অটোম্যান সুলতানদের সাথে তাদের মা অর্থাৎ ভালিদে সুলতানের সম্পর্কের রুপরেখাটা বেশ ইন্টারেস্টিং।

প্রথমতঃ পিক মোমেন্টে, অটোম্যান সুলতানরা ছিলেন নিজের একচ্ছত্র ক্ষমতা সম্পর্কে প্রচন্ডরকমের আত্মসচেতন, নিজের ক্ষমতা, প্রতিপত্তি, উপাধিতে কাউকে ভাগ দিতে নারাজ ছিলেন। তারা কখনোই দাঁড়িয়ে কাউকে সম্মান দেখাতেন না। কারো কাছে মাথা নত করতেন না।

ভালিদে সুলতানই সাম্রাজ্যের মধ্যে একমাত্র ব্যক্তি, যার উপস্থিতিতে সুলতান দাড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করতেন। মাথা খানিকটা ঝুকিয়ে বাউ করা বা হাতে চুমু খেয়ে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতেন। এটা একেবারেই ইউনিক, কারণ সাম্রাজ্যের আর কোন ব্যক্তি এই সম্মান পেতেন না। আবার ভালিদে সুলতানকে বলা যেতো লাস্ট সোলেস, কারণ সুলতান সাম্রাজ্যের জন্য আত্মঘাতী কোন সিদ্ধান্ত নিলে সাম্রাজ্যের উজির, উলেমারা ভালিদে সুলতানের শরণাপন্ন হতেন, যাতে করে তিনি সুলতানকে বোঝাতে পারেন।

ভালিদে সুলতানের ক্ষমতার এই উৎস হচ্ছে, অটোম্যান ও মুসলিমদের মায়ের প্রতি ইউনিক অনুরক্তি। ইসলাম ধর্মে মায়ের বিশেষ অধিকারের কথা উল্লেখ আছে, হাদিসে বলা আছে, "মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত।" আর তুর্কীতে একটা কথা প্রচলিত আছে, "মায়ের হকই আল্লাহের হক"।

তবে সুলতানের মায়েরা প্রথম দিকেই এই বিশেষ সম্মান পেতেন না। তাদেরকে বেশ অনেক সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে এই বিশেষ সম্মান পেতে। আর এই ট্রান্সফর্মেশনটা খুব একটা সুইফট ছিল না। কারণ, অটোম্যান সুলতানদের বেশিরভাগ সুলতানেরই জন্ম হয় তার পিতার উপপত্নী অর্থাৎ দাসীর গর্ভে। সেক্ষেত্রে মর্যাদার দিক থেকে সম্পর্কে মা হলেও সুলতানের মা সুলতানের অধীনস্থ হিসেবেই টৃটেড হতেন। সেক্ষেত্রে তার সন্তান সিংহাসনে বসার পর থেকে, সেখানে মা-ছেলে সম্পর্ক থেকে সুলতান-অধীনস্থ সম্পর্কটাই প্রাধান্য পেতো। অন্তত অফিশিয়ালি। তবে ধীরে ধীরে সম্পর্কের এই ভেদ ঘুচতে থাকে।

এই ট্রান্সফর্মেশনের পার্থক্যটা টের পাওয়া যায় সুলতান দ্বিতীয় বায়েজিতের মা গুলবাহার হাতুনের চিঠিতে সম্বোধন এবং সুলতান মুরাদের সময়ে ভালিদে কোসেম সুলতানের সম্বোধনে।

গুলবাহার হাতুনের একটি চিঠি যেটা তার সন্তান সুলতান বায়েজিতের উদ্দেশ্যে লেখা, সেটা এখনো তোপকাপি আর্কাইভে সংরক্ষিত আছে। সেটার সম্বোধনের ভাষা যদি ডিকোড করি, এমন দাঁড়ায়, "Benim
devletlimi göresim geldi/Benim beyciğezim.."(Oh my lord!)। (১)

কিন্তু কোসেম সুলতান বা তুরহান সুলতানকে তাদের সন্তান(সুলতান)কে "Aslanim"(আমার সিংহ)/oglum(আমার ছেলে) হিসেবে সম্বোধন করতে দেখা যায়, যেটা স্পষ্টভাবে তাদের মর্যাদার রুপান্তরের দিকে নির্দেশ করে। (২)

