• "আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে
    কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে?
    মুখে হাসি, বুকে বল, তেজে ভরা মন
    “মানুষ হইতে হবে”—এই তার পণ!!"

    কবিতা টি নিশ্চই সবার চেনা.....কবির নাম বলতে পারবেন ?
    ......চলুন আমিই বলে দিচ্ছি!

    ---
    ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগ ও বিংশ শতাব্দীর সূচনালগ্নে, বাংলার সমাজে যখন নারীশিক্ষা ও নারীমুক্তি এক ক্রমবর্ধমান আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে, তখনই উদিত হয়েছিলেন এক বিশিষ্ট কবি, সমাজসেবিকা ও একজন আদর্শ মাতার প্রতিচ্ছবি—কুসুমকুমারী দাস (১৮৭৫–১৯৪৮)। তিনি আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি জীবনানন্দ দাশের জননী, কিন্তু তাঁর নিজের জীবন, সাহিত্যচর্চা ও সমাজসেবামূলক কাজও তাঁকে স্বতন্ত্র মহিমায় অধিষ্ঠিত করে।

    কুসুমকুমারীর জন্ম হয় ১৮৭৫ সালে। তিনি কলকাতার বিথুন স্কুলে শিক্ষালাভ করেন, যা ছিল সে সময়ে নারীদের জন্য উচ্চশিক্ষার এক অগ্রগামী প্রতিষ্ঠান। তাঁর সাহিত্যচর্চার বীজ রোপিত হয় পিতার হাতে। তাঁর পিতা চন্দ্রনাথ দাস হালকা রচনার কবি ছিলেন এবং তাঁর কাছ থেকেই কুসুমকুমারী লেখালেখির প্রতি আকৃষ্ট হন।
    ১৮৯৪ সালে, ১৯ বছর বয়সে, কুসুমকুমারী বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন সত্যানন্দ দাস-এর সঙ্গে। তাঁদের সংসারে তিন সন্তান জন্মগ্রহণ করেন—প্রখ্যাত কবি জীবনানন্দ দাস, অশোকানন্দ দাস, ও কন্যা সুচরিতা দাস। জীবনানন্দের আত্মিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক গঠনে কুসুমকুমারীর প্রভাব গভীর ও স্থায়ী ছিল।
    --
    কুসুমকুমারী দাস নিয়মিত কবিতা লিখতেন। তাঁর রচনাগুলি প্রকাশিত হত সে সময়কার উল্লেখযোগ্য পত্র-পত্রিকায়—‘মুকুল’, ‘ব্রাহ্মবাদী’ ও ‘প্রবাসী’-তে। তিনি নিয়মিত ব্যক্তিগত ডায়েরি লিখতেন, যদিও দুর্ভাগ্যবশত সেসবের বেশিরভাগই তাঁর নিজের হাতে ধ্বংসপ্রাপ্ত বা হারিয়ে যায়।

    তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত কবিতা “আদর্শ ছেলে”, যা বাংলার শিশুসাহিত্যে এক অমর স্থান লাভ করেছে। এই কবিতার প্রথম দুটি চরণ আজও বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠ্য ও নৈতিক শিক্ষা হিসেবে ব্যবহৃত হয়—

    > আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে
    কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে?
    মুখে হাসি, বুকে বল, তেজে ভরা মন
    “মানুষ হইতে হবে”—এই তার পণ!!

