১ গ্রাম অ্যান্টিম্যাটার তৈরি করতে খরচ হতে পারে প্রায় ৬২.৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার

0
269

পৃথিবীর সবচেয়ে দামী পদার্থের কথা বললে আমাদের চোখে ভেসে ওঠে হীরা, স্বর্ণ কিংবা প্লাটিনামের মতো নাম। কিন্তু বিজ্ঞানের জগতে এদের সবাইকে পেছনে ফেলে সবচেয়ে দামী পদার্থ হিসেবে উঠে আসে এক ভয়ংকর, অথচ বিস্ময়কর নাম—অ্যান্টিম্যাটার।

 

অ্যান্টিম্যাটার এমন এক পদার্থ, যার প্রতিটি কণা আমাদের পরিচিত জগতের কণাগুলোর বিপরীত—অর্থাৎ, ইলেকট্রনের বিপরীতে পজিট্রন, প্রোটনের বিপরীতে অ্যান্টিপ্রোটন। এরা একে অপরের সংস্পর্শে এলেই সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে যায় এবং সেই সঙ্গে নির্গত হয় বিশাল পরিমাণ শক্তি। এই ধ্বংসপ্রক্রিয়াকে বলে "annihilation", এবং এখানেই অ্যান্টিম্যাটারের ভয়াবহ শক্তি ও মূল্য লুকিয়ে আছে।

 

বর্তমানে বিজ্ঞানীরা অ্যান্টিম্যাটার কৃত্রিমভাবে উৎপাদন করতে পারেন, কিন্তু তা অবিশ্বাস্যরকম কঠিন ও ব্যয়বহুল। অ্যান্টিম্যাটার উৎপাদনের জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পার্টিকেল অ্যাক্সেলারেটর, যেমন CERN-এর Large Hadron Collider ব্যবহার করা হয়। একক পজিট্রন বা অ্যান্টিপ্রোটন তৈরি করতে প্রতি কণায় লাগে বিপুল পরিমাণ শক্তি ও সময়, এবং উৎপাদনের পর তা সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজন হয় বিশেষ চৌম্বক ফাঁদ ও উচ্চ ভ্যাকুয়ামযুক্ত চেম্বার। কারণ, অ্যান্টিম্যাটার যেকোনো সাধারণ পদার্থের সংস্পর্শে এলেই তা সাথে সাথে ধ্বংস হয়ে যায়।

 

ন্যাসার হিসাব অনুযায়ী, ১ গ্রাম অ্যান্টিম্যাটার তৈরি করতে খরচ হতে পারে প্রায় ৬২.৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা এককভাবে পৃথিবীর মোট জিডিপি থেকেও বেশি। ২০০৬ সালে Fermilab মাত্র ১০ বিলিয়ন অ্যান্টিপ্রোটন তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিল, যার মোট ভর ছিল ১ ন্যানোগ্রামেরও কম। এ থেকে বোঝা যায়, ১ গ্রাম অ্যান্টিম্যাটার তৈরি করা কতোটা কল্পনাতীত।

অ্যান্টিম্যাটারের এই বিশাল দামের পেছনে মূলত তিনটি কারণ কাজ করে—প্রথমত, এটি উৎপাদনে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ও শক্তির পরিমাণ বিপুল। দ্বিতীয়ত, এটি অত্যন্ত অস্থির ও সংরক্ষণে কঠিন। তৃতীয়ত, অ্যান্টিম্যাটার এখনও শুধুই গবেষণার পর্যায়ে, কোনো ব্যবহারিক প্রয়োগ নেই। ফলে এর প্রাপ্তি অত্যন্ত সীমিত এবং একান্ত গবেষণাগারে সীমাবদ্ধ।

তবে এই পদার্থের শক্তি প্রশ্নাতীত। ১ গ্রাম অ্যান্টিম্যাটার ও ১ গ্রাম ম্যাটার একত্রে annihilate হলে যে পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন হবে, তা প্রায় ৯×১০¹³ জুল, যা হিরোশিমায় ফেলা পারমাণবিক বোমার শক্তির দ্বিগুণেরও বেশি। এই শক্তি দিয়ে গোটা একটি শহর ধ্বংস করে দেওয়া সম্ভব।

 

অ্যান্টিম্যাটার নিয়ে গবেষণা এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলেও, ভবিষ্যতে এটি যদি কার্যকরভাবে উৎপাদন ও সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়, তবে তা হয়ে উঠতে পারে মহাকাশযানের জ্বালানি, ক্যান্সার চিকিৎসার অস্ত্র, কিংবা অন্যকোনো বৈপ্লবিক প্রযুক্তির ভিত্তি। তবে এই ভবিষ্যৎ কতটা বাস্তবায়নযোগ্য তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে, কারণ এর বিপদের দিকটিও কম নয়।

অ্যান্টিম্যাটার তাই বিজ্ঞানীদের কাছে যেমন এক স্বপ্নময় সম্ভাবনা, তেমনি এক দুঃস্বপ্নের মতো বাস্তবতা। দামের দিক থেকে এটি পৃথিবীর সবচেয়ে মহামূল্য সম্পদ, আর শক্তির দিক থেকে সবচেয়ে বিপজ্জনক। বস্তু জগতের এই উল্টোপিঠ আমাদের শেখায়—বিজ্ঞানের শক্তি সীমাহীন, কিন্তু তা ব্যবহারের দায়িত্বও ঠিক ততটাই গুরুতর।

Rechercher
Catégories
Lire la suite
Autre
নার-হোয়েল (Narwhal) হলো একটি বিরল সামুদ্রিক তিমি, যাকে প্রায়ই "সমুদ্রের ইউনিকর্ন" বলা হয়।
 এদের সবচেয়ে বিস্ময়কর বৈশিষ্ট্য হলো পুরুষ নার-হোয়েলের কপাল থেকে বেরিয়ে থাকা লম্বা, সর্পিল...
Par Yeara Meherish 2025-08-02 20:25:57 0 238
Autre
লালবাগ কেল্লার ইতিহাস
লালবাগ কেল্লা, ঢাকার ইতিহাসের একটি অমর অংশ। এটি বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী একটি স্থাপনা, যা ১৭শ...
Par Nurul Hasan 2025-07-17 20:31:01 0 520
Health
এক শিশুর জন্ম ৩জন থেকে ⚠️
শুনে একটু অদ্ভুদ লাগতে পারে, ১ টি শিশুর ডিএনএ এসেছে তিনজন মানুষ থেকে। বাবা-মা তো আছেই, সঙ্গে আছেন...
Par Bigganneshi 2025-07-19 08:21:43 0 536
Autre
ধেঁয়ে আসছে দেশের দিকে শক্তিশালী মৌসুমি বৃষ্টি বলয় " ঈশান।
 নোট : বলে রাখা ভালো, এই বৃষ্টি বলয়টি দেশের উত্তর অঞ্চলের জেলা গুলোতে বেশি প্রভাব ফেলবে ও...
Par Mirshad Sharif 2025-08-02 19:57:21 0 233
Autre
COULD AN ANCIENT MEGA SHARK STILL LURK IN THE DEEP SEAS
Could the mighty megalodon still swim in the deep sea? Here’s what science has to say. The...
Par Sharif Uddin 2025-08-06 07:23:34 0 505
BlackBird Ai
https://bbai.shop