আমরা ভাবি স্ট্রেস মানে বড় কোনো সংকট, চাকরি হারানো বা সম্পর্কে ভাঙন। কিন্তু হার্ভার্ডের একজন চিকিৎসক এবং মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডঃ নেরুরকার বলছেন, আপনার আসল শত্রু আপনার হাতেই ধরা আপনার ফোন, আর যে চেয়ারে আপনি ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকেন।
আমরা এমন এক যুগে বাস করছি যেখানে স্ট্রেস এবং বার্নআউট শব্দগুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে গেছে। কিন্তু এই চাপের পেছনের আসল কারণগুলো কী এবং কীভাবে আমরা এর মোকাবেলা করতে পারি? The Diary of a CEO পডকাস্টে ডঃ অদিতি নেরুরকার আমাদের আধুনিক জীবনের সেই সব অভ্যাস তুলে ধরেছেন, যা নীরবে আমাদের মস্তিষ্ককে ভেতর থেকে ধ্বংস করে দিচ্ছে।
আমাদের মস্তিষ্ক, শরীর এমনভাবে তৈরি হয়নি যা অবিরাম তথ্য, নোটিফিকেশন এবং কাজের চাপের সাথে খাপ খাওয়াতে পারে। আমরা একটি ফাইট অথবা ফ্লাইট মোডে বাস করছি, যা আমাদের শারীরিক এবং মানসিকভাবে অসুস্থ করে তুলছে।
বার্নআউট একটি ক্লিনিক্যাল অবস্থা, যার তিনটি প্রধান লক্ষণ হলো:
১. কোনো কিছুতেই আর শক্তি বা আগ্রহ খুঁজে না পাওয়া।
২. কাজ বা জীবনের প্রতি একটি নেতিবাচক এবং উদাসীন মনোভাব তৈরি হওয়া।
৩. মনে হওয়া যে, আপনি যা-ই করছেন, তাতে কোনো লাভ হচ্ছে না বা আপনি যথেষ্ট ভালো নন।
আমাদের সমাজ শেখায় শক্ত থাকো, এগিয়ে যাও। কিন্তু ডঃ নেরুরকার এটিকে টক্সিক সহনশীলতা হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। ক্রমাগত নিজের আবেগ এবং শারীরিক সংকেতকে উপেক্ষা করে শুধু কাজ করে যাওয়া কোনো শক্তি নয়, বরং এটি আত্ম-ধ্বংসের সামিল। সত্যিকারের সহনশীলতা মানে হলো, কখন থামতে হবে এবং নিজেকে রিচার্জ করতে হবে, তা জানা।
মানসিক চাপ কমানোর জন্য আপনাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা মেডিটেশন করতে হবে না। দিনের মধ্যে ছোট ছোট কিছু রিসেট বা বিরতিই যথেষ্ট। যেমন:
১. ৫ মিনিট শুধু নিজের শ্বাসের উপর মনোযোগ দিন।
২. প্রিয়জনকে ২০ সেকেন্ড জড়িয়ে ধরুন।
৩. তিনটি জিনিসের কথা ভাবুন যার জন্য আপনি কৃতজ্ঞ।
৪. ২ মিনিটের জন্য ডেস্ক থেকে উঠে একটু হাঁটুন বা স্ট্রেচিং করুন।
৫. আপনার পছন্দের একটি গান শুনুন।
ব্যায়াম শুধু শরীরচর্চা নয়, এটি মস্তিষ্কের জন্য একটি শক্তিশালী ঔষধ। যখন আপনি ব্যায়াম করেন, তখন আপনার শরীর স্ট্রেস হরমোন কর্টিসলের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে এমন কেমিক্যাল তৈরি করে। এটি আপনার শরীরকে শেখায় কীভাবে চাপের সাথে আরও ভালোভাবে মোকাবেলা করতে হয়।
সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের মস্তিষ্কের জন্য একটি পারফেক্ট স্ট্রেসের রেসিপি।
তুলনা: সোশ্যাল মিডিয়ায় অন্যদের লাইফস্টাইল দেখে নিজেদের সাধারণ জীবনের সাথে তুলনা করি।
FOMO (Fear of Missing Out): সবসময় মনে হয়, অন্যরা আমাদের চেয়ে বেশি আনন্দ করছে বা এগিয়ে যাচ্ছে।
নেতিবাচকতা: নেতিবাচক খবর এবং কনটেন্ট আমাদের মস্তিষ্কে সরাসরি স্ট্রেসের প্রতিক্রিয়া তৈরি করে।
খাবার এবং স্ট্রেসের মধ্যে গোপন যোগসূত্র