    এই কবিতা একটি আদর্শ মানবিক চরিত্রের দিকনির্দেশনা দেয়, যা বাংলার শিশুদের মনে মূল্যবোধ গঠন করতে সাহায্য করেছে যুগ যুগ ধরে।
    -
    কেবল গৃহিণী ও কবি নন, কুসুমকুমারী দাস ছিলেন একজন সক্রিয় সমাজসেবিকা। বরিশাল মহিলা সভা (Barisal Women Society)-র তিনি সম্পাদক ছিলেন। এই সংগঠন সমাজকল্যাণে অসামান্য অবদান রাখে—অভাবী কন্যাদের সাহায্য, ধাত্রী প্রশিক্ষণ, বালিকাদের বিদ্যালয় স্থাপন, এবং নারীদের গৃহশিক্ষার ব্যবস্থা ছিল এর মূল লক্ষ্য।
    তিনি ছিলেন ব্রাহ্মসমাজের সদস্য, এবং ১৩১৯ থেকে ১৩৩৮ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত নারী দিবস প্রার্থনায় আচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এমনকি কখনো কখনো তিনি সাধারণ ব্রাহ্মসমাজের সমাবেশেও আচার্য পদে অভিষিক্ত হন, যা সে সময়কার সমাজে নারীদের জন্য এক বিরল সম্মান।
    --
    কুসুমকুমারী দাস তাঁর সময়ের একজন প্রগতিশীল নারী ছিলেন। তাঁর সাহিত্যচর্চা, সমাজসেবা ও মাতৃত্ব একত্রে তাঁকে এক অনন্য উচ্চতায় প্রতিষ্ঠা করেছে। তিনি ছিলেন নারী শিক্ষা ও সমাজ উন্নয়নের এক নিঃশব্দ যোদ্ধা, যাঁর জীবনপ্রবাহ পরোক্ষে হলেও জীবনানন্দ দাশের মতো কবির মানসগঠনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে।

    তাঁর রেখে যাওয়া “মানুষ হইতে হবে”-র পণ আজও আমাদের সমাজে নৈতিক চেতনার এক অনন্য বার্তা হিসেবে প্রতিধ্বনিত হয়।

    কলমে সুরজ মন্ডল
    Mr. Hotch Potch

    চিত্র ও তথ্য - উইকিপিডিয়া ও সামাজিক মাধ্যম

    ইতিহাসের নানা অধ্যায় জানতে আমাদের সঙ্গে থাকুন..

    আমাদের ইউটিউব চ্যানেল -
    https://youtube.com/@talpata_mr.hotchpotch?si=GH6oNo0zh1SSkB8b

    WhatsApp Channel
    https://whatsapp.com/channel/0029Vaa7cYoJ93wOSMU4ku1I

    Follow Us on Instagram
    https://www.instagram.com/talpata_history?igsh=Z3Z5N21qNnRsbWxx

