এক শিশুর জন্ম ৩জন থেকে ⚠️

শুনে একটু অদ্ভুদ লাগতে পারে, ১ টি শিশুর ডিএনএ এসেছে তিনজন মানুষ থেকে। বাবা-মা তো আছেই, সঙ্গে আছেন আরেকজন ডিএনএ দাতা নারী। আর এটা সম্ভব হয়েছে ব্রিটেনের একদল গবেষকের হাতে।
সম্প্রতি ইন-ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন বা IVF পদ্ধতির মাধ্যমে যুক্তরাজ্যে জন্ম নিয়েছে ৮টি সুস্থ শিশু। এই পদ্ধতিতে ব্যবহার করা হয়েছে তিনজনের জিনগত উপাদান। উদ্দেশ্য মা যদি এমন কোনো জিনগত রোগ বহন করেন যা সন্তানকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, তাহলে সেই ঝুঁকি কাটিয়ে তোলা।
আমাদের দেহের প্রতিটি কোষে একটা ক্ষুদ্র শক্তিকেন্দ্র মাইটোকন্ড্রিয়া থাকে। যেটা মায়ের কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে আসে। সমস্যা তখনই হয় যখন মায়ের মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএতে ত্রুটি থাকে। এতে জন্ম হতে পারে নানা জটিল রোগ যেমন চোখের সমস্যা, মাংসপেশি দুর্বলতা, এমনকি শিশু বয়সেই মৃত্যু। প্রতি ৫,০০০টি জন্মের মধ্যে একটিতে মাইটোকন্ড্রিয়াল রোগ দেখা যায়।
এ রোগের নিরাময়যোগ্য কোনো চিকিৎসা নেই। তাই বিজ্ঞানীরা চেষ্টা করেছেন কীভাবে এমন সন্তান জন্ম দেওয়া যায় যাতে রোগটি সঞ্চার না হয়। এজন্য সমাধান হিসেবে সামনে আসে ৩-প্যারেন্ট বেবি টেকনিক অর্থাৎ আইভিএফ।
পদ্ধতিটা একটু জটিল তবে সহজ ভাবে বললে এই পদ্ধতিতে মায়ের ডিম্বাণু থেকে নিউক্লিয়াস (প্রধান ডিএনএ) নেওয়া হয় এবং অন্য এক নারীর (যার মাইটোকন্ড্রিয়া স্বাস্থ্যকর) ডিম্বাণু থেকে মাইটোকন্ড্রিয়া নেওয়া হয়। তারপর তা মিলিয়ে দেওয়া হয় বাবার শুক্রাণুর সঙ্গে। এইভাবে তৈরি হয় এক নতুন এবং নিরাপদ জিনগত সমন্বয়।
তবে একটা ভুল ধারণা আছে। অনেকে এই শিশুদের ‘তিন অভিভাবকের সন্তান’ বলে। বাস্তবতা হলো ডোনার নারীর ডিএনএ মাত্র ০.১% থাকে। তার কোনো সামাজিক বা আইনগত অভিভাবকত্ব নেই। তাই শব্দটি ব্যবহার যেমন বিভ্রান্তিকর, তেমনই বাড়াবাড়িও বটে।
এই গবেষণাটি হয়েছিল নিউক্যাসল ফার্টিলিটি সেন্টারে। ২২ জন নারীর ওপর এই চিকিৎসা প্রয়োগ করা হয়। জন্ম নেয় ৮টি শিশু। যাদের বয়স এখন ছয় মাস থেকে দুই বছরের মধ্যে।
গবেষণা বলছে, এই শিশুদের শরীরে মায়ের ক্ষতিকর মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ কমে গেছে ৯৫ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত। দুজনের ক্ষেত্রে কিছুটা ছিল, তবে সেটাও ঝুঁকির সীমার নিচে। যদিও একজনের হৃদযন্ত্রে সামান্য জটিলতা ধরা পড়ে। পরে তা সফলভাবে চিকিৎসা করা হয়েছে।
তবে সবকিছুর পরেও কিছু বিতর্ক রয়েই গেছে। ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি, নৈতিক প্রশ্ন, এবং ভবিষ্যতে জেনেটিকালি ইঞ্জিনিয়ারড বেবি তৈরির আশঙ্কা নিয়ে নানা কথা উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্সসহ অনেক দেশ এখনো এই পদ্ধতির অনুমোদন দেয়নি। তবে এটা এমন সব পরিবারের জন্য আশার আলো হতে পারে, যাদের সন্তানের মধ্যে মারাত্মক জিনগত রোগ সঞ্চারের ঝুঁকি রয়েছে। (বিজ্ঞান্বেষী)
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান
#IVF #Bigganneshi #science #বিজ্ঞান্বেষী