিনি জেনারেল মুজিব নামে পরিচিত।

 

উচ্চ পর্যায়ের তদন্তে উদঘাটিত হয়েছে- ভারতীয় ইন্টেলিজেন্সের পক্ষে শ্যাডো এজেন্ট হিসেবে কাজ করায় ‘র’ স্কোয়াড্রন লিডার আবদুল্লাহ ইবনে আলতাফকে একটি ব্র্যান্ড নিউ হুন্দাই গাড়ি উপহার দিয়েছে। তাছাড়া ‘র’-এর পক্ষ থেকে তার কাছে নিয়মিত সুন্দরী নারী পাঠানো হতো।

 

৫ আগস্ট ২০২৪ অস্ত্রসহ ইফতেখার আবদুল্লাহ ইবনে আলতাফের সহায়তায় এয়ার ফোর্সের বাসভবন ফ্যালকন টাওয়ারে আশ্রয় নিয়ে লুকিয়ে ছিলেন। এদের মধ্যে আবদুল্লাহ ইবনে আলতাফের ‘র’ কানেকশন ফাঁস হয়ে যায় এবং তিনি গ্রেপ্তার হন। একই কানেকশনে গ্রেপ্তার হন পুলিশ কর্মকর্তা ইফতেখার।

Love
Wow
2
Buscar
Categorías
Read More
Other
Top 5 tourist places in Bangladesh !
1 Cox's Bazar 2 Rangamati 3 Sundarban 4 Sajek Valley  5 Lalbagh Fort
By Steve Harrington 2025-07-17 20:56:17 0 603
Other
China is building a 1 kilometer-wide solar Power station in Space.
China’s Giant Leap: A Solar Power Plant… in Space! 🚀 Imagine a solar station so...
By Mirshad Sharif 2025-08-04 19:38:37 0 443
Other
মায়ের একটি সাধারণ চুমু কেবল আদরের প্রকাশ নয়, এটি মা ও শিশুর মধ্যে এক গভীর বৈজ্ঞানিক এবং বিস্ময়কর সংযোগ তৈরি করে।
মায়ের মস্তিষ্কে যা ঘটে: যখন একজন মা তার সন্তানকে চুমু খান, তখন তার মস্তিষ্কের প্লেজার সার্কিট...
By Sharif Uddin 2025-07-30 20:09:20 0 251
Other
আগ্নেয়গিরিতে কেন ফেলা হয় না পৃথিবীর সব আবর্জনা?
অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে—পৃথিবীর বিপুল পরিমাণ আবর্জনা যদি সক্রিয় আগ্নেয়গিরিতে ফেলে দেওয়া যায়,...
By Mirshad Sharif 2025-08-02 18:31:29 0 219
Other
🧩 We finally found the missing 40% of matter in the universe
it was right under our noses all along. For years, astronomers knew something wasn’t...
By Sharif Uddin 2025-08-03 04:18:25 0 295
BlackBird Ai
https://bbai.shop