    #KusumkumariDas
    #BengaliPoet
    #WomenInLiterature
    #LegacyOfWords
    #PoetAndMother
    #VoiceOfBengal
    #UnsungHeroine
    #untoldhistory #UntoldStory #history
    "আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে? মুখে হাসি, বুকে বল, তেজে ভরা মন “মানুষ হইতে হবে”—এই তার পণ!!" কবিতা টি নিশ্চই সবার চেনা.....কবির নাম বলতে পারবেন ? ......চলুন আমিই বলে দিচ্ছি! --- ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগ ও বিংশ শতাব্দীর সূচনালগ্নে, বাংলার সমাজে যখন নারীশিক্ষা ও নারীমুক্তি এক ক্রমবর্ধমান আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে, তখনই উদিত হয়েছিলেন এক বিশিষ্ট কবি, সমাজসেবিকা ও একজন আদর্শ মাতার প্রতিচ্ছবি—কুসুমকুমারী দাস (১৮৭৫–১৯৪৮)। তিনি আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি জীবনানন্দ দাশের জননী, কিন্তু তাঁর নিজের জীবন, সাহিত্যচর্চা ও সমাজসেবামূলক কাজও তাঁকে স্বতন্ত্র মহিমায় অধিষ্ঠিত করে। কুসুমকুমারীর জন্ম হয় ১৮৭৫ সালে। তিনি কলকাতার বিথুন স্কুলে শিক্ষালাভ করেন, যা ছিল সে সময়ে নারীদের জন্য উচ্চশিক্ষার এক অগ্রগামী প্রতিষ্ঠান। তাঁর সাহিত্যচর্চার বীজ রোপিত হয় পিতার হাতে। তাঁর পিতা চন্দ্রনাথ দাস হালকা রচনার কবি ছিলেন এবং তাঁর কাছ থেকেই কুসুমকুমারী লেখালেখির প্রতি আকৃষ্ট হন। ১৮৯৪ সালে, ১৯ বছর বয়সে, কুসুমকুমারী বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন সত্যানন্দ দাস-এর সঙ্গে। তাঁদের সংসারে তিন সন্তান জন্মগ্রহণ করেন—প্রখ্যাত কবি জীবনানন্দ দাস, অশোকানন্দ দাস, ও কন্যা সুচরিতা দাস। জীবনানন্দের আত্মিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক গঠনে কুসুমকুমারীর প্রভাব গভীর ও স্থায়ী ছিল। -- কুসুমকুমারী দাস নিয়মিত কবিতা লিখতেন। তাঁর রচনাগুলি প্রকাশিত হত সে সময়কার উল্লেখযোগ্য পত্র-পত্রিকায়—‘মুকুল’, ‘ব্রাহ্মবাদী’ ও ‘প্রবাসী’-তে। তিনি নিয়মিত ব্যক্তিগত ডায়েরি লিখতেন, যদিও দুর্ভাগ্যবশত সেসবের বেশিরভাগই তাঁর নিজের হাতে ধ্বংসপ্রাপ্ত বা হারিয়ে যায়। তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত কবিতা “আদর্শ ছেলে”, যা বাংলার শিশুসাহিত্যে এক অমর স্থান লাভ করেছে। এই কবিতার প্রথম দুটি চরণ আজও বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠ্য ও নৈতিক শিক্ষা হিসেবে ব্যবহৃত হয়— > আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে? মুখে হাসি, বুকে বল, তেজে ভরা মন “মানুষ হইতে হবে”—এই তার পণ!! এই কবিতা একটি আদর্শ মানবিক চরিত্রের দিকনির্দেশনা দেয়, যা বাংলার শিশুদের মনে মূল্যবোধ গঠন করতে সাহায্য করেছে যুগ যুগ ধরে। - কেবল গৃহিণী ও কবি নন, কুসুমকুমারী দাস ছিলেন একজন সক্রিয় সমাজসেবিকা। বরিশাল মহিলা সভা (Barisal Women Society)-র তিনি সম্পাদক ছিলেন। এই সংগঠন সমাজকল্যাণে অসামান্য অবদান রাখে—অভাবী কন্যাদের সাহায্য, ধাত্রী প্রশিক্ষণ, বালিকাদের বিদ্যালয় স্থাপন, এবং নারীদের গৃহশিক্ষার ব্যবস্থা ছিল এর মূল লক্ষ্য। তিনি ছিলেন ব্রাহ্মসমাজের সদস্য, এবং ১৩১৯ থেকে ১৩৩৮ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত নারী দিবস প্রার্থনায় আচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এমনকি কখনো কখনো তিনি সাধারণ ব্রাহ্মসমাজের সমাবেশেও আচার্য পদে অভিষিক্ত হন, যা সে সময়কার সমাজে নারীদের জন্য এক বিরল সম্মান। -- কুসুমকুমারী দাস তাঁর সময়ের একজন প্রগতিশীল নারী ছিলেন। তাঁর সাহিত্যচর্চা, সমাজসেবা ও মাতৃত্ব একত্রে তাঁকে এক অনন্য উচ্চতায় প্রতিষ্ঠা করেছে। তিনি ছিলেন নারী শিক্ষা ও সমাজ উন্নয়নের এক নিঃশব্দ যোদ্ধা, যাঁর জীবনপ্রবাহ পরোক্ষে হলেও জীবনানন্দ দাশের মতো কবির মানসগঠনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে। তাঁর রেখে যাওয়া “মানুষ হইতে হবে”-র পণ আজও আমাদের সমাজে নৈতিক চেতনার এক অনন্য বার্তা হিসেবে প্রতিধ্বনিত হয়। কলমে ✍️ সুরজ মন্ডল ©️Mr. Hotch Potch চিত্র ও তথ্য - উইকিপিডিয়া ও সামাজিক মাধ্যম ইতিহাসের নানা অধ্যায় জানতে আমাদের সঙ্গে থাকুন.. আমাদের ইউটিউব চ্যানেল - https://youtube.com/@talpata_mr.hotchpotch?si=GH6oNo0zh1SSkB8b WhatsApp Channel https://whatsapp.com/channel/0029Vaa7cYoJ93wOSMU4ku1I Follow Us on Instagram https://www.instagram.com/talpata_history?igsh=Z3Z5N21qNnRsbWxx #KusumkumariDas #BengaliPoet #WomenInLiterature #LegacyOfWords #PoetAndMother #VoiceOfBengal #UnsungHeroine #untoldhistory #UntoldStory #history
    0 Comments 0 Shares 299 Views
BlackBird Ai
https://bbai.shop