❝দিলীপ কুমার ❞
~ দ্যা ট্রাজেডি কিং অফ বলিউড

সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেত্রী দেভিকা রানী তার স্টুডিও " বোম্বে টকিজ" এ বসে আছেন। হঠাৎ ই তার কাছে এক ছেলে আসে অভিনয় করার আশায়। অনেক বাছ - বিচার করার পড়ে তিনি ছেলেটিকে নামমাত্র স্যালারির এক জব অফার করেন। কিন্তু ছেলের নাম নিয়েই পড়েন ঝামেলায় । তখনকার সময়ে সে ছেলের ফ্যামিলির দেয়া নাম " মোহাম্মদ ইউসুফ খান " নিয়ে এই ছেলে যে বেশিদূর যেতে পারবে না তা তিনি তখনই বুঝতে পেরেছিলেন। এ জন্যে সে তাকে তিনটি নাম দিয়ে যেকোন একটি বেছে নেয়ার কথা বলেন। প্রথম দুই নাম পছন্দ না হওয়ায় সেই ছেলে তৃতীয় নামটিই বেছে নেন যে নাম দিয়ে আজকে তিনি সবার পরিচিত - " দিলীপ কুমার " .
-
১৯২২ সালের ১১ ডিসেম্বর বর্তমান পাকিস্তানের পেশোয়ারের এক অঞ্চলে দিলীপ কুমারের জন্ম। ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় তার পিতা তার ১১ ভাইবোনের সাথে তাকেও মুম্বাই নিয়ে এসে থাকতে থাকেন। প্রথম জীবনে পারিবারিক ফলের ব্যবসায় যোগ দিলেও দিলীপ কুমারের মন পড়ে থাকতো অন্য কোন জায়গায়। তাই সে পুনেতে চলে যায় আর সেখানে এক ক্যান্টিনে কাজ করা শুরু করে এবং পরে সেখানে এক স্যান্ডউইচ শপ ও খোলে। কিন্তু দোকানের কন্ট্রাক্ট শেষ হবার পরে আবারো মুম্বাই ফিরে আসে আর সেখানে একদিন সে ড. মাসানীর সাথে সে "বোম্বে টকিজ " এ যায়। সেখানেই দেভিকা রানীর সাথে তার দেখা হয় যা তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।

দেভিকা রানীর ষ্টুডিও থেকেই তার প্রথম ছবি
" জোয়ার ভাটা " মুক্তি পায় কিন্তু দিলীপ কুমার সে রকম পরিচিতি পায় না। তবে সে ঠিকই তখনকার সময়ের ষ্টার " অশোক কুমার " এর নজরে পড়ে যায় ।ফলে আরো কয়েকটি রোলের অফার আসে। আরো কয়েকটি অসফল ছবির পরে " জুগনু " ছবি দিয়ে সে খানিকটা পরিচিতি পায়।আর তার পরবর্তী দুই ছবি " শহীদ " আর মেহবুব খানের " আন্তাজ " এর পরে তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি যার ভিতরে আন্তাজ ছিল ওই সময়ের সবচেয়ে বেশি আয় করা ছবি।
-
৫০ এর দশকেই তার আসল স্টারডম শুরু হয়। দিলীপ কুমার অভিনয় করতে থাকেন একের পর এক ট্রাজিক মুভিতে যা তাকে ট্রাজেডি কিং এর উপাধি এনে দেয়। এ সময়েই তিনি যোগান ,বাবুল ,দিদার ,দাগ, উড়ান খোটালা ,দেবদাস ,ইহুদি ,মধুমতি ইত্যাদি ক্লাসিক ছবিতে অভিনয় করেন। দাগ ছবিতে শঙ্করের ভূমিকায় অভিনয় করে প্রথম filmfare best actor award জিতে নেন। দেবদাস ছবিতে সুচিত্রা সেন আর ভৈজন্তিমালার বিপরীতে করা দেবদাস চরিত্রকে বর্তমানে পঞ্চাশ এর দশকের বলিউডের অন্যতম সেরা চরিত্র হিসেবে ধরা হয়।
-
