প্রকৃতির গোপন স্থপতি, কাঠবিড়ালিরা যেভাবে গড়ে তোলে নতুন বনভূমি তা আমাদের ধারণারও বাহিরে।

হয়তো কোনো এক শীতের সকালে আপনি একটি কাঠবিড়ালিকে দেখলেন ব্যস্ত হাতে একটি বাদাম মাটিতে পুঁততে। আপনি ভাবছেন, এটি তার আগামী দিনের খাদ্য সঞ্চয়। কিন্তু আপনি কি জানেন, এই ছোট প্রাণীটি অজান্তেই আমাদের ধরিত্রীর জন্য কত বড় একটি কাজ করে চলেছে? কাঠবিড়ালিরা কেবল খাদ্য সঞ্চয়কারী নয়, তারা পৃথিবীর সবচেয়ে নিবেদিতপ্রাণ এবং অপ্রত্যাশিত বনয়নকারী।
কাঠবিড়ালিদের এই কাজের মূল কারণ হলো তাদের দূর্বল স্মৃতিশক্তি। শীতকালে নিজেদের খাবারের জোগান নিশ্চিত করতে তারা হাজার হাজার বাদাম, বীজ এবং অ্যাকর্ন মাটির নিচে, গাছের গুঁড়ির ফাঁকে বা পাতার স্তূপের নিচে লুকিয়ে রাখে। তাদের এই লুকানোর প্রক্রিয়া অত্যন্ত সুশৃঙ্খল। কিন্তু সমস্যাটা হলো, তারা তাদের লুকানো জায়গার প্রায় তিন-চতুর্থাংশই ভুলে যায়।
বিজ্ঞানীদের মতে, কাঠবিড়ালিদের লুকানো প্রায় ৭৫ শতাংশ খাদ্যই কোনো না কোনো কারণে আর খুঁজে পাওয়া যায় না। আর এখানেই প্রকৃতির জাদুকরী অধ্যায়টি শুরু হয়। যে বাদামগুলো কাঠবিড়ালিদের স্মৃতি থেকে হারিয়ে যায়, সেগুলো মাটির উর্বরতা আর বৃষ্টির পানি পেয়ে অঙ্কুরিত হতে শুরু করে। সময়ের সাথে সাথে, এই ভুলে যাওয়া বীজগুলো থেকেই জন্ম নেয় ছোট চারাগাছ, যা ধীরে ধীরে একটি পূর্ণাঙ্গ বৃক্ষে রূপান্তরিত হয়। এভাবেই বছরের পর বছর ধরে লক্ষ লক্ষ নতুন গাছ পৃথিবীতে জন্ম নেয়, যা পৃথিবীর বনভূমিকে নতুন করে গড়ে তুলতে সাহায্য করে।
কাঠবিড়ালির এই আচরণকে বলা হয় "অ্যাকর্ন ডিসপার্সাল" বা বীজ ছড়িয়ে দেওয়া। তাদের এই কার্যকলাপ কেবল নতুন গাছ জন্ম দেওয়াতেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তারা বীজগুলোকে মাটির গভীরে এমনভাবে রাখে, যেখানে অন্য কোনো প্রাণী তা সহজেই খুঁজে পায় না। ফলে বীজগুলো অঙ্কুরোদগমের জন্য সুরক্ষিত থাকে।
ভাবলে অবাক লাগে, সৃষ্টিকর্তার কি নিখুঁত কারুকাজ, যে প্রাণীটি কেবল নিজের বেঁচে থাকার তাগিদে কাজ করে, সে-ই অজান্তে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও পুনঃবনায়নের মতো একটি বিশাল কাজ করে চলেছে। কাঠবিড়ালিদের এই নীরব ভূমিকা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, প্রকৃতির প্রতিটি ক্ষুদ্র প্রাণীও কতটা গুরুত্বপূর্ণ। একটি ছোট্ট কাঠবিড়ালির একটি বাদাম লুকিয়ে রাখার সামান্য চেষ্টাই একদিন একটি বিশাল সবুজ বনভূমির জন্ম দিতে পারে।