আপনার পেট এবং মস্তিষ্ক সরাসরি সংযুক্ত (Gut-Brain Axis)। আপনি যা খান, তা আপনার মানসিক অবস্থাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে।
খারাপ খাবার: প্রক্রিয়াজাত, চিনিযুক্ত খাবার আপনার শরীরে প্রদাহ (inflammation) তৈরি করে, যা মস্তিষ্কে স্ট্রেসের সংকেত পাঠায়।
ভালো খাবার: প্রাকৃতিক এবং স্বাস্থ্যকর খাবার এই প্রদাহ কমায় এবং আপনার মনকে শান্ত রাখতে সাহায্য করে।
ব্রেক নেওয়া অলসতা নয়, এটি উচ্চ পারফরম্যান্সের জন্য অপরিহার্য। আমাদের মস্তিষ্ক একটানা মনোযোগ ধরে রাখতে পারে না। ছোট ছোট বিরতি আপনার ফোকাস এবং সৃজনশীলতাকে রিচার্জ করে।
যে জিনিসগুলো আপনাকে অজান্তেই স্ট্রেস দিচ্ছে!
সারাদিন বসে থাকা: এটি শরীরকে একটি নিষ্ক্রিয় অবস্থায় রাখে, যা স্ট্রেস বাড়ায়।
স্ক্রিন টাইম: ফোনের নীল আলো আমাদের ঘুম এবং মানসিক অবস্থাকে নষ্ট করে দেয়।
শব্দ দূষণ: শব্দ আমাদের নার্ভাস সিস্টেমকে উত্তেজিত রাখে।
মাল্টিটাস্কিং একটি মিথ: এটি আপনার ব্রেনকে ধ্বংস করছে
জনসংখ্যার মাত্র ২% মানুষ সত্যিকারের মাল্টিটাস্কিং করতে পারে। বাকি ৯৮% যা করে, তা হলো টাস্ক-সুইচিং। অর্থাৎ, দ্রুত এক কাজ থেকে অন্য কাজে মনোযোগ সরানো, যা আমাদের মস্তিষ্কের শক্তি ক্ষয় করে, ভুল বাড়ায় এবং স্ট্রেসের মাত্রা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।
একটি সহজ কিন্তু অত্যন্ত কার্যকর কৌশল হলো ফিজিওলজিক্যাল সাই (Physiological Sigh) বা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ার মতো কৌশল। যখন আপনি শ্বাস ছাড়ার সময়টাকে শ্বাস নেওয়ার চেয়ে দীর্ঘ করেন, তখন এটি আপনার প্যারাসিম্প্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেমকে সক্রিয় করে এবং তাৎক্ষণিকভাবে আপনাকে শান্ত করে।
যখন মাথায় হাজারো চিন্তা ঘুরপাক খায়, তখন তা একটি কাগজে লিখে ফেলুন। এই প্রক্রিয়াটি আপনার মস্তিষ্ক থেকে চিন্তার বোঝা নামিয়ে দেয় এবং আপনাকে পরিস্থিতিকে আরও স্পষ্টভাবে দেখতে সাহায্য করে। এটি ওভারথিংকিং কমানোর অন্যতম সেরা বৈজ্ঞানিক উপায়।
অটো-পাইলট মোডে জীবন কাটানো বন্ধ করুন
যখন আমরা প্রতিদিন একই রুটিনে জীবন কাটাই এবং কোনো কিছু নিয়ে সচেতনভাবে চিন্তা করি না, তখন জীবন অর্থহীন মনে হতে শুরু করে। অটো-পাইলট মোড থেকে বেরিয়ে এসে ছোট ছোট বিষয়ে মনোযোগ দিন যেমন, আপনার সকালের কফির স্বাদ বা প্রকৃতির সৌন্দর্য।
একাকীত্ব শুধু একটি মানসিক অনুভূতি নয়, এটি একটি মারাত্মক শারীরিক স্বাস্থ্য ঝুঁকি। গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘস্থায়ী একাকীত্ব দিনে ১৫টি সিগারেট খাওয়ার মতোই ক্ষতিকর। অর্থপূর্ণ মানবিক সংযোগ আমাদের মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য।
আমরা এমন এক যুগে বাস করছি যেখানে স্ট্রেস এবং বার্নআউট শব্দগুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে গেছে। কিন্তু এই চাপের পেছনের আসল কারণগুলো কী এবং কীভাবে আমরা এর মোকাবেলা করতে পারি? The Diary of a CEO পডকাস্টে ডঃ অদিতি নেরুরকার আমাদের আধুনিক জীবনের সেই সব অভ্যাস তুলে ধরেছেন, যা নীরবে আমাদের মস্তিষ্ককে ভেতর থেকে ধ্বংস করে দিচ্ছে।