তবে শুধু ট্রাজিক রোলেই নয় ,বিভিন্ন সামাজিক ছবি যেমন ফুটপাথ , নয়া দৌড় , মুসাফির ,পয়গাম এর মতো ছবিতে ভিন্নধর্মী চরিত্রে অভিনয় করেও দিলীপ কুমার দর্শক ও সমালোচকদের হৃদয় কেড়ে নেন। এছাড়াও আজাদ আর কোহিনুর ছবিতেও তার দুর্দান্ত অভিনয় ছিল প্রশংসনীয়। দিলীপ কুমারকে " ট্রাজেডি কিং " নামে বলার কারণে তার বিভিন্ন এক্সপেরিমেন্টাল রোলগুলো খুব বেশি আলোচনায় আসেনি।সে সময়ে " কোহিনুর " ছবিতে সীতার বাজানোর জন্য সীতার শেখা থেকে নয়া দৌড় এ রিকশা চালানো সহ বিভিন্ন রকমের মেথড এক্টিং এর কারণে তাকে ভারতের অন্যতম সেরা মেথড এক্টরের ভিতরেও রাখা যায়।
-
ষাটের দশকের শুরুতেই তার অভিনীত কে.আসিফের " মুঘল - ই - আজম " মুক্তি পায় যা ভারতীয় ছবির ইতিহাসের সব বক্স অফিস রেকর্ড ভেঙে দেয়। শাহজাদা সেলিমের চরিত্রে অভিনয় করে জনপ্রিয়তায় দিলীপ কুমার নিজেকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যান।এর পরের বছর সে "গঙ্গা যমুনা" নামের আরেক বিখ্যাত ছবিতে প্রযোজনা আর অভিনয় করেন যা তাকে ন্যাশনাল এওয়ার্ড পাইয়ে দেয়। এর পরে কয়েকটি অসফল ছবির পড়ে সে "রাম অউর শাম " এ ডাবল চরিত্রে অভিনয় করে আবারো বিশাল জনপ্রিয়তা পান। এছাড়াও ১৯৬৮ সালে তার আরো দুই ছবি " আদমি "এবং " সংঘর্ষ " বক্স অফিসে হিট হয় যা তাকে আইকনে পরিণত করে ।
-
সত্তরের দশকে দিলীপ কুমার বেশ কিছু এক্সপেরিমেন্টাল রোল করেন,যার ভিতরে এক বাংলা ভাষার ছবি " সাগিনা" ও ছিল।এর ভিতরে দাস্তান আর বৈরাগ বক্স অফিসে খুব বেশি আয় না করলেও সমালোচকদের প্রশংসা পায়। এদিকে তার আরেক ছবি " গোপী " বেশ ভালো ব্যবসা করলেও ১৯৭৬ সালে তিনি অভিনয় থেকে পাঁচ বছরের অবসর নেন।
-
আশির দশকে ফিরে আসার পরপরই সে ক্রান্তি নামের ছবিতে অভিনয় করেন যা ঐবছরের সবচেয়ে ব্যবসা সফল ছবিতে পরিণত হয়। এর পরেই সে বিধাতা , শক্তি ,মশাল ,দুনিয়া নামক ছবিতে অভিনয় করতে থাকেন যার বেশিরভাই ব্যবসাসফল হয়।১৯৮৬ সালে তিনি অভিনয় করেন সুভাষ ঘাই এর " কার্মা " নামক ছবিতে যাকে আশির দশকের অন্যতম সেরা ব্যবসাসফল ছবি হিসেবে বর্তমানে মানা হয় । তবে ৯০ এর দশকে তিনি খুব বেশি ব্যবসাসফল ছবিতে অভিনয় করেননি। তার শেষ মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি " কিলা " তে সে ডাবল রোলে অভিনয় করেন যা খুব বেশি সাফল্য পায়নি।
-
পর্দার ভিতরের সাথে সাথে পর্দার বাইরেও দিলীপ কুমার তার
সময়ে ছিলেন সমান জনপ্রিয়। দিলীপ কুমারের সাথে প্রথম রোমান্সের খবর শোনা যায় কামিনী কৌশালের সাথে। পরে ভৈজন্তিমালার সাথে তার গুঞ্জন শোনা গেলেও কোনটিই মধুবালার মত জনপ্রিয় হতে পারেনি। পর্দার ট্রাজিক কাহিনীর মতো তাদের বাস্তব জীবনের কাহিনীও ট্রাজিক। মধুবালার বাবার অমতে তাদের বিয়ে সে সময়ে হয় না। তার আর মধুবালার রোমান্স এবং বিচ্ছেদের কাহিনী সে সময়ে বলিউডে ছিল " টক অফ দ্যা টাউন " .পরে সে অভিনেত্রী সায়রা বানুকে বিয়ে করলেও পরবর্তীতে সে তাকে ছেড়ে আসমা খানের সাথে ঘর বাধে। সে বিয়েও অবশ্য খুব বেশিদিন টিকেনি।
