বিশ্বের সবচেয়ে নিখুঁত ঘড়ি তৈরি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেকনোলজির গবেষকেরা।

এমন এক ঘড়ি যা এক সেকেন্ডকে উনিশ দশমিক ঘর পর্যন্ত মাপতে পারে। সময় পরিমাপের ইতিহাসে এটি এক যুগান্তকারী অগ্রগতি। ঘড়িটি কাজ করে একক একটি অ্যালুমিনিয়াম আয়ন এবং একটি ম্যাগনেসিয়াম আয়নের ক্ষুদ্র কম্পন অনুসরণ করে। এই দুই আয়নকে প্রায় শূন্য কেলভিন বা একেবারে সর্বনিম্ন তাপমাত্রার কাছাকাছি ঠান্ডা করা হয়, যাতে তাদের নড়াচড়া প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে অ্যালুমিনিয়াম আয়নকে লেজারের আলো দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয় আর এভাবেই পাওয়া যায় অভূতপূর্ব নির্ভুলতা।
নতুন এই ঘড়ি আগের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। এটি ৪১% বেশি নির্ভুল এবং ২.৬ গুণ বেশি স্থিতিশীল। আগে এক সেকেন্ডের সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে ডেটা সংগ্রহে তিন সপ্তাহ লাগত, এখন লাগে মাত্র দেড় দিন। তবে এই ঘড়ি দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য নয়; এটি মূলত অন্য সব ঘড়িকে ক্যালিব্রেট করার মানদণ্ড হিসেবে কাজ করে এবং সূক্ষ্ম বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ব্যবহার হয়।
এ ধরনের পরমাণু ঘড়ি বা atomic clock কাজ করে একেবারে আলাদা প্রক্রিয়ায়—যান্ত্রিক গিয়ার নয়, বরং পরমাণুর কম্পন দিয়ে সময় মাপা হয়। সাধারণত সিজিয়াম বা অ্যালুমিনিয়ামের মতো পরমাণুর কম্পনকে লেজার বা মাইক্রোওয়েভের আলো দিয়ে নির্দিষ্ট ছন্দে আনা হয়। এই ছন্দ এতটাই নিয়মিত যে তা সময় মাপার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উপায়।
এমন ঘড়ি শুধু GPS বা টেলিকমিউনিকেশনের জন্যই নয়, বরং আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতাবাদ যাচাই, ডার্ক ম্যাটারের খোঁজ বা পৃথিবীর ঘূর্ণন আর মহাকর্ষের ক্ষুদ্রতম পরিবর্তন পরিমাপের জন্য অপরিহার্য। বলা যায়, সময় মাপা এখানে কেবল ঘড়ির কাজ নয়—এটা মহাবিশ্বকে বোঝার এক অনন্য চাবিকাঠি।