যখন থেকে সুলতানের মায়েরা "সুলতান" টাইটেল পেতে শুরু করেন মূলতঃ তখন থেকেই এই ট্রান্সফর্মেশনটা হওয়া শুরু করে। অটোম্যান সাম্রাজ্যের প্রথম দিকে নারীরা "হাতুন" টাইটেল পেতেন, অর্থাৎ রাজপরিবারের সুলতানিক উপাধি পেতেন। কিন্তু পরবর্তীতে ধীরে ধীরে তারা রাজপরিবারের সুলতানিক ক্ষমতা এবং"সুলতান" টাইটেলের অফিশিয়াল অংশীদার হওয়া শুরু করেন। সুলতান সুলেয়মানের মা ভালিদে হাফসা সুলতানের আমল থেকে এই ক্ষমতা সুসংহত হওয়া শুরু হয়। এর সর্বোচ্চ রূপ দেখা যায় সুলতান তৃতীয় মুরাতের আমলে তার মা ভালিদে নূরবানু সুলতানের আমলে। (৩)

সুলতান মুরাতের আমলেই অটোম্যান রাজরীতিতে ভালিদে সুলতানকে ঘিরে এক নতুন উদযাপন শুরু হয়। এই অনুষ্ঠানের নাম "ভালিদে-ই-আলাঈ"। এই উদযাপনের উপলক্ষ হচ্ছে, ভালিদে সুলতানের ঘোড়ার জুড়িগাড়িতে চড়ে পুরনো প্রাসাদ(এস্কি সারায়ি) থেকে নতুন প্রাসাদে আগমন। এই উদযাপনের সবচেয়ে সম্মানজনক অনুষঙ্গটা হচ্ছে, খোদ সুলতান তার মাকে তোপকাপিতে স্বাগত জানানোর জন্য দাড়িয়ে থাকতেন এবং তার মা গাড়ি থেকে নামামাত্রই তাকে বাউ করে হাতে চুমু খেয়ে "ভালিদে সুলতান"এর দায়িত্ব গ্রহণের জন্য স্বাগত জানাতেন। (৪)

