একটা মজাদার অবাস্তব থিউরি আছে পৃথিবী ও মানুষ নিয়ে। তা হলো- পৃৃথিবীটা আসলে মানুষের নয়, ছিলও না কখনো। পৃথিবীতে মানুষ মূলত আগন্তুক। সোজা ভাষায় যাকে বলে, এলিয়েন।

এইজন্য এখনো পর্যন্ত পৃথিবীতে সার্ভাইভ করা শারীরিক কন্ডিশনে সবচেয়ে দুর্বল প্রাণীটি হলো মানুষ। পৃথিবীর ন্যাচারের সাথে যারা এখনো খাপ খাওয়াতে পারেনি। একটা তেলাপোকার থেকেও যার সার্ভাইভাল ক্ষমতা কম।

অবাস্তব এই থিউরিটা সত্য মনে হয় অ্যাভাটার দেখলে। জেমস ক্যামেরন পৃথিবীর মানুষ নয়। নির্ঘাত এই ব্যক্তি পৃথিবীর বাইরে থেকে এসেছে। একটা মানুষের কল্পনাশক্তি এতটা বৃহদাকার স্কেলে এমন অপার্থিব লেভেলের কিভাবে হতে পারে নয়ত।

১৬ বছর আগে অ্যাভাটারের প্রথম কিস্তি যখন বের হয়েছিল, যে পরিমাণ মুগ্ধতা ছিল চোখে, তার কিঞ্চিতও ভাটা পড়েনি প্রথম কিস্তির ১৩ বছর দ্বিতীয় কিস্তি যখন বের হলো আর তা দেখার পর। সামনে আসছে তৃতীয় কিস্তি। আরেকটা এপিক এক্সপেরিয়েন্সের অপেক্ষায়।

অ্যাভাটারের গল্প আর দশটা সাই-ফাই সিনেমার মতোন। যেখানে এলিয়েন ভিলেন নয়, প্রকৃত ভিলেন মানুষ। এমন চর্চিত একটা কনসেপ্টে অ্যাভাটার নির্মাণ করেও এমন অভাবনীয় সাফল্য আর মানুষের এতটা মাথায় ঢুকে গেল কিভাবে এই সিনেমা? মানুষকে কতটা প্রভাবিত করেছে এই সিনেমা, একটা ছোট্ট উদাহারণ দিই আমি।

অ্যাভাটার সিনেমা প্যান্ডোরা নামে একটা গ্রহ কেন্দ্র করে। বাস্তবিক ওই গ্রহ নাই জানা সত্ত্বেও অ্যাভাটারের প্রথম কিস্তি দেখার পর অনেক মানুষ ডিপ্রেসড হয়ে গিয়েছিল। আর ওই বিষাদ থেকে একটা নতুন সিন্ড্রোম পর্যন্ত ওরা আবিষ্কার করে ফেলেছিল। যার নাম, পোস্ট-অ্যাভাটার ডিপ্রেশন সিন্ড্রোম। সংক্ষেপে প্যাডস। যদিই মেডিক্যালি রেকগনাইজড না।

পোস্ট-অ্যাভাটার ডিপ্রেশন সিন্ড্রোম বা অ্যাভাটার ব্লুজে আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্যান্ডোরায় এত বেশী প্রবেশ করে ফেলে যে তাদের চারপাশের পৃথিবী ও মানুষজন তুচ্ছ হয়ে ওঠে। অর্থহীন আর বিষাদে ভরা এই পৃথিবী ছেড়ে ওরা প্যান্ডোরার মতো একটা স্বপ্ন স্বপ্ন জায়গায় চলে যেতে চায়। এমনকি, কারোর কারোর মাথায় সুইসাইডাল থটসও ঘোরাফেরা করেছে। যাতে মৃত্যুর পর পুনর্জন্মটা প্যান্ডোরায় হয়।

