ই-সিগারেট কি সত্যিই নিরাপদ? – বিজ্ঞানের চোখে বিশ্লেষণ

সিগারেট ধূমপানে শরীরে প্রবেশ করে প্রায় ৭০০০ ধরনের রাসায়নিক, যার মধ্যে অনেকগুলোই ক্যান্সার সৃষ্টিকারী (কার্সিনোজেনিক)। তামাক পোড়ানোর ফলে তৈরি হয় টার ও কার্বন মনোক্সাইডের মতো মারাত্মক বিষাক্ত উপাদান, যা হৃদযন্ত্র, শ্বাসতন্ত্র ও অন্যান্য অঙ্গের ক্ষতি করে। বহু বছর ধরে এই উপাদানগুলোকে সরাসরি ফুসফুস ক্যান্সার, হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের জন্য দায়ী করা হয়েছে। তাই বিকল্প হিসেবে অনেকেই আজকাল ই-সিগারেট বা ভ্যাপিং ডিভাইসের দিকে ঝুঁকছেন।
ই-সিগারেট সাধারণত একটি ব্যাটারিচালিত যন্ত্র, যা একটি তরল (ই-লিকুইড) উত্তপ্ত করে এরোসল তৈরি করে। এতে তামাক পোড়ানো হয় না, ফলে প্রচলিত সিগারেটের অনেক ক্ষতিকর যৌগ অনুপস্থিত থাকে। তবে ই-সিগারেটকেও নিরাপদ বলা যায় না। বেশিরভাগ ই-লিকুইডে উচ্চমাত্রার নিকোটিন থাকে, যা দ্রুত আসক্তি তৈরি করে এবং হৃদপিণ্ড ও মস্তিষ্কে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। ভ্যাপারের ভিতরে থাকা রাসায়নিক যেমন ফরমালডিহাইড ও অ্যাসিটালডিহাইড ফুসফুসের কোষে প্রদাহ ও কোষধ্বংস ঘটাতে পারে।
২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ই-সিগারেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে দেখা দেয় একটি রহস্যজনক ফুসফুস রোগ – যার নাম দেওয়া হয় EVALI (E-cigarette or Vaping product use-Associated Lung Injury)। অনেকেই গুরুতরভাবে অসুস্থ হন, এবং মৃত্যুও ঘটে। এ ঘটনার পর থেকেই গবেষকরা ই-সিগারেটের ঝুঁকি নিয়ে নতুন করে চিন্তা শুরু করেন। ফলে বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে এখন এটি স্পষ্ট: ই-সিগারেট হয়তো প্রচলিত সিগারেটের চেয়ে কিছুটা কম ক্ষতিকর, তবে সেটি কোনোভাবেই "নিরাপদ" নয়। ধূমপান ছাড়ার চেষ্টা করা হলে সেটি যেন সাময়িকভাবে ই-সিগারেট হয়ে শুরু হলেও, চূড়ান্ত লক্ষ্য হওয়া উচিত একেবারে নিকোটিন ও ধোঁয়ামুক্ত জীবনধারা।
