ভালো মা হতে গিয়ে ক্লান্ত এক মা… আমি কি একটু থামতে পারি না?”
“একজন মা যখন শিশুর জন্য রাতভর জেগে থাকে, সকালে ক্লান্ত শরীর নিয়েও রান্নাঘরে দাঁড়ায়, দুপুরে আবার ঘুম না দিয়েই খেলনা গুছায়—তখন তিনি কেবল মা নন।
তখন তিনি হচ্ছেন এক নিঃশব্দ যোদ্ধা, যার ক্লান্তির কোনো ভাষা নেই।
তবে, এই যোদ্ধারও হৃদয় আছে।
এই মায়েরও কান্না পায়।
এই মায়েরও কখনো মনে হয়—“আর পারছি না।”
“শুধু একটুখানি নিঃশ্বাস নিতে চাই, কেউ যেন কিছু না বলে।”
আমরা সবাই চাই, শিশুকে ভালবাসায় বড় করব।
চিৎকার করব না, ধমক দেব না, কখনো রাগ দেখাব না।
কিন্তু একটা পর্যায়ে এসে—যখন শিশুর কান্না থামছে না, ঘরের কাজের শেষ নেই, ঘুম হয়নি অনেকদিন, নিজের খাবারও সময়মতো খাওয়া হয়নি—তখন সেই ‘ভালো মা’ নিজেই ভেঙে পড়েন।
তখন হয়ত নিজের অজান্তেই আপনি চিৎকার করে ফেলেন। ধমক দেন।
তারপর গভীর আত্মগ্লানিতে ডুবে যান। ভাবেন,
“আমি তাহলে খারাপ মা?”
না, আপনি খারাপ মা নন।
আপনি একজন মানুষ।
একজন ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত, দায়িত্বের ভারে নুয়ে পড়া মা।
আজকাল অনেক মায়েই ভুগছেন এক বিশেষ ধরনের চাপের মধ্যে, যাকে বলা হয় Sensory Overload।
যেখানে শব্দ, আলো, শিশুর কান্না—সবকিছু অসহনীয় মনে হয়।
তখন মনে হয়,
“কারো কোনো কথা না শুনি…
এই ঘর, এই দায়িত্ব, এই পৃথিবী—সব কিছু থেকে একটু দূরে যাই…”
এটা অস্বাভাবিক নয়। এটা আপনি একা অনুভব করছেন না।
একজন শিশু বিশেষজ্ঞ হিসেবে আমি প্রায়ই দেখি,
এই সমাজ শুধু শিশুর যত্ন নিয়ে ভাবে—
কিন্তু সেই শিশুর পেছনে যিনি আছেন, সেই মা’টির ভেতরে কী ঝড় বইছে, সেটা কেউ দেখে না।
🔹 মা হিসেবে আপনি ঘুম ঠিকভাবে পান না।
🔹 সময়মতো খেতে পারেন না।
🔹 নিজের শরীর বা মানসিক শান্তির দিকে ফিরেও তাকাতে পারেন না।
আর সেই জায়গা থেকেই জন্ম নেয় স্ট্রেস, উদ্বেগ, ক্লান্তি, এবং অপরাধবোধ।
আমাদের সমাজ ভুল করে যখন ভাবে,
“ভালো মা” মানেই নিঃস্বার্থ, চিরধৈর্য, সবসময় হাসিখুশি।
আমি বলি—
ভালো মা মানে একজন যিনি নিজেকে বোঝেন, নিজের ক্লান্তি স্বীকার করেন, এবং নিজের যত্ন নিতে শিখছেন।
তাই আজ যদি আপনি খুব ক্লান্ত থাকেন,
আজ যদি আপনার মুখে হাসি না থাকে,
আজ যদি আপনি একটু রাগ করে ফেলেন—তবুও আপনি একজন ভালো মা।
🌿 নিজের প্রতি একটু দয়া রাখুন।
🌿 যত্ন নিন নিজের ঘুম, খাবার, মনের।
🌿 সময় লাগলে সাহায্য চান—এটা দুর্বলতা নয়, এটা সাহস।
কারণ শিশুর সবচেয়ে বড় প্রয়োজন একটি সুস্থ, শান্ত মায়ের।
আর সে মা হচ্ছেন আপনি। আপনি, যিনি চেষ্টা করে যাচ্ছেন প্রতিদিন।