-
মূলত অভিনেতা হলেও দিলীপ কুমার একই সাথে লেখক ,চিত্রনাট্যকার , এমনকি কবি ও । বিভিন্ন ছবিতে তার পোয়েটিক ডায়লগ তার সিগনেচার স্টাইল বলা যায়।
"Kaun kambakth hai jo bardasht karne ke liye peeta hai ,main to peeta hoon ke bas saans le sakoon" এর মতো আইকনিক ডায়লগ কে তিনি তার তার পোয়েটিক স্টাইলে বলে অন্যরকম জনপ্রিয়তায় নিয়ে গেছেন। আর তার মেথড এক্টিং সম্পর্কে সত্যজিৎ রায় ভাষায় বলা যায় সে হলো আল্টিমেট মেথড এক্টর , আর জাভেদ আখতারের ভাষায় বলা যায় সে হলো মেথড এক্টিং এর জন্মদাতা।
-
সম্মাননার দিক থেকে দিলীপ কুমার অদ্বিতীয়।তিনি মোটমাট ১৯ বার filmfare best actor এর নমিনেশন পান যার ভিতরে আটবার ( দাগ ,আজাদ , দেবদাস ,নয়া দৌড় ,কোহিনুর , লিডার , রাম অউর শাম ,শক্তি ) তা জিতে নেন। এছাড়াও "গঙ্গা যমুনা " ছবির জন্য তিনি ন্যাশনাল এওয়ার্ড ও পান। দাদাসাহেব ফালকে ,পদ্ম বিভূষণ , CNN-IBN Lifetime Achievement Award থেকে শুরু করে দেশে বিদেশে আরো নানা ধরণের এওয়ার্ড এ ভূষিত হয়েছেন তিনি।

Some Facts about Dilip Kumar

ভারতীয় অভিনেতা হিসেবে সবচেয়ে বেশি এওয়ার্ড জেতার জন্য "গিনেজ বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস " এ তার নাম আছে।
-
বিভিন্ন ছবিতে ট্রাজিক রোল প্লে করতে করতে সে ডিপ্রেশনে পরে যান এবং সাইক্রিয়াটিস্ট তাকে এ ধরণের রোল করা থেকে বিরত থাকতে বলেন।
-
স্ক্রিপ্ট চুজিং এর ক্ষেত্রে দিলীপ কুমার বরাবরই খুঁতখুঁতে ছিলেন। এ স্বভাবের কারণে তিনি "মাদার ইন্ডিয়া" এর আইকনিক রোল বিরজু থেকে নিজেকে ফিরিয়ে নেন যা পরবতীতে বিশাল হিট হয়েছিল। শুধু বলিউড নয় , পরিচালক ডেভিড লিন তাকে তার বিখ্যাত ছবি "লরেন্স অফ আরাবিয়া " তে অভিনয়ের অফার দিলে সেটাও তিনি ফিরিয়ে দেন।
-
একমাত্র ব্যক্তি যে পাকিস্তানের নিশান - ই- ইমতিয়াজ আর ভারতের পদ্ম বিভূষণ এ ভূষিত হয়েছেন।
-
পাঁচ দশকের ও বেশি সময় ধরে চলা মুভি ক্যারিয়ারে মোট ৬৩ টি ছবিতে অভিনয় করেন।
-
মাঝে রাজনীতিতে ঢুকে তিনি একবার রাজ্যসভার সদস্য ও হয়েছেন।
-
সত্যজিৎ রায়ের মতে "the ultimate method actor" খ্যাত দিলীপ কুমার অমিতাভ বচ্চন থেকে শাহরুখ খান সহ অসংখ্য অভিনেতার আইডল।
-
দিলীপ কুমারের বায়োগ্রাফি নিয়ে লেখা বই "The Substance and the Shadow" ওই বছরের অন্যতম সেরা বিক্রিত বায়োগ্রাফি যা আমাজনে দুই সপ্তাহ বেস্ট সেলার লিস্টে ছিল।
