বাংলাভাষী মুসলিম শ্রমিকদের বারবার "বাংলাদেশি" বা "অবৈধ অনুপ্রবেশকারী" আখ্যা দিয়ে হয়রানি, গ্রেপ্তার ও পুশব্যাকের ঘটনা ঘটেছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের

আমির শেখ। পশ্চিমবঙ্গের বাংলাভাষী মুসলমান। বাড়ি মালদা।
কাজ করতে গিয়েছিলেন রাজস্থান। সেখানে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযোগ কী? তিনি বাংলাভাষায় কথা বলছিলেন। ভারতীয় নাগরিকত্বের সমস্ত প্রমাণপত্র থাকা সত্ত্বেও তিনি রেহাই পাননি।
গ্রেপ্তার করে বিএসএফ তাঁকে বাংলাদেশ সীমান্তে নিয়ে আসে ও পে-লোডার মেশিনের সাহায্যে কাঁটাতারের ওপারে ছুড়ে ফেলে দেয়। রাজস্থানে ও অন্যান্য বিজেপি-শাসিত রাজ্যে পশ্চিমবঙ্গের বহু শ্রমিককে ইতিমধ্যেই "বাংলাদেশি" আখ্যা দিয়ে হয়রানি বা পুশব্যাকের শিকার হতে দেখা গেছে। হিন্দু মুসলমান উভয় ধর্মের শ্রমিক এই নির্যাতনের শিকার।
মালদার কালিয়াচকের বাসিন্দা আমির শেখ। মাস তিনেক আগে কাজের সূত্রে রাজস্থান গিয়েছিলেন। বাংলায় কথা বলার কারণে তাঁকে স্থানীয়রা "বাংলাদেশি" সন্দেহ করে পুলিশে ধরিয়ে দেয়।
তাঁর কাছে ভোটার আইডি, আধার কার্ডসহ ভারতীয় নাগরিকত্বের সকল প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও পুলিশ তাঁকে ডিটেনশন ক্যাম্পে আটকে রাখে। এরপর কোনো আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াই তাঁকে পশ্চিমবঙ্গের বসিরহাট সীমান্তে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখান থেকে বিএসএফের সহায়তায় বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলায় পুশব্যাক করা হয়।
পরিবারের সদস্য ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আমির শেখকে সীমান্তে পে-লোডার মেশিনে তুলে কাঁটাতারের ওপারে নিক্ষেপ করা হয়। এই ঘটনা শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বর্বরতা নয়, রাষ্ট্রীয় সহিংসতারও উদাহরণ। আজকের ভারতে এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। গুজরাত, রাজস্থান, অসমসহ বিজেপিশাসিত একাধিক রাজ্যে বাংলাভাষী মুসলিম শ্রমিকদের বারবার "বাংলাদেশি" বা "অবৈধ অনুপ্রবেশকারী" আখ্যা দিয়ে হয়রানি, গ্রেপ্তার ও পুশব্যাকের ঘটনা ঘটেছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের হস্তক্ষেপে পূর্বে কিছু শ্রমিক ফিরেছেন।
আমির শেখের পরিবার জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছে, যেন তাঁকে বাংলাদেশ থেকে দ্রুত ফিরিয়ে আনা হয়।
আমাদের প্রশ্ন:
১. নাগরিকত্ব প্রমাণের দলিল থাকা সত্ত্বেও কীভাবে একজন মানুষকে একজন ভারতীয় নাগরিককে আদালতের নির্দেশ ছাড়া অন্য দেশে পাঠানো যায়?
২. সীমান্তে পে-লোডার ব্যবহারের অভিযোগ সত্য হলে তা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল।
৩. বাংলাভাষীদের টার্গেট করার এমন ঘটনাগুলো কি আদৌ থামবে?
আমির শেখ। একজন মানুষ। একজন বাঙালি। একজন ভারতীয়।
একজন নাগরিকের সঙ্গে এরকম আচরণ শুধু নৃশংসই নয়, এটি ভারতের সংবিধান ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তিগুলোকেও পদদলিত করে। "বাংলাদেশি" বা "বিদেশি" সন্দেহে কাউকে গ্রেপ্তার করলে তাকে প্রথমে আদালতে উপস্থাপন করতে হয়, ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে শুনানি হয়। কিন্তু আমির শেখের ক্ষেত্রে সেই প্রক্রিয়া অনুসৃত হয়নি বলা বাহুল্য।
মধ্যবিত্ত বাঙালি আমরা, যারা ভাবি, "আমাদের তো কিছু হয়নি", তাদের জন্য এটা একটা রেড অ্যালার্ট। আজ আমির শেখ, কাল আপনি বা আপনার পরিচিত যে কেউ এর শিকার হতে পারেন। হচ্ছেনও। হিন্দু মুসলমান যে কোনও বাঙালি ওই সব রাজ্যে নিরাপদ নন।। রাষ্ট্র যখন ভাষা ও ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব নিয়ে সন্দেহ করতে শুরু করে, তখন কোনো সাধারণ মানুষই নিরাপদ থাকতে পারেন না।