একদিন আমার জাপানি সহকর্মী, শিক্ষক ইয়ামামোতাকে আমি সরল এক প্রশ্ন করেছিলাম— "তোমরা কীভাবে শিক্ষক দিবস উদযাপন করো?"
তিনি একটু চমকে গিয়েই জবাব দিলেন, "আমাদের এখানে শিক্ষক দিবস বলে কিছু নেই।"
আমি খানিকটা হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম। একটা দেশ যেখানে শিক্ষা, বিজ্ঞান, প্রযুক্তিতে এতটা উন্নত, সেখানে কীভাবে শিক্ষক দিবসই নেই? কেমন যেন অসম্মানজনক লাগছিল প্রথমে।
তবে আমার ভুলটা আমি বুঝতে পারলাম কয়েকদিন পর।
এক বিকেলে, কাজ শেষে ইয়ামামোতা আমাকে তাঁর বাড়িতে আমন্ত্রণ জানালেন। যেহেতু তাঁর বাড়ি শহরের প্রান্তে, তাই আমরা মেট্রোতে যাত্রা শুরু করলাম। এটা ছিল সন্ধ্যার পিক আওয়ার—ট্রেনটি ধীরে ধীরে ভরে উঠছিল মানুষের ভিড়ে। আমি কোনওমতে রেলের হাতল ধরে দাঁড়িয়ে রইলাম।
ঠিক তখনই আমার পাশে বসা এক বৃদ্ধ লোক উঠে দাঁড়িয়ে আমাকে তাঁর আসন অফার করলেন। আমি খানিকটা বিব্রত হয়ে বললাম, "না, না... আপনি বসুন। আপনি তো বয়সে অনেক বড়।" আমি বার বার প্রত্যাখ্যান করলাম, কিন্তু তিনি অনড় ছিলেন এবং আমি বসতে বাধ্য হলাম।
তিনি একটু হাসলেন, মাথা ঝুঁকিয়ে আসন দেখিয়ে বললেন, "আপনি শিক্ষক, আপনি এই আসন পাওয়ার যোগ্য।"
আমি থমকে গেলাম। শিক্ষক? উনি জানলেন কীভাবে? তখন ইয়ামামোতা আমার পরিচয়পত্রের দিকে ইশারা করে বললেন,
"তাঁর চোখে পড়েছে তোমার গলায় ঝোলানো শিক্ষক-ট্যাগটা। এখানে শিক্ষক মানে শ্রদ্ধা, শ্রেষ্ঠতা, দায়িত্ব।"
আমার গলা আটকে আসছিল। শব্দ খুঁজে পাচ্ছিলাম না।
পরদিন আমি সিদ্ধান্ত নিলাম ইয়ামামোতার জন্য একটা উপহার কিনব, বাড়িতে খালি হাতে যাওয়া ঠিক হবে না ভেবে। তাঁকে জানালাম ইচ্ছে। তিনি বললেন,
"শিক্ষকদের জন্য একটি বিশেষ দোকান আছে একটু দূরে। সেখানে সব জিনিসপত্র কম দামে পাওয়া যায়।"
আমি বিস্মিত হয়ে প্রশ্ন করলাম, "শুধু শিক্ষকদের জন্য আলাদা দোকান?"
তিনি শান্ত গলায় বললেন, "জাপানে শিক্ষকতা হচ্ছে সবচেয়ে সম্মানজনক পেশা। উদ্যোক্তারা গর্ব বোধ করেন যখন কোনও শিক্ষক তাঁদের দোকানে আসেন। এ যেন তাঁদের জন্যই একটি উৎসব।"
এমন অনেক ছোট ছোট মুহূর্তে আমি বুঝে গিয়েছিলাম—
জাপানে শিক্ষকতা কোনো একটি দিনের উৎসব নয়।
এটি প্রতিটি দিনের শ্রদ্ধা, প্রতিটি শ্বাসে বয়ে চলা সংস্কৃতি।
এখানে মেট্রোতে শিক্ষকদের জন্য আলাদা আসন আছে, তাঁরা লাইনে দাঁড়ান না, বিশেষ ছাড় পান, আর সর্বোপরি তাঁরা পান হৃদয়ের গভীর থেকে উঠে আসা সম্মান।
সেদিন আমি বুঝেছিলাম— যেখানে একজন শিক্ষক প্রতিদিন সম্মান পান, সেখানে আলাদা করে “শিক্ষক দিবস” বলে কিছু থাকা জরুরি নয়।
সেখানে প্রতিটি দিনই শিক্ষক দিবস।
সম্মান যখন সত্যিকার হৃদয় থেকে আসে, তখন তা কেবল একটি দিনের নয়—একটি জীবনের উৎসব হয়ে ওঠে।
জাপান সেই উৎসবের দেশ।