আমাদের মস্তিষ্ক, শরীর এমনভাবে তৈরি হয়নি যা অবিরাম তথ্য, নোটিফিকেশন এবং কাজের চাপের সাথে খাপ খাওয়াতে পারে। আমরা একটি ফাইট অথবা ফ্লাইট মোডে বাস করছি, যা আমাদের শারীরিক এবং মানসিকভাবে অসুস্থ করে তুলছে।
বার্নআউট একটি ক্লিনিক্যাল অবস্থা, যার তিনটি প্রধান লক্ষণ হলো:
১. কোনো কিছুতেই আর শক্তি বা আগ্রহ খুঁজে না পাওয়া।
২. কাজ বা জীবনের প্রতি একটি নেতিবাচক এবং উদাসীন মনোভাব তৈরি হওয়া।
৩. মনে হওয়া যে, আপনি যা-ই করছেন, তাতে কোনো লাভ হচ্ছে না বা আপনি যথেষ্ট ভালো নন।
আমাদের সমাজ শেখায় শক্ত থাকো, এগিয়ে যাও। কিন্তু ডঃ নেরুরকার এটিকে টক্সিক সহনশীলতা হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। ক্রমাগত নিজের আবেগ এবং শারীরিক সংকেতকে উপেক্ষা করে শুধু কাজ করে যাওয়া কোনো শক্তি নয়, বরং এটি আত্ম-ধ্বংসের সামিল। সত্যিকারের সহনশীলতা মানে হলো, কখন থামতে হবে এবং নিজেকে রিচার্জ করতে হবে, তা জানা।
মানসিক চাপ কমানোর জন্য আপনাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা মেডিটেশন করতে হবে না। দিনের মধ্যে ছোট ছোট কিছু রিসেট বা বিরতিই যথেষ্ট। যেমন:
১. ৫ মিনিট শুধু নিজের শ্বাসের উপর মনোযোগ দিন।
২. প্রিয়জনকে ২০ সেকেন্ড জড়িয়ে ধরুন।
৩. তিনটি জিনিসের কথা ভাবুন যার জন্য আপনি কৃতজ্ঞ।
৪. ২ মিনিটের জন্য ডেস্ক থেকে উঠে একটু হাঁটুন বা স্ট্রেচিং করুন।
৫. আপনার পছন্দের একটি গান শুনুন।
ব্যায়াম শুধু শরীরচর্চা নয়, এটি মস্তিষ্কের জন্য একটি শক্তিশালী ঔষধ। যখন আপনি ব্যায়াম করেন, তখন আপনার শরীর স্ট্রেস হরমোন কর্টিসলের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে এমন কেমিক্যাল তৈরি করে। এটি আপনার শরীরকে শেখায় কীভাবে চাপের সাথে আরও ভালোভাবে মোকাবেলা করতে হয়।
সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের মস্তিষ্কের জন্য একটি পারফেক্ট স্ট্রেসের রেসিপি।
তুলনা: সোশ্যাল মিডিয়ায় অন্যদের লাইফস্টাইল দেখে নিজেদের সাধারণ জীবনের সাথে তুলনা করি।
FOMO (Fear of Missing Out): সবসময় মনে হয়, অন্যরা আমাদের চেয়ে বেশি আনন্দ করছে বা এগিয়ে যাচ্ছে।
নেতিবাচকতা: নেতিবাচক খবর এবং কনটেন্ট আমাদের মস্তিষ্কে সরাসরি স্ট্রেসের প্রতিক্রিয়া তৈরি করে।
খাবার এবং স্ট্রেসের মধ্যে গোপন যোগসূত্র
আপনার পেট এবং মস্তিষ্ক সরাসরি সংযুক্ত (Gut-Brain Axis)। আপনি যা খান, তা আপনার মানসিক অবস্থাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে।
খারাপ খাবার: প্রক্রিয়াজাত, চিনিযুক্ত খাবার আপনার শরীরে প্রদাহ (inflammation) তৈরি করে, যা মস্তিষ্কে স্ট্রেসের সংকেত পাঠায়।
ভালো খাবার: প্রাকৃতিক এবং স্বাস্থ্যকর খাবার এই প্রদাহ কমায় এবং আপনার মনকে শান্ত রাখতে সাহায্য করে।
ব্রেক নেওয়া অলসতা নয়, এটি উচ্চ পারফরম্যান্সের জন্য অপরিহার্য। আমাদের মস্তিষ্ক একটানা মনোযোগ ধরে রাখতে পারে না। ছোট ছোট বিরতি আপনার ফোকাস এবং সৃজনশীলতাকে রিচার্জ করে।
যে জিনিসগুলো আপনাকে অজান্তেই স্ট্রেস দিচ্ছে!