জেমস ক্যামেরনকে মানুষ বলে মনে হয় না আমার। তিনি বাস্তবিক অর্থেই একটা স্বপ্নের দুনিয়া নির্মাণ করে ফেলেছেন। সিনেমা আমার কাছে নিছক কোনো আড়াইঘণ্টার ভিজ্যুয়াল না। সিনেমা একটা কামরা। মানুষ মরে যায়, চলে যায়, মুছে যায়। ওই কামরা থেকে যায়। আরো দুইশো বছর পরও যদি কারোর ইচ্ছা হয় ওই কামরায় প্রবেশ করার। তবে সে কামরার দরজা খুলে প্রবেশ করতে পারবে। চাইলে বের হতে পারবে, চাইলে থেকেও যেতে পারবে ওখানে।

জেমস ক্যামেরন একটা আলাদা দুনিয়া বানিয়ে দিয়ে যাচ্ছেন আমাদের। বর্তমান তো বটেই, অদূর ভবিষ্যতেও যখন আমরা পারিপার্শ্বিক জগত নিয়ে চরম বিতৃষ্ণা ও বিষাদে ভুগব, তখন হয়ত এই পোস্ট-অ্যাভাটার ডিপ্রেশন সিন্ড্রোমই হবে একমাত্র আরোগ্য। কোনো অসুস্থতা নয়, একটা সময় হয়ত এই সিন্ড্রোমই হবে অসুস্থতা থেকে বাঁচার ঔষধ।

হুমায়ূন আহমেদ তার একটা জীবনকথায় লিখেছিলেন- এই পৃথিবী বড়ই বিষাদময়। আমি এই পৃথিবী ছেড়ে অন্য কোনো পৃথিবীতে যেতে চাই, যে পৃথিবীতে কোনো মানুষ নেই। চারপাশে পত্রপুষ্প শোভিত বৃক্ষরাজি, আকারে চির পূর্নিমার চাঁদ। যে চাঁদের ছায়া পড়েছে ময়ূরাক্ষী নামের এক নদীতে। সেই নদীর স্বচ্ছ জলে সারাক্ষণ খেলা করে জোছনার ফুল। দূরের বন থেকে ভেসে আসে অপার্থিব সংগীত।

'জোছনার ফুল' নাম দিয়ে আজীবন বিভিন্ন লেখায় যে আরাধ্য জায়গার সন্ধান করে গিয়েছেন হুমায়ূন আহমেদ- আমার কাছে, তারই একটা ভিজ্যুয়াল রুপ হলো প্যান্ডোরা। হুমায়ূন আহমেদ অ্যাভাটার দেখে যেতে পেরেছেন কিনা জানি না, তিনি শুধু মানবমনে আজন্ম জন্ম নেওয়া ওই একটা আকাঙ্খার কথা ব্যক্ত করেছিলেন। একজীবনে কতবার আমরা এই বিষাদে ভরা পৃথিবী থেকে অন্য কোথাও চলে যেতে চাই, হিসেব নেই তার। পারি না। তাই প্যান্ডোরা আমাদের ওই জায়গা হয়ে ওঠে। হয়ে উঠে সাময়িক ওই আশ্রয়।

আরো একবার জেমস ক্যামেরনের দুনিয়ায় হারিয়ে যাওয়ার অপেক্ষায় রইলাম। ডিসেম্বরের ১৯ তারিখ মুক্তি পাচ্ছে অ্যাভাটারের তৃতীয় কিস্তি 'ফায়ার এন্ড অ্যাশ'। প্রথম কিস্তি ছিল মাটি কেন্দ্রিক, দ্বিতীয় কিস্তি জল। তৃতীয় কিস্তির ফোকাস হচ্ছে আগুন। সর্বমোট পাঁচটা কিস্তি হবে। বাকি দু'টোর একটা আসবে ২০২৯ সালে। আর ফাইনাল কিস্তি মুক্তির সম্ভাব্য সাল ২০৩১!

আপাতত, ডিসেম্বরের অপেক্ষায়। দেখা যাক, পরিবারের জন্য একটা মানুষ আর কতদূর যেতে পারে!