তিনি একটু চমকে গিয়েই জবাব দিলেন, "আমাদের এখানে শিক্ষক দিবস বলে কিছু নেই।"
আমি খানিকটা হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম। একটা দেশ যেখানে শিক্ষা, বিজ্ঞান, প্রযুক্তিতে এতটা উন্নত, সেখানে কীভাবে শিক্ষক দিবসই নেই? কেমন যেন অসম্মানজনক লাগছিল প্রথমে।
তবে আমার ভুলটা আমি বুঝতে পারলাম কয়েকদিন পর।
এক বিকেলে, কাজ শেষে ইয়ামামোতা আমাকে তাঁর বাড়িতে আমন্ত্রণ জানালেন। যেহেতু তাঁর বাড়ি শহরের প্রান্তে, তাই আমরা মেট্রোতে যাত্রা শুরু করলাম। এটা ছিল সন্ধ্যার পিক আওয়ার—ট্রেনটি ধীরে ধীরে ভরে উঠছিল মানুষের ভিড়ে। আমি কোনওমতে রেলের হাতল ধরে দাঁড়িয়ে রইলাম।
ঠিক তখনই আমার পাশে বসা এক বৃদ্ধ লোক উঠে দাঁড়িয়ে আমাকে তাঁর আসন অফার করলেন। আমি খানিকটা বিব্রত হয়ে বললাম, "না, না... আপনি বসুন। আপনি তো বয়সে অনেক বড়।" আমি বার বার প্রত্যাখ্যান করলাম, কিন্তু তিনি অনড় ছিলেন এবং আমি বসতে বাধ্য হলাম।
তিনি একটু হাসলেন, মাথা ঝুঁকিয়ে আসন দেখিয়ে বললেন, "আপনি শিক্ষক, আপনি এই আসন পাওয়ার যোগ্য।"
আমি থমকে গেলাম। শিক্ষক? উনি জানলেন কীভাবে? তখন ইয়ামামোতা আমার পরিচয়পত্রের দিকে ইশারা করে বললেন,
"তাঁর চোখে পড়েছে তোমার গলায় ঝোলানো শিক্ষক-ট্যাগটা। এখানে শিক্ষক মানে শ্রদ্ধা, শ্রেষ্ঠতা, দায়িত্ব।"
আমার গলা আটকে আসছিল। শব্দ খুঁজে পাচ্ছিলাম না।
পরদিন আমি সিদ্ধান্ত নিলাম ইয়ামামোতার জন্য একটা উপহার কিনব, বাড়িতে খালি হাতে যাওয়া ঠিক হবে না ভেবে। তাঁকে জানালাম ইচ্ছে। তিনি বললেন,
"শিক্ষকদের জন্য একটি বিশেষ দোকান আছে একটু দূরে। সেখানে সব জিনিসপত্র কম দামে পাওয়া যায়।"
আমি বিস্মিত হয়ে প্রশ্ন করলাম, "শুধু শিক্ষকদের জন্য আলাদা দোকান?"
তিনি শান্ত গলায় বললেন, "জাপানে শিক্ষকতা হচ্ছে সবচেয়ে সম্মানজনক পেশা। উদ্যোক্তারা গর্ব বোধ করেন যখন কোনও শিক্ষক তাঁদের দোকানে আসেন। এ যেন তাঁদের জন্যই একটি উৎসব।"
এমন অনেক ছোট ছোট মুহূর্তে আমি বুঝে গিয়েছিলাম—
জাপানে শিক্ষকতা কোনো একটি দিনের উৎসব নয়।
এটি প্রতিটি দিনের শ্রদ্ধা, প্রতিটি শ্বাসে বয়ে চলা সংস্কৃতি।
এখানে মেট্রোতে শিক্ষকদের জন্য আলাদা আসন আছে, তাঁরা লাইনে দাঁড়ান না, বিশেষ ছাড় পান, আর সর্বোপরি তাঁরা পান হৃদয়ের গভীর থেকে উঠে আসা সম্মান।
সেদিন আমি বুঝেছিলাম— যেখানে একজন শিক্ষক প্রতিদিন সম্মান পান, সেখানে আলাদা করে “শিক্ষক দিবস” বলে কিছু থাকা জরুরি নয়।
সেখানে প্রতিটি দিনই শিক্ষক দিবস।
সম্মান যখন সত্যিকার হৃদয় থেকে আসে, তখন তা কেবল একটি দিনের নয়—একটি জীবনের উৎসব হয়ে ওঠে।
জাপান সেই উৎসবের দেশ।
একদিন আমার জাপানি সহকর্মী, শিক্ষক ইয়ামামোতাকে আমি সরল এক প্রশ্ন করেছিলাম— "তোমরা কীভাবে শিক্ষক দিবস উদযাপন করো?"