সারাদিন বসে থাকা: এটি শরীরকে একটি নিষ্ক্রিয় অবস্থায় রাখে, যা স্ট্রেস বাড়ায়।
স্ক্রিন টাইম: ফোনের নীল আলো আমাদের ঘুম এবং মানসিক অবস্থাকে নষ্ট করে দেয়।
শব্দ দূষণ: শব্দ আমাদের নার্ভাস সিস্টেমকে উত্তেজিত রাখে।
মাল্টিটাস্কিং একটি মিথ: এটি আপনার ব্রেনকে ধ্বংস করছে
জনসংখ্যার মাত্র ২% মানুষ সত্যিকারের মাল্টিটাস্কিং করতে পারে। বাকি ৯৮% যা করে, তা হলো টাস্ক-সুইচিং। অর্থাৎ, দ্রুত এক কাজ থেকে অন্য কাজে মনোযোগ সরানো, যা আমাদের মস্তিষ্কের শক্তি ক্ষয় করে, ভুল বাড়ায় এবং স্ট্রেসের মাত্রা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।
একটি সহজ কিন্তু অত্যন্ত কার্যকর কৌশল হলো ফিজিওলজিক্যাল সাই (Physiological Sigh) বা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ার মতো কৌশল। যখন আপনি শ্বাস ছাড়ার সময়টাকে শ্বাস নেওয়ার চেয়ে দীর্ঘ করেন, তখন এটি আপনার প্যারাসিম্প্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেমকে সক্রিয় করে এবং তাৎক্ষণিকভাবে আপনাকে শান্ত করে।
যখন মাথায় হাজারো চিন্তা ঘুরপাক খায়, তখন তা একটি কাগজে লিখে ফেলুন। এই প্রক্রিয়াটি আপনার মস্তিষ্ক থেকে চিন্তার বোঝা নামিয়ে দেয় এবং আপনাকে পরিস্থিতিকে আরও স্পষ্টভাবে দেখতে সাহায্য করে। এটি ওভারথিংকিং কমানোর অন্যতম সেরা বৈজ্ঞানিক উপায়।
অটো-পাইলট মোডে জীবন কাটানো বন্ধ করুন
যখন আমরা প্রতিদিন একই রুটিনে জীবন কাটাই এবং কোনো কিছু নিয়ে সচেতনভাবে চিন্তা করি না, তখন জীবন অর্থহীন মনে হতে শুরু করে। অটো-পাইলট মোড থেকে বেরিয়ে এসে ছোট ছোট বিষয়ে মনোযোগ দিন যেমন, আপনার সকালের কফির স্বাদ বা প্রকৃতির সৌন্দর্য।
একাকীত্ব শুধু একটি মানসিক অনুভূতি নয়, এটি একটি মারাত্মক শারীরিক স্বাস্থ্য ঝুঁকি। গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘস্থায়ী একাকীত্ব দিনে ১৫টি সিগারেট খাওয়ার মতোই ক্ষতিকর। অর্থপূর্ণ মানবিক সংযোগ আমাদের মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য।
আমরা ভাবি স্ট্রেস মানে বড় কোনো সংকট, চাকরি হারানো বা সম্পর্কে ভাঙন। কিন্তু হার্ভার্ডের একজন চিকিৎসক এবং মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডঃ নেরুরকার বলছেন, আপনার আসল শত্রু আপনার হাতেই ধরা আপনার ফোন, আর যে চেয়ারে আপনি ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকেন।
আমরা এমন এক যুগে বাস করছি যেখানে স্ট্রেস এবং বার্নআউট শব্দগুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে গেছে। কিন্তু এই চাপের পেছনের আসল কারণগুলো কী এবং কীভাবে আমরা এর মোকাবেলা করতে পারি? The Diary of a CEO পডকাস্টে ডঃ অদিতি নেরুরকার আমাদের আধুনিক জীবনের সেই সব অভ্যাস তুলে ধরেছেন, যা নীরবে আমাদের মস্তিষ্ককে ভেতর থেকে ধ্বংস করে দিচ্ছে।