-- সাখাওয়াত হোসেন
একটা মজাদার অবাস্তব থিউরি আছে পৃথিবী ও মানুষ নিয়ে। তা হলো- পৃৃথিবীটা আসলে মানুষের নয়, ছিলও না কখনো। পৃথিবীতে মানুষ মূলত আগন্তুক। সোজা ভাষায় যাকে বলে, এলিয়েন। এইজন্য এখনো পর্যন্ত পৃথিবীতে সার্ভাইভ করা শারীরিক কন্ডিশনে সবচেয়ে দুর্বল প্রাণীটি হলো মানুষ। পৃথিবীর ন্যাচারের সাথে যারা এখনো খাপ খাওয়াতে পারেনি। একটা তেলাপোকার থেকেও যার সার্ভাইভাল ক্ষমতা কম। অবাস্তব এই থিউরিটা সত্য মনে হয় অ্যাভাটার দেখলে। জেমস ক্যামেরন পৃথিবীর মানুষ নয়। নির্ঘাত এই ব্যক্তি পৃথিবীর বাইরে থেকে এসেছে। একটা মানুষের কল্পনাশক্তি এতটা বৃহদাকার স্কেলে এমন অপার্থিব লেভেলের কিভাবে হতে পারে নয়ত। ১৬ বছর আগে অ্যাভাটারের প্রথম কিস্তি যখন বের হয়েছিল, যে পরিমাণ মুগ্ধতা ছিল চোখে, তার কিঞ্চিতও ভাটা পড়েনি প্রথম কিস্তির ১৩ বছর দ্বিতীয় কিস্তি যখন বের হলো আর তা দেখার পর। সামনে আসছে তৃতীয় কিস্তি। আরেকটা এপিক এক্সপেরিয়েন্সের অপেক্ষায়। অ্যাভাটারের গল্প আর দশটা সাই-ফাই সিনেমার মতোন। যেখানে এলিয়েন ভিলেন নয়, প্রকৃত ভিলেন মানুষ। এমন চর্চিত একটা কনসেপ্টে অ্যাভাটার নির্মাণ করেও এমন অভাবনীয় সাফল্য আর মানুষের এতটা মাথায় ঢুকে গেল কিভাবে এই সিনেমা? মানুষকে কতটা প্রভাবিত করেছে এই সিনেমা, একটা ছোট্ট উদাহারণ দিই আমি। অ্যাভাটার সিনেমা প্যান্ডোরা নামে একটা গ্রহ কেন্দ্র করে। বাস্তবিক ওই গ্রহ নাই জানা সত্ত্বেও অ্যাভাটারের প্রথম কিস্তি দেখার পর অনেক মানুষ ডিপ্রেসড হয়ে গিয়েছিল। আর ওই বিষাদ থেকে একটা নতুন সিন্ড্রোম পর্যন্ত ওরা আবিষ্কার করে ফেলেছিল। যার নাম, পোস্ট-অ্যাভাটার ডিপ্রেশন সিন্ড্রোম। সংক্ষেপে প্যাডস। যদিই মেডিক্যালি রেকগনাইজড না। পোস্ট-অ্যাভাটার ডিপ্রেশন সিন্ড্রোম বা অ্যাভাটার ব্লুজে আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্যান্ডোরায় এত বেশী প্রবেশ করে ফেলে যে তাদের চারপাশের পৃথিবী ও মানুষজন তুচ্ছ হয়ে ওঠে। অর্থহীন আর বিষাদে ভরা এই পৃথিবী ছেড়ে ওরা প্যান্ডোরার মতো একটা স্বপ্ন স্বপ্ন জায়গায় চলে যেতে চায়। এমনকি, কারোর কারোর মাথায় সুইসাইডাল থটসও ঘোরাফেরা করেছে। যাতে মৃত্যুর পর পুনর্জন্মটা প্যান্ডোরায় হয়। জেমস ক্যামেরনকে মানুষ বলে মনে হয় না আমার। তিনি বাস্তবিক অর্থেই একটা স্বপ্নের দুনিয়া