তিনি একটু চমকে গিয়েই জবাব দিলেন, "আমাদের এখানে শিক্ষক দিবস বলে কিছু নেই।"
আমি খানিকটা হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম। একটা দেশ যেখানে শিক্ষা, বিজ্ঞান, প্রযুক্তিতে এতটা উন্নত, সেখানে কীভাবে শিক্ষক দিবসই নেই? কেমন যেন অসম্মানজনক লাগছিল প্রথমে।
তবে আমার ভুলটা আমি বুঝতে পারলাম কয়েকদিন পর।
এক বিকেলে, কাজ শেষে ইয়ামামোতা আমাকে তাঁর বাড়িতে আমন্ত্রণ জানালেন। যেহেতু তাঁর বাড়ি শহরের প্রান্তে, তাই আমরা মেট্রোতে যাত্রা শুরু করলাম। এটা ছিল সন্ধ্যার পিক আওয়ার—ট্রেনটি ধীরে ধীরে ভরে উঠছিল মানুষের ভিড়ে। আমি কোনওমতে রেলের হাতল ধরে দাঁড়িয়ে রইলাম।
ঠিক তখনই আমার পাশে বসা এক বৃদ্ধ লোক উঠে দাঁড়িয়ে আমাকে তাঁর আসন অফার করলেন। আমি খানিকটা বিব্রত হয়ে বললাম, "না, না... আপনি বসুন। আপনি তো বয়সে অনেক বড়।" আমি বার বার প্রত্যাখ্যান করলাম, কিন্তু তিনি অনড় ছিলেন এবং আমি বসতে বাধ্য হলাম।
তিনি একটু হাসলেন, মাথা ঝুঁকিয়ে আসন দেখিয়ে বললেন, "আপনি শিক্ষক, আপনি এই আসন পাওয়ার যোগ্য।"
আমি থমকে গেলাম। শিক্ষক? উনি জানলেন কীভাবে? তখন ইয়ামামোতা আমার পরিচয়পত্রের দিকে ইশারা করে বললেন,
"তাঁর চোখে পড়েছে তোমার গলায় ঝোলানো শিক্ষক-ট্যাগটা। এখানে শিক্ষক মানে শ্রদ্ধা, শ্রেষ্ঠতা, দায়িত্ব।"
আমার গলা আটকে আসছিল। শব্দ খুঁজে পাচ্ছিলাম না।
পরদিন আমি সিদ্ধান্ত নিলাম ইয়ামামোতার জন্য একটা উপহার কিনব, বাড়িতে খালি হাতে যাওয়া ঠিক হবে না ভেবে। তাঁকে জানালাম ইচ্ছে। তিনি বললেন,
"শিক্ষকদের জন্য একটি বিশেষ দোকান আছে একটু দূরে। সেখানে সব জিনিসপত্র কম দামে পাওয়া যায়।"
আমি বিস্মিত হয়ে প্রশ্ন করলাম, "শুধু শিক্ষকদের জন্য আলাদা দোকান?"
তিনি শান্ত গলায় বললেন, "জাপানে শিক্ষকতা হচ্ছে সবচেয়ে সম্মানজনক পেশা। উদ্যোক্তারা গর্ব বোধ করেন যখন কোনও শিক্ষক তাঁদের দোকানে আসেন। এ যেন তাঁদের জন্যই একটি উৎসব।"
এমন অনেক ছোট ছোট মুহূর্তে আমি বুঝে গিয়েছিলাম—
জাপানে শিক্ষকতা কোনো একটি দিনের উৎসব নয়।
এটি প্রতিটি দিনের শ্রদ্ধা, প্রতিটি শ্বাসে বয়ে চলা সংস্কৃতি।
এখানে মেট্রোতে শিক্ষকদের জন্য আলাদা আসন আছে, তাঁরা লাইনে দাঁড়ান না, বিশেষ ছাড় পান, আর সর্বোপরি তাঁরা পান হৃদয়ের গভীর থেকে উঠে আসা সম্মান।
সেদিন আমি বুঝেছিলাম— যেখানে একজন শিক্ষক প্রতিদিন সম্মান পান, সেখানে আলাদা করে “শিক্ষক দিবস” বলে কিছু থাকা জরুরি নয়।
সেখানে প্রতিটি দিনই শিক্ষক দিবস।
সম্মান যখন সত্যিকার হৃদয় থেকে আসে, তখন তা কেবল একটি দিনের নয়—একটি জীবনের উৎসব হয়ে ওঠে।
জাপান সেই উৎসবের দেশ।