আমাদের মস্তিষ্ক, শরীর এমনভাবে তৈরি হয়নি যা অবিরাম তথ্য, নোটিফিকেশন এবং কাজের চাপের সাথে খাপ খাওয়াতে পারে। আমরা একটি ফাইট অথবা ফ্লাইট মোডে বাস করছি, যা আমাদের শারীরিক এবং মানসিকভাবে অসুস্থ করে তুলছে।
বার্নআউট একটি ক্লিনিক্যাল অবস্থা, যার তিনটি প্রধান লক্ষণ হলো:
১. কোনো কিছুতেই আর শক্তি বা আগ্রহ খুঁজে না পাওয়া।
২. কাজ বা জীবনের প্রতি একটি নেতিবাচক এবং উদাসীন মনোভাব তৈরি হওয়া।
৩. মনে হওয়া যে, আপনি যা-ই করছেন, তাতে কোনো লাভ হচ্ছে না বা আপনি যথেষ্ট ভালো নন।
আমাদের সমাজ শেখায় শক্ত থাকো, এগিয়ে যাও। কিন্তু ডঃ নেরুরকার এটিকে টক্সিক সহনশীলতা হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। ক্রমাগত নিজের আবেগ এবং শারীরিক সংকেতকে উপেক্ষা করে শুধু কাজ করে যাওয়া কোনো শক্তি নয়, বরং এটি আত্ম-ধ্বংসের সামিল। সত্যিকারের সহনশীলতা মানে হলো, কখন থামতে হবে এবং নিজেকে রিচার্জ করতে হবে, তা জানা।
মানসিক চাপ কমানোর জন্য আপনাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা মেডিটেশন করতে হবে না। দিনের মধ্যে ছোট ছোট কিছু রিসেট বা বিরতিই যথেষ্ট। যেমন:
১. ৫ মিনিট শুধু নিজের শ্বাসের উপর মনোযোগ দিন।
২. প্রিয়জনকে ২০ সেকেন্ড জড়িয়ে ধরুন।
৩. তিনটি জিনিসের কথা ভাবুন যার জন্য আপনি কৃতজ্ঞ।
৪. ২ মিনিটের জন্য ডেস্ক থেকে উঠে একটু হাঁটুন বা স্ট্রেচিং করুন।
৫. আপনার পছন্দের একটি গান শুনুন।
ব্যায়াম শুধু শরীরচর্চা নয়, এটি মস্তিষ্কের জন্য একটি শক্তিশালী ঔষধ। যখন আপনি ব্যায়াম করেন, তখন আপনার শরীর স্ট্রেস হরমোন কর্টিসলের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে এমন কেমিক্যাল তৈরি করে। এটি আপনার শরীরকে শেখায় কীভাবে চাপের সাথে আরও ভালোভাবে মোকাবেলা করতে হয়।
সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের মস্তিষ্কের জন্য একটি পারফেক্ট স্ট্রেসের রেসিপি।
তুলনা: সোশ্যাল মিডিয়ায় অন্যদের লাইফস্টাইল দেখে নিজেদের সাধারণ জীবনের সাথে তুলনা করি।
FOMO (Fear of Missing Out): সবসময় মনে হয়, অন্যরা আমাদের চেয়ে বেশি আনন্দ করছে বা এগিয়ে যাচ্ছে।
নেতিবাচকতা: নেতিবাচক খবর এবং কনটেন্ট আমাদের মস্তিষ্কে সরাসরি স্ট্রেসের প্রতিক্রিয়া তৈরি করে।
খাবার এবং স্ট্রেসের মধ্যে গোপন যোগসূত্র
আপনার পেট এবং মস্তিষ্ক সরাসরি সংযুক্ত (Gut-Brain Axis)। আপনি যা খান, তা আপনার মানসিক অবস্থাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে।
খারাপ খাবার: প্রক্রিয়াজাত, চিনিযুক্ত খাবার আপনার শরীরে প্রদাহ (inflammation) তৈরি করে, যা মস্তিষ্কে স্ট্রেসের সংকেত পাঠায়।
ভালো খাবার: প্রাকৃতিক এবং স্বাস্থ্যকর খাবার এই প্রদাহ কমায় এবং আপনার মনকে শান্ত রাখতে সাহায্য করে।
ব্রেক নেওয়া অলসতা নয়, এটি উচ্চ পারফরম্যান্সের জন্য অপরিহার্য। আমাদের মস্তিষ্ক একটানা মনোযোগ ধরে রাখতে পারে না। ছোট ছোট বিরতি আপনার ফোকাস এবং সৃজনশীলতাকে রিচার্জ করে।
যে জিনিসগুলো আপনাকে অজান্তেই স্ট্রেস দিচ্ছে!