❝দিলীপ কুমার ❞ ~ দ্যা ট্রাজেডি কিং অফ বলিউড সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেত্রী দেভিকা রানী তার স্টুডিও " বোম্বে টকিজ" এ বসে আছেন। হঠাৎ ই তার কাছে এক ছেলে আসে অভিনয় করার আশায়। অনেক বাছ - বিচার করার পড়ে তিনি ছেলেটিকে নামমাত্র স্যালারির এক জব অফার করেন। কিন্তু ছেলের নাম নিয়েই পড়েন ঝামেলায় । তখনকার সময়ে সে ছেলের ফ্যামিলির দেয়া নাম " মোহাম্মদ ইউসুফ খান " নিয়ে এই ছেলে যে বেশিদূর যেতে পারবে না তা তিনি তখনই বুঝতে পেরেছিলেন। এ জন্যে সে তাকে তিনটি নাম দিয়ে যেকোন একটি বেছে নেয়ার কথা বলেন। প্রথম দুই নাম পছন্দ না হওয়ায় সেই ছেলে তৃতীয় নামটিই বেছে নেন যে নাম দিয়ে আজকে তিনি সবার পরিচিত - " দিলীপ কুমার " . - ১৯২২ সালের ১১ ডিসেম্বর বর্তমান পাকিস্তানের পেশোয়ারের এক অঞ্চলে দিলীপ কুমারের জন্ম। ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় তার পিতা তার ১১ ভাইবোনের সাথে তাকেও মুম্বাই নিয়ে এসে থাকতে থাকেন। প্রথম জীবনে পারিবারিক ফলের ব্যবসায় যোগ দিলেও দিলীপ কুমারের মন পড়ে থাকতো অন্য কোন জায়গায়। তাই সে পুনেতে চলে যায় আর সেখানে এক ক্যান্টিনে কাজ করা শুরু করে এবং পরে সেখানে এক স্যান্ডউইচ শপ ও খোলে। কিন্তু দোকানের কন্ট্রাক্ট শেষ হবার পরে আবারো মুম্বাই ফিরে আসে আর সেখানে একদিন সে ড. মাসানীর সাথে সে "বোম্বে টকিজ " এ যায়। সেখানেই দেভিকা রানীর সাথে তার দেখা হয় যা তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। দেভিকা রানীর ষ্টুডিও থেকেই তার প্রথম ছবি " জোয়ার ভাটা " মুক্তি পায় কিন্তু দিলীপ কুমার সে রকম পরিচিতি পায় না। তবে সে ঠিকই তখনকার সময়ের ষ্টার " অশোক কুমার " এর নজরে পড়ে যায় ।ফলে আরো কয়েকটি রোলের অফার আসে। আরো কয়েকটি অসফল ছবির পরে " জুগনু " ছবি দিয়ে সে খানিকটা পরিচিতি পায়।আর তার পরবর্তী দুই ছবি " শহীদ " আর মেহবুব খানের " আন্তাজ " এর পরে তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি যার ভিতরে আন্তাজ ছিল ওই সময়ের সবচেয়ে বেশি আয় করা ছবি। - ৫০ এর দশকেই তার আসল স্টারডম শুরু হয়। দিলীপ কুমার অভিনয় করতে থাকেন একের পর এক ট্রাজিক মুভিতে যা তাকে ট্রাজেডি কিং এর উপাধি এনে দেয়। এ সময়েই তিনি যোগান ,বাবুল ,দিদার ,দাগ, উড়ান খোটালা ,দেবদাস ,ইহুদি ,মধুমতি ইত্যাদি ক্লাসিক ছবিতে অভিনয় করেন। দাগ ছবিতে শঙ্করের ভূমিকায় অভিনয় করে প্রথম filmfare best actor award জিতে নেন। দেবদাস ছবিতে সুচিত্রা সেন আর ভৈজন্তিমালার বিপরীতে করা দেবদাস চরিত্রকে বর্তমানে পঞ্চাশ এর দশকের বলিউডের অন্যতম সেরা চরিত্র হিসেবে ধরা হয়। - তবে শুধু ট্রাজিক রোলেই নয় ,বিভিন্ন সামাজিক ছবি যেমন ফুটপাথ , নয়া দৌড় , মুসাফির ,পয়গাম এর মতো ছবিতে ভিন্নধর্মী চরিত্রে অভিনয় করেও দিলীপ কুমার দর্শক ও সমালোচকদের হৃদয় কেড়ে নেন। এছাড়াও আজাদ আর কোহিনুর ছবিতেও তার দুর্দান্ত অভিনয় ছিল প্রশংসনীয়। দিলীপ কুমারকে " ট্রাজেডি কিং " নামে বলার কারণে তার বিভিন্ন এক্সপেরিমেন্টাল রোলগুলো খুব বেশি আলোচনায় আসেনি।