সুলতান চতুর্থ মেহমেত তার মা ভালিদে তুরহান হাতিজে সুলতানের সাথে সিংহাসন ভাগাভাগি করে বসার নজির আছে, এমনকি তার আমলেই সুলতান এবং ভালিদে সুলতানকে অফিশিয়ালি সমান ক্ষমতাধর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তবে পরবর্তীতে এই প্যারাডাইম বদলে যায়, ভালিদে সুলতানের ক্ষমতা কমে আসে, তবে সম্মান বা মর্যাদা একইরকম থেকে যায়। (৫)
অটোম্যান সুলতানদের সাথে তাদের মা অর্থাৎ ভালিদে সুলতানের সম্পর্কের রুপরেখাটা বেশ ইন্টারেস্টিং। প্রথমতঃ পিক মোমেন্টে, অটোম্যান সুলতানরা ছিলেন নিজের একচ্ছত্র ক্ষমতা সম্পর্কে প্রচন্ডরকমের আত্মসচেতন, নিজের ক্ষমতা, প্রতিপত্তি, উপাধিতে কাউকে ভাগ দিতে নারাজ ছিলেন। তারা কখনোই দাঁড়িয়ে কাউকে সম্মান দেখাতেন না। কারো কাছে মাথা নত করতেন না। ভালিদে সুলতানই সাম্রাজ্যের মধ্যে একমাত্র ব্যক্তি, যার উপস্থিতিতে সুলতান দাড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করতেন। মাথা খানিকটা ঝুকিয়ে বাউ করা বা হাতে চুমু খেয়ে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতেন। এটা একেবারেই ইউনিক, কারণ সাম্রাজ্যের আর কোন ব্যক্তি এই সম্মান পেতেন না। আবার ভালিদে সুলতানকে বলা যেতো লাস্ট সোলেস, কারণ সুলতান সাম্রাজ্যের জন্য আত্মঘাতী কোন সিদ্ধান্ত নিলে সাম্রাজ্যের উজির, উলেমারা ভালিদে সুলতানের শরণাপন্ন হতেন, যাতে করে তিনি সুলতানকে বোঝাতে পারেন। ভালিদে সুলতানের ক্ষমতার এই উৎস হচ্ছে, অটোম্যান ও মুসলিমদের মায়ের প্রতি ইউনিক অনুরক্তি। ইসলাম ধর্মে মায়ের বিশেষ অধিকারের কথা উল্লেখ আছে, হাদিসে বলা আছে, "মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত।" আর তুর্কীতে একটা কথা প্রচলিত আছে, "মায়ের হকই আল্লাহের হক"। তবে সুলতানের মায়েরা প্রথম দিকেই এই বিশেষ সম্মান পেতেন না। তাদেরকে বেশ অনেক সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে এই বিশেষ সম্মান পেতে। আর এই ট্রান্সফর্মেশনটা খুব একটা সুইফট ছিল না। কারণ, অটোম্যান সুলতানদের বেশিরভাগ সুলতানেরই জন্ম হয় তার পিতার উপপত্নী অর্থাৎ দাসীর গর্ভে। সেক্ষেত্রে মর্যাদার দিক থেকে সম্পর্কে মা হলেও সুলতানের মা সুলতানের অধীনস্থ হিসেবেই টৃটেড হতেন। সেক্ষেত্রে তার সন্তান সিংহাসনে বসার পর থেকে, সেখানে মা-ছেলে সম্পর্ক থেকে সুলতান-অধীনস্থ সম্পর্কটাই প্রাধান্য পেতো। অন্তত অফিশিয়ালি। তবে ধীরে ধীরে সম্পর্কের এই ভেদ ঘুচতে থাকে। এই ট্রান্সফর্মেশনের পার্থক্যটা টের পাওয়া যায় সুলতান দ্বিতীয় বায়েজিতের মা গুলবাহার হাতুনের চিঠিতে সম্বোধন এবং সুলতান মুরাদের সময়ে ভালিদে কোসেম সুলতানের সম্বোধনে। গুলবাহার হাতুনের একটি চিঠি যেটা তার সন্তান সুলতান বায়েজিতের উদ্দেশ্যে লেখা, সেটা এখনো তোপকাপি আর্কাইভে সংরক্ষিত আছে। সেটার সম্বোধনের ভাষা যদি ডিকোড করি, এমন দাঁড়ায়, "Benim devletlimi göresim geldi/Benim beyciğezim.."(Oh my lord!)। (১) কিন্তু কোসেম সুলতান বা তুরহান সুলতানকে তাদের সন্তান(সুলতান)কে "Aslanim"(আমার সিংহ)/oglum(আমার ছেলে) হিসেবে সম্বোধন করতে দেখা যায়, যেটা স্পষ্টভাবে তাদের মর্যাদার রুপান্তরের দিকে নির্দেশ করে। (২) যখন থেকে সুলতানের মায়েরা "সুলতান" টাইটেল পেতে শুরু করেন মূলতঃ তখন থেকেই এই ট্রান্সফর্মেশনটা হওয়া শুরু করে। অটোম্যান সাম্রাজ্যের প্রথম দিকে নারীরা "হাতুন" টাইটেল পেতেন, অর্থাৎ রাজপরিবারের সুলতানিক উপাধি পেতেন। কিন্তু পরবর্তীতে ধীরে ধীরে তারা রাজপরিবারের সুলতানিক ক্ষমতা এবং"সুলতান" টাইটেলের অফিশিয়াল অংশীদার হওয়া শুরু করেন। সুলতান সুলেয়মানের মা ভালিদে হাফসা সুলতানের আমল থেকে এই ক্ষমতা সুসংহত হওয়া শুরু হয়। এর সর্বোচ্চ রূপ দেখা যায় সুলতান তৃতীয় মুরাতের আমলে তার মা ভালিদে নূরবানু সুলতানের আমলে। (৩) সুলতান মুরাতের আমলেই অটোম্যান রাজরীতিতে ভালিদে সুলতানকে ঘিরে এক নতুন উদযাপন শুরু হয়। এই অনুষ্ঠানের নাম "ভালিদে-ই-আলাঈ"। এই উদযাপনের উপলক্ষ হচ্ছে, ভালিদে সুলতানের ঘোড়ার জুড়িগাড়িতে চড়ে পুরনো প্রাসাদ(এস্কি সারায়ি) থেকে নতুন প্রাসাদে আগমন। এই উদযাপনের সবচেয়ে সম্মানজনক অনুষঙ্গটা হচ্ছে, খোদ সুলতান তার মাকে তোপকাপিতে স্বাগত জানানোর জন্য দাড়িয়ে থাকতেন এবং তার মা গাড়ি থেকে নামামাত্রই তাকে বাউ করে হাতে চুমু খেয়ে "ভালিদে সুলতান"এর দায়িত্ব গ্রহণের জন্য স্বাগত জানাতেন। (৪) সুলতান চতুর্থ মেহমেত তার মা ভালিদে তুরহান হাতিজে সুলতানের সাথে সিংহাসন ভাগাভাগি করে বসার নজির আছে, এমনকি তার আমলেই সুলতান এবং ভালিদে সুলতানকে অফিশিয়ালি সমান ক্ষমতাধর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তবে পরবর্তীতে এই প্যারাডাইম বদলে যায়, ভালিদে সুলতানের ক্ষমতা কমে আসে, তবে সম্মান বা মর্যাদা একইরকম থেকে যায়। (৫)
0 Комментарии 0 Поделились 188 Просмотры
BlackBird Ai
https://bbai.shop