নির্মাণ করে ফেলেছেন। সিনেমা আমার কাছে নিছক কোনো আড়াইঘণ্টার ভিজ্যুয়াল না। সিনেমা একটা কামরা। মানুষ মরে যায়, চলে যায়, মুছে যায়। ওই কামরা থেকে যায়। আরো দুইশো বছর পরও যদি কারোর ইচ্ছা হয় ওই কামরায় প্রবেশ করার। তবে সে কামরার দরজা খুলে প্রবেশ করতে পারবে। চাইলে বের হতে পারবে, চাইলে থেকেও যেতে পারবে ওখানে। জেমস ক্যামেরন একটা আলাদা দুনিয়া বানিয়ে দিয়ে যাচ্ছেন আমাদের। বর্তমান তো বটেই, অদূর ভবিষ্যতেও যখন আমরা পারিপার্শ্বিক জগত নিয়ে চরম বিতৃষ্ণা ও বিষাদে ভুগব, তখন হয়ত এই পোস্ট-অ্যাভাটার ডিপ্রেশন সিন্ড্রোমই হবে একমাত্র আরোগ্য। কোনো অসুস্থতা নয়, একটা সময় হয়ত এই সিন্ড্রোমই হবে অসুস্থতা থেকে বাঁচার ঔষধ। হুমায়ূন আহমেদ তার একটা জীবনকথায় লিখেছিলেন- এই পৃথিবী বড়ই বিষাদময়। আমি এই পৃথিবী ছেড়ে অন্য কোনো পৃথিবীতে যেতে চাই, যে পৃথিবীতে কোনো মানুষ নেই। চারপাশে পত্রপুষ্প শোভিত বৃক্ষরাজি, আকারে চির পূর্নিমার চাঁদ। যে চাঁদের ছায়া পড়েছে ময়ূরাক্ষী নামের এক নদীতে। সেই নদীর স্বচ্ছ জলে সারাক্ষণ খেলা করে জোছনার ফুল। দূরের বন থেকে ভেসে আসে অপার্থিব সংগীত। 'জোছনার ফুল' নাম দিয়ে আজীবন বিভিন্ন লেখায় যে আরাধ্য জায়গার সন্ধান করে গিয়েছেন হুমায়ূন আহমেদ- আমার কাছে, তারই একটা ভিজ্যুয়াল রুপ হলো প্যান্ডোরা। হুমায়ূন আহমেদ অ্যাভাটার দেখে যেতে পেরেছেন কিনা জানি না, তিনি শুধু মানবমনে আজন্ম জন্ম নেওয়া ওই একটা আকাঙ্খার কথা ব্যক্ত করেছিলেন। একজীবনে কতবার আমরা এই বিষাদে ভরা পৃথিবী থেকে অন্য কোথাও চলে যেতে চাই, হিসেব নেই তার। পারি না। তাই প্যান্ডোরা আমাদের ওই জায়গা হয়ে ওঠে। হয়ে উঠে সাময়িক ওই আশ্রয়। আরো একবার জেমস ক্যামেরনের দুনিয়ায় হারিয়ে যাওয়ার অপেক্ষায় রইলাম। ডিসেম্বরের ১৯ তারিখ মুক্তি পাচ্ছে অ্যাভাটারের তৃতীয় কিস্তি 'ফায়ার এন্ড অ্যাশ'। প্রথম কিস্তি ছিল মাটি কেন্দ্রিক, দ্বিতীয় কিস্তি জল। তৃতীয় কিস্তির ফোকাস হচ্ছে আগুন। সর্বমোট পাঁচটা কিস্তি হবে। বাকি দু'টোর একটা আসবে ২০২৯ সালে। আর ফাইনাল কিস্তি মুক্তির সম্ভাব্য সাল ২০৩১! আপাতত, ডিসেম্বরের অপেক্ষায়। দেখা যাক, পরিবারের জন্য একটা মানুষ আর কতদূর যেতে পারে! -- সাখাওয়াত হোসেন
0 Commentarios 0 Acciones 143 Views
BlackBird Ai
https://bbai.shop