সে সময়ে " কোহিনুর " ছবিতে সীতার বাজানোর জন্য সীতার শেখা থেকে নয়া দৌড় এ রিকশা চালানো সহ বিভিন্ন রকমের মেথড এক্টিং এর কারণে তাকে ভারতের অন্যতম সেরা মেথড এক্টরের ভিতরেও রাখা যায়। - ষাটের দশকের শুরুতেই তার অভিনীত কে.আসিফের " মুঘল - ই - আজম " মুক্তি পায় যা ভারতীয় ছবির ইতিহাসের সব বক্স অফিস রেকর্ড ভেঙে দেয়। শাহজাদা সেলিমের চরিত্রে অভিনয় করে জনপ্রিয়তায় দিলীপ কুমার নিজেকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যান।এর পরের বছর সে "গঙ্গা যমুনা" নামের আরেক বিখ্যাত ছবিতে প্রযোজনা আর অভিনয় করেন যা তাকে ন্যাশনাল এওয়ার্ড পাইয়ে দেয়। এর পরে কয়েকটি অসফল ছবির পড়ে সে "রাম অউর শাম " এ ডাবল চরিত্রে অভিনয় করে আবারো বিশাল জনপ্রিয়তা পান। এছাড়াও ১৯৬৮ সালে তার আরো দুই ছবি " আদমি "এবং " সংঘর্ষ " বক্স অফিসে হিট হয় যা তাকে আইকনে পরিণত করে । - সত্তরের দশকে দিলীপ কুমার বেশ কিছু এক্সপেরিমেন্টাল রোল করেন,যার ভিতরে এক বাংলা ভাষার ছবি " সাগিনা" ও ছিল।এর ভিতরে দাস্তান আর বৈরাগ বক্স অফিসে খুব বেশি আয় না করলেও সমালোচকদের প্রশংসা পায়। এদিকে তার আরেক ছবি " গোপী " বেশ ভালো ব্যবসা করলেও ১৯৭৬ সালে তিনি অভিনয় থেকে পাঁচ বছরের অবসর নেন। - আশির দশকে ফিরে আসার পরপরই সে ক্রান্তি নামের ছবিতে অভিনয় করেন যা ঐবছরের সবচেয়ে ব্যবসা সফল ছবিতে পরিণত হয়। এর পরেই সে বিধাতা , শক্তি ,মশাল ,দুনিয়া নামক ছবিতে অভিনয় করতে থাকেন যার বেশিরভাই ব্যবসাসফল হয়।১৯৮৬ সালে তিনি অভিনয় করেন সুভাষ ঘাই এর " কার্মা " নামক ছবিতে যাকে আশির দশকের অন্যতম সেরা ব্যবসাসফল ছবি হিসেবে বর্তমানে মানা হয় । তবে ৯০ এর দশকে তিনি খুব বেশি ব্যবসাসফল ছবিতে অভিনয় করেননি। তার শেষ মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি " কিলা " তে সে ডাবল রোলে অভিনয় করেন যা খুব বেশি সাফল্য পায়নি। - পর্দার ভিতরের সাথে সাথে পর্দার বাইরেও দিলীপ কুমার তার সময়ে ছিলেন সমান জনপ্রিয়। দিলীপ কুমারের সাথে প্রথম রোমান্সের খবর শোনা যায় কামিনী কৌশালের সাথে। পরে ভৈজন্তিমালার সাথে তার গুঞ্জন শোনা গেলেও কোনটিই মধুবালার মত জনপ্রিয় হতে পারেনি। পর্দার ট্রাজিক কাহিনীর মতো তাদের বাস্তব জীবনের কাহিনীও ট্রাজিক। মধুবালার বাবার অমতে তাদের বিয়ে সে সময়ে হয় না। তার আর মধুবালার রোমান্স এবং বিচ্ছেদের কাহিনী সে সময়ে বলিউডে ছিল " টক অফ দ্যা টাউন " .