সারাদিন বসে থাকা: এটি শরীরকে একটি নিষ্ক্রিয় অবস্থায় রাখে, যা স্ট্রেস বাড়ায়।
স্ক্রিন টাইম: ফোনের নীল আলো আমাদের ঘুম এবং মানসিক অবস্থাকে নষ্ট করে দেয়।
শব্দ দূষণ: শব্দ আমাদের নার্ভাস সিস্টেমকে উত্তেজিত রাখে।
মাল্টিটাস্কিং একটি মিথ: এটি আপনার ব্রেনকে ধ্বংস করছে
জনসংখ্যার মাত্র ২% মানুষ সত্যিকারের মাল্টিটাস্কিং করতে পারে। বাকি ৯৮% যা করে, তা হলো টাস্ক-সুইচিং। অর্থাৎ, দ্রুত এক কাজ থেকে অন্য কাজে মনোযোগ সরানো, যা আমাদের মস্তিষ্কের শক্তি ক্ষয় করে, ভুল বাড়ায় এবং স্ট্রেসের মাত্রা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।
একটি সহজ কিন্তু অত্যন্ত কার্যকর কৌশল হলো ফিজিওলজিক্যাল সাই (Physiological Sigh) বা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ার মতো কৌশল। যখন আপনি শ্বাস ছাড়ার সময়টাকে শ্বাস নেওয়ার চেয়ে দীর্ঘ করেন, তখন এটি আপনার প্যারাসিম্প্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেমকে সক্রিয় করে এবং তাৎক্ষণিকভাবে আপনাকে শান্ত করে।
যখন মাথায় হাজারো চিন্তা ঘুরপাক খায়, তখন তা একটি কাগজে লিখে ফেলুন। এই প্রক্রিয়াটি আপনার মস্তিষ্ক থেকে চিন্তার বোঝা নামিয়ে দেয় এবং আপনাকে পরিস্থিতিকে আরও স্পষ্টভাবে দেখতে সাহায্য করে। এটি ওভারথিংকিং কমানোর অন্যতম সেরা বৈজ্ঞানিক উপায়।
অটো-পাইলট মোডে জীবন কাটানো বন্ধ করুন
যখন আমরা প্রতিদিন একই রুটিনে জীবন কাটাই এবং কোনো কিছু নিয়ে সচেতনভাবে চিন্তা করি না, তখন জীবন অর্থহীন মনে হতে শুরু করে। অটো-পাইলট মোড থেকে বেরিয়ে এসে ছোট ছোট বিষয়ে মনোযোগ দিন যেমন, আপনার সকালের কফির স্বাদ বা প্রকৃতির সৌন্দর্য।
একাকীত্ব শুধু একটি মানসিক অনুভূতি নয়, এটি একটি মারাত্মক শারীরিক স্বাস্থ্য ঝুঁকি। গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘস্থায়ী একাকীত্ব দিনে ১৫টি সিগারেট খাওয়ার মতোই ক্ষতিকর। অর্থপূর্ণ মানবিক সংযোগ আমাদের মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য।
