আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল প্রথম আধুনিক রাজধানী হিসেবে পুরোপুরি পানিশূন্য করে দিতে পারে।

আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল আজ এমন এক ভয়াবহ সংকটের মুখোমুখি যা তাকে পৃথিবীর প্রথম আধুনিক রাজধানী হিসেবে পুরোপুরি পানিশূন্য করে দিতে পারে। শহরটিতে এখন ৫০ থেকে ৬০ লাখ মানুষের বাস, কিন্তু প্রতিদিনের পানির চাহিদা মেটাতে ভূগর্ভস্থ জলাধার বা aquifer থেকে যতটা পানি তোলা হচ্ছে তার তুলনায় বৃষ্টির পানি বা প্রাকৃতিক উৎস থেকে পুনরায় জমা হওয়া পানির পরিমাণ অনেক কম। প্রতিবছর প্রায় ৪৪ মিলিয়ন ঘনমিটার বেশি পানি তুলে নেওয়া হচ্ছে, যার ফলে কাবুলের পানির স্তর গত এক দশকে প্রায় ৩০ মিটার নেমে গেছে এবং অর্ধেকেরও বেশি নলকূপ শুকিয়ে গেছে।
এই সংকটের পেছনে রয়েছে কয়েকটি বড় কারণ—জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বৃষ্টিপাতের ধরণ পাল্টে যাওয়া, পানি ব্যবস্থাপনায় দীর্ঘদিনের অব্যবস্থা, দ্রুত নগরায়ণ আর ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপ। পরিস্থিতি আরও খারাপ হয় ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর, যখন আন্তর্জাতিক সহায়তা হঠাৎ কমে যায়। Mercy Corps নামের একটি সংস্থার সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে, কাবুলের পানি সংকট এখন “টিপিং পয়েন্ট”-এ পৌঁছেছে। অনেক পরিবারকে পানির জন্য আয়ের প্রায় ৩০ শতাংশ ব্যয় করতে হচ্ছে, অথচ পরিষ্কার ও নিরাপদ পানির প্রাপ্যতা দিন দিন কমছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি কেবল পরিবেশগত সংকট নয়, এটি জনস্বাস্থ্য ও জীবিকার জন্য সরাসরি হুমকি এমনকি বৃহৎ মানবিক বিপর্যয়ের কারণও হতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হবে, খাদ্য নিরাপত্তা নষ্ট হবে, জীবনযাত্রার খরচ বাড়বে এবং অনেকে হয়তো বাধ্য হয়ে স্থান পরিবর্তন করবে। কাবুলের এই পরিস্থিতি আসলে একটি বৈশ্বিক সমস্যার প্রতিচ্ছবি। মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা এবং দক্ষিণ এশিয়ার অনেক জায়গাতেই ভূগর্ভস্থ পানি অতিরিক্ত ব্যবহারে দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউন কিংবা ভারতের চেন্নাই শহরও একসময় পানিশূন্য হওয়ার মুখে পড়েছিল।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এখনই যদি টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা, শক্তিশালী অবকাঠামো ও সঠিক নীতি গ্রহণ না করা হয়, তবে কাবুল শুধু নয় আরও অনেক শহর ভয়াবহ সংকটে পড়তে পারে।