পরে সে অভিনেত্রী সায়রা বানুকে বিয়ে করলেও পরবর্তীতে সে তাকে ছেড়ে আসমা খানের সাথে ঘর বাধে। সে বিয়েও অবশ্য খুব বেশিদিন টিকেনি। - মূলত অভিনেতা হলেও দিলীপ কুমার একই সাথে লেখক ,চিত্রনাট্যকার , এমনকি কবি ও । বিভিন্ন ছবিতে তার পোয়েটিক ডায়লগ তার সিগনেচার স্টাইল বলা যায়। "Kaun kambakth hai jo bardasht karne ke liye peeta hai ,main to peeta hoon ke bas saans le sakoon" এর মতো আইকনিক ডায়লগ কে তিনি তার তার পোয়েটিক স্টাইলে বলে অন্যরকম জনপ্রিয়তায় নিয়ে গেছেন। আর তার মেথড এক্টিং সম্পর্কে সত্যজিৎ রায় ভাষায় বলা যায় সে হলো আল্টিমেট মেথড এক্টর , আর জাভেদ আখতারের ভাষায় বলা যায় সে হলো মেথড এক্টিং এর জন্মদাতা। - সম্মাননার দিক থেকে দিলীপ কুমার অদ্বিতীয়।তিনি মোটমাট ১৯ বার filmfare best actor এর নমিনেশন পান যার ভিতরে আটবার ( দাগ ,আজাদ , দেবদাস ,নয়া দৌড় ,কোহিনুর , লিডার , রাম অউর শাম ,শক্তি ) তা জিতে নেন। এছাড়াও "গঙ্গা যমুনা " ছবির জন্য তিনি ন্যাশনাল এওয়ার্ড ও পান। দাদাসাহেব ফালকে ,পদ্ম বিভূষণ , CNN-IBN Lifetime Achievement Award থেকে শুরু করে দেশে বিদেশে আরো নানা ধরণের এওয়ার্ড এ ভূষিত হয়েছেন তিনি। 📌Some Facts about Dilip Kumar ভারতীয় অভিনেতা হিসেবে সবচেয়ে বেশি এওয়ার্ড জেতার জন্য "গিনেজ বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস " এ তার নাম আছে। - বিভিন্ন ছবিতে ট্রাজিক রোল প্লে করতে করতে সে ডিপ্রেশনে পরে যান এবং সাইক্রিয়াটিস্ট তাকে এ ধরণের রোল করা থেকে বিরত থাকতে বলেন। - স্ক্রিপ্ট চুজিং এর ক্ষেত্রে দিলীপ কুমার বরাবরই খুঁতখুঁতে ছিলেন। এ স্বভাবের কারণে তিনি "মাদার ইন্ডিয়া" এর আইকনিক রোল বিরজু থেকে নিজেকে ফিরিয়ে নেন যা পরবতীতে বিশাল হিট হয়েছিল। শুধু বলিউড নয় , পরিচালক ডেভিড লিন তাকে তার বিখ্যাত ছবি "লরেন্স অফ আরাবিয়া " তে অভিনয়ের অফার দিলে সেটাও তিনি ফিরিয়ে দেন। - একমাত্র ব্যক্তি যে পাকিস্তানের নিশান - ই- ইমতিয়াজ আর ভারতের পদ্ম বিভূষণ এ ভূষিত হয়েছেন। - পাঁচ দশকের ও বেশি সময় ধরে চলা মুভি ক্যারিয়ারে মোট ৬৩ টি ছবিতে অভিনয় করেন। - মাঝে রাজনীতিতে ঢুকে তিনি একবার রাজ্যসভার সদস্য ও হয়েছেন। - সত্যজিৎ রায়ের মতে "the ultimate method actor" খ্যাত দিলীপ কুমার অমিতাভ বচ্চন থেকে শাহরুখ খান সহ অসংখ্য অভিনেতার আইডল। - দিলীপ কুমারের বায়োগ্রাফি নিয়ে লেখা বই "The Substance and the Shadow" ওই বছরের অন্যতম সেরা বিক্রিত বায়োগ্রাফি যা আমাজনে দুই সপ্তাহ বেস্ট সেলার লিস্টে ছিল।
0 Comments 0 Shares 165 Views
BlackBird Ai
